ইলম কীভাবে উন্নতি বয়ে আনে
লিখেছেন লিখেছেন মদীনার আলো ০১ মার্চ, ২০১৫, ০৯:০৬:৪৯ রাত
ইলম মানুষের জীবনকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয়জগতে কীভাবে উন্নতি বয়ে আনে তার একটি দৃষ্টান্ত পেশ করা যেতে পারে। ইমাম আবূ ইউসুফ (রহ) উম্মতের মুহসিনগণের (কল্যাণকারী) একজন, যাদের অবদানের ভারে উম্মতের গর্দান সর্বদা নুয়ে থাকে। বিশেষ করে ফিকহে হানাফীর অনুসারীদের জন্য তার অবদান অনস্বীকার্য।
তিনি শুধু একজন ফকীহ হিসেবেই ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর ইলম ও ফিকহ উম্মতের কাছে পৌঁছে দেন নি, বরং একজন প্রধান বিচারপতি হিসেবে ফিকহকে দর্শন থেকে বের করে এনে এর আমলী রূপও দান করেছেন।
আলী ইবন জা‘দ (রহ.) বর্ণনা করেন, ইমাম আবূ ইউসুফ (রহ.) বাল্যকালেই পিতা ইবরাহীম ইবন হাবীবের স্নেহ হারিয়েছিলেন। ফলে অভাবে অপরাগ হয়ে মা তাকে ধোপার কাছে ন্যস্ত করেছিলেন। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি ইমাম আবূ ইউসুফ (রহ.)-এর ঝোঁক ছিল প্রচণ্ড। তাই তিনি ইমাম আবূ হানীফা (রহ.)-এর দরসে শরীক হতেন। মা এই তথ্য জেনে তাকে দরসে যেতে বাধা দিলেন এবং সে কারণে তিনি কয়েকদিন আবূ হানীফা (রহ.)-এর দরসে অনুপস্থিত থাকলেন।
মেধাবী ও বুদ্ধিমান ছাত্রের প্রতি উস্তাদদের আলাদা দৃষ্টি থাকে এবং সেটাই স্বাভাবিক। তাই কয়েকদিন অনুপস্থিত থাকার পর ইমাম আবূ ইউসুফ (রহ) দরসে উপস্থিত হলে ইমাম আবূ হানীফা (রহ) এর কারণ জিজ্ঞেস করেন। ইমাম আবূ ইউসুফ (রহ.) আদ্যোপান্ত ঘটনা বলেন। ঘটনা শুনে ইমাম আবূ হানীফা (রহ) দরস থেকে তাকে কাছে ডেকে নিলেন এবং একশ দিরহামের একটি থলি হাতে তুলে দিলেন। দেওয়ার সময় বললেন, আপাতত এই দিয়ে প্রয়োজন পূরণ করো। ফুরিয়ে গেলে আমাকে জানাতে ভুল করো না।
ইমাম আবূ ইউসুফ (রহ) বলেন, এরপর থেকে আমাকে কখনও বলতে হয়নি যে, আমার টাকা ফুরিয়ে গেছে। বরং টাকা ফুরিয়ে গেলে তিনি নিজ থেকেই আমাকে আবার টাকা দিতেন। যেন পয়সা শেষ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি তিনি নিজ থেকেই আঁচ করতে পারতেন!
মা এটা জেনে ভাবলেন, এভাবে আর কতদিন চলবে? বরং একটা স্থায়ী সমাধান এবং জীবিকার ব্যবস্থা হওয়া দরকার। একারণে একদিন তিনি ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বললেন, জনাব! এ তো ইয়াতিম বাচ্চা। আমি চাচ্ছি, সে কাজ শিখে জীবিকার স্থায়ী একটা ব্যবস্থা করে নিক, আপনি তাকে আপনার দরবারে উপস্থিত হতে বারণ করে দিন। মায়ের কথা শুনে ইমাম আবূ হানীফা (রহ) বললেন-
هو ذا يتعلم أكل الفالوذج بدهن الفستق
‘সে তো ইলম শিক্ষা করে পেস্তার ঘিতে ফালুদা খাওয়া শিখছে!’
মা এটাকে নিছক কৌতুক মনে করলেন এবং তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন-
أنت شيخ قد خرفت وذهب عقلك
‘আপনি বৃদ্ধ মানুষ। তাই আপনার আকল নষ্ট ও অকার্যকর হয়ে গেছে!’
কিন্তু কথাটির মর্ম ঠিকই বুঝেছিলেন ইমাম আবূ ইউসুফ (রহ.)। তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এই ইলমের বদৌলতে বিচারকের পদ দান করেছেন। তিনি তৎকালীন বিখ্যাত খলীফা হারুনুর রশীদের দস্তরখানে খুব বেশি আমন্ত্রিত হতেন। তিনি বলেন,
فلما كان في بعض الأيام قدم إلى هارون فالوذجة فقال لي يا يعقوب كل منها فليس في كل يوم يعمل لنا مثلها فقلت وما هذه يا أمير المؤمنين فقال هذه فالوذجة بدهن الفستق
‘একবার আমি হারুনুর রশীদের দস্তরখানে বসা ছিলাম। এসময় তিনি আমার সামনে একটি পেয়ালায় পেস্তার ঘিতে বানানো ফালুদা পেশ করেন এবং বলেন, এটি একেবারেই খাঁটি বস্তু। হে ইয়াকুব! ভক্ষণ করুন। এগুলো সবসময় বানানো হয় না। বরং আমার জন্য মাঝে-মধ্যে প্রস্তুত করা হয়। আমি আশ্চর্য হয়ে আবার জিজ্ঞেস করলাম, আমীরুল মুমিনীন! এগুলো কী? তিনি জবাবে বললেন, পেস্তার ঘিয়ে ভাজা ফালুদা।
আমি তার কথায় হেসে উঠলাম। তিনি হাসির কারণ জিজ্ঞেস করলে আমি পুরো ঘটনা ব্যক্ত করলাম। ঘটনা শুনে তিনিও অবাক হলেন এবং বললেন-
لعمري: إنه العلم ليرفع وينفع ديناً ودنيا وترحم على أبي حنيفة وقال: كان ينظر بعين عقله ما لا يراه بعين رأسه
‘আমার জীবনের শপথ! নিশ্চয় এই ইলম দুনিয়া ও আখেরাতে মর্যাদা বুলন্দ করে।’ এরপর তিনি ইমাম আবূ হানীফা (রহ.)-এর প্রতি রহমতের দু‘আ করে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা ইমাম আবূ হানীফাকে রহম করুন। তিনি সবকিছু অন্তর্চক্ষু দিয়ে অবলোকন করতেন, যা বাহ্যিক চোখ দিয়ে দেখা যায় না।’ [ওয়াফায়াতুল আইয়ান ওয়া আবনাউয যামান: ৮/২২১]
বিষয়: বিবিধ
১৪৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন