বকুল শুকাবে, সুবাস হারাবে

লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর সালেহ মতীন ১৮ জুন, ২০১৬, ০৮:০৮:৫০ সকাল



বকুল ফুল কুড়িয়ে লম্বা লম্বা মালা গাঁথার দুরন্ত শখ মিটিয়েছি কিশোর বয়সে। আমার হেফজখানার সামনের রাস্তায় বিশাল বড় একটা বকুল গাছ ছিল। গ্রীষ্ম-বর্ষার এমনই ভোর বেলায় সবক শেষ করে ঐ গাছের নিচে বকুল ফুল কুড়ানোর লোভ কিছুতেই সামাল দিতে পারতাম না। ফুল কুড়িয়ে টুপিতে রাখতাম। একবার প্রায় ৮ হাত পরিমাণ দীর্ঘ মালা গেঁথেছিলাম। অনেক যত্ন করে সেটা রেখেছিলাম এবং আমাদের থাকার রুমটা বেশ সুবাসিত হয়েছিল। ধীরে ধীরে ফুলগুলো শুকাতে থাকে আর সুবাস হারাতে থাকে। ঝরে পড়তে থাকে বকুলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাপড়িগুলো।

ঢাকা মহানগরীতে এ চিত্র বিরল। তবু গত পরশু ছেলেকে নিয়ে তারাবীহ নামাজ শেষ করে ভিন্ন পথে দু পা ঘুরতেই একটা বকুল গাছের সন্ধান মিলে। রাস্তায় অল্প পরিমাণ ফুল পড়ে থাকতে দেখলাম কিন্তু বৃষ্টিতে রাস্তা ভেজা থাকায় কুড়ানো সম্ভব হলো না। রাতিবকে বললাম আগামীকাল যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে রাস্তা শুকনো থাকবে আমরা নামাজ শেষ করে ফুল কুড়াতে আসব। ও তো মহা খুশি ! গতকাল রাতে নামাজ পড়তে বের হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে রাতিব আমার কানে কানে বলল, বাবা মনে আছে তো ? আমি বললাম, অবশ্যই। সংক্ষিপ্ত তারাবীহ শেষ করে পিতা-পুত্র বকুল ফুল কুড়ানোর স্বপ্ন-বিভোর মন নিয়ে যথাস্থানে হাজির হলাম এবং ফুল কুড়াতে থাকি। আঁধো আলোয় মধ্যবয়সী এক পিতার পুত্রকে সাথে নিয়ে বকুল ফুল কুড়ানোর এ দৃশ্য সম্ভবত অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল। এক পথচারী মহিলা জিজ্ঞাসা করল, ফুল কী করবেন ভাই ? বললাম, মালা গাঁথব। মহিলা বলেই বসল, মালা গাঁথারও শখ আছে ? কোন জবাব দিলাম না। খুব বেশি ফুল ছিলনা, গাছ ধরে কয়েকবার ঝাঁকুনি দেয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু গাছটি বড় হওয়ায় সে প্রচেষ্টা খুব একটা সফল হলো না।

এরই মধ্যে ১১/১২ বছর বয়সী এক কিশোরী সেখানে এসে দু-একটি করে ফুল কুড়াতে থাকলে রাতিবের সেটা অপছন্দ হলো, কারণ আমাদের ফুল কমে যাবে। কিন্তু দেখা গেল বেশ কয়েকটি ফুল মেয়েটি হাতে করে আমাদের কাছে এসে টুপির মধ্যে ফেলল। বলল, বউ বাজারের সামনের রাস্তায় আরো একটি বকুল গাছ আছে চিনেন ? বললাম- না, বলল আমার সাথে আসেন। রাতিবের দেখলাম এখানে উৎসাহ অনেক বেশি। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা চলো।

ছোট সাইজের হাইব্রীড গাছ, ফুলগুলোর সাইজ বেশ বড়। অনেক ফুল সেখানে পড়ে থাকতে দেখে আমাদের খুব খুশি লাগছিল। তিনজনে মিলে ফুল কুড়িয়ে আসার সময় মেয়েটার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম। বাসায় এসে রাতিব তার মাকে সারপ্রাইজ দিল। আমার মালা গাঁথার শখটা পূরণ হলো না, ওর মা-ই সাথে সাথে এ দায়িত্ব পালন করল। দেয়ালের একটি শো-পিসের চারপাশে মালাটি সাজিয়ে রেখেছে সে। কিন্তু ভাবছি এই বকুলও ক’দিনের মধ্যে শুকিয়ে যাবে, সুবাসও হারিয়ে যাবে। আমাদের জীবনও তো ঠিক এরই মতো, যৌবনের দুরন্ত শক্তিমত্ত্বাও একদিন শুকিয়ে যায়, ফুলের সুবাস হারানোর মতো জীবনের শক্তি, সাহস ও যোগ্যতা ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যায়। তবে ফুলের ভবিষ্যত বিচার নেই, কিন্তু আমাদের ? আমাদের তো অর্জনের ডালি নিয়ে যোগ-বিয়োগের অঙ্কে মহান সত্ত্বার সামনে উপস্থিত হতেই হবে!

বিষয়: বিবিধ

১৯৫৭ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

372343
১৮ জুন ২০১৬ সকাল ০৮:২৬
দ্য স্লেভ লিখেছেন : সাধারন বিষয়েই অসাধারনত্ব লুকিয়ে থাকে। বকুল ফুল কুড়ানো এমন কিছু নয় কিন্তু সেটাকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু মানুষের হৃদয়ের যে স্পন্দন তা তো রহমতেরই নামান্তর। হয়ত সেসময় উপর থেকেও ফেরেশতাদের ফুল বৃষ্টি হচ্ছিলো কিন্তু পৃথিবীবাসী সেটা প্রত্যক্ষ করতে পারেনা।....বরকতে ভরে উঠুক সারাটা জীবন আর আখিরাত....ভালোবাসায় সিক্ত হোক আপনার পারিবারিক জীবন
372347
১৮ জুন ২০১৬ সকাল ০৮:৫৫
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।


যৌবনের দুরন্ত শক্তিমত্ত্বাও একদিন শুকিয়ে যায়, ফুলের সুবাস হারানোর মতো জীবনের শক্তি, সাহস ও যোগ্যতা ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যায়। তবে ফুলের ভবিষ্যত বিচার নেই, কিন্তু আমাদের ? আমাদের তো অর্জনের ডালি নিয়ে যোগ-বিয়োগের অঙ্কে মহান সত্ত্বার সামনে উপস্থিত হতেই হবে!



অসাধারণ অভিব্যক্তি।

আর হ্যাঁ বড় ভাই রমযানের লিখা দিতে ভুলবেন না যেন।

জাজাকাল্লাহু খাইর।

372349
১৮ জুন ২০১৬ সকাল ০৯:০৯
হতভাগা লিখেছেন :
এরই মধ্যে ১১/১২ বছর বয়সী এক কিশোরী সেখানে এসে দু-একটি করে ফুল কুড়াতে থাকলে রাতিবের সেটা অপছন্দ হলো, কারণ আমাদের ফুল কমে যাবে। কিন্তু দেখা গেল বেশ কয়েকটি ফুল মেয়েটি হাতে করে আমাদের কাছে এসে টুপির মধ্যে ফেলল।


০ পিচ্চিটাকে ফুলগুলো দিয়ে দিতে পারতেন । হয়ত ফুলগুলো গেঁধে মালা বানিয়ে সে রাস্তার ট্রাফিক জ্যামে বিক্রি করতো ।
১৮ জুন ২০১৬ সকাল ০৯:৪৯
309138
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : আপনার পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। তবে মেয়েটি সে রতম কেউ না, সে মতিঝিল মডেল স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে পড়ে। রাতিবকে দেখেই মূলত সেও স্বতঃস্ফূর্ততা অনুভব করছিল এবং তাকেই সে ফূলগুলো দিয়েছিল। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
372356
১৮ জুন ২০১৬ সকাল ১০:৪২
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : ভাবীকে মালা গেঁথে উপহার দিলে ভাবী অনেক খুশি হতো, বিনিময় রাতিবকে উপহার হিসেবে নতুন এক সেট জামা দিলে রাতিবও খুশি হতো, যা সারা জীবন মনে রাখার মত একটা কাহীনি হতো।
১৯ জুন ২০১৬ সকাল ০৮:৩৯
309215
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : প্রস্তাবটি খুবই সুন্দর। আগামীতে এই সমীকরণ ব্যবহার করা হবে ইনশাআল্লাহ। ধন্যবাদ।
372375
১৮ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:২৩
আফরা লিখেছেন : খুব সুন্দর উপলদ্ধি খুব ভাল লাগল । অনেক ধন্যবাদ ।
১৯ জুন ২০১৬ সকাল ০৮:৩৮
309214
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
372396
১৮ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:৫২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : Rose Rose Rose
ফুলের বদলে ফুল দিলাম!! তবে বকুল ফুলে আমার এলার্জি আছে!!!
১৯ জুন ২০১৬ সকাল ০৮:৩৮
309213
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : ধন্যবাদ প্রিয় সবুজ ভাই।
374307
১০ জুলাই ২০১৬ বিকাল ০৫:২৭
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ!‍ আপনার বকুল কুঁড়ানো লেখা পড়ে আমারও ছোট্ট বেলার কথা মনে পড়ে গেলো। আমি ও আমার ছোট্ট বোন মিলে তা করতাম, মালা বানাতাম। সত্যিই সারাধন লেখায় অসাধারণ অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন। আল্লাহ্ তা'য়ালা জাযায়ে খায়ের দান করুন আপনার পরিবারের সকলে দুনিয়া ও আখেরাতে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File