মেদ ভুঁড়ি একটি অভিশাপ !

লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর সালেহ মতীন ০২ মার্চ, ২০১৩, ০২:০৪:২৯ দুপুর



একজন সেদিন বললেন, ভুঁড়ি নাকি সচ্ছলতা আর আভিজাত্যের প্রতীক। যার যত টাকা তিনি তত ভুঁড়ি হাঁকিয়ে হাঁটেন। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞান ভুঁড়ি হওয়াকে সৌভাগ্য তো দূরের কথা, স্বাস্থ্যহানির লক্ষণ বলে অভিহিত করেছে। যারা এতে আক্রান্ত তাদের অনেকেরই কষ্টের কথা জেনে ভালো থাকার পক্ষে এটা রীতিমতো একটি অভিশাপ ছাড়া আর কিছু নয়।

মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের পেটে চর্বি জমা হওয়ার প্রবণতা বেশি। ওজন যাই হোক, পেটে অতিরিক্ত চর্বি নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে যেমন- হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, মস্তিষ্কের পক্ষাঘাত, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, ডায়াবেটিস (টাইপ-২), ইনসুলিনে প্রতিরোধ্যতা বেড়ে যাওয়া, রক্তে ট্রাইগি্লসারাইড বাড়া, কম ঘনত্বের ভালো কোলেস্টরল কমে যাওযা, বিপাকজনিত সমস্যা, ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে যাওয়া। অনেকে জানতে চান, পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমেছে কিনা তা কি করে বুঝব? সাধারণত কটিদেশ এবং কোমরের মাপ নিয়ে তার অনুপাত নির্ণয় করলে এটা বোঝা যায়। আরেকটি সহজ উপায় হচ্ছে, শরীরের ঘনত্ব সূচক বা বিএসআই নির্ণয় করা। তবে যে কারো কটিদেশের মাপ (ওয়েস্ট) জানলেই আন্দাজ করা যায় তার অবস্থা কী? সাধারণত যাদের কটি ৪০ ইঞ্চির (১০২ সেন্টিমিটার) বেশি তারা বিপদের মুখে রয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আরেকটি প্রশ্ন চলে আসে-বয়সের সঙ্গে কি ভুঁড়ির কোনো সম্পর্ক আছে? এর উত্তর শরীরচর্চা বা ব্যায়াম না করেন, তাহলে তার পেশি ক্ষয় হতে থাকে এবং এর ফলে শরীরের ক্যালরির খরচের পরিমাণ আরো কমে যায়। এ জন্য বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ভুঁড়ি বাড়তে থাকে স্থূলতা কিংবা অতিরিক্ত ওজনের জন্য অনেকে বংশগত বা জিনকে দায়ী করে থাকেন। তবে বংশগত বা জিন ওজন বাড়ার জন্যযত না দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী আমাদের জীবনাচরণ বা লাইফস্টাইল। যারা শারীরিক পরিশ্রম কম করে এবং বেশি খায় তারাই মোটা হয়। তাদেরই ভুঁড়ি বাড়ে।

যেভাবে ভুঁড়ি কমাবেন ভুঁড়ি কমানো আর শরীরের ওজন কমানোর মূলসূত্র একই-ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কমাতে হবে আর শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ক্যালরি গ্রহণ-কমানোর সহজ কোনো বুদ্ধি নেই। তবে কৌশল অবলম্বন করলে ফল পাবেন। পাত্রে খাবারের পরিমাণ কম নিতে হবে। খাবার কম খেয়ে পানি বেশি করে খান। তেল-চর্বির পরিবর্তে শাক-সবজি ও ফল বেশি খেতে হবে। তেল-চর্বির পরিবর্তে শাক-সবজি ও ফল বেশি খেতে হবে। ফাস্টফুড যত কম খাওয়া যায়, ততই মঙ্গল রেস্টুরেন্টে অথবা দাওয়াতে যত কম খাওয়া যায় ততই মঙ্গল। খাবারের টেবিলে সময় কম ব্যবহার করা শারীরিক পরিশ্রম বাড়াতে হবে সুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের প্রত্যেকের প্রতি সপ্তাহে আড়াই ঘণ্টা মাঝারি মানের শারীরিক ব্যায়াম করা উচিত অথবা ৭৫ মিনিট ভারী ব্যায়াম করা যেতে পারে। যারা ওজন কমাতে চান তাদের এর চেয়ে বেশি ব্যায়াম করতে হবে এবং তা নিয়মিত চর্চা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ট্রেডসিল ব্যবহার করা যেতে পারে। ২. যাদের পক্ষে একটানা বেশি সময় ব্যায়ামের ফুরসত নেই, তারা কাজের ফাঁকে ফাঁকে অল্প সময়ে কিংবা বারবার ব্যায়াম করতে পারেন। ৩. নৈশভোজের পর অবশ্যই কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে হবে। ৪. একবার ওজন সটিকমাত্রায় নিয়ে আসতে পারলে তা বজায় রাখার জন্য যথাযথ খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়াম অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে, অতিরিক্ত মেদ ভুঁড়ি কমানো সম্ভব। তবে প্রয়োজন একাগ্রতা এবং ধৈর্য। কয়েক কেজি অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারলেই তা চিত্তকে প্রফুল্ল করে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বহুলাংশে লাঘব করে।

কৃতজ্ঞতায় : রেসপেরিটরি মেডিসিন বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

বিষয়: বিবিধ

১১৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File