মহিলাদের নামায-পদ্ধতি পুরুষের নামাযের মত নয়

লিখেছেন লিখেছেন মদীনার আলো ২৭ আগস্ট, ২০১৩, ০১:০৭:১২ দুপুর

নারী-পুরুষের শারীরিক গঠন, সক্ষমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদি নানা বিষয়ে যেমন ‎পার্থক্য রয়েছে, তেমনি পার্থক্য রয়েছে ইবাদতসহ শরীয়তের অনেক বিষয়ে। ‎‎যেমন, সতর। পুরুষের সতর হচ্ছে নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত, পক্ষান্তরে পরপুরুষের ‎সামনে মহিলার প্রায় পুরো শরীরই ঢেকে রাখা ফরয। নারী-পুরুষের মাঝে এরকম ‎পার্থক্যসম্বলিত ইবাদতসমূহের অন্যতম হচ্ছে নামায। তাকবীরে তাহরীমার জন্যে ‎হাত উঠানো, হাত বাধা, রুকু, সেজদা, ১ম ও শেষ বৈঠক ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে ‎পুরুষের সাথে নারীর পার্থক্য রয়েছে। তাদের সতরের পরিমান যেহেতু বেশী, ‎তাই যেভাবে তাদের সতর বেশী রক্ষা হয় সেদিকটিও বিবেচনা করা হয়েছে এ ‎‎ক্ষেত্রগুলোতে। মুসলিম উম্মাহর প্রায় দেড় হাজার বছরের অবিচ্ছিন্ন আমলের ‎ধারা তাই প্রমাণ করে। বিষয়টি প্রমাণিত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লামের হাদীস, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের ফতোয়া ও আছারের ‎মাধ্যমেও। ‎

প্রথমে আমরা এ সংক্রান্ত মারফূ’ হাদীস, এবং পরে পর্যায়ক্রমে সাহাবায়ে কেরাম ‎ও তাবেয়ীগণের ফতোয়া ও আছার উল্লেখ করবো।‎

মারফু’ হাদীস

‎১.‎‏ ‏তাবেয়ী ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীব র. বলেন,‎

‏…. أن رسول الله – صلى الله عليه وسلم – مر على امرأتين تصليان، فقال: ‏اذا سجدتما فضما بعض اللحم الى الأرض، فإن المرأة ليست في ذلك كالرجل. ‏‏(كتاب المراسيل للإمام أبو داود)‏

একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযরত দুই মহিলার পাশ ‎দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্যে ) বললেন, যখন ‎‎সেজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কেননা মহিলারা এ ‎‎ক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়।” (কিতাবুল মারাসীল, ইমাম আবু দাউদ ৫৫, হাদীস ৮০)‎

প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‎“আওনুল বারী” (১/৫২০) তে লিখেছেন, ‘উল্লিখিত হাদীসটি সকল ইমামের ‎উসূল অনুযায়ী দলীল হিসেবে পেশ করার যোগ্য।’

মুহাদ্দিস মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আমীর ইয়ামানী ‘সুবুলুস সালাম শরহু বুলুগিল ‎মারাম’ গ্রন্থে (১/৩৫১,৩৫২) এই হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে পুরুষ ও ‎মহিলার সেজদার পার্থক্য করেছেন।‎

‎২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত,‎

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- :্র إِذَا جَلَسْتِ الْمَرْأَةُ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَتْ ‏فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الأُخْرَى ، وَإِذَا سَجَدْتْ أَلْصَقَتْ بَطْنَهَا فِى فَخِذَيْهَا كَأَسْتَرِ مَا ‏يَكُونُ لَهَا ، وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَيَقُولُ : يَا مَلاَئِكَتِى أُشْهِدُكُمْ أَنِّى قَدْ ‏غَفَرْتُ لَهَا গ্ধ.‏‎ ‎رواه البيهقي في السنن الكبرى ٢/٢٢٣ في كتاب الصلاة (باب ما ‏يستحب للمرأة من ترك التجافي في الركوع والسجود)، وفيه أبو مطيع البلخي ‏وقال العقيلي فيه : كان مرجئا صالحا في الحديث.‏

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহিলা যখন নামাযের মধ্যে ‎বসবে তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর যখন সেজদা ‎করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিেেয় রাখে; যা তার সতরের জন্যে অধিক ‎উপযোগী।‎‏ ‏আল্লাহ তাআলা তাকে দেখে (ফেরেশতাদের সম্বোধন করে) বলেন, ‎ওহে আমার ফেরেশতারা! তোমরা সাক্ষী থাক, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। ‎সুনানে কুবরা, বায়হাকী ২/২২৩, অধ্যায়: সালাত, পরিচ্ছেদ: মহিলার জন্যে রুকু ও ‎‎সেজদায় এক অঙ্গ অপর অঙ্গ থেকে পৃথক না রাখা মুস্তাহাব। এটি হাসান হাদীস।‎

‎৩. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. বলেন,‎

جئت النبي صلى الله عليه و سلم فقال : فساق الحديث. وفيه: يا وائل بن ‏حجر إذا صليت فاجعل يديك حذاء أذنيك والمرأة تجعل يديها حذاء ثدييها. ‏‏(رواه الطبراني في الكبير جـ ٢٢ صـ ١٩-٢٠ )‏

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে দরবারে হাজির হলাম। তখন ‎তিনি আমাকে (অনেক কথার সাথে একথাও) বলেছিলেন: হে ওয়াইল ইবনে ‎হুজর! যখন তুমি নামায শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে। আর মহিলা ‎হাত উঠাবে বুক বরাবর। (আলমুজামুল কাবীর, তাবারানী ১৯-২০/২২, এই ‎হাদীসটিও হাসান) ‎

উল্লিখিত হাদীসগুলো থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে যায়, কিছু কিছু হুকুমের ক্ষেত্রে ‎মহিলার নামায আদায়ের পদ্ধতি পুরুষের নামায আদায়ের পদ্ধতি থেকে ভিন্ন। ‎বিশেষত ২নং হাদীসটি দ্বারা একথাও বোঝা গেল যে, মহিলার নামায আদায়ের ‎শরীয়ত নির্ধারিত ভিন্ন এই পদ্ধতির মধ্যে ওই দিকটিই বিবেচনায় রাখা হয়েছে যা ‎তার সতর ও পর্দার পক্ষে সর্বাাধিক উপযোগী।‎

উল্লেখ্য, এই সব হাদীসের সমর্থনে মহিলাদের নামায আদায়ের পদ্ধতির পার্থক্য ‎ও ভিন্নতাকে নির্দেশ করে এমন আরো কিছু হাদীস রয়েছে। পক্ষান্তরে এগুলোর ‎সাথে বিরোধপূর্ণ একটি হাদীসও কোথাও পাওয়া যাবেনা যাতে বলা হয়েছে যে, ‎পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতিতে কোন পার্থক্য নেই; বরং উভয়ের নামাযই ‎এক ও অভিন্ন।‎

সাহাবায়ে কেরামের ফতোয়া

‎১. হযরত আলী রা. বলেছেন,‎

إذا سجدت المرأة فلتحتفز ولتصق فخذيها ببطنها. رواه عبد الرزاق في المصنف ‏واللفظ له، وابن أبي شيبة في المصنف أيضا وإسناده جيد، والصواب في الحارث ‏هو التوثيق.‏

‏”‏‎ মহিলা যখন সেজদা করবে তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সেজদা করে ‎এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে।”

‎(মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৩/১৩৮, অনুচ্ছেদ: মহিলার তাকবীর, কিয়াম, রুকু ও ‎‎সেজদা;‎‏ ‏মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ২/৩০৮; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ২/২২২)‎

‎২. হযরত ইবনে আব্বাস রা. এর ফতোয়া:‎

عن ابن عباس أنه سئل عن صلاة المرأة، فقال : “تجتمع وتحتفز”(رواه ابن أبي ‏شيبة ورجاله ثقات)‏

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মহিলা কীভাবে নামায ‎আদায় করবে? তিনি বললেন, খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায় ‎আদায় করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/৩০২)‎

উপরে মহিলাদের নামায আদায় সম্পর্কে দু’জন সাহাবীর যে মত বর্ণিত হল, ‎আমাদের জানামতে কোনো হাদীসগ্রন্থের কোথাও একজন সাহাবী থেকেও এর ‎বিপরীত কিছু বিদ্যমান নেই।‎

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাহাবায়ে কেরাম যে দীন ‎শিখেছেন, তাঁদের কাছ থেকে তা শিখেছেন তাবেয়ীগণ। তাঁদের ফতোয়া থেকেও ‎এ কথাই প্রতীয়মান হয়- মহিলাদের নামায পুরুষের নামায থেকে ভিন্ন। নি¤েœ ‎তাঁদের মধ্য থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকজনের ফতোয়া উল্লেখ করা হলো:‎

‎১. হযরত আতা ইবনে আবী রাবাহ র. কে জিজ্ঞেস করা হল,‎

كيف ترفع يديها في الصلاة قال حذو ثدييها .‏

নামাযে মহিলা কতটুকু হাত উঠাবে? তিনি বললেন, বুক বরাবর। (মুসান্নাফে ‎ইবনে আবী শায়বা ১/২৭০)‎

‎২. ইবনে জুরাইজ র. বলেন,‎

قلت لعطاء تشير المرأة بيديها بالتكبير كالرجل قال لا ترفع بذلك يديها كالرجل ‏وأشار فخفض يديه جدا وجمعهما إليه جدا وقال إن للمرأة هيئة ليست للرجل ‏وإن تركت ذلك فلا حرج ‏

আমি আতা ইবনে আবী রাবাহকে জিজ্ঞেস করলাম, মহিলা তাকবীরের সময় ‎পুরুষের সমান হাত তুলবে? তিনি বললেন, মহিলা পুরুষের মত হাত উঠাবেনা। ‎এরপর তিনি (মহিলাদের হাত তোলার ভঙ্গি দেখালেন এবং) তার উভয় হাত ‎‎(পুরুষ অপেক্ষা) অনেক নিচুতে রেখে শরীরের সাথে খুব মিলিয়ে রাখলেন এবং ‎বললেন, মহিলাদের পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন। তবে এমন না করলেও অসুবিধা ‎‎নেই।(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/২৭০)‎

‎৩. মুজাহিদ ইবনে জাবর র. থেকে বর্ণিত:‎

عن مجاهد بن جبر أنه كان يكره أن يضع الرجل بطنه على فخذيه إذا سجد كما ‏تضع المرأة .‏

‎ তিনি পুরুষের জন্যে মহিলার মত উরুর সাথে পেট লাগিয়ে সেজদা করাকে ‎অপছন্দ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/৩০২)‎

‎৪. যুহরী র. বলেন,‎

ترفع يديها حذو منكبيها .‏

মহিলা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/২৭০)‎

‎৫. হাসান বসরী ও কাতাদা র. বলেন,‎

إذا سجدت المرأة فإنها تنضم ما استطاعت ولا تتجافي لكي لا ترفع عجيزتها ‏

মহিলা যখন সেজদা করবে তখন সে যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে। অঙ্গ-‎প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সেজদা দিবেনা; যাতে কোমর উচু হয়ে না থাকে।‎

‎(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/৩০৩, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৩/১৩৭)‎

‎৬. ইবরাহীম নাখায়ী র. বলেন,‎

إذا سجدت المرأة فلتضم فخذيها ولتضع بطنها عليهما

মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যেন সে উভয় উরু মিলিয়ে রাখে এবং পেট ‎উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/৩০২)‎

‎৭. ইবরাহীম নাখায়ী র. আরো বলেন,‎

‏ كانت تؤمر المرأة أن تضع ذراعها وبطنها‎ ‎على فخذيها إذا سجدت ، ولا ‏تتجافى كما يتجافى الرجل ، لكي لا ترفع عجيزتها

মহিলাদের আদেশ করা হত তারা যেন সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে ‎মিলিয়ে রাখে। পুরুষের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা না রাখে; যাতে কোমর উঁচু হয়ে ‎না থাকে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৩/১৩৭)‎

‎৮. খালেদ ইবনে লাজলাজ র. বলেন,‎

كن النساء يؤمرن أن يتربعن إذا جلسن في الصلاة ولا يجلسن جلوس الرجال على ‏أوراكهن يتقي ذلك على المرأة مخافة أن يكون منها الشئ .‏

মহিলাদেরকে আদেশ করা হত তারা যেন নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের ‎করে নিতম্বের উপর বসে। পুরুষদের মত না বসে। আবরণযোগ্য কোন কিছু ‎প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় মহিলাদেরকে এমনটি করতে হয়। (মুসান্নাফে ‎ইবনে আবী শায়বা ১/৩০৩)‎

উল্লিখিত বর্ণনাগুলো ছাড়াও আয়িম্মায়ে তাবেয়ীনের আরো কিছু বর্ণনা এমন আছে ‎যা মহিলা-পুরুষের নামাযের পার্থক্য নির্দেশ করে। পক্ষান্তরে একজন তাবেয়ী ‎‎থেকেও এর বিপরীত বক্তব্য প্রমাণিত নেই। ‎

চার ইমামের ফিকহের আলোকে:‎

ফিকহে ইসলামীর চারটি সংকলন মুসলিম উম্মাহর মাঝে প্রচলিত- ফিকহে ‎হানাফী, ফিকহে মালেকী, ফিকহে হাম্বলী ও ফিকহে শাফেয়ী। এবারে আমরা এই ‎চার ফিকহের ইমামের মতামত উল্লেখ করছি।‎

‎১. ফিকহে হানাফী‎

ইমাম আবূ হানীফা র. এর অন্যতম প্রধান শিষ্য ইমাম মুহাম্মদ র. বলেন, ‎

أحب إلينا أن تجمع رجليها في جانب ولا تنتصب انتصاب الرجل.‏

আমাদের নিকট মহিলাদের নামাযে বসার পছন্দনীয় পদ্ধতি হলো- উভয় পা ‎একপাশে মিলিয়ে রাখবে, পুরুষের মত এক পা দাঁড় করিয়ে রাখবেনা। ‎

কিতাবুল আসার, ইমাম মুহাম্মদ, ১/৬০৯‎

‎২. ফিকহে মালেকী‎

মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফকীহ ইমাম আবুল আব্বাস আলকারাফী র. ইমাম ‎মালেক র. এর মত উল্লেখ করেন,‎

وأما مساواة النساء للرجال ففي النوادر عن مالك تضع فخذها اليمنى على اليسرى ‏وتنضم قدر طاقتها ولا تفرج في ركوع ولا سجود ولا جلوس بخلاف الرجل

নামাযে মহিলা পুরুষের মত কিনা এ বিষয়ে ইমাম মালেক র. থেকে বর্ণিত, ‎মহিলা ডান উরু বাম উরুর উপর রাখবে এবং যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে বসবে। ‎রুকু, সেজদা ও বৈঠক কোন সময়ই ফাঁক ফাঁক হয়ে বসবেনা, পক্ষান্তরে পুরুষের ‎পদ্ধতি ভিন্ন। আযযাখীরা , ইমাম কারাফী, ২/১৯৩।‎

‎৩. ফিকহে হাম্বলী

‎ ইমাম আহমদ র. এর ফতোয়া উল্লেখ আছে ইমাম ইবনে কুদামা র. কৃত ‎‘আলমুগনী’ তে:‎

فأما المرأة فذكر القاضي فيها روايتين عن أحمد إحداهما ترفع لما روى الخلال ‏بإسناده عن أم الدرداء وحفصة بنت سيرين أنهما كانتا ترفعان أيديهما وهو قول ‏طاوس ولأن من شرع في حقه التكبير شرع في حقه الرفع كالرجل فعلى هذا ترفع ‏قليلا قال أحمد رفع دون الرفع والثانية لا يشرع لأنه في معنى التجافي ولا يشرع ‏ذلك لها بل تجمع نفسها في الركوع والسجود وسائر صلاتها

তাকবীরের সময় মহিলারা হাত উঠাবে কি উঠাবে না এ বিষয়ে কাজী (আবু ‎ইয়ায) ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল থেকে দুটি মত উল্লেখ করেছেন। প্রথম মত ‎অনুযায়ী হাত তুলবে। কেননা, খাল্লাল হযরত উম্মে দারদা এবং হযরত হাফসা ‎বিনতে সীরীন থেকে সনদসহ বর্ণনা করেন, তারা হাত উঠাতেন। ইমাম তাউসের ‎বক্তব্যও তাই। উপরন্তু যার ব্যাপারে তাকবীর বলার নির্দেশ রয়েছে তার ব্যাপারে ‎হাত উঠানোরও নির্দেশ রয়েছে। যেমন পুরুষ করে থাকে এ হিসেবে মহিলা হাত ‎উঠাবে, তবে সামান্য। আহমাদ র. বলেন, তুলনামূলক কম উঠাবে। দ্বিতীয় মত ‎এই যে, মহিলাদের জন্যে হাত উঠানোরই হুকুম নেই। কেননা, হাত উঠালে ‎‎কোন অঙ্গকে ফাঁক করতেই হয় অথচ মহিলাদের জন্যে এর বিধান দেওয়া হয়নি। ‎বরং তাদের জন্যে নিয়ম হল রুকু সেজদাসহ পুরো নামাযে নিজেদেরকে গুটিয়ে ‎রাখবে। আলমুগনী, ইবনে কুদামা, ২/১৩৯।‎

‎৪. ফিকহে শাফেয়ী‎

ইমাম শাফেয়ী র. বলেন,‎

وقد أدب الله تعالى النساء بالاستتار وأدبهن بذلك رسول الله صلى الله عليه ‏وسلم وأحب للمرأة في السجود أن تضم بعضها إلى بعض وتلصق بطنها ‏بفخذيها وتسجد كأستر ما يكون لها وهكذا أحب لها في الركوع والجلوس وجميع ‏الصلاة أن تكون فيها كأستر ما يكون لها.‏

আল্লাহ পাক মহিলাদেরকে পুরোপুরি আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। তার রাসূল ‎সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও অনুরূপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট ‎পছন্দনীয় হল, সেজদা অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গকে মিলিয়ে ‎রাখবে। পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং সেজদা এমনভাবে করবে যাতে ‎সতরের চূড়ান্ত হেফাযত হয়। অনুরূপ রুকু, বৈঠক ও গোটা নামাযে এমনভাবে ‎‎থাকবে যাতে সতরের পুরোপুরি হেফাযত হয়। কিতাবুল উম্ম, শাফেয়ী, ১/১৩৮‎

‎দেখা যাচ্ছে, হাদীসে রাসূল, সাহাবা ও তাবেয়ীনের ফতোয়া ও আছারের মতই ‎চার মাযহাবের চার ইমামের প্রত্যেকেই পুরুষের সাথে মহিলাদের নামাযের ‎পার্থক্যের কথা বলেছেন। মুসলিম উম্মাহর অনুসৃত উপরোক্ত কেউ-ই বলছেন না, ‎মহিলাদের নামায পুরুষের নামাযের অনুরূপ। বরং সকলেই বলছেন, পুরুষের ‎নামায থেকে মহিলার নামায কিছুটা ভিন্ন। ‎

‎ নারী-পুরুষের নামাযের এ পার্থক্য শুধু যে এ চার মাযহাবের উলামায়ে কেরাম ও ‎অনুসারীগণ-ই স্বীকার করেন, বিষয়টি এমন নয়। বরং আমাদের যে আহলে ‎হাদীস বা লা-মাযহাবী ভাইয়েরা এ পার্থক্যকে অস্বীকার করেন, তাদেরও কোন ‎‎কোন অনুসৃত আলেম এপার্থক্যকে স্বীকার করেছেন। ‎

মাওলানা মুহাম্মদ দাউদ গযনবী রহ. এর পিতা আল্লামা আব্দুল জাব্বার গযনবী ‎র. কে জিজ্ঞেস করা হল, মহিলাদের নামাযে জড়সড় হয়ে থাকা কি উচিত? ‎জবাবে তিনি একটি হাদীস উল্লেখ করে লেখেন, এর উপরই আহলে সুন্নাত ওয়াল ‎জামাআতের চার মাযহাব ও অন্যান্যদের মাঝে আমল চলে আসছে। ‎

এরপর তিনি চার মাযহাবের কিতাবের উদ্ধৃতি প্রদান করার পর লেখেন, মোট ‎কথা, মহিলাদের জড়সড় হয়ে নামায পড়ার বিষয়টি হাদীস ও চার মাযহাবের ‎ইমামগণ ও অন্যান্যের সর্বসম্মত আমলের আলোকে প্রমাণিত। এর অস্বীকারকারী ‎হাদীসের কিতাবসমূহ ও উম্মতের সর্বসম্মত আমল সম্পর্কে বেখবর ও অজ্ঞ। ‎

ফাতওয়া গযনবিয়্যা, ২৭ ও ২৮; ফাতাওয়া উলামায়ে আহলে হাদীস, ৩/১৪৮-১৪৯; ‎মাজমুআয়ে রাসায়েল, মাওলানা আমীন সফদর উকারবী, ১/৩১০-৩১১।‎

মাওলানা আলী মুহাম্মদ সাঈদ ‘ফাতাওয়া উলামায়ে আহলে হাদীস ’ গ্রন্থে এই ‎পার্থক্যের কথা স্বীকার করেছেন। মাজমুআয়ে রাসায়েল, ১/৩০৫।‎

মাওলানা আব্দুল হক হাশেমী মুহাজিরে মক্কী র. তো এই পার্থক্য সম্পর্কে স্বতন্ত্র ‎পুস্তিকাই রচনা করেছেন। পুস্তিকাটির নাম

‎ ‎نصب العمود في تحقيق مسألة تجافي المرأة في الركوع والسجود والقعود.‏

‎ মুহাদ্দিস আমীর ইয়ামানী র. ‘সুবুলুস সালাম’ গ্রন্থে এবং স্বসময়ের আহলে ‎হাদীসদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলেম নবাব সিদ্দীক হাসান খান র. ‘আউনুল ‎বারী’ তে নারী-পুরুষের নামাযের পার্থক্যের পক্ষেই তাদের মত ব্যক্ত করেছেন। ‎আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সহীহভাবে বিষয়টি অনুধাবন করার তৌফিক ‎‎দান করুন। আমীন

http://www.jamiatululoombd.com/%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AF-%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B7%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%A4-%E0%A6%A8%E0%A7%9F.html

বিষয়: বিবিধ

১৭৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File