তাওবা/ইস্তেগফারের ক্ষমতা

লিখেছেন লিখেছেন মদীনার আলো ১১ মার্চ, ২০১৩, ০৮:৫৫:০৮ রাত

আল্লাহ তাআলার দরবারে বান্দার তাওবা করা অধিক পছন্দনীয়। মানুষ অপরাধ করার পর আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা করা ও গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করাকে তিনি অত্যধিক পছন্দ করেন। আল্লাহ তাআলা তাওবা কবুল করেন এবং তাওবার মাধ্যমে বান্দাকে পুতপবিত্র করেন। তবে তাওবা কি বা তাওবা কবুল হওয়ার জন্য শর্তাবলী কি তা আমাদের জানা থাকা জরুরি। তাই নিম্নে এ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ আলোচনা তুলে ধরা হল।

তাওবা কাকে বলে?

খারাপ কাজ-গুনাহ, পাপচার, অন্যায় অবিচার ও আল্লাহর নাফরমানি হতে ফিরে এসে, বান্দা নেক কাজ করার মাধ্যমে তার প্রভুর দিকে ফিরে আসাকে তাওবা বলা হয়। অনেক অজ্ঞ বা মূর্খ লোকেরা মনে করে তাওবা শুধু মাত্র খারাব কাজ বা গুনাহের কাজ থেকে ফিরে আসার দ্বারাই হয়ে থাকে। তাদের এ ধরনের ধারণা মোটেও ঠিক না। বরং, এখানে সঠিক, নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য কথা হল, যে সব নেক আমল করার জন্য আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন তা ছেড়ে দেয়াও গুনাহ। যারা এ সব নেক আমালগুলো পালন করা ছেড়ে দেয় তাদের অবশ্যই তা ছেড়ে দেয়া হতে তাওবা করা এবং ফিরে আসা, নিষিদ্ধ কাজ করা থেকে তাওবা করা হতে আরো বেশী গুরুত্বপুর্ণ।

অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর অনেক আদেশ, অন্তরের কার্যাদি, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আমল বা যিকির ছেড়ে দেয়, অথচ তারা জানেই না যে এগুলো সবই আল্লাহর আদেশের অন্তর্ভুক্ত এবং এ গুলো ছেড়ে দেয়া বা এ সব আমল পালন করা হতে বিরত থাকা অপরাধ ও গুনাহ। অথবা জানা থাকলেও তারা তার পাবন্দি করে না। এবং এগুলো ছেড়ে দেয়াতে যে, তার পাপ হচ্ছে, তা থেকে ফিরে আসা ও তাওবা করা যে গুরুত্বপূর্ণ বা অতীব জরুরী তা তারা বিশ্বাস করে না। ফলে সত্যিকার জ্ঞান না থাকার কারণে তারা হয়ত পথভ্রষ্টদের দলভুক্ত হয় অথবা অভিশপ্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়। সত্যকে সত্য বলে জানা সত্ত্বেও তা হতে বিরত থেকে তারা মন্দ পরিণতির অধিকারীই রয়ে গেল।

মোট কথা, তাওবা বান্দার জীবনের শেষ ও শুরু। তবে তার প্রয়োজন যেমনিভাবে জীবনের শেষাংশে জরুরী অনুরূপভাবে জীবনের প্রথমাংশেও জরুরী।

যেমন আল্লাহ বলেন:

হে ঈমাদারগণ তোমরা আল্লাহর নিকট খালেস তাওবা কর নিশ্চয় তোমরা কামিয়াব হবে।

[সূরা নূর : ৩১]

উল্লেখিত আয়াতটি মদীনায় অবর্তীণ হয়েছে এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা শুধু ঈমানদার নয় বরং তখনকার সময়ের সবচেয়ে উত্তম মাখলুক যারা জিহাদ, সবর, হিজরতসহ যাবতীয় নেক কাজে কিয়ামত পর্যন্তের জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবেন, তাদেরকে তাওবা করার নির্দেশ দেন এবং তারপর তিনি তাওবাকে সফলতা ও কামিয়াবী লাভের কারণ নির্ধারণ করেন। সুতরাং, কামিয়াবী বা সফলতা পাওয়ার একমাত্র উপায় হল আল্লাহর নিকট খালেস তাওবা করা। আল্লাহর দরবারে তাওবা করা ও যাবতীয় গুনাহ হতে ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া কোন ঈমানদারই সফল হতে পারে না।

ইস্তেগফারের ক্ষমতা

ইমাম আহমদ তখন বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন, তিনি সফরে ছিলেন। যাত্রাপথে রাত হয়ে এলে তিনি অচেনা শহরটিতে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি অচেনা শহরে একজন আগন্তুক হিসেবেই থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন,অথচ তিনি যদি নিজের পরিচয় প্রকাশ করে নিজেকে কারও কাছে পরিচিত করতেন তখন যে কেউই সর্বোচ্চ চেষ্টা করত তার আতিথেয়তা করে ধন্য হবার। এখানেও একজন মহৎ ব্যক্তিত্ত্ব হিসেবে ইমাম আহমদের পরিচয় মেলে। তিনি রাতের সালাত শেষ করে তাই সিদ্ধান্ত নিলেন মসজিদ প্রাঙ্গনেই রাতটা কাটিয়ে দিবেন।

স্বাভাবিকভাবেই মসজিদের খাদেম তাকে চিনতে পারল না এবং তিনি মসজিদে রাত্রিযাপনের অনুমতিও পেলেন না। তিনি তখন যথেষ্ট বয়স্ক একজন মানুষ, মসজিদের খাদেম তাকে এক প্রকার টেনে হিঁচড়ে বাইরে বের করে দিল। একজন রুটি বিক্রেতা দৃশ্যটি দেখলেন। এভাবে একজন বয়স্ক মানুষকে অপমানিত হতে দেখে রুটি বিক্রেতার মনে দয়া হল। রুটি বিক্রেতা লোকটি ইমাম আহমদের মেহমানদারি করার সিদ্ধান্ত নিলেন।

ইমাম আহমদ লোকটির সাথে অবস্থানকালে একটি অদ্ভুত বিষয় লক্ষ্য করলেন। তিনি দেখলেন ঐ রুটি বিক্রেতাটি প্রতি মুহুর্তে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে চলেছেন। ইস্তিগফার করেই যাচ্ছেন, করেই যাচ্ছেন। তিনি কৌতুহলী হয়ে রুটি বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলেন, “তোমার এই আমলের কোন বিশেষ প্রতিদান পেয়েছো কি?”। রুটি বিক্রেতা জবাব দিলেন, ” আল্লাহ আমার সকল দু’আ কবুল করেছেন, কিন্তু একটি দু’আ এখনো কবুল হয়নি।” ইমাম আহমদ আশ্চর্যান্বিত হয়ে জানতে চাইলেন যে তার কোন দু’আটি এখনো কবুল হয়নি। লোকটি উত্তর করল, “আমি বিখ্যাত আলেম ইমাম আহমদের সাক্ষাৎ লাভের দু’আ করেছি যা এখনো আল্লাহ কবুল করেননি।”

ইমাম আহমদ জবাবে বললেন , “আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তোমার দুআ শুনেছেন এমনকি তিনি ইমাম আহমদকে টেনে হিঁচড়ে তোমার দরজায় এনে উপস্থিত করেছেন, আমিই সেই লোক যাকে তোমরা ইমাম আহমদ নামে জান”। [সংক্ষেপিত , আল জুমুয়া ম্যাগাজিন, ভলিউম-১৯, ইস্যু-৭]

এই ঘটনাটি ইস্তেগফারের ক্ষমতা ও গুরুত্বের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনে সত্তরবারেরও অধিক ইস্তেগফার করতেন।

তাফসীর আল কুরতুবীতে উল্লেখিত, একজন লোক আল-হাসানের নিকট খরা-অনাবৃষ্টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি তাকে বললেন, “আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো”। আরেক ব্যক্তি তার দারিদ্রের কারণে অনুযোগ করলে তিনি তাকে উপদেশ দিলেন,”আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো”। অন্য একজন ব্যক্তি এসে জানতে চাইলো, “আল্লাহ যেন আমাকে একটি সন্তান দানে ধন্য করেন”। তিনি তাকেও বললেন,”আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো”। অপর এক ব্যক্তি এসে বললো যে তার বাগানে ফসল হচ্ছে না। তিনি তাকে উপদেশ দিলেন, “আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো”। তার নিকট এর ব্যাখা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “এটা আমার মনগড়া মতামত নয়, কেননা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সূরা নূহে এরশাদ করেন, ” তোমরা তোমাদের মালিকের দুয়ারে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিসন্দেহে আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর অঝোর বৃষ্টিধারা বর্ষণ করবেন, এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্ততি দিয়ে তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন, তোমাদের জন্যে বাগ-বাগিচা ও উদ্যান স্থাপন করবেন, তিনি এখানে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।” (সূরা নূহঃ১০-১২) । তাফসীর আল-কুরতুবী (১৮/৩০১-৩০২)

একজন হাদীসের বর্ণনাকারীর নিকটে জানতে চাওয়া হল, কিভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করা হবে, ইস্তেগফারের আদব কি হবে, এর উত্তরে তিনি বললেন, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ!’, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ!’ (আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই, আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই)” । [সহীহ মুসলিম]

বিষয়: বিবিধ

১১৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File