গুরু-শিষ্যের লড়াই

লিখেছেন লিখেছেন মদীনার আলো ১৭ জুন, ২০১৫, ১০:৪৪:৩২ রাত

এক পালোয়ান মল্লযুদ্ধে খুব পারদর্শিতা অর্জন করেছিল। মল্লবিদ্যায় সে তিনশত ষাটটি কৌশল আয়ত্ব করেছিল। নিত্য নতুন কায়দায় সে কুস্তি লড়ত। কাজেই সে সময়ের কোন কুস্তিগীর তার সাথে মল্লযুদ্ধে জয়লাভ করতে পারতো না। তার বহু শিষ্য ছিল। তার মধ্যে একজন রুপ-গুণে ওস্তাদের অত্যন্ত প্রিয় পাত্র ছিলেন। দুরদর্শী ওস্তাদ তাকে তিনশত ঊনষাটটি কৌশল শেখান, একটা বিশেষ কৌশল শিখালেন না। সেই যুবক শক্তি-সমর্থ্য ও কলা-কৌশলে অল্পদিনের ভিতরে এমন সুনাম অর্জন করল যে, সেই সময়ের কোন পালোয়ান তার সাথে মোকাবেলা করার সাহস পেতো না।

যুগের শ্রেষ্ঠ কুস্তিগীর বলে স্বীকৃতি পাওয়ায় তার মনে অহংকার মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। এমন কি, একদিন সে বাদশার সামনে গর্ব করে বলে বসলো যে, আমার ওস্তাদ যার কাছে আমি কুস্তি শিখেছি, শিক্ষাগুরু হিসাবে তিনি আমার চাইতে বড় ও সম্মানের পাত্র হতে পারেন বটে, কিন্তু শক্তি ও কলা-কৌশলে আমি তার চেয়ে কোন অংশে কম না। বাদশার কাছে কথাটা যুক্তিহীন মনে হল। তখনি তিনি প্রতিযোগিতার আদেশ দিলেন।

প্রতিযোগিতার জন্য একটি বিরাট ময়দান নির্বাচন করা হল। ওস্তাদ ও শিষ্যের লড়াই দেখার জন্য দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গও সেই যুদ্ধ ময়দানে হাজির হল এবং প্রতিযোগিতা শুরু হল।

ওস্তাদ জানতেন, যুবক শিষ্যের শারীরিক শক্তি তার চাইতেও বেশি। তাই তিনি তার শিষ্যকে নতুন কৌশলে আক্রমণ করলেন। সেই নিয়ম যেটা ছাত্রকে না জানিয়ে গোপন রেখেছিলেন। কাজেই শিষ্য নিরুপায় হয়ে পড়ল। ওস্তাদ তাকে দুই হাত ধরে মাথার উপর উঠিয়ে মাটিতে ফেলে দিলেন। ওস্তাদ বিজয়ের মুকুট জয় করে নিলেন। বাদশাহ ওস্তাদকে মূল্যবান পুরস্কার দিলেন। এরপর শিষ্যের অহংকারের জন্য তিরষ্কার করে বললেন, তুমি একটা নির্বোধ ও বেয়াদব। তাই নিজের ওস্তাদের সাথে সমকক্ষতার দাবী করতে তোমার লজ্জা হয়নি। বোকার মতো লড়াই গিয়েছিলে বলেই পরাজিত হলে।

ছাত্র বিনীতভাবে বলল হে বাদশা, ওস্তাদ গায়ের জোরে আমার সাথে পারতেন না। কিন্তু কি করব, কুস্তিবিদ্যার সকল কৌশল আমাকে শেখানো হয়নি। তিনি কিছু কৌশল গোপন রেখেছিলেন। আমার অজানা সেই কৌশল দিয়ে তিনি আজ জয়লাভ করলেন।

উত্তরে ওস্তাদ বললেন: হ্যাঁ বৎস, এই দিনের জন্যই তা যত্ন করে রেখেছিলাম। নইলে আজই তুমি আমার সুনাম বরবাদ করে দিতে।

উপদেশ: বন্ধুকে ভালবেসে এত শক্তিশালী কোরো না, যেন সে যদি কখনো শত্রুতা করে বসে,তবে তুমি পরাজিত হও

সংগৃহিত

বিষয়: বিবিধ

১৬৭৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

326501
১৭ জুন ২০১৫ রাত ১১:২৯
আফরা লিখেছেন : খুব সুন্দর শিক্ষা একেবারে অভিভূত হয়েছি ।

অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য ।
১৮ জুন ২০১৫ সকাল ০৮:৩৫
268898
মদীনার আলো লিখেছেন : ধন্যবাদ ।
326538
১৮ জুন ২০১৫ সকাল ০৬:০৯
কথার_খই লিখেছেন : আপনার লেখাটি পড়ে ভাল লেগেছে।। ধন্যবাদ ।
১৮ জুন ২০১৫ সকাল ০৮:৩৫
268899
মদীনার আলো লিখেছেন : ধন্যবাদ ।
326569
১৮ জুন ২০১৫ সকাল ১১:৪৯
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : সুন্দর এবং শিক্ষণীয় পোস্ট.. ধন্যবাদ।
326578
১৮ জুন ২০১৫ দুপুর ০১:১৯
এলিট লিখেছেন : এটা একটা ভুল শিক্ষা। গুরু যদি একটা বিদ্যা বাদ দিয়ে শেখায় তাহলে শিশ্য একটা কম শিখবে। সে আবার শেখাতে গেলেও আরেকটা কম শেখাবে। এভাবে নতুন প্রজন্ম সব সময় কমই শিখবে। বাস্তবে এর উল্টো হয়। নতুন প্রজন্ম, আগের যুগের সবকিছু শেখে তার সাথে আরো নতুন কিছু শেখে। প্রত্যেক বিখ্যাত লোকেরই গুরু ছিল। সেই গুরুদেরকে কেউ চিনা না, সবাই শিশ্যকে চিনে। শিশ্য যদি গুরুর চাইতে বেশী শিখেই ফেলে সেটা গুরুর জন্য আনন্দের। ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন গুরু কখনোই শিশ্যের সাথে প্রতিযোগীতা করেনা। তাছাড়া আপনার শিক্ষা - "বন্ধুকে ভালোবেসে শক্তিশালী করো না" এটাও ভুল । ভালোবেসে শক্তিশালী কিভাবে করে?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File