কাজই আনন্দ কাজই জীবন
লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর সালেহ মতীন ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৯:২৭:১৭ সকাল
দুনিয়ায় আনন্দের অনেক উৎস হতে পারে। আনন্দবহুল জীবনের অনুভূতি ধারণ করতে পারলে বলা যায় জীবনের পদে পদে আনন্দ বিদ্যমান রয়েছে। অবশ্য এ কথাও এখানে বলে রাখা ভালো যে, আনন্দের পাশাপাশি জীবনে বিপদের মুখোমুখি হওয়া একেবারে স্বাভাবিক। এর জন্য আমাদের সব সময় প্রস্তুত থাকলে হঠাৎ বিপদ আসলে ভেঙ্গে পড়ার কারণ থাকে না।
যা হোক, আনন্দের উৎস নিয়ে কথা বলছিলাম। আনন্দের অনেক উৎসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কাজের আনন্দ। মানুষের শরীর আল্লাহ তাআলা গঠন করেছেন পরিশ্রমের উপযুক্ত করে। তাই দেখা যায় যে, যারা অলসতা করে কাজ থেকে দূরে থাকে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে পড়ে। শরীরের যে কোষগুলো কাজের জন্য শক্তি ও অনুপ্রেরণার যোগান দেয় তারা ক্রমেই নিষ্ক্রিয় হতে থাকে।
এর বিপরীতে যারা নিয়মিত কাজের মধ্যে ডুবে থাকে তাদের শরীর হয় সুস্থ ও সক্ষম। আমাদের শরীর আমাদের কাছে কাজ চায়। কাজকে সে ভালোবাসতে পছন্দ করে। কাজের প্রতি শরীরের এই ভালোবাসা যখন মূল্য পায় না তখন সে খুবই অখুশি হয়ে মানুষের দেহ ও মনকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। আনন্দ তখন আর ধরা দিতে পারে না।
তুমি কর্মচঞ্চল হয়েই দেখো তুমি পরিপূর্ণ সুস্থ থাকবে। আর এ সুস্থতা টেকসই হবে। দেখবে অসুস্থতা তোমার থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। কর্মোদ্যোগী সুস্থ মানুষ কখনই নিরানন্দ হতে পারে না। কাজের মধ্যেই সে আনন্দের তৃপ্তিদায়ক হাতছানি দেখতে পায়। কাজকে সে উপভোগ করে।
জীবন তো আর কিছুই নয়, সময়ের সমষ্টি মাত্র। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সময়ের একককে তুমি কাজের পরিকল্পনায় আটকিয়ে ফেলো, দেখো তোমার অনুভূতিতে আনন্দ ছাড়া আর কিছুই বসবাস করতে পারবে না। শ্রমের রসদ দিয়ে শরীরকে যেমন তুমি উজ্জীবিত করে রাখছো, ঠিক তেমনি তোমার কাজপ্রেমী শরীর তোমাকে আনন্দ উপহার দিবে।
আর যদি কাজকে ভয় করো তাহলে তুমি পৃথিবীতে ক্রমেই পিছিয়ে পড়বে। আপনা আপনিই পিছিয়ে পড়বে। তোমার নিজের তৎপরতা না থাকলে কে তোমাকে সামনে টেনে নিয়ে যাবে? একদিন দু‘দিন না হয় তোমাকে কেউ না কেউ সাহায্য করলো- ভেবে দেখো, তারপর কী হবে? সারা জীবন তো তোমাকে কেউ আপনের মতো সাহায্য করে সামনের দিকে নিয়ে যাবে না! তাছাড়া তোমার সবচেয়ে আপনজন পিতা-মাতাকে তো সারা জীবন কাছে নাও পেতে পার! একটু চিন্তা করেই দেখো।
কাজ হলো আনন্দ উপভোগের একটি বিশেষ মন্ত্র। কাজ হলো মানসিক ও শারীরিক তৃপ্তি লাভের অন্যতম উদ্দীপক। কাজকে আপন জেনে তার সাথে মোলাকাত করলে সে তোমাকে প্রতিদান দিবেই। কাজের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করো, সুস্পষ্ট শুনতে পাবে সে তোমাকে ডাকছে। দরদ ও দায়িত্বশীলতা নিয়েই ডাকছে। তার নিকটবর্তী হলেই তুমি জিতে যাবে। অন্যথায় পরাজয় অনিবার্য।
বাংলায় একটি প্রবাদ আছে- পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। ইংরেজিতে বলা হয়- Industry is the mother of goodluck. এ কথা এমনিতেই উৎপন্ন হয়নি। যুগের পর যুগ ধরে পৃথিবীর কিংবা এ সংসার জগতের চাল চলন পারীক্ষা নিরীক্ষা করেই এমন প্রবাদ আত্মপ্রকাশ করেছে। সৌভাগ্যের জননী হলো পরিশ্রম বা কাজ। সুতরাং একজন মা উপযুক্ত সেবা পেলে যেমন সুস্থ ও নিরাপদ সন্তান প্রসব করতে সক্ষম হন ঠিক তেমনি কাজের প্রতি ভালোবাসায়ও সৌভাগ্য প্রসব লাভ করে। কাজের প্রতি নিবেদিত ভক্তির মাধ্যমে তুমিই সৌভাগ্যের প্রসূতিকে সেবা করে আনন্দ লাভ করতে পার।
দিন শেষে তুমি বিনা বাক্যে বুঝতে সক্ষম হবে যে, কাজই আনন্দ, কাজই জীবন।
[ড. সালেহ মতীনের প্রকাশিতব্য ‘শিশুরা তোমরা আনন্দ খুঁজো’ গ্রন্থ থেকে]
বিষয়: বিবিধ
৬৪৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন