আমিরুল মুমিমিন ফিল হাদীস আবদুল্লাহ ইবনু মুবারাক রাহিমাহুল্লাহ
লিখেছেন লিখেছেন মদীনার আলো ১৮ মার্চ, ২০১৪, ০৯:৫৭:৩৬ সকাল
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
জন্ম: পুরো নাম আবদুল্লাহ বিন মুবারাক বিন ওয়াদহি আল হানযালী আত তামীমী। আবদুল্লাহ্ ইবনু মুবারাকের জন্ম হিজরি ১১৮ সনে খোরাসানের (বর্তমান মধ্য এশিয়া ও আফগানিস্তান) মারো শহরে। এই মারো শহরের ঐতিহ্য রয়েছে বিখ্যাত আলিম জন্ম দেয়ার, যাদের মধ্যে রয়েছেন- আহমাদ ইবনু হান্বাল, সুফিয়ান আস-সাওরী এবং ইসহাক ইবন রাহাওয়ী প্রমূখ।
জ্ঞানের অন্বেষা: অসাধারণ স্মৃতিশক্তি আর দক্ষতা আবদুল্লাহ ইবনু মুবারাককে দিয়েছিলো জ্ঞানার্জন আর ধরে রাখার অনন্য সক্ষমতা। তিনি জ্ঞানের এতোই পিয়াসু ছিলেন যে জ্ঞান আর জ্ঞানীদের তীর্থস্থানগুলো চষে বেড়াতেন। ইবনু হাতিম বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, “ ইবনুল মুবারাক হাদীস সংগ্রহে পৃথিবীর এক-চতুর্থাংশ ভ্রমন করেছেন, তিনি না বাদ রেখেছেন ইয়েমেন না মিশর, না শাম, না জাজিরাতুল আরব, না বসরা না কুফা।“ [তাকাদ্দুমাত আল-জারহ ওয়া আল-তাদীল, ইবনে আবি হাতিম আর-রাযি]
ইমাম আয-যাহাবী তাকে বলেন: “আস-সাফার” (যিনি পুনঃপুনঃ আর দুরবর্তী সফর করেন)। [তাযকিরাতুল হুফফাজ]
তিনি বলেন: “আমি ত্রিশ বছর ‘আদাব শিখেছি আর বিশ বছর শিখেছি ‘ইলম।”
এভাবে, তিনি ফিকহ্, সাহিত্য, ব্যাকরণ, ভাষাবিজ্ঞান, যুহদ, সাহসিকতা, কাব্য ও ভাষার অলংকরণ, তাকওয়া ও অল্পে তুষ্টি, তাহাজ্জুদ এবং ইবাদাহ, জিহাদে অংশগ্রহণ ও তার কৌশল, কথায় মিতভাষী হওয়া, সঠিক মত প্রকাশের ক্ষেত্রে নির্ভুলতা আর নিজের সঙ্গীদের সাথে মতপার্থক্যে লিপ্ত না হওয়া ইত্যাদি গুণাবলী অর্জন করেছিলেন। [তারীখ বাগদাদ]
মুহাদ্দিস: ইবনুল মুবারাককে তার সময়ের চারজন ইমামের একজন মনে করা হতো; তার অগাধ হাদীসের পান্ডিত্য আর ফিকহের জ্ঞানের কারনে। জারহ ওয়া তা’দীলের আলিমরা নিরঙ্কুশভাবে ইবনুল মুবারাককে বলেছেন শক্তিশালী, নির্ভরযোগ্য আর বিশ্বস্ত মুহাদ্দিস। তিনি ইমাম বুখারীর সহীহার বর্ণনাকারী; যেখানে ইমাম বুখারী হাদীস নেয়ার ক্ষেত্রেই অনেক কড়াকড়ি আরোপ করেছেন।
আসওয়াদ ইবনু সালিম বলেন: “ইবনুল মুবারাক ছিলেন একজন ইমাম যিনি অনুসরণযোগ্য। তার সুন্নাহর ব্যাপারে জ্ঞান ছিলো প্রখর। যে কেউ তার ব্যাপারে অপমানজনক কথা বললে তুমি তাকে তার ইসলামের ব্যাপারে নালিশ করো।“ [তারীখ বাগদাদ]
ইবনুল মুবারাকের শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন ইমাম আবু হানিফা, হাম্মাদ ইবন যায়দ, হাম্মাদ ইবন সালামা, সুফিয়ান ইবন উয়ানাহ, ইবন জুরাইহ, সুফিয়ান আস-সাওরী, শু’বা, আল-আমাশ, ইয়াহইয়া ইবন সাঈদ, ইবন শুরাইহ্, আল আউযাই, ইসমাঈল ইবন আয়াশ, ইবন আবি দি’ব, হিশাম ইবন উর’উয়াহ্, আল-জারিরি, সুলাইমান আল-তাইমি, মালিক ইবন আনাস, লাইস ইবন সা’দ, মা’মার ইবন রশিদ, মা’মার ইবন সুলাইমান, যাকারিয়া ইবন ইসহাক রহিমাহুল্লাহ আজমা’ইন ও আরো অনেকে।
মুজাহিদ: ইবনু কাসীর তার গ্রন্থ আল বিদায়াহ্ ওয়ান নিহায়াতে লিখেছেন: “তিনি প্রায়ই হজ্জ আর জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য অধিক পরিচিত ছিলেন।”
তাযকিরাতুল হুফফাজে ইমাম আয-যাহাবী বলেন: “…মুজাহিদীনদের গর্ব”। তিনি মন্তব্য করেন: “তিনি ছিলেন সাহসীদের নেতা…তিনি এক বছর হজ্জে যেতেন, আর পরের বছর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে নিজেকে নিয়োজিত করতেন।”
তিনি রোমানদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছিলেন। ইবনুল মুবারাক তার বন্ধু ফুযাইল ইবন ইয়াজকে (যিনি মক্কা আর মদীনার আবদ হিসেবে বিখ্যাত ছিলেন) চিঠি লিখলেন যাতে কেবল মাসজিদে ইবাদাতে মাশগুল না থেকে জিহাদেও অংশগ্রহণ করেন। অনেক বিখ্যাত সেই চিঠিখানি। যার শুরু এমন:
“হে হারামাইনের আবদ!
তুমি যদি আমাদের ইবাদাত দেখতে তবে তোমার ইবাদাত ছেলেখেলা মনে হবে।
তোমাদের গাল বেয়ে অশ্রু ঝরে (ইবাদাতের সময়),
আর আমাদের ঘাড় বেয়ে রক্ত ঝরে (জিহাদের ময়দানে)”
আবদুল্লাহ ইবনু মুবারাক এছাড়াও ছিলেন একজন উঁচুদরের ফকীহ, একজন সফল ব্যবসায়ী যিনি যথার্থ ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহর উদাহরণ, বাতিলের বিরুদ্ধে কলম আর অস্ত্র উভয়েই ধারন করেছিলেন তিনি।
“আমি সাহাবাদের দিকে তাকিয়েছি আর আমি তাকিয়েছি আবদুল্লাহ ইবনু মুবারাকের দিকে কিন্তু আমি তাদের আর তার মধ্যে কোন পার্থক্য দেখিনি কেবল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুহবত (সঙ্গ) ব্যতীত! – সুফিয়ান ইবন উয়ানাহ রাহিমাহুল্লাহ
সংগৃহিত
বিষয়: বিবিধ
১২১৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন