ইমাম আ’যমের মর্যাদা এবং নবীজীর ভবিষ্যদ্বানী’র সত্যতা পর্যালোচনা।

লিখেছেন লিখেছেন মদীনার আলো ২৫ জুন, ২০১৪, ১০:৪৬:১৭ সকাল

ইমাম আ’যমের মর্যাদা এবং নবীজীর ভবিষ্যদ্বানী’র সত্যতা পর্যালোচনা। মুসলীম শরীফে হযরত আবূ হুরায়রা (রা) হতে বর্নিত , তিনি বলেন, আমরা একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মজলিসে বসা ছিলাম । এমন সময় সূরা জুম’আ নাযিল হয় । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করে যখন এই আয়াতে পৌঁছলেন – وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ তখন সাহাবায় কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! এ সকল লোক কারা যাদের সম্পর্কে এ আয়াত নাযিল হয়েছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ঐ মুহুর্তে তাঁদের এ প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি । প্রশ্নকারী আরো একবার, দু’বার মতান্তরে তিনবার পর্যন্ত জিজ্ঞেস করলেন । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন হযরত সালমান ফারসী (রা)-এর কাঁধে হাত রেখে ইরশাদ করলেন- لو كان الدين عند الشر يا اذهب به ر جل من ا بنا ء فا ر س حتي تن و له “দ্বীন ও ধর্মের জ্ঞান আহরণ করা মানুষের পক্ষে যদি এতো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে যে, আকাশের দুর্গম প্রান্ত বা সুরাইয়্যা তারকায় যেয়ে বিলুপ্ত হয়, তবু পারস্যের এক ব্যক্তি সেখান থেকে দ্বীন আহরণ করতে সক্ষম হবে। (মুসলীম শরীফ,হাদীস নং২৫৪৬) উক্ত হাদীসের ব্যাপারে, বিখ্যাত ইমাম আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতী (রহ) তার অন্যতম গ্রন্থ ‘তাবয়ীযুছ ছহীফা’এবং আল্লামা ইবনে হাজার মাক্কী (রহ) ‘আল খাইরাতুল হিসান ’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উক্ত বানী দ্বারা ইমাম আ’যম (রহ)-এর দিকে ইংগিত করা হয়েছে । # তবে হাদীসের ভাষা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে বিষয়টি আরো স্পষ্টতর হবে — ◆ প্রথমত, উক্ত হাদীসে পারস্য বংশোদ্ভুত উলামায় কেরামের কথা বলা হয়েছে । একথা সর্বজন বিদিত যে, ইমাম আবূ হানিফা (রহ) ছাড়া আর কোন মুজতাহীদ ফকীহ বা হাদীস বিসারদ পারসিক ছিলেন না। যদি এবার অন্যান্য ইমামদের বংশ যাচাই করে দেখি তাহলে দেখতে পাব—- ◇ ইমাম মালিক (রহ) এবং ইমাম শাফে’ঈ (রহ) ছিলেন আরব বংশদ্ভুত। ◇ ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ) ছিলেন খোরাসানের ‘মারভ’শহরের অধিবাসী । ◇ ইমাম বুখারী (রহ) ও ইমাম তিরমিযী (রহ) ছিলেন যথাক্রমে ‘বুখারা’ও ‘তিরমিয’ নগরীর অধিবাসী। যা তুরানে অবস্থিত । ◇ ইমাম মুসলীম (রহ) জন্মগ্রহন করেছেন খোরাসানের ‘নিশাপুর’ এলাকায় । ◇ ইমাম আবু দাউদ (রহ)-এর জন্ম কান্দাহারের ‘সিসতান’ এলাকায় । ◇ ইমাম নাসাঈ (রহ)-এর জন্ম খোরাসানের ‘নাসা’নগরীতে । ◇ ইমাম ইবনে মাযা (রহ)-এর জন্ম ইরাকের ‘কাযবীন’ শহরে । অতএব, উপরোক্ত ইমামদের অবস্থান পর্যালোচনা এটাই স্পষ্টভাবে প্রমান করে যে, ‘ٌر جل من أ بنا ء فا ر س’ ‘পারস্য বংশোদ্ভুত সেই ব্যক্তি ‘ একমাত্র ইমাম আবূ হানিফা (রহ)-ই হবেন। অন্য কেউ নন । ◆ দ্বিতীয়ত, পারস্য বংশোদ্ভুত উলামায় কেরামের মাঝে জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় ইমাম আবূ হানিফা (রহ)-এর স্তরে আর কেউ পৌঁছাতে পারেন নি। হযরত সালমান ফারসী (রা)-এর পর তিনিই একমাত্র ব্যক্তি –যিনি সরাসরি সাহাবা ও তাবেঈন থেকে ইলম হাসিল করেছেন । যা অন্য কোন ফিক্বহবিদ কিংবা মুহাদ্দিসের পক্ষে এ ধরনের সৌভাজ্ঞ অর্জন করা নসীব হয়নি। ◆ তৃতীয়ত, মুসলীম শরিফের সেই হাদীসে ‘تن و ل’ শব্দের দ্বারাও বুঝা যায় যে, এই ব্যক্তি হবেন একজন মুজতাহীদ । যার কাছে থাকবে শরীয়তের সকল শাখা-প্রশাখার জ্ঞান এবং কুরআন ও হাদীস থেকে মাসায়েল আহরনণের ক্ষেত্রে তিনিই হবেন পূর্ন পারদর্শী । (-হাদাইকুল হানাফিয়্যা) আর পরিশেষে সকলকে অবহিত করতে চাই এই বলে, জুমহুর উলামায় কেরামের মতে চার মাঝাহাবের চার ইমাম ছাড়া আর কেউ এ স্তরে উপনীত হতে পারেন নি। আইম্মায়ে আরবা’আর মাঝে ফিক্বহ সংকলন ও ইজতেহাদের ক্ষেত্রে একমাত্র ইমাম আবূ হানিফা (রহ)-ই ছিলেন সর্বক্ষেত্রে অগ্রগামী । তাই আমরা বড়ই সৌভাজ্ঞবান এই জন্য যে, আল্লাহর-পাকের অশেষ কৃপায় এমন একজন রাহনুমা বা পথনির্দেশকের অনুসারী হতে পেরেছি

http://muftihabibullahsiraji.com/2014/03/%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%9E%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%8F%E0%A6%95-%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%AE%E0%A6%BE-9/

বিষয়: বিবিধ

১৫৮২ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

238677
২৫ জুন ২০১৪ সকাল ১১:৫৯
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : সুন্দর একটি ঘটনার কথা জানালেন, যেটা আমি আজ প্রথম শুনলাম। আমি খুবই অনুপ্রাণীত হলাম এই হাদিস টি জেনে। কেননা ইমাম আবু হানিফা সম্পর্কে আমি প্রচুর পড়েছিলাম তবে তার পক্ষে যায় এমন স্বীকৃতি সম্পর্কে জানিনা। আল্লাহ ইমাম আবু হানিফার কর্মের উসিলায় আমাদের সবাইকে কল্যাণ দানে বাধিত করুন। আমীন।
238689
২৫ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:১৫
ইসলামিক বই লিখেছেন : সুবহানাল্লাহ! দারুন কথা বলেছেন..হাদীসটিও সহীহ কিন্তু তাফসির ইবনে কাসিরে আছে...


দেখুন মুজাহিদ (রহ) কি বলেছেন। এখানে তো শুধু ইমাম আবু হানিফা (রহ) কথা নাই? এখানে তো আম ভাবে সবার কথা আছে তিন যুগের?

তাহলে বলেন কার ব্যাখ্যা নিব? আপনাদের নতুন আবিস্কার করা ব্যাখ্যা নাকি ইমাম ইবনে কাসিরের দেয়া তাবেঈদের(রহ)ব্যাখ্যা??


[ইমমা আবু হানিফা (রহ)নিঃসন্দেহে একজন ভাল মানুষ ছিলেন কিন্তু তার নামে এতো বাড়াবাড়ি করার কোন প্রয়জন আছে বলে মনে হয় না। বড়ং রসুল (সা) বলেছেন কেউ মুখের সামনে কারো প্রশংশা করলে তার মুখে কাদা ছুুড়ে মাড়তে। ইমাম আবু হানিফা (রহ) বেচে থাকলে হয়তো তার অতিপ্রশংসা করীদের মুখে কাদাই ছুড়তেন বলে মনেহয়]
২৫ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:২০
185136
ইমরান ভাই লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ ইসলামিক বইকে...
আমি তো দেখি এই আয়াতের ব্যাখ্যা সাহল ইবনে সাদ সাইদি (রা) ও একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যা আপনার স্কৃন শর্টে আছে।

তাহলে তো এই আয়াতের ব্যাখ্যা স্পষ্ট হয়ে গেল যে সেই লোক কোন নিদৃষ্ট লোক নয়। বরং রসুল (সা) এর পরের তিন প্রজন্ম সবাই।

আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন সত্য জিনিস দেখানোর জন্য।

সত্যি আবু হানিফা বেচে থাকলে কাদা ছুড়তেন।
২৫ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:৩৭
185142
ইসলামিক বই লিখেছেন : Happy Happy
২৫ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:২৩
185201
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ
238721
২৫ জুন ২০১৪ দুপুর ০২:১৬
ডাহুকী লিখেছেন : মারেফুল কোরআনের রেফারেন্স দিলাম


238722
২৫ জুন ২০১৪ দুপুর ০২:১৭
ডাহুকী লিখেছেন :
238724
২৫ জুন ২০১৪ দুপুর ০২:২০
ডাহুকী লিখেছেন : এখানে তো শুধু ইমাম আবু হানিফা (রহ) কথা নাই? এখানে তো আম ভাবে সবার কথা আছে তিন যুগের? [ইমমা আবু হানিফা (রহ)নিঃসন্দেহে একজন ভাল মানুষ ছিলেন কিন্তু তার নামে এতো বাড়াবাড়ি করার কোন প্রয়জন আছে বলে মনে হয় না।
238735
২৫ জুন ২০১৪ দুপুর ০৩:০৬
সন্ধাতারা লিখেছেন : Wonderful discussion in the light shohi Hadith. Jajakalla khairan.
238757
২৫ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:১৬
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : ইমাম আবূ হানীফা(রহ) এর উচ্চ মর্যাদার বিষয়ে সন্দেহ নেই।

তবে আমরা যারা মাযহাব অনুসরণের নামে ইমাম আবূ হানীফার নামে প্রচলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছি তাদের একটু ভাবার প্রয়োজন রয়েছে বৈকি!

> আপনি যে কথাটি ইমাম আবূ হানীফা(রহ) এর নামে বলছেন, সেটি যে ইমাম আবূ হানীফার(রহ) সে ব্যাপারে আপনি কতটা নিশ্চিত? হাদীস সংকলনের ইতিহাস যারা জানেন, তারা একবাক্যে স্বীকার করবেন যে- ইমাম আবূ হানীফা(রহ) ও অন্যান্য সকল ইমামের বক্তব্য বিকৃত হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। যেখানে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরও হাদীস জাল হয়েছে, সেখানে ইমামদের বক্তব্য জাল করাটা কোন কঠিন বিষয় ছিলনা জালিয়াতদের জন্য।

> যে সকল বিষয়ে সহীহ হাদীসে সমাধান আছে সে সব ইস্যূতে ইমাম এর বক্তব্য গ্রহণ করার কি আদৌ সুযোগ আছে? সেটা করে কি আমরা রাসূলুল্লাহ(সা) এর চেয়ে ইমামকে বেশি মর্যাদা দিচ্ছিনা? মানুষদের মধ্যে মর্যাদায় রাসূলুল্লাহ(সা) সর্বশ্রেষ্ঠ।

238918
২৫ জুন ২০১৪ রাত ০৯:৪০
মনসুর লিখেছেন : মাশাআল্লাহ, সুন্দর লিখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ, জাজাকাল্লাহু খাইরান। শুভেচ্ছান্তে ধন্যবাদ।

মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
313245
০৬ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০২:৫৭
এম এম নুর হোসাইন মিয়াজী লিখেছেন : শুকরিয়া ,জাযাকাল্লাহ।আপনার এই লেখাকে কিছু অপব্যাখা কারি অপব্যাখা করেছে দেখে অবাক হলাম।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File