বেগুন সমাচার : সেকাল একাল
লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর সালেহ মতীন ১৪ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:২৫:৪৩ দুপুর
একাকী দিনব্যাপী জার্নির অবসর কাজে লাগাতে ট্রেনে বসেই কৈশোরের প্রত্যক্ষ করা একটি ঘটনা বন্ধুদের শেয়ার করতে চাই। বেগুন নিয়ে লিখব।
রমযানে এ দেশে বেগুনের দাম অনেক বাড়ে আবার রোযা গেলে কমে। কিন্তু বাজার দরের সেই চিরচেনা চরিত্রও বোধ হয় এখন ঠিক নেই। গতকালও বেগুন কিনেছি ৯০ টাকা কেজি দরে। বাজারের মুদ্রিত তালিকায় আমার অতি বেগুনভক্ত স্ত্রী বেগুনে টিক দিলেই কৈশোরের সে ঘটনাচিত্র মানসপটে সহসা ভেসে ওঠে। আর তখন সে ঘটনার জন্য আত্মঅপমানিত হই।
৮৫ সালের শেষ দিককার কথা। যশোরের মনিরামপুর থানাধীন নেঙ্গুড়াহাট এতটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। সপ্তাহে ২দিন রবি ও বুধ এখানে হাট বসে। এর পাশের গ্রামেই আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। এলাকাটি তরি-তরকারির জন্য খ্যাত। সে বার বেগুনের ফলন হয়েছিল অত্যধিক। দাম পড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছিল ৫ কেজি ১টাকা, মান ভালো না হলে ৬/৭ কেজি ১টাকা দরে। উৎপাদনকারি ও ব্যবসায়ীরা মণে মণ বেগুন বাজারে নিয়ে এসে দাম ও ক্রেতা না থাকায় হাট শেষে সেখানেই ফেলে রেখে যায়। কেননা ফিরিয়ে নিয়ে যেতে তাদের আবার ভ্যান ভাড়া লাগবে। আর ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে কার কাছেই বা বিক্রি করবে!
কিন্তু বিপত্তি ঘটল অন্যত্র। রাতের শিশির ও দিনের আলো পেয়ে দিন গড়াতেই লট লট বেগুনে পচন শুরু হলো। স্থায়ী দোকানদাররা তো দুর্গন্ধে টিকতে পারছে না। বাজার কমিটি জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিল আগামী হাটের দিন বাজারে বেগুন প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। যে কথা সেই কাজ। বাজারের অদূরে চারদিকে চার প্রবেশপথে সশস্ত্র (লাঠি হাতে) প্রহরা বসানো হলো যাতে কোন অবস্থাতেই বাজারে বেগুন প্রবেশ করতে না পারে। কী সাঙ্ঘাতিক অপমান! আমার কেন যেন মনে হচ্ছে মহানগরীতে সেই বেগুন বোধ হয় তার অপমানের প্রতিশোধ নিচ্ছে।
৩০ বছর পূর্বে তাজা বেগুনের প্রতি চূড়ান্ত অপমানসূচক সে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কিশোর এই আমি এখন পরিণত সংসারী। অসুন্দর চেহারার স্বাস্থ্যহীন কালো বেগুনের দামও যখন ৯০ টাকা কেজি হেঁকে বিক্রেতা কালো মুখ করে দরে অবিচল থাকেন তখন কৈশোরের সে বেগুন স্মৃতি আমার মনে পড়বে না তো আর কার মনে পড়বে?
বিষয়: বিবিধ
১০৮৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন