পোশাক কি রকম পরা সুন্নাত

লিখেছেন লিখেছেন মদীনার আলো ১১ জুন, ২০১৪, ১১:১৭:৫৯ সকাল

সভ্য মানুষের জন্য পোশাক একটি অপরিহার্য্য ব্যাপার। পোশাক ব্যাতীত সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষই কল্পনা করা যায় না। তাই আজকের দিনে পোশাক নিয়ে নানা গবেষণা হচ্ছে। নিত্য-নতুন ডিজাইনের পোশাক আজ আমাদের নারী-পুরুষ উভয়ের মাঝেই দেখা যায়। কিন্তু অতীব দুঃখের সাথেই বলতে হয় শালীনতা নামক শব্দটা কেমন যেন বিলুপ্ত প্রায় হয়ে গিয়েছে। কেউ এটাকে অতি আধুনিকতার বিরূপ প্রভাব বলে মনে করেন। আবার কেউ অশালীন পোশাক পড়ার পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে বলেন, এটা তার ব্যক্তিগত অধিকার,রুচি ও মূল্যবোধের ব্যাপার। এটা নিয়ে অন্য কারও মাথাব্যাথা হয় কেন। আসলে মাথাব্যাথা তখনই হয়,যখন কোন কিছু মহামারি আকার ধারন করে। কেউ হয়তবা এই অবস্থার জন্য ধর্মীয় অনুশাসন মেনে না চলাকেই দায়ী করেন। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি ধর্মেই পোশাকের কথা বলা আছে।

আমাদের আলোচনার বিষয়, মুসলমান পুরুষদের পোশাক কেমন হওয়া উচিত এবং কোন পোশাক পড়লে সুন্নাত আদায় হবার পাশাপাশি ফরজও আদায় হবে।

আমাদের সমাজে একদল লোক আছে, যারা বলে থাকেন ইসলামে মুসলমানদেরকে নির্দিষ্ট কোন পোশাকের কথা বলা হয়নি। কথাটা আমার কাছে হাস্যকর মনে হয়। কারন, আমরা সকলেই জানি ইসলাম একটি পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম যদি পূর্নাঙ্গই হয়, তবে সেখানে পোশাক নিয়ে কেন নীতিমালা থাকবে না ? অবশ্যই পোশাক নিয়ে নীতিমালা আছে। যেই নীতিমালাগুলো যুগ যুগ ধরে সাহাবায়ে কেরাম,তাবেইন,তাবে-তাবেইন,বুজুর্গানে দীনের মাধ্যমে আমাদের কাছে এসে পৌছেছে। তাঁদেরকে অনুসরন করাটাই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত ব্যাপার। তবে আমরা অন্ধ অনুকরন কিংবা অনুসরন নয় দলীল-প্রমানাদি,তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তির ভিত্তিতে শরীয়তের মাপকাঠিতে যেটা সঠিক সেটাই পরিধান করার চেষ্টা করব। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন।

আসুন সবার আগে জেনে নেই ফরজ (অত্যাবশ্যকীয়) পোশাক কতটুকু : পোশাক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু আছে ফরজ পরিমাণ, আবার কিছু অতিরিক্ত। পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢাকা ফরজ। আর এর বাইরে সমস্ত শরীর ঢাকা (হাত,পা ও মুখমন্ডল ব্যাতীত) উত্তম।

পোশাকের ব্যাপারে যে বিষয় লক্ষ্যনীয়-

১.শরীরের সব অঙ্গপ্রতঙ্গ যেন কাঙ্খিত পরিমান ঢাকা থাকে।

২. আঁটসাট পোশাক যার মাধ্যমে শরীরের গড়ন ও গঠন ফুটে উঠে এমন পোশাক জনসমক্ষে না পরা।

৩.দ্বীনদার মুত্তাকী পরহেযগার ব্যক্তিদের পোশাক ব্যবহার করা। ফাসেক ফুজ্জারদের পোশাক না পরা।

৪.পুরুষরা মহিলাদের বা মহিলারা পুরুষের পোশাক না পরা।

৫.সাধ্যানুযায়ী ভালো পোশাক পরা।

কোরআনুল কারিমের ঘোষনা- হে বনী আদম ! আমি তোমাদের জন্য পোষাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি সাজ-সজ্জার পোশাক এবং পরহেজগারীরর পোশাক, এটিই সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর কুদরতের অন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা ভাবনা করে। (সূরা আরাফ-২৬/৮ পারা)

অত্র আয়াতে এমন পোশাকের কথা বলা হয়েছে যা লজ্জাস্থান আবৃত করে। এটাই ফরজ পোশাক। এ ব্যাপারে শামী কিতাবের ১ম খন্ডের ৩০৭ পৃষ্ঠায় লখো আছে-একজন মুসলমানের জন্য ফরজ লেবাসের পরমিান হলো এতটুকু যা দ্বারা শরয়ী সতর (পুরুষের নাভী হতে হাটুর নিচ পর্যন্ত এবং স্বধীন স্ত্রী লোকের দুই হাতলী, দুই পায়ের পাতা ও মুখমন্ডল ব্যতীত সমস্ত শরীর আর প্রয়োজনে বাইরে বের হবার সময় বা গায়েরে মোহরেমের সম্মুখীন হওয়রা কালে মুখমন্ডল, হাতের কব্জি,পায়ের পাতাসহ সমস্ত শরীর) ঢেকে রাখা সম্ভব হয় এবং এমন ধরনের পোশাক যা দ্বারা ঠান্ডা এবং গরমের কষ্ট দূরীভূত করা সম্ভব।

আল্লাহ পাকের বানী- হে আদম সন্তান তোমরা প্রত্যেক নামাজে সুন্দর পোষাক ধারন কর (সূরা আরাফ-৩১, পারা-৮)।

শামী কিতাবের ৫/২৩১ ও হাশীয়ায়ে তাহতাবী ৪/১৭৭ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে – ঠান্ডা-গরম থেকে বাঁচার জন্য মানুষ কাপড়রে মুখাপক্ষেী হয়। সুতরাং লেবাস -পোশাককেও পানাহারের সাদৃশ বলা যায়। কাজেই নামাজের জন্য এবং শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য পোশাক পরধিান করা পানাহারের ন্যায় অত্যাবশ্যক যা সার্বক্ষণকি ফরজ।

আল্লাহ তায়ালার বানী ”অলিবাছুত তাকওয়া জালিকা খায়ের”- আর আমি অবতীর্ণ করেছি তাকওয়ার পোশাক। এটাই (তাকওয়ার পোশাকই) সর্বোত্তম।সকল আম্বিয়াদের পোশাক ছিল ক্বামীছ। এখানে তাকওয়ার পোশাক বলতে উহাই উদ্দেশ্য। আল্লাহ পাকের বানী – তোমরা আমার এই জামা নিয়ে নাও-(সূরা ইউসুফ-৯৩, পারা-১২)

হযরত উম্মে সালামা (রা থেকে বর্নিত তিনি বলেন, রাসূলে পাক (সা এর নিকট অতি পছন্দীয় পোষাক ছিল ক্বামীছ -(শামায়েলে তিরমিযী,হাদীস নং ৫৩). মেরকাত গ্রন্থরে ৮ম খন্ডরে ২২২ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত হয়েছে যে, কামিছ দুই আস্তিন বিশিষ্ট সেলাইকৃত এমন একটি পোশাকের নাম যার (গলা ব্যতীত অন্য) কোন অংশ ফাড়া থাকেনা।ফলে দুই প্রান্তে ফাঁড়া জামা ক্বামিছের সংঙ্গা ভুক্ত নয়।

নেছফে ছাক ও গোলজামা সুন্নাত : তাহতাবী কিতাবে রয়েছে- যে কাজটি স্বয়ং রাসূলে পাক (সা ও তাঁর সাহাবীরা করে গেছেন তাই সুন্নাত। এ হিসেবে রাসূলে পাক (সা এর একাধিক কাওলী ও ফিলি হাদীস দ্বারা নেছফে ছাক জামা, গোলজামা সাব্যস্ত হয়েছে। হযরত আবু সাইদ খুদরী (রা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলে পাক (সা কে বলতে শুনেছি, মুমিন ব্যক্তির লুঙ্গির ঝুল হবে তার নালার অর্ধেক পর্যন্ত। নালার অর্ধভাগ হতে টাখনু পর্যন্ত পরিধানের ক্ষেত্রে কোন অপরাধ নেই। (মেশকাত-৩৭৪ পৃষ্ঠা)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (সা লুঙ্গি পরিধান করা সম্বন্ধে যেরুপ বলেছেন, ক্বামীছ (জামা) সম্পর্কেও সেরুপ বলেছেন’’ (আবু দাউদ)

হযরত সালমা ইবনূল আকওয়া (রা খেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমি আরজ করলাম হে আল্লাহর রাসূল ! আমি একজন শিকারী লোক, এমতাবস্থায় আমি কি একটি মাত্র ক্বামিছের দ্বারা আমার নামাজ আদায় করতে পারি? রাসূলে পাক (সা বললেন হ্যাঁ পার, তবে কাপড়ের ঘুন্ডির দ্বারা। আর যদি তা না পাওয়া যায় তবে কাটার দ্বারা হলেও নিকটস্থ ফাকটি বন্ধ করবে- (মিশকাত)

ফরজ পোশাকের ব্যাপারে আমাদের মধ্যে মতবিরোধ কম দেখা যায়। সুন্নাতি পোশাক নিয়েও কিছুটা ধুম্রজাল তৈরী হয়েছে। যেমন-অনেকেই মনে করেন পাঞ্জাবি পড়লেই সুন্নাত আদায় হয়ে যায়। কিন্তু তা না। উপরের আলোচনায় আমরা হাদীস উল্লেখ করেছি,যেখানে বলা হয়েছে রাসূল (সাঃ) এর সবচেয়ে প্রিয় পোশাকগুলোর মধ্যে কামিছ অন্যতম। কারও নিকট যেই জিনিসটা বেশী পছন্দীয় সেটাই তাকে বেশী ব্যবহার করতে দেখা যায়। তার মানে রাসূল (সাঃ) কামিছ বেশী পড়তেন। কামিছের গঠন প্রকৃতির মধ্যে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র গলায় একটি ফাকা থাকবে, জামার অন্যত্র যেমন দুইপাশে কিংবা নিচের দিকে অল্প একটু ফাঁকা থাকবে না। কাজেই কানিফাঁড়া পাঞ্জাবীর দ্বারা সুন্নাত আদায় হবে না। অনেকেই বিশাল কানিফাঁড়া পাঞ্জাবী পড়েন। আপনাকেই বলছি, আপনার ফরজ আদায় হচ্ছে এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই কিন্তু সুন্নাত তো ছুটে যাচ্ছে। অপরদিকে আপনি যদি কামিছ পরিধান করেন একই সাথে আপনার ফরজ এবং সুন্নাত দুটিই আদায় হচ্ছে। তার চাইতেও জলন্ত প্রমান হলো রাসূল (সাঃ) এই জামা মুবারক যাতে হাদীসে উল্লেখিত গলার কাছের একটি ফাঁড়াই দেখা যাচ্ছে। এরপরও আর কোনভাবেই প্রমাণ করা লাগে না কামিছের চাইতেও শ্রেষ্ঠ কোন পোশাক আছে। এছাড়াও যুগ যুগ ধরে সাহাবায়ে কেরাম,তাবেইন,তাবে-তাবেইন সহ আমাদের উপমহাদেশের যেসমস্ত হক্কানী ওলামায়ে কেরাম যাদের মাধ্যমে আমরা দীন-ইসলাম পেয়েছি তাঁদের জীবন পর্যালোচনা করলেই দেখা যায় তারা সবাই কামিছ ব্যবহার করতেন।

আসুন দেখে নেই কামিছ ব্যবহারের অন্যতম কয়েকটি সুবিধাঃ

১.কামিছের পাশে ফাঁড়া না থাকায় কোনভাবেই আপনার পর্দা লঙ্ঘন হবে না।

২.অযু-এস্তেনজায় কাপড় অপবিত্র হবার সম্ভাবনাও কম।

৩.শীত-গরম সর্ববস্থায় অন্য পোশাকের চাইতেও সুরক্ষা বেশী হয়।

৪.একই সাথে ফরজ ও সুন্নাত আদায় হয়।

যারা বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী তারা এমন পোশাকটাই বেছে নিবেন যা দিয়ে ফরজ ও সুন্নাত দুটিই আদায় হবে। কারন ফরজ তো অত্যাবশ্যকীয়। আর পাশাপাশি পোশাকটা যদি এমন হয় যা প্রিয় নবী (সাঃ) এর প্রিয় পোশাক ছিল,যা যুগ যুগ ধরে সাহাবায়ে কেরাম,তাবেইন,তাবে-তাবেইন সহ আউলিয়ায়ে কেরাম সবাই পড়েছেন তবেই কতই না উত্তম কাজ হয়। দুনিয়ায় আমরা কয়েকটা দিনের মুসাফির মাত্র। কার মৃত্যু কোথায় হয় তা আমরা কেউ বলতে পারি না। আমাদেরকে যখন কাফনের কাপড় পড়ানো হয় তখন ঐ কাপড়টির মাঝেও গলার দিকে একটি ফাঁকা থাকে। আল্লাহ পাক তাঁর নবীর মাধ্যমে কি সুন্দর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। উপরে বর্ণিত কামিছেরও গলার দিকে একটি ফাঁকা। এই কামিছ পড়ে কেউ যদি গলার ফাঁকার দিকে খেয়াল করে তবে তার মৃত্যুর কথা মনে পরবে। আর তখন সে যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারবে।

সংগৃহীত

বিষয়: বিবিধ

২৫৭১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

233632
১১ জুন ২০১৪ সকাল ১১:৫৮
হতভাগা লিখেছেন : সে রকম কামিছ এখন পাওয়া যায় কি ?

যদি পাওয়া যায় তাহলে যেটা রাসূল (সাঃ) পরিধান করতেন সেটার এবং বর্তমানে সেটার অনুরুপ যেগুলো আছে তার তুলনামূলক ছবি দিলে ব্লগারদের উপকার হত - ইনশা আল্লাহ।
233639
১১ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:০৯
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক অনেক ধন্যবাদ খুব ভালো লাগলো
233684
১১ জুন ২০১৪ দুপুর ০১:৪৭
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : সংগ্রহীত ভাল পোষ্ট যদিও একটু বড় পোষ্ট তবু ধন্যবাদের কমতি হবেনা। শুভেচ্ছা রইলো।
233713
১১ জুন ২০১৪ দুপুর ০২:৩৩
পবিত্র লিখেছেন : শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
267264
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৫৫

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File