ইমাম আবু হানিফা (রাহমাতুল্লাহু আলাইহি) ও ইমাম আওযাঈর সহিত পরিচয়
লিখেছেন লিখেছেন মদীনার আলো ১০ মার্চ, ২০১৩, ১১:১২:১৩ সকাল
ইমাম আওযাঈ ও মাকহুল শামীকে তখন শামদেশের (সিরিয়ার) ধর্মীয় নেতা বলা হইত। ইমাম আবু হানিফা (রাহমাতুল্লাহু আলাইহি) মক্কায় তাহাদের সহিত পরিচিত হন এবং হাদীসের সনদ লাভ করেন। তাহাদের এই পরিচিতি একটু অস্বাভাবিক ভাবেই ঘটিয়াছিল। ইমাম আবু হানিফা (রাহমাতুল্লাহু আলাইহি)
তখন অপূর্ব স্মৃতিধর ও সূক্ষ্মদর্শী মুজতাহিদ বলিয়া খ্যাত। দূর দূরান্ত পর্যন্ত তাঁহার খ্যাতি ছড়াইয়া পড়িয়াছিল। আর যিনি যত বেশী খ্যাতি লাভ করেন তাহার সম্পর্কে আলোচনা সমালোচনাও তত বেশী হয়, ইহা নিতান্তই স্বাভাবিক। ইমাম সাহেব সম্পর্কে একদল লোক বলিতে আরম্ভ করিয়া দিয়াছিল যে, তিনি ১ক্বয়াস’ খাটাইয়া মাসলা’ বলেন। তাঁহার অনেক মাসআলাই ক্বেয়াসের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। সমালোচনাটি এত ব্যাপক প্রসার লাভ করিয়াছিল যে, সুদূর শামে থাকিয়া ইমাম আওযাঈ সাহেবও উহা শুনিতে পাইয়াছিলেন।
এই সময়ে ইমাম সাহেবের বিখ্যাত শাগরেদ হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মোবারক ইমাম আওযাঈর নিকট হইতে হাদীস শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি লাভের জন্য বৈরুত গমন করিলেন। প্রথম সাক্ষাতেই ইমাম আওযাঈ তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন , কুফায় আবু হানিফা নামে কোন ব্যক্তি নাকি জন্মলাভ করিয়াছেন, তিনি ধর্ম সম্মন্ধে নূতন নূতন কথা বলিয়া থাকেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক তাঁহার কথার জবাব দিলেন না। নীরবে বাড়ী চলিয়া আসিলেন। ইহার দুই তিন দিন পর আবার তিনি ইমাম আওযাঈর নিকট গমন করিলেন।তাঁহার হাতে ছিল কিছু কাগজ। উহাতে ইমাম সাহেবের বর্ণিত এমন কতিপয় মাসআ’লা লেখা ছিল, যাহা নিয়া স্থুলদর্শী আলেমগণ আলোচনা সমালোচনা করিত। ইমাম আওযাঈ কাগজগুলি হাতে নিয়া গভীর মনোযোগের সহিত পাঠ করিতে লাগিলেন। মাসআ’লার শুরুতেই লেখা ছিলÑ নো’মান বিন সাবেত বলিয়াছেন। বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ তিনি কাগজ খানা পাঠ করিলেন। অতঃপর বলিলেনÑএই নো’মান বিন সাবেত বোযর্গ কে? হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক বলিলেন ,ইনি ইরাকের অধিবাসী। এতদিন আমি তাঁর সান্নিধ্যেই ছিলাম। ইমাম আওযাঈ বলিলেন, খুব উচ্চস্তরের লোক তিনি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক বলিলেন, ইনিই সেই আবু হানিফা, যাহাকে আপনি বেদাতী বলিয়া অভিহিত করিতেন। শুনিয়া ইমাম আওযাঈ খুব অনুতপ্ত হলেন। নিজ ভুল ধারণার জন্য তাঁহার অন্তরে খুব অনুশোচনা জাগিল।
হাজ্জের সময় ইমাম আওযাঈ মক্কা মোয়াজ্জমা গমন করিলেন। ইমাম আবু হানিফা (রাহমাতুল্লাহু আলাইহি) ও হাজ্জ্ব করিতে আসিয়াছিলেন। উভয় বোযর্গের সাক্ষাৎ হইল। তাঁহারা পরস্পরের সহিত সেই মাসআ’লা গুলি নিয়াই আলাপ-আলোচনা করিলেন। ঘটনা চক্রে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারকও সেই আলোচনা মজলিসে উপস্থিত হইয়াছিলেন। তিনি বলেনÑইমাম আবু হানিফা (রাহমাতুল্লাহু আলাইহি) সেদিন মাসআ’লাটি এত সুন্দরভাবে বুঝাইয়া দিলেন যে, ইমাম আওযাঈ বিস্ময়ে হতবাক হইয়া রহিলেন। অতঃপর যখন তিনি চলিয়া গেলেন তখন আওযাঈবলিলেন, লোকটির উচ্চতর জ্ঞানই তাঁহাকে লোকের হিংসার পাত্র বানাইয়া রাখিয়াছে। তাঁহার সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করার জন্য আমি দারুণ মর্মাহত।
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন