ইমাম শাফেয়ী রহঃ

লিখেছেন লিখেছেন মদীনার আলো ১০ জানুয়ারি, ২০১৫, ১০:৫০:৫৪ সকাল

নামঃ

মুহাম্মদ, পিতার নাম ইদ্রিস, দাদার নাম ওসমান, পর দাদার নাম শাফেয়ী। পর দাদার নামানুসারে তাকে শাফেয়ী বলা হয়। জন্মঃ তিনি মিসরের আসকালনা প্রদেশের গাযাহ নামক স্থানে ১৫০ হিজরী সনে জন্মগ্রহণ করেন।

বাল্যকালঃ

দুবছর বয়সে তাঁর পিতা মারা যান। অতঃপর তাঁর মাতা তাঁকে নিয়ে মক্কা চলে যান এবং সেখানে তিনি লালিত-পালিত হন।

শিক্ষাজীবনঃ

তিনি দশ বছর বয়সে পবিত্র কুরআন ও মুয়াত্তা মুখস্ত করেন। পরবর্তিকালে মদিনায় গিয়ে ইমাম মালেক (রহ)-এর নিকট ইলমুল ফিক্হ ও মুয়াত্তা শিক্ষা করেন। সেখান থেকে তিনি ইয়ামান চলে যান। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৩০ বছর। এখান থেকে তিনি ইরাক চলে এলে সেখানে প্রখ্যাত হানাফী ফকীহ ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসানের (রহঃ) সাক্ষাত পান এবং তাঁর সাথে শরীয়তের বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় হয়। ১৯৮ হিজরী সালে তিনি মিসর গমন করেন।

কর্মজীবনঃ

অধ্যাপনার মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা হয়। অতঃপর বাদশা হারুনুর রশীদের খিলাফতকালে তিনি নাজরান প্রদেশের গভর্ণর নিযুক্ত হন। কিন্তু সেখানে বেশি দিন চাকরি করতে পারেন নি।

ব্যক্তিত্বঃ

ইমাম শাফেয়ী (রহ) একজন মুহাদ্দিস, যুগশ্রেষ্ঠ ফিক্হবিদ ও কবি ছিলেন।

হানাফী ও মালেকি ফিকহেও তিনি বিশেষ দক্ষ ছিলেন।

কিছু ঘটনাঃ ১

ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর শাগরিদ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ. (মৃত্যু ২৪১ হিজরি) সবসময় নামাযে ইমাম শাফেয়ী রাহ.-এর জন্য দুআ করতেন। এতে তার

পুত্র আবদুল্লাহর মনে কৌতূহল জাগল। জিজ্ঞাসা করলে ইমাম আহমদ রাহ. বললেন- ﻛﺎﻥ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ ﻛﺎﻟﺸﻤﺲ ﻟﻠﺪﻧﻴﺎ ﻭﻛﺎﻟﻌﺎﻓﻴﺔ ﻟﻠﺒﺪﻥ، ﻭﻫﻞ ﺗﻌﺮﻑ ﻟﻬﺬﻳﻦ ﻣﻦ ﺧﻠﻒ অর্থাৎ

শাফেয়ী ছিলেন পৃথিবীর জন্য সূর্য তুল্য আর দেহের জন্য সুস্থতা।

তুমি কি এ দুয়ের বিকল্প কিছু জান?

২ ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) ও জনৈক নাস্তিকের বহসঃ

ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) কে এক বস্তুবাদী নাস্তিক বলেছিল, হুযুর! আপনারা কিভাবে আল্লাহর অস্তিত্বের কথা বলেন, বুঝে আসেনা। আল্লাহকে কথনো দেখেছেন? ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বললেন, বল কি! তুমি আল্লাহর অস্তিত্ব দেখ না? আমি তো ছোট্ট তুত পাতার মধ্যেই আল্লাহকে দেখতে পাই। লক্ষ্য করে দেখ, এই তুত পাতা যদি মধু পোকা খায় তখন তা মিষ্টি মধু হয়ে বের হয়। যদি রেশম পোকা খায়, তখন তা দামী রেশম হয়ে বের হয়। আবার যদি কোন বকরী খায় তখন তা শক্ত বড়ির মত লেদা হয়ে বের হয়। যে সত্তা এমন মেশিন ফিট করেছেন তিনিই হলেন 'আল্লাহ'।

৩ ইমাম শাফেয়ী(রহ) এর মা ছিলেন একজন সৎ ও ধার্মীক নারী । তাঁর সততা ও ধর্মপরায়নতা্র জন্য সারা দেশে তাঁর নাম ছিল ।এই বিদূষী নারীকে দেশের লোক যেমন শ্রদ্ধা করতেন তেমনি বিশ্বাসও করতেন । অনেকে তাঁর কাছে অনেক আমানত রাখতেন। একবার দুইজন লোক কাপড় ভর্তি একটা বাক্স রাখলেন । কিছু দিন পর একজন লোক তা নিয়েও গেলেন । কিন্তু কিছু দিন পর অন্যজন আবার বাক্স চাইলেন । তাকে বলা হল বাক্সটি তার সাথী নিয়ে গেছেন । তারপর লোকটি বলল আমরা দু-জন যে জিনিস রাখলাম তা আপনি একজনকে দিলেন কিভাবে ? বলা বাহুল্য ইমাম শাফেয়ীর(রহ) মা খুব অপ্রস্তত হয়ে গেলেন । তাঁর লজ্জার সীমা রইল না । ইমাম শাফেয়ী (রহ) তখন পুরো ঘটনাটা শুনলেন । তারপর এক মহুর্তের জন্য কি যেন ভাবলেন । তারপর লোকটিকে বললেন, ‘কিন্তু আপনিই বা বাক্স নিতে একা এলেন কেন? আপনার সঙ্গীকেও আনতে হবে’ ।তাঁর কথে শুনে লোকটি চুপ হয়ে গেলেন এবং নিঃশব্দে সেখান থেকে চলে গেলেন ।

ইমাম শাফেয়ী (রহঃ)-এর চারটি অমূল্য বাণী

১। চারটি বস্তু দ্বারা শরীর বেশ পরিপুষ্ট হয়ঃ (ক) গোশত, (খ) সুগন্ধি, (গ) প্রতিদিন গোসল করা এবং (ঘ) সুতির কাপড় পরিধান করা।

২। চারটি বস্তু দ্বারা দৃষ্টিশক্তি বেশ তীক্ষ্ণ হয়ঃ (ক) কাবা শরীফ দর্শন করা, (খ) শোয়ার পূর্বে সুরমা ব্যবহার করা, (গ) গাঢ় সবুজ গাছপালার দিকে দৃষ্টিপাত করা এবং (ঘ) পরিষ্কার জায়গায় বসা।

৩। চারটি অভ্যাস দ্বারা বেশ বুদ্ধি বাড়েঃ (ক) নিরর্থক বাক্যালাপ পরিত্যাগ করা, (খ) নিয়মিত মিসওয়াক করা, (গ) নেক মানুষের সংসর্গে থাকা এবং (ঘ) আলেমগনের সাথে ওঠাবসা করা।

৪। চারটি অভ্যাস দ্বারা রিজিক বৃদ্ধি পায়ঃ (ক) নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামায পড়া, (খ) বেশী করে তাওবা-ইস্তিগফার করতে থাকা, (গ) বেশী বেশী সদকা করা এবং (ঘ) বেশী বেশী জিকির করা।

মৃত্যুঃ

এ মহান ব্যক্তিত্ব ২০৪ হিজরিতে মিশরে ইন্তেকাল করেন।

বিষয়: বিবিধ

৩৮১৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

300032
১০ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ১১:৫৯
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : অনেক অনেক ধন্যবাদ । সুন্দর একটি বিষয় শেয়ার করার জন্য। বেশ কিছু তথ্য জানতে পারলাম।
300050
১০ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০২:৪৭
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : ধন্যবাদ সুন্দর পোস্টটির জন্য। এ মহান মনীষীকে আল্লাহ বেহেশতে উচ্চ মর্যাদা দান করুন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File