চুন্নি সাহার বিশেষ অনুষ্ঠান 'রিমান্ডের অনুভুতি'
লিখেছেন লিখেছেন লালসালু ৩১ মে, ২০১৩, ১১:৪১:০৮ সকাল
‘অনুভূতি কী?’ অনুষ্ঠানের আজকের বিষয় ‘রিমান্ডের স্বাদ’। সিটিএন বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি চুন্নি সাহা আজ রিমান্ডের ফান্দে পড়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন সরাসরি গোপালপুর কারাগার থেকে।
দর্শক আমরা এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি গোপালপুর কারাগারের ‘বিরোধীদল’ কক্ষের সামনে। ভেতরে চিৎকারের শব্দ আসছে। ভেতরে আসামি হিসেবে অবস্থান করছেন জামাতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জনাব আবুল হোসেন। চলুন ভেতরে গিয়ে ওনার অনুভূতি জিজ্ঞাসা করি।
চুন্নি সাহা কারা রক্ষীদের দিকে তাকিয়ে “কোথায় আসামী?”
কারারক্ষী ছাদের দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখাল।
চুন্নি সাহা আঁতকে উঠলেন! একি, শুনেছি বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা পুলিশ ছুঁলে ছত্রিশ কিন্তু এই মানুষটা উলটা কেন? ও বুঝেছি। ওনাকে পা বেঁধে উলটো করে ছাদের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। যাক ভালই হল। আসামীর উলটো মুখের কাছে চুন্নি সাহা জিজ্ঞেস করলেন
“আপনাকে কি উলটো করে বেঁধে রাখা হয়েছে?”
আসামী “না, আমাকে সোজা করেই বেঁধে রাখা হয়েছে”
চুন্নি সাহা “কিন্তু আমি যে দেখতে পাচ্ছি আপনাকে উলটো করে বেঁধে রাখা হয়েছে”
আসামী “আসলে আমি মানুষটাই উল্টা। সবসময় সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলি। তাই আমাকে ‘সোজা’ করতে সোজা করে বেঁধে রাখা হয়েছে”
চুন্নি সাহা “তা আপনাকে এভাবে কতক্ষন উল্টা করে রেখেছে”
আসামি “যতক্ষন কারাগারে থাকি ততক্ষন উল্টা অবস্থায়ই থাকি। কোর্টে নিলে শুধু সোজা হয়ে দাড়াই”
চুন্নি সাহা “আপনার অনুভূতি কি?”
আসামী “এ অনুভূতি ভোলা যায় না। উল্টা থাকার মজাই আলাদা। আমি যেহেতু উল্টা মানুষ তাই সব কিছু সোজা সোজা লাগে। ভবিষ্যতে যাতে সবাই এই অনুভূতি লাভ করতে পারে সে ব্যপারে আমি সচেতন থাকব”
চুন্নি সাহা পাশের রুমে গেলেন। সেখানে দেখলেন বিএনপির এক নেতার পায়ে ডান্ডাবেড়ি দেয়া। তার পেছেন সেদ্ধ ডিম দেয়া হচ্ছে। চুন্নি সাহা মনে করলেন বিএনপি নেতা হয়ত এই মাত্র ডিম পারলেন। মানুষ ডিম পারে তিনি তা জানতেন না। আজ তিনি এই অসাধারন জিনিস দেখলেন। তিনি একাই দেখবেন কেন? পুরো দেশবাসিকে দেখানোর উদ্দেশ্যে তিনি নেতার পেছনে ক্যমেরা নিয়ে লাইভ টেলিকাস্ট শুরু করলেন। কিছুক্ষন পর তিনি বুঝতে পারলেন ডিমের গতি উলটো দিকে! তিনি কারা রক্ষীদের জিজ্ঞেস করলেন “উনি কি পেছন দিক দিয়ে খাবার খায়” কারারক্ষীরা কট্মট করে চাইলেন। চুন্নি সাহা কাউকে পাত্তা না দিয়ে “দর্শক এই মুহূর্তে আমরা দাঁড়িয়ে আছি বিএনপি নেতা আব্দুস সালামের রিমান্ড কক্ষে। আপনারা লাইভ দেখছেন তিনি কত জামাই আদরে আছেন। ওনার রিমান্ডের দৃশ্য দেখে আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। ছোটবেলায় মা আমাকে জোর করে ডিম খাওয়াতেন। আমি কিছুতেই খেতে চাইতাম না। কারারক্ষীরা ঠিক সেইভাবে ওনার ভিটামিনের অভাব দূর করার জন্য জোর করে ডিম খাওয়াচ্ছেন। আমার মনে হচ্ছে ওনাকে পেট ভরে আপ্যায়ন করা হয়েছে। তাই তিনি আর মুখ দিয়ে কোন খাবার গ্রহন করতে ইচ্ছুক নন। তাই ওনার পেছন দিক দিয়ে ডিম দেয়া হচ্ছে। ভেতরে যাওয়াই বড় কথা। কোন দিন দিয়ে গেল সেটা বড় কথা না”
চুন্নি সাহা এবার পাশের রুমে গেলেন। সারা আয়ে ব্যান্ডেজ জড়ানো এক লোককে জিজ্ঞেস করলেন “আপনার অনুভূতি কী?”
আসামী “মজাই মজা”
চুন্নি সাহা “রিমান্ডে এসে আপনার কোন লাভ হয়েছে?”
আসামী “লাভ মানে, আমার তিন হাজার টাকা বেঁচে গিয়েছে”
চুন্নি সাহা “কীভাবে?”
আসামী “বহুদিন ধরে ডান পাশের একতা দাঁতে ব্যথা ছিল। বহু ডাক্তারের পেছনে অনেক টাকা খরচ করলাম। কেউ এই দাঁত সুস্থ করতে পারল না। এক ডাক্তার দাঁত ফেলার জন্য তিন হাজার টাকা চাইল। পর দিন পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে। রিমান্ডের প্রথম দিনেই আমার দাঁত ওরা ফেলে দেয়”
চুন্নি সাহা “দর্শক দেখতেই পাচ্ছেন দেশের চিকিৎসা সেবার কত উন্নতি হয়েছে। আজ দেশের কারাগারের কয়েদিরাও সুচিকিৎসা পাচ্ছে”
আসামী বিরক্ত হয়ে “রিমান্ডে কোন ডাক্তার নাই, ঐ পুলিশ ব্যটারাই…..”
চুন্নি সাহা “দেশের পুলিশদের এখন গোলাগোলির পাশাপাশি ডাক্তারি বিদ্যারও প্র্যাকটিস করছেন………….”
চুন্নি সাহা পাশের রুমে গেলেন। দেখ “এখানে এক বয়স্ক হেজাজতি নেতার চার হাত পালেন স্পাইডারম্যান! কারাগারে স্পাইডারম্যান কোথা থেকে এল? স্পাইডারম্যান কী অপরাধ করেছে? তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে কেন? চুন্নি সাহার ‘অনুভূতি’ বুঝতে পেরে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ বলল “উনি স্পাইডারম্যান নন। শাপলা চত্বর থেকে ধরে আনা হেফাজতি। চার হাত পা দড়ি দিয়ে চার দিকে বেঁধে রাখা হয়েছে। তাই দেখতে মাকড়সার মতন লাগছে।
চুন্নি সাহা এখন বুঝতে পারলেন দড়ি গুলো আসলেই পাটের, স্পাইডারম্যানের নয়। উনি হতাশ হলেন। ভেবেছিলেন দেশবাসীকে স্পাইডারম্যান দেখাতে পারবেন। বিষন্ন মনে জিজ্ঞেস করলেন “অনুভূতি কী”
আসামী “ফাটাফাটি। আমার দীর্ঘ দিনের অসুখ সাইরা গেছে”
চুন্নি সাহা “দাঁতের প্রবলেম ছিল নাকি”
আসামী “না বাতের প্রবলেম!”
চুন্নি সাহা “বুঝলাম না”
আসামী “অনেক দিন ধরে বাতের ব্যথায় ভুগতাছি। অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেখাইছি। কোন কাম হইল না। একজন কইল ‘হুজুর সিঙ্গাপুরে যা, টেকা লাগলে আমি দিমু’।
আমি ডরাইলাম ‘সিঙ্গাপুরে তো যাইয়া অনেকেই ফেরত আসতে পারে নাই’।
যাই হোক, শেষমেষ রিমান্ডে আসার পর দুই দিনে আমার তিরিশ বছরের বাতের ব্যথা একেবারেই দূর হইছে। এই যে স্পাইডারম্যান থেরাপি, এইডা অনেক কামের। লগে হালকা পাতলা দুই একটা মাইর দিলে বাতের ব্যথা কোন দিন দিয়া যাইব আপনি টেরও পাইবেন না। ভাবতাছি মুক্তি পাইলে ‘বাত ব্যথার আজিব অব্যর্থ চিকিৎসা’ নামের এক দাওয়াখানা খুলুম। আপনার কি বাতের ব্যথা আছে?”
চুন্নি সাহা দ্রুত পাশের রুমে গেলেন। একি! রুম ঠান্ডা কেন? এই রুমে কি শীতকাল চলছে? খেয়াল করলেন রুমে এসি লাগানো আছে।
চুন্নি সাহা ক্যামেরা বন্ধ করলেন। ‘মিলন প্লাজার’ মালিক মিলন সোফায় বসে আছেন। দুই পাশে দুই লোক দুই পা মালিশ করছে।
চুন্নি সাহা “আপনার বিল্ডিং ভেঙ্গে হাজার খানেক মানুষ মারা গেল, এতে আপনার অনুভূতি কী?”
মিলন “ধূর, আমার দিন খুব কষ্টে কাটতাছে। রিমান্ড কি মাইনষে করে। এই লোকগুলোর কোন মানবতাই নাই”
চুন্নি সাহা মনে মনে বলল “হালারে জিগাইলাম কি আর হালায় কয় কি?” মুখে বললেন “আপনার রুমে এসি লাগানো আছে, সামনে টিভি, হাতে কিসের যেন একটা বোতল, ঘরে বিরানীর গন্ধ। এরপরে আপনার দিন কেন কষ্টে কাটছে?”
মিলন “হালার এক এছি দিছে এছির রিমোট নাই, হাত দিয়া ঠান্ডা কম বেশি করতে হয়। এক খান টিভি দিছে কিন্তু রেন টিভি নাই। আপনিই কন রেন টিভি ছাড়া কি টিভি দেইখ্য মজা পাওন যায়?”
চুন্নি সাহা “এই যে দুইজন লোক আপনার শরীর মালিশ করছে, এরা কারা?”
মিলন “এরা কারা মানে, এরা পুলিশ”
চুন্নি সাহা “পুলিশ দেখছি জনগনের বন্ধু। জনগনের ভালই সেবা করছে”
আসামী মিলন “আমার আরেকটু সেবা দরকার, মানে মহিলা পুলিশগুলো বদ, এরা অনেক কিছু বুঝে না, আপনি অনেক ভাল মানের মাল। আপনি যদি একটু সেবা দিতেন।” মিলন লোভি দৃষ্টিতে এগিয়ে এল চুন্নি সাহার দিকে।
কিছুক্ষন পর মিলন চুন্নি সাহাকে প্রশ্ন করলেন “অনুভূতি কী?”
বিষয়: রাজনীতি
২৫৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন