হযরত হাসান বসরী প্রথম মানসিক পরিবর্তন

লিখেছেন লিখেছেন মদীনার আলো ১০ জুন, ২০১৪, ০৩:২৪:৩৮ দুপুর

হযরত হাসান বসরী প্রথম মানসিক পরিবর্তন সম্পর্কে বলা হয়- হযরত হাসান বসরী রহ: মণি-মানিক্যের ব্যবসা করতেন। ব্যবসায়িক কাজে একবার তিনি রোম শহরে গেলেন। রোমের একজন উযীরের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়। একদিন এ উযীরের অনুরোধে তিনি শহরের উপকন্ঠে এক জায়গায় ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতে গিয়ে সেখানে অত্যন্ত সুসজ্জিত সুবৃহত স্বর্ণ ও মণি-মাণিক্যখচিত তাঁবু প্রতিষ্ঠিত দেখতে পান।

একদল সুসজ্জিত সৈন্য তাবু প্রদক্ষিন করে তাদের ভাষায় কি কি বলতে বলতে চলে যায়। এর পর প্রায় চারশত বিদ্বান ও পন্ডিত এসে পূর্বের ন্যায় তাবু প্রদক্ষিণ করে কিছু বলতে বলতে চলে গেলেন। পরক্ষণেই প্রায় দুই শতাধিক সুন্দরী বাঁধী প্রত্যেকে বহু মূল্যবান মণি-মাণিক্যপূর্ণ থালা মাথায় নিয়ে তাবু প্রদক্ষিণ করে কি যেন বলতে বলতে চলে গেলো। সর্বশেষে স্বয়ং রোমসম্রাট ও তার উযীর তাবু ভিতর প্রবেশ করে কিছু সময় পর বের হয়ে গেলেন । হযরত হাসান বসরী রহ: বলেন, এসব দেখে আমি অবাক হয়ে উযীরকে এর কারণ জিজ্ঞাস করলে’ উযীর বলেন, “এই সম্রাটের এক সুদর্শন ও গুণবান রাজপুত্র ছিলেন। প্রাণধিক সে পুত্রের প্রতি সম্রাট অত্যন্ত দর্বল ছিলেন। প্রচন্ড ভাবাসতেন তাঁকে। হঠাত পুত্র কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে চিকিত্সকগন শত চেষ্টাতেও তাঁকে বাচাতে পারলেন না। তাঁকে এ তাবুতেই দাফন করা হয়েছে। বাদশাহ প্রতি বছরই একটি বিশেষ দিনে মহা আড়ম্বরে তার সমাধি দর্শন করতে আসেন। আজ সে দিন। আপনি প্রথমে যে সেনাদলকে তাঁবু প্রদক্ষিণ করতে দেখলেন তারা বলছিল “হে রাজকুমার! তোমার যে পরিণতি হয়েছে আমাদের বাহুবলে যদি তা প্রতিহত করা সম্ভবপর হত তাহলে আমরা প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় তোমাকে মুক্ত করতাম। কিন্তু যিনি এর নিয়ন্ত্রক তার সাথে কোন যুদ্ধ চলে না”।

বিদ্বানমন্ডলী এসে বলেছেন “হে রাজকুমার ! যদি আমাদের জ্ঞান, বিজ্ঞান ও পান্ডিত্যের বলে এ কষ্ট দুর করা সম্ভব হত তাহলে, আমরা তোমার জন্য তাই করতাম”।

সম্মানিত বৃদ্ধগন এসে বলেছেন “হে যুবরাজ ! যদি সুপারিশ ও কান্নাকাটি করে তোমার জীবন রক্ষা করতে পারতাম তাহলে আমরা কখনো তা থেকে বিরত থাকতাম না”

পরে সুন্দরী দাসীগন রত্নপূর্ণ থালা মাথায় নিয়ে এসে বলল, “হে প্রভু !যদি ধনরত্ন ও সৌন্দয্য দিয়ে তোমাকে রক্ষা করা আমাদের পক্ষে সম্ভবপর হত তাহলে তোমার জন্য এ ধনরাশি উত্সর্গ করতাম। কিন্তু যিনি এসব সৃষ্টি করেছেন তার কাছে ধনরত্ন ও রুপ-লাবণ্যের কোন মূল্য নেই।

অবশেষে সম্রাট এগিয়ে গিয়ে বললেন “হে প্রাণ প্রিয় পুত্র! তোমার পিতার হাতে আর কি শক্তি আছে? আমি তোমার জন্য সৈন্যদল, বিদ্বান, বৃদ্ধপুরুষ, রুপ-লাবন্য,ধনসম্পদ, এবং সৌন্দর্যের সাহায্যে যদি এ বিপদ দুর করা সম্ভব হত তাহলে সর্বশক্তি দিয়ে তোমার প্রাণ রক্ষান চেষ্টা করতাম। কিন্তু যিনি এমনকি করেছেন, তোমার পিতা, সমস্ত পৃথিবী তাঁর শক্তির মোকাবেলায় সম্পূর্ণ দূর্বল”।

এসব বলে বাদশা চোখের পানি ফেলে ফেলে বাদশাহ বাইরে বেরিয়ে এলেন।

উযীরের সাথে বর্ণনায় হযরত হাসানের হৃদয়ে নাড়া দিয়ে গেল। তিনি বড়ই অনুতপ্ত ব্যাকুল হয়ে স্বীয় ব্যবসা পরিত্যাগ করে পারলৌকিক চিন্তায় অধীর হয়ে ফিরে এলেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, আর কখনো এ নশ্বর এবং পাপপূর্ণ সংসারের মোহে নিজেকে জড়াবেন না। তখন থেকেই তিনি ইবাদত রিয়াযাতে নিজেকে এমনভাবে আত্মনিয়োগ করলেন যে, সেকালে তাঁর মত কঠোর রিয়াযত আর কাউকে দেখা যায়নি। তিনি ৭০ বছর ওযূ সহ ছিলেন। ওযূ বিনষ্ট হলে সাথে সাথে আবার ওযূ করে নিতেন।

সংগৃহীত

বিষয়: বিবিধ

১৪৪৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

233318
১০ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৮
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : খুবই ভাল লাগলো।তথ্যসুত্র দিলে আরো ভালো লাগতো।
233327
১০ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:০৫
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : সুন্দর পোষ্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
233425
১০ জুন ২০১৪ রাত ১০:১৯
মাটিরলাঠি লিখেছেন : কাহিনীর মূল প্রতিপাদ্য হলোঃ "কখনো এ নশ্বর এবং পাপপূর্ণ সংসারের মোহে নিজেকে জড়াবেন না।"

জাজাকাল্লাহু খাইরান।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File