টফফাইট’-এর স্মৃতি ও লজ্জা এখনো আমায় নক করে
লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর সালেহ মতীন ১৪ আগস্ট, ২০১৬, ০২:৫৩:৪১ দুপুর
মহানগরী ঢাকাতে ‘লাব্বাইক” নামক একটি পাবলিক পরিবহন বাসে চড়ে প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত করি। নামটি দেখলেই আমার স্মৃতির পাতায় কিছু লেখা সহসা ভেসে ওঠে।
বাড়ির পাশের প্রাইমারিতে ক্লাস ফোর থেকে ফাইভে উঠেছি। সালটা ৭৯/৮০ হবে। বই জোগাড়ের পালা।এবার আর পুরনো বই কিনলে চলবে না- সরকার নতুন পাঠ্যপুস্তক চালু করেছে। বইয়ের সংখ্যাও বেড়েছে- চয়নিকা, দ্রুতপঠন আরো কয়েকটি বই। খোঁজ নিয়ে জানা গেল ক্লাস ফাইভের ১ সেট বইয়ের দাম পড়বে ৮০ টাকা। দারিদ্র্যের সংসারে এত টাকা দিয়ে বই কেনা অসম্ভব। এ যাবৎ অর্ধেক বা তিন ভাগের একভাগ দামে পুরনো বই কিনেই পড়ালেখা করেছি। নতুন বইয়ের মলাট স্পর্শ করা আমার কাছে ছিল শুধুই স্বপ্ন!
ক্লাসের প্রয়োজনীয় বই জোগাড় করতে না পারায় পড়ালেখা বন্ধ হলো। কেউ কেউ পরামর্শ দিল ছেলেটার খুব আগ্রহ, মাথাও ভালো ওর পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়া ঠিক হবে না। তাহলে কী করা যায় ? বুদ্ধি বের হলো- মাদ্রাসায় পুরনো বই চলে, সুতরাং অল্প পয়সায় মাদ্রাসার ১ সেট পুরনো বই কিনে ভর্তি হওয়া যেতে পারে। ততদিনে ২/৩ মাস পার হয়ে গেছে। আমার একমাত্র চাচাত ভাই মাওলানা আবদুর রশিদের সহায়তায় মাদ্রাসায় ভর্তি হলাম। ক্লাস ফোরে। তখন মাদ্রাসা পদ্ধতিতে এটাই ছিল প্রথম ক্লাস। আমার রোল নম্বর দাঁড়ালো ২৩।
বাড়ি থেকে পৌনে ১ কিঃ মিঃ দূরে অবস্থিত নেঙ্গুড়াহাট সিনিয়র মাদ্রাসা। প্রথম দিন ক্লাসে বসেছি- ভয়, লজ্জা সবই একত্রে এখন আমার সঙ্গী। সম্পূর্ণ আনকোরা পরিবেশে ডানে-বায়ে কারা বসেছে তাও দেখা হচ্ছে না। শুধু মায়ের কথা মনে পড়ে চোখের কোণায় অশ্রু জমছে। মাকে ছেড়ে এত দূরে তো আগে কখনো যাওয়া হয়নি।
শিক্ষক এলেন-হাজিরা ডাকা শুরু হলো। একি ! কেউ ‘ইয়েস স্যার’ অথবা ‘হাজির’- এসব কিছু বলছে না, অন্য কি একটা শব্দ বলে উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। সর্বনাশ ! ২২ জনের পর তো আমার নাম ডাকা হবে। ইয়েস স্যার বোধ হয় এখানে চলবে না। কী করি ? নতুনত্বের ঘোমটা টান মেরে খুলে পাশের জনকে জিজ্ঞেস করলাম- নাম ডাকলে কী বলতে হবে ? ........., ও আচ্ছা।
ডাকা হলো রোল নম্বর ২৩, কেউ দাঁড়ায় না। আবার ডাকা হলো- আবদুল মতীন- ওহ্ হো এ তো আমার নাম বলছে। সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে বললাম, ‘টফফাইট’। একি! সবাই হাসিতে ফেটে পড়ছে। কী এমন হলো যে হাসি থামছেই না। আমি হাজির-এর আরবি হলো ‘লাব্বাইক’। আহ্হা আমি কী বলেছি !
মনে আছে, ঐতিহাসিক ‘টফফাইট’ বলা ছোট্ট বালকটিকে নিয়ে বহুদিন পর্যন্ত ক্লাসে অনেকেই টিটকারি মেরেছে। বছর শেষে বার্ষিক পরীক্ষায় ক্লাসে ফার্স্ট হলে তবেই টিটকারির মাত্রা ধীরে ধীরে নিঃশেষের দিকে ধাবিত হয়েছিল। কিন্তু নতুন করে ভয় হচ্ছে, মহান আল্লাহর মেহমান হয়ে তাঁর দরবারে যাচ্ছি। সেখানে উপস্থিতি ঘোষণা করতে বলতে হয়, “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক”। সেখানে আমি তো নতুন, আমার মহীয়ান রবের কাছে এই অযোগ্য বান্দা একেবারেই তুচ্ছ। ভয়ে যদি বলে ফেলি ‘টফফাইট’ ! হে মাবুদ, আমাকে শক্তি ও সামর্থ্য দিন উপযুক্ত ভাষায় উপস্থিতি ঘোষণা ও আপনার কাছে প্রার্থনা করতে। আমীন
বিষয়: বিবিধ
১৬২১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমাদের জন্য দোয়া করতে ভুলবেন না কিন্তু!
মন্তব্য করতে লগইন করুন