রিকসারও তো একটা সম্মান আছে নাকি ?

লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর সালেহ মতীন ১৯ এপ্রিল, ২০১৫, ০৮:৪৯:৩১ সকাল

মগবাজারের নয়াটোলা মেসে থাকতে আমার প্রিয় রুমমেট ছিলেন ম্যাব্স মৌচাক শাখার বাংলা ডিপার্টমেন্টের আমার প্রিয় সহকর্মী এরশাদুল্লাহ। ম্যাব্স এর পাশাপাশি তিনি পুরান ঢাকার আরমানিটোলা কলেজে শিক্ষকতাও করতেন। এখনো সেখানে কর্মরত আছেন। ভালো গান গাইতে পারতেন তিনি। সন্ধ্যার পর ঘরে ফিরে অবসর সময়ে দুজনেরই গান গাওয়ার রেওয়াজ মেসের অন্য আরো দুজনকে বেশ আনন্দ দিত বলেই প্রমাণ পেয়েছিলাম। অবশ্য অনুগত ও ভক্ত শ্রোতা হিসেবে গান শুনাই ছিল আমার বেশি পছন্দ।

শুধু গানই কেন বলছি নিজেদের জীবনের ও পরিবারের টুকরো টুকরো ঘটনাগুলো একে অপরের সাথে শেয়ার করতাম। মনেই হতো না যে, আমরা চার প্রান্ত থেকে চারজন এসে এখানে মিলিত হয়েছি। মনে হতো আমরা বুঝি একই মায়ের একই গাঁয়ের একই বিদ্যালয় থেকে পাঠ শেষ করে আসা চার যুবক। সে সময়টার চতুর্যুবকের সুমধুর সান্নিধ্য যে কোন মেস জীবন থেকে সহজেই আলাদা করা যায়।

একদিন পারিবারিক গল্প বলতে যতারীতি পালা এরশাদুল্লাহ ভাইয়ের। একটু চিন্তা করেই তিনি স্থির করলেন তার সরলমনা দাদির ঐতিহাসিক একটি ঘটনা আজ বিবৃত করবেন। অতএব আজকের গল্পের প্রসঙ্গ ‘এরশাদুল্লাহ দাদি’।

এরশাদুল্লাহ ভাই বরিশালের ছেলে। তার কয়েকজন আত্মীয় আছেন ঢাকায়। দাদি(৭৫) একদিন ঢাকা এসেছেন বেড়াতে। গ্রামের মানুষ, সহজ-সরল প্রকৃতির এবং সবকিছুর প্রতি তার সম্মানবোধ প্রচণ্ড রকম। আমরা নিজেরাও তো অনেক ক্ষেত্রে এ বোধটা জন্মগতভাবেই লালন করি। মসজিদে জুতা পায়ে উঠিনা পবিত্রতা ও সম্মানের কারণে। পরিচ্ছন্ন-পরিপাটি ফ্লোরে জুতা খুলে উঠি পরিচ্ছন্ন রুচিবোধের কারণে। শহীদ মিনারে খালি পায়ে উঠি শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদানের অংশ হিসেবে। এগুলো তো আমাদের সমাজের নিত্য প্রচলিত বাস্তবতা।

দাদি যাবেন মৌচাক থেকে বাড্ডা তার এক আত্মীয়ের বাসায়। অন্যান্যের সাথে তাকে সঙ্গ দিচ্ছে এরশাদুল্লাহ ভাই। বিসমিল্লাহ বলে দাদি রিক্সায় উঠলেন। সামান্য দূর হলেও মহানগরীর বাস্তবতায় বাড্ডা পৌঁছাতে বেশ খানিক সময় লেগে গেল। রিক্সায় বসে দাদি দোয়া দরূদ পড়ছেন আর এদিক ওদিকে চেয়ে দেখছেন। অবশেষে গন্তব্যে পৌঁছে রিক্সা থেকে নামার সময় তিনি তার জুতা খুঁজে পাচ্ছেন না। জিজ্ঞেস করা হলো দাদি তোমার জুতা কী করেছ ? দাদি বললেন, ‘আমি তো জুতা খুলে রিক্সায় উঠেছিলাম।’

সুপ্রিয় পাঠক ! নিশ্চয় অনুধাবন করতে পারছেন সহজ-সরল বোধের মাত্রা কোন পর্যায়ের থাকলে এই কাজটি ঘটতে পারে। শুধু তাই নয় তার দাবী যে, জুতা খুলে রিক্সায় উঠেছি- নামার সময় সেটি পাব না কেন ?

খিলগাঁও, ঢাকা

০৯ এপ্রিল, ২০১৫

বিষয়: বিবিধ

১০৯০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

315721
১৯ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ০৯:২১
কাহাফ লিখেছেন :
আজকের সমাজে এমন বোধের মাত্রা হারিয়েই যাচ্ছে! স্বার্থকেন্দ্রীক মানসিকতা ঘিরে ধরেছে সমাজ কে চারি পাশ থেকে!

ভালো লাগল উপস্হাপনা!ধন্যবাদ জানাই!!
১৯ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ০৯:৪৫
256715
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : সুপ্রিয় ভাই কাহাফ,
আমার ব্লগ কুটিরে বেড়াতে অঅসার জন্য এবং পাশাপাশি চমৎকার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনি যথার্থই বলেছেন। মূল্যবোধের উপস্থিতি আমাদের আরো শান্তিপ্রিয় ও অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাসচেতন করত সন্দেহ নেই। আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।
315766
১৯ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:৩৬
বুসিফেলাস লিখেছেন : দাদিদের মত সরলতা একালে হারাতে হারাতে শূন্য হয়ে যাচ্ছে :(
১৯ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০২:৩৯
256798
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
315810
১৯ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৩৭
মোঃ মাসুম সরকার আযহারী লিখেছেন : "জুতা খুলে রিক্সায় উঠেছি- নামার সময় সেটি পাব না কেন?" দাদির ভাবনাটার অন্য একটি মাত্রাও থাকতে পারে। এটাও ভাবতে পারেন- রিক্সাওয়ালা নিজ দায়িত্বে জুতাটা তুলে দিবেন। ওনি টাকা দিয়ে রিক্সায় চড়বেন জুতা নিজ হাতে তুলতে যাবেন কেন?!! প্রেসটিজের ব্যাপারা আছেনা?!!
সে যাই হোক। খুব সুন্দর লিখেছেন। ভাল লেগেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ।
২০ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ০৮:২৪
256953
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : জী ভাইজান অাপনার দার্শনিক মন্তব্যটি ভালো লেগেছে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
315830
১৯ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : জুতা কি উইদআউট রিকশা গন্তব্যে চলে যাবে্!!!!
২০ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ০৮:২৪
256954
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : জী সবুজ ভাই মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File