দড়িতে পাখি বসা নিষেধ
লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর সালেহ মতীন ২৫ আগস্ট, ২০১৫, ১০:১০:৫৯ সকাল
মহানগরীতে আমার বাসার পূবের বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে মেহগনি গাছের পাতা ছিঁড়তে পারার আনন্দ যেমন আছে তেমনি কিছু বিড়ম্বনাও আছে। সকাল-বিকাল পাখিদের বিশেষ করে এক ঝাঁক চড়ুই পাখির কলতান আমাকে অন্য জগতে নিয়ে যায়। আবার অফিস থেকে ফিরে যখন পুত্রের মায়ের কাছ থেকে মৃদু বিরক্তির স্বরে শুনতে হয়, ‘কাপড়-চোপড়গুলো আবার ধুতে হবে- দেখ পাখিগুলো কী করেছে!’ আমিও লক্ষ্য করছি কিছুদিন ধরে চড়ুইগুলো বারান্দার গ্রিলে অথবা কাপড় টানানোর দড়িতে বসে মনের সুখে টয়লেট সারছে।
পুত্রের মা আমাকে প্রায়ই বলছে- একটা ব্যবস্থা নাও দয়া করে। কিন্তু কী ব্যবস্থা নিব ওদের বিরুদ্ধে ? ওরা যাবে কোথায় ? কোথাও তো নিরাপত্তা নেই! তাছাড়া আশপাশের অনেক বিল্ডিং রেখে আমাদের অতি সাধারণ ভবনকে তারা বসবাসের জন্য চয়েজ করেছে এটাই তো আমাদের জন্য সৌভাগ্যের। সূর্য ওঠার আগে কিংবা গোধূলীতে পাখির লাইভ কিচির মিচির রাজধানীর কয়টা বাসার বাসিন্দাদের ভগ্যে জুটে !
গত শুক্রবার জুমার নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছি ভেজা লুঙ্গিসহ কয়েকটি কাপড় সাথে পাঞ্জাবীটাও দড়িতে ঝুলিয়ে এসেছি একটু রোদ লাগবে চিন্তা করে। মিনিট বিশেক পর পাঞ্জাবী আনতে গিয়ে দেখি পাখিগুলো তাদের দায়িত্ব ঠিকই সেরে ফেলেছে। একটা না দুইটা না তিন তিনটে চড়ুই একই সরল রেখায় বসে একই তালে পাঞ্জাবীটাতে টয়লেট করেছে। সারাদিনে তাদের যন্ত্রণার মাত্রা কত সহজেই অনুমান করা যায়।
না, আর চুপ থাকা যায় না, ব্যবস্থা একটা নিতেই হবে। কিন্তু কী ব্যবস্থা নিব ? কার কাছে অভিযোগ করব ? কে ওদের নিয়ন্ত্রণ করবে ? শাসকগোষ্ঠীর হাতে নির্বাহী ক্ষমতা মজুদ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষিত চ্যালারা তাদের নিয়ন্ত্রণ মানা তো দূরের কথা- তাদের থোড়ায় কেয়ার করছে। শিক্ষিত মানুষেরা যদি এত অনিয়ন্ত্রিত বেপরোয়া হয় তবে এ পরিবেশে অবলা-অশিক্ষিত পক্ষীগুলো তাদের নেতা-নেত্রীর কোন নিয়ন্ত্রণের ধার ধারবে বলে বিশ্বাস হলো না।
তবু ব্যবস্থা নিতেই হবে, নিরব থাকলে চলবে না। নীতি কথা প্রচার করতে হবে, শাসনের বার্তা তাদের শুনাতেই হবে। কোন ব্যবস্থা না নিলে পুত্রের মা এবার আর সহ্য করবে বলে মনে হয় না। যে চিন্তা সেই কাজ- লাল কালি দিয়ে সাইনবোর্ড লিখে দড়িতে ঝুলিয়ে দিলাম- ‘গ্রিলে/দড়িতে চড়ুইসহ যে কোন প্রকার পাখি বসা নিষেধ।’
লেখার প্রতি পক্ষীগুলো সম্মান দেখাল কিনা জানিনা, তবে ৩/৪দিন পার হয়ে গেল পাখিদের দড়িতে বসতে তো দেখিইনি, বউয়ের কোন নালিশও এ ক’দিনে আর শুনতে হয়নি। এমনকি পক্ষীগুলোর টয়লেও আর নজরে পড়ছে না।
বিষয়: বিবিধ
১২৪৪ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি নোবেল প্রাইজন পাবেন। পৃথিবিতে চড়ুইপাখি কে বাংলা পড়া শিখায় কে?? উত্তর বাংলাদেশের ডঃ সালেহ মতিন!!
তারে বা গাছে কাকতাড়ুয়ার মত ঝুলন্ত কিছু থাকলে সেখানে কোন পাখি বসেনা!!
সহমত
সুন্দর পোষ্ট, অনেক অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন