ছদ্মনামের অপব্যবহার নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর সালেহ মতীন ০২ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:৪৪:০৩ দুপুর

পত্রিকায় লেখালেখির ক্ষেত্রে পারিবারিক নামের দৈর্ঘ্য কমিয়ে কিছুটা ছোট করা এবং অপরাধ তদন্ত বিষয়ক (এক্সকুসিভ রিপোর্ট) প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ পক্ষের সরাসরি রোষানল থেকে আপাতত আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে ছদ্মনামের ব্যবহার দীর্ঘদিন থেকে প্রাকটিস হয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে একজন লেখক একটি সংক্ষিপ্ত নাম যা তার শিক্ষা সনদের বিধিবদ্ধ নামেরই সঙ্কুচিত অংশবিশেষ ব্যবহার করেন এবং একই সাথে শ্রুতিমধুর ও অর্থবহ কোন ছদ্মনাম (নিক নেম বা পেন নেম) ব্যবহার করেন। বলা বাহুল্য যে, এ পর্যায়ে ছদ্মনাম ধারণের উদ্দেশ্য অবশ্যই মহৎ।

লেখালেখির ক্ষেত্রে ছদ্মনাম ব্যবহারের উদ্দেশ্য মহৎ ও দুরভিসন্ধিমূলক দু’ রকমই হতে পারে। কেউ মানবতার প্রতি দায়িত্ব পরিপালনের জন্য সমাজ গঠনের পবিত্র ব্রত পালনের নিরাপদ ও কার্যকরী উপায় হিসেবে ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। আবার কেউ অসত্যনির্ভর বক্তব্য উপস্থাপন এবং আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে প্রতিহিংসামূলক মনোভাব উদগীরন করার অশূভ উদ্দেশ্যে ছদ্মনাম ব্যবহার করে। বিশেষত ব্লগ লেখার ক্ষেত্রে এই অনাকাক্সিক্ষত অপতৎপরতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। ছদ্মনামধারী অনেক লেখকই তাদের লেখায় চমৎকার কারুকাজ ও গুণগত মান বজায় রাখেন কিন্তু বিষয়বস্তুর অসারতা ও সাহসের সঙ্কটের কারণে ব্লগ প্লাটফর্মে কেবল বিবাদ ও অসন্তোষেরই জন্ম দিয়ে থাকে।

লক্ষণীয় যে, অসদুদ্দেশ্যে ছদ্মনাম ধারণ করার ক্ষেত্রে নামের শ্রুতিমাধুর্য, অর্থবহতা ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার দৈন্যতা দেখলে সহজেই অনুমান করা যায় যে, সংশ্লিষ্ট লেখকের আত্মভীরুতা কত প্রকট ! ইহা এমন একটা কূটকৌশল যে, এ ধরনের লেখকগণ পাঠকমহলে বিভেদ, অসন্তোষ ও সামাজিক অনৈক্যের বিষবাষ্প ছড়াতে সক্ষম হয় অথচ এ বিষয়ক সমালোচনা থেকে তারা মুক্ত থাকতে পারে কেবল ছদ্মনাম ধারণ করার কারণে। পুলিশের পক্ষেও এদের খুঁজে পাওয়া দুরূহ। এমন অনেকে আছেন যারা সামাজিক পরিচিতিমূলক নামই ব্যবহার করেন তবে সেটি তার নিজের নাম নয়, অবলীলায় অন্যের নাম ধারণ করে দিনের পর দিন বিতর্কের ঝড় তুলে যান। এটি এক রকম মনস্তাত্ত্বিক প্রতারণা। এর উদ্দেশ্য ব্লগার ভাই-বোনদের নিকট পরিষ্কার।

আমি মনে করি এ ক্ষেত্রে ব্লগ কর্তৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাদের উচিত ব্লগ লেখার মতো তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিক ও অতি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্মকে যারা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা কলূষিত করতে চায় তাদের সুযোগ অবারিত না করা। মতের ভিন্নতা, আদর্শিক বৈপরিত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গির বিভেদ থাকতেই পারে। সে ক্ষেত্রে কোন বিষয়কে ঘিরে আলোচনা, পর্যালোচনা, গঠনমূলক সমালোচনা কিংবা যুক্তিগ্রাহ্য বিতর্ক উঠতে পারে, কিন্তু কারা এতে অংশ নিচ্ছেন তাদের পরিচয় সব পক্ষের কাছে সুস্পষ্ট হওয়া উচিত। প্রতিপক্ষকে চিনতে না পারলে ধারালো যুক্তি তর্কও মূল্যহীন প্রমাণিত হতে বাধ্য।

কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, রেজিস্ট্রেশনের সময় ব্লগারের নাম ব্যবহারে তাকে সামাজিকভাবে চিনতে সক্ষম এমন নামই গ্রহণ করা উচিত। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া যেতে পারে। অথবা সংক্ষিপ্ত কিংবা ছদ্মনাম কেউ ব্যবহার করতে চাইলে ব্যবহার করতে পারে তবে তার প্রকৃত নাম অন্তত কর্তৃপক্ষের সংরক্ষণে থাকা প্রয়োজন। একই ব্যক্তিকে একাধিক ছদ্মনাম ব্যবহার অনুমোদিত হওয়া উচিত নয় এ কারণে যে, ছদ্মনামের বাহুল্য লেখালেখির ক্ষেত্রে অসদুদ্দেশ্যকে লালন করার সহায়ক। এটা স্বাভাবিক অধিকার যে, ব্লগের পবিত্র ক্যানভাসে যেসব ব্লগারগণ নিয়মিত পদচারণা করেন তারা অপরকে অবশ্যই চিনবে। এতে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও সামাজিক দায়বদ্ধতা অনুভব করা যায়, তখন লেখার ক্ষেত্রে অতর্কিত খোঁচা মারা ও বিদ্বেষমূলক লেখা পরিহার করা সম্ভব হতে পারে।

বিষয়: বিবিধ

১৭৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File