রোজার অনুশীলন কীভাবে সারা বছর জাগ্রত রাখা যায়
লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর সালেহ মতীন ০২ জুলাই, ২০১৬, ০১:৪৫:১৭ দুপুর
সৃষ্টি জগতের মধ্যে মানুষকে সবচেয়ে মর্যাদাবান ও উন্নত সৃষ্টি হিসেবে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যেও আবার বনী আদমের মর্যাদার শ্রেণিবিভাগ করা হয়। প্রেরণকারী মহান সত্ত্বা সম্পর্কে যিনি ওয়াকিবহাল ও তাঁর প্রতি অনুগত ও নিবেদিত তার মর্যাদা আরো ওপরে। তবে এ বিষয়সমূহ অনুধাবন করতে হলে চিন্তা শক্তিকে সক্রিয় রাখতে হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে বার বার বলেছেন, চিন্তাশীলদের জন্য এর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা চিন্তাশীল হও ইত্যাদি। তার অর্থ দাঁড়ায়, একজন মুসলিম কখনই অপরিণামদর্শী কিংবা গতানুগতিক জীবনধারার অধিকারী হন না। তিনি আগ-পিছু অনেক বিষয়ে ভাবেন, সজাগ থাকেন ও সুযোগকে কাজে লাগাতে সর্বোচ্চ তৎপরতা অবলম্বন করেন।
মাহে রমজানের রোজা মুমিনের জন্য মহত্তম সৌভাগ্যের এক অপূর্ব প্রতীক। এটি মহান স্র্রষ্টার পক্ষ থেকে এক অনন্য নেয়ামত। দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার মতো এ বাস্তব মহড়া মুমিনের জীবনকে সম্পূর্ণ বদলে শুদ্ধতম চরিত্রে পরিগঠিত করতে সক্ষম। অশ্লীলতা, অনৈতিকতা, অশুদ্ধ চিন্তা, ক্ষতিকর মনোবৃত্তিসহ সব রকম পানাহার থেকে বিরত থাকার শারিরীক কষ্টের এ অনুশীলন রোজাদারের কাছে কষ্টের না হয়ে বরং স্র্রষ্টার নৈকট্য অর্জন ও উপযুক্ত প্রতিদানের প্রত্যাশায় সুখকর অনুভূত হয়। দূরদর্শী চিন্তা দিয়ে একটু বিবেচনা করলে এ অনুভূতি বছরের সব ক‘টি দিনেই সম্প্রসারিত করা সম্ভব।
রোজা তাকওয়া অর্জনের যে তাগিদ ও দাবী নিয়ে আসে অন্যান্য সময়েও তার প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া মুমিনের জন্য উচিত নয়। প্রচুর উদাহরণ এমন রয়েছে যে, দুর্নীতিগ্রস্ত কোন ব্যক্তি রমজানের রোজা পরিপালনকালে হারাম উপার্জন থেকে বিরত থাকেন। যে স্রষ্টার ভয়ে তিনি এমন করেন বছরের অন্যান্য দিনগুলোতেও সে স্রষ্টা বিদ্যমান থাকেন। সুতরাং রোজার মাসের অবলম্বিত নৈতিক মানের যেন পতন না হয় সে মূল্যবোধই অক্ষুন্ন রাখা জরুরি। আর এটা কঠিন মনে করার কোন কারণ নেই। আল্লাহ বলছেন, “আল্লাহকে (সত্যিকার) ভয় করে তাকওয়া অনুসরন করলে আল্লাহ বান্দার বিভিন্ন বিষয়গুলো সহজ করে দিবেন।” (সূরা তালাক : আয়াত-৮)
রমজান হচ্ছে ধৈর্যের মাস এবং ধৈর্যের প্রতিদান হচ্ছে জান্নাত। রমজান হচ্ছে সহানুভূতির মাস যার পরিণামে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য প্রাপ্তি সহজ হয়। অন্যান্য গুণাবলীর পাশাপাশি রমজানে আহরিত এ দুটো গুরুত্বপূর্ণ চারিত্রিক গুণ মুমিন ব্যক্তিকে প্রকৃত সাফল্যের শীর্ষে নিয়ে যেতে পারে। রোজা মানেই নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের হাতে কলমে এক অনন্য প্রশিক্ষণ। শারিরীক ও মনের সুস্থতার জন্য নিয়ন্ত্রিত জীবনধারা অপরিহার্য। ইহকালীন ও পরকালীন সাফল্য লাভের জন্য মন ও চিন্তার রোজার পাশাপাশি চোখের, কানের, জিহ্বার, পেটের প্রভৃতি ইন্দ্রিয়ের রোজা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা সবাই ভালো থাকতে চাই, সুস্থ থাকতে চাই, সুন্দর থাকতে চাই। এ ত্রিবিধ আকাক্সক্ষা পূরণে রোজার মনস্তাত্ত্বিক অনুশীলন সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। কেবল নির্বোধেরাই এ সুযোগ হাতছাড়া করে। তারা তো খোদ রোজার মাসেও বরকতময় সাফল্য হাসিলে ব্যর্থ হয়ে দুর্ভাগার খাতায় নাম লেখায়।
আবার মানসিক ও শারিরীক উভয় প্রকার অনুভূতির সম্মিলন চাইলে বছরের অন্যান্য দিনেও (নিষিদ্ধ দিনসমূহ ব্যতীত) ফাঁকে ফাঁকে রোজা রাখা যায়। মূল মাঠে খেলার আগে যেমন দায়িত্বশীল খেলোয়াড় প্রাক্টিস ম্যাচ খেলেন আবার খেলা শেষ হওয়ার পরেও ফিটনেস ও পারফরমেন্স সঠিক পর্যায়ে রাখতে রিহার্সেলের আশ্রয় নেন ঠিক তেমনি মাহে রমজানের পরেও মাঝে মাঝে রোজার অনুশীলন করা উচিত। রমজানের রোজা ছাড়াও আমাদের নবী করিম (স.) প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। তিনি বলেন, ‘এ দু‘দিন আল্লাহর নিকট বান্দার আমল পেশ করা হয়। আমি চাই যে, রোজা অবস্থায় আমার আমল পেশ করা হোক।” এ ছাড়াও প্রত্যেক চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে তিনি রোজা রাখতেন। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখে, পিপাসার দিন অর্থাৎ কিয়ামতের দিন তাকে পানি পান করানো আল্লাহর কর্তব্য হয়ে যাবে।”
অতএব দেখা যাচ্ছে যে, রোজা থেকে গৃহীত প্রশিক্ষণ সারা বছর পরিপালনের পাশাপাশি ফিজিক্যালি অনুশীলনেরও উদাহরণ আমাদের সামনে বিদ্যমান। সুতরাং তাকওয়াভিত্তিক পরিচ্ছন্ন ও পরিশুদ্ধ জীবন গঠনের মাধ্যমে ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি লাভের প্রত্যয়ে রোজার শারিরীক ও মানসিক উভয় প্রকার অনুশীলন সারা বছরই জাগ্রত রাখা উচিত।
বিষয়: বিবিধ
২১২৯ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন