দন্ত দম্পতি ও সতীদাহ প্রথা

লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর সালেহ মতীন ৩১ অক্টোবর, ২০১৫, ০৯:৪৫:৪০ সকাল



ইতিহাসের পাতায় ও লোকমুখে অমানবিক সতীদাহ প্রথার কথা জেনে আমরা বিষ্মিত হয়েছি যে, কীভাবে এই জঘন্য লোকাচার সামাজিক সভ্যতায় জায়গা করে নিতে পারে! এ প্রথার সারকথা হলো, স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকেও স্বামীর চিতায় জীবন্ত দাহ করা হবে। ভারতীয় উপমহাদেশের কোন কোন অনুন্নত প্রত্যন্ত অঞ্চলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এখনো নাকি এ প্রথার প্রচলন রয়েছে বলে শোনা যায়।

আমার মুখ গহ্বরের ৩২টি দাঁতের সম্মিলিত সংসারে সতীদাহ প্রথা বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রই। ৯ বছর পূর্বে ২০০৬ সালের নভেম্বরে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হওয়ার সময় উপরের পাশাপাশি দুটি দাঁত বিসর্জন দিতে হয়েছিল। বর্তমানে আরো একটি দন্ত দম্পতি (নিচের ডান পাশের ৭ ও ৮ নং দাঁত) দুনিয়া থেকে বিদায়ের কবলে পড়েছে। ৭নং দাঁতটির মাঝখানে কিছুটা ভেঙ্গে সেটি অক্ষম হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞ ডেন্টিস্ট বলছেন যে, সেটি ফেলে দেয়ার পাশাপাশি ৮নং(দিব্যি সুস্থ ও সক্ষম) দাঁতটিও ফেলে দিতে হবে। ওরা নাকি এক জোড়, জোড়বিহীন দাঁতটি নাকি পরে ভীষণ ভোগান্তি উপহার দিতে পারে।

৩ বছর পূর্বে আমার গৃহিণীর ঠিক একই অবস্থা হয়েছিল। নিচের একটি দাঁত কর্মক্ষমতা হারিয়ে যন্ত্রণার কারণে পরিণত হলে ডেন্টিস্ট সেটিকে ফেলে দেয়রার পরামর্শ দেন। দাঁতটিকে ফেলে দিতে গৃহিণীর মন সায় দিচ্ছিল না। তদুপরি ৫৭ কেজি ওজন এবং ৫ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার ছোট-খাট ডাক্তারের ওপর তার আস্থার কিছুটা কমতি পরিলক্ষিত হলো। তার ধারণা জন্মাল, বড়সড় কোন খ্যাতনামা ডেন্টিস্ট দেখালে দাঁতটিকে হয়ত বাঁচানো যেতে পারে। বুদ্ধিমতী স্ত্রী আমার অগোচরে তার দায়িত্বশীল পিতার সহায়তায় দেশের খ্যাতনামা ডেন্টিস্ট প্রফেসর ডাঃ অরূপ রতন চৌধুরীর সিরিয়াল নিলেন। ডাক্তার মহাশয় প্রেসক্রিপশনে লিখিত ১০টিরও অধিক টেস্ট সম্পন্ন সাপেক্ষে ১দিনের মধ্যেই দাঁতটি ফেলে দেয়ার নির্দেশ দেন। অবশেষে গৃহিণীর সম্বিৎ ফিরে এলো। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পূর্বের ডাক্তারের হাতে দাঁতটি ফেলে দেয়া হলো। কিন্তু গোল বাঁধল অন্যত্র- ডাক্তার সাফ জানিয়ে দিলেন এই বরাবর উপরের দাঁতটিও সত্বর ফেলে দিতে হবে। অন্যথায় সঙ্গীহারা উপরের দাতটি নাকি ভবিষ্যৎ কষ্টের কারণ হতে পারে।

৩ বছর পর ডেন্টিস্টের সেই পরামর্শ গুরুত্ব পাচ্ছে। আমার স্ত্রী বলছে যে, বেশ কিছুদিন ধরে সে উপরের কথিত দাঁতটি নিয়ে সমস্যা ভোগ করছে। আমার বর্তমানের উপরে বর্ণিত দন্ত দম্পতি বিসর্জনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দাঁতের আশপাশের তার শাসন এরিয়া অবশ করতে গিয়ে ডাক্তারকে পড়তে হয়েছিল আজব পরিস্থিতিতে সে মজার কথা আরেকদিন বলার আশা রাখি। আমার দন্তদ্বয়ের বিসর্জন সম্পন্ন হলেই নাকি গৃহিণী তার বিধবা দাঁতটিকে বিদায় জানাবেন।

সতীদাহ প্রথা যতই অপছন্দ করিনা কেন দেখা যাচ্ছে সেই ব্যবস্থার অনুপ্রথার কাছে নিরবে আমাদের হার মানতে হচ্ছে।

বিষয়: বিবিধ

১৪৯২ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

347951
৩১ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০১:৩১
আবু জান্নাত লিখেছেন : আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সব কিছুই জোড় জোড় সৃষ্টি করেছেন। তাই হতে পারে দাতের ব্যপারেও এমন। আপনার কথা সত্য বটে, তবে সতিদাহ শব্দটি এক্ষেত্রে ব্যবহারে কেমন যেন রুচিতে বাঁধছে।
৩১ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০১:৪২
288867
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : মন্তব্যের জন্য আবু জান্নাত ভাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
347960
৩১ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০২:৫০
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।

যথেস্ট হাস্য রসাত্নক পোস্টটির জন্য আন্তরিক শুকরিয়া!

সতীদাহ প্রথার কথা কেনো প্রথমে উল্লেখ করেছিলেন তা সহজে ধরতে পারিনি , শেষ টুকু পড়ে হাসি থামতে চাইছে না!

আপনাদের যুগল দম্পতির দন্ত দম্পতির বহাল তবিয়তের দোআ ও শুভকামনা রইলো!

জাযকাল্লাহু খাইর!
৩১ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০২:৫৬
288883
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। যতদূর অনুমান করতে পারি আপনি এখন সফর ব্যস্ততায় সময় পার করছেন। এ ব্যস্ততার মাঝেও আপনি ব্লগে ঢু মেরেছেন এটা ভালো লাগারই উপলক্ষ। আপনার দোয়ার জন্য মুবারকবাদ।
৩১ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০৩:০২
288884
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আমাদের সফরের সমাপ্তি ঘটেছে আগস্ট মাসেই! এখন মস্তিষ্কে স্মৃতির নিড়ানি চালিয়ে পোস্টে তা ব্যক্ত করার প্রয়াস চলছে!

তবে ভাগ্যক্রমে আজ সকালে ফ্রি থাকায় ব্লগে বসতে পারলাম এজন্য খুব আনন্দ হচ্ছে! শুকরিয়াPraying
347994
৩১ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : দাহ তো করছেনা ফেলে দিচ্ছেন!!!
দুটা দাঁত একসাথে ফেললে বাধাতে সুবিধা। একটা দাঁত ফেললেই নাকি মাড়ির এলাইন্মেন্ট নষ্ট হয়ে যায়।
০১ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ০৯:০৭
288973
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : যাক আপনার সঙ্গত বিশ্লেষণে জীবন্ত দাঁত বিসর্জন দেয়ার কষ্ট কিছুটা লাঘব হলো। সবুজ ভাই আপনাকে ধন্যবাদ।
351017
২৩ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৫৭
নকীব কম্পিউটার লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২৩ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:২৭
291396
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ ভাইয়া।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File