মশা ও মশারি
লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর সালেহ মতীন ০৪ মে, ২০১৪, ০২:০০:২৪ দুপুর
আমাদের ঘরে ইদানিং মশার উৎপাত কিছুটা বেড়ে যাওয়াতে এ নিয়ে অতীষ্ট হওয়া ছাড়াও নতুন করে ভাবনায় কিছুটা নাড়া পড়েছে। তবে এ বেড়ে যাওয়া বৃদ্ধি সে পর্যায়ের নয়, যে বিষয়ে আমার প্রিয় এক সহকর্মী অস্তাদ যিনি এই ব্লগের জনপ্রিয় লেখক পান্থ নজরুল একদিন বর্ণনা দিয়েছিলেন। একটি ঐতিহাসিক কারণে পান্থ নজরুল ও আমি একে অপরকে ‘অস্তাদ’ বলে সম্বোধন করি। কয়েক বছর পূর্বে মশার অধিক্য নিয়ে কথা উঠলে অস্তাদ বলেছিল, ‘আপনার ঘরে আর মশা কোথায় আমার ঘরের যে কোন জায়গায় আপনি চোখ বন্ধ করে মেঝেতে লাথি মারবেন আপনার পায়ের নিচে ৭/৮টা মশা মরবে।’ অস্তাদ তখন রাজধানী ঢাকার মাদারটেক এলাকায় থাকতেন। না আমার ঘর এখনো সে পর্যায়ে পৌঁছেনি। মশা দেখে দেখে চাপা দেয়ার চেষ্টা করলেও সম্ভবত পায়ের নিচে ১টি মশাও পড়া সম্ভব নয়। তবে সংখ্যায় কম থাকলেও যন্ত্রণার দিক থেকে ওদেরকে খুব আক্রমণাত্মক মনে হয়।
মশার পরিমাণ বেশি না কম তা বোধ হয় উপরের প্যারামটিারে মাপা একেবারে অযৌক্তিক নয়। তবে পরিমাণ বেশি কা যাই হোক মশার অত্যাচার থেকে আমাদের তো বাঁচার উপায় খুঁজতেই হয়। খুব ছোট কালে দেখেছি মশা তাড়াতে চীন থেকে আমদানী করা মোরগ মার্কা মশার কয়েল ব্যবহার করা হতো। সবুজ রঙের ঐ কয়েল নাকি খুব কার্যকর ছিল। এখন তো দেশে কয়েল তৈরির কারখানা অনেক। তবু মশার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। আর কয়েল কিন্তু মশাকেই ঘায়েল করে তা নয়, তা ঈষৎ বিষাক্ত হওয়ার কারণে ব্যবহার স্থলের সব প্রাণীরই সমান ক্ষতি করে। মানুষের তুলনায় মশা ক্ষুদ্র প্রাণী ও প্রাণশক্তি স্বল্প বলে মশা কয়েল ব্যবহারস্থল থেকে পালিয়ে যায় কিংবা কখনও কখনও আহত হয়। কোন কোন কয়েল কোম্পানী দাবী করে তাদের কয়েল ব্যবহারে মশা টপাটপ মরবে।
কয়েল ছাড়াও অনেক প্রকার এ্যরোসল বাজারে রয়েছে যেগুলোর ক্ষেত্রেও ঐ একই বক্তব্য প্রযোজ্য। তা সব প্রাণীকেই ক্ষতি করে। বস্তুতপক্ষে এসব উপকরণ দিয়ে মশার কিছুই করা সম্ভব নয়। এগুলো মশা থেকে নিতান্তই আত্মরক্ষার (ডিফেন্স) কৌশল ছাড়া আর কিছু নয়। তাহলে বিষয়টা দাঁড়ালো এই যে, বিজ্ঞান যতকিছুই আবিষ্কার করুক মশার বিরুদ্ধে কার্যকর কোন আবিষ্কারে আমরা সফল হইনি। এখানে একটি তথ্য দেয়া সঙ্গত মনে করছি য, মশার গড় আয়ু ৭ দিন। এই ৭দিনে একটি মশা ১৯ লিখে তার ডানে ১৯টি শূন্য দিলে যে সংখ্যা নির্ণীত হয় (১৯০০০০০০০০০০০০০০০০০০০) ততগুলো ডিম পাড়ে। ভেবে দেখেছেন কী সাঙ্ঘাতিক ! সুতরাং এই মশার ক্রমবর্ধমান বংশবিস্তারের বিপরীতে উপযুক্ত কোন ব্যবস্থা কি আমরা নিতে পেরেছি ? কত ধ্বংসাত্মক মারণাস্ত্রই আমরা তৈরি করেছি, এমন কোন অস্ত্র কি আছে যা ফিট করে রেখে দিলে মশা ভয়ে তার ধারে কাছেও আসবে না! তবে কি মশার কাছে বিশ্ব সত্যিই অসহায় ?
মশার অত্যাচার থেকে বাঁচতে আদিকাল থেকে আমাদের সমাজে মশারির ব্যবহার প্রচলিত আছে। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ছাড়া আমরা কল্পনা করতে পারি না। অবশ্য মশার আধিক্য বিদ্যমান এমন বাসা বাড়িতে ছেলেমেয়রা তাদের পাঠে মনোনিবেশের ক্ষেত্রে মশার অযাচিত অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে মশারির মধ্যে বসে পড়াশুনা করে।
মশার ক্রমবর্ধমার চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে বাজারে ম্যাজিক মশারি নামে এক প্রকার মশারি এসেছে যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে বাতাস ঢুকতে সক্ষম বলে দাবী করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমার জানামতে বোনাফাইড ও এ্যানজেলিক নামে দুটি ব্রান্ডের মশারি কোয়ারিটিতে এগিয়ে আছে বলে ব্যবহারকারীদের অভিমত। ম্যাজিক আসলে কিছুই নয়, শুধু বুনন কৌশলের কারণে এসব মশারির মধ্যে সাধারণ মশারির চেয়ে অধিক বাতাস প্রবেশ করতে পারে। এটা কথার কথা নয়, বুননের এ কৌশল বিজ্ঞানসম্মত। সাধারণ মশারির ছিদ্র থাকে চতুর্কৌণিক আর উপরোক্ত মশারির ছিদ্র থাকে ষষ্ঠকৌণিক।
বিজ্ঞানের এ প্রযুক্তির সাহচর্যে মশারি উৎপাদন করে কেউ কেউ দাবী করতে পারেন যে, মানবসভ্যতা মশার কাছে জয়লাভ করেছে। কিন্তু মোদ্দা কথা হচ্ছে, মশারি কোন কৃতিত্বের স্বাক্ষর বহন করে না বরং মশারি হলো মশার কাছে মানবসভ্যতার অসহায় আত্মসমর্পণের দলিল। রাতের কয়েক ঘণ্টা ঘুমকে নির্বিঘ্ন করতে মশার কাছে করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে নিজেই মশারির ভিতরে লুকানোই হলো মশারির হাকীকত। এতে আবিষ্কারের কৃতিত্ব দাবী করা যায় কিনা পাঠকবৃন্দের কাছে প্রশ্ন রইল।
প্রসঙ্গত একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। উপমহাদেশের একজন বরেণ্য মনীষী একবার বাংলাদেশ সফরে এসে খুলনায় রাত্রি যাপন করেছিলেন। সকাল বেলা তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘মুহতারাম ঘুম কেমন হয়েছে, কোন অসুবিধা হয়নি তো ?’ মেহমান মৃদু হেসে বললেন, ‘না তেমন অসুবিধা হয়নি, তবে মশারির বাইরে মশার শ্লোগানে ঘুম কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে। মশা কি শ্লোগান দিয়েছে জানতে চাইলে বললেন, “মশা বলছে, এত শক্তি তোদের তো মশারির ভেতরে গেছিস ক্যান ? ক্ষমতা থাকলে বাইরে আয়”। মশার এ উক্তি সভ্যতার জন্য কতখানি অপমানজনক কল্পনা করুন। ঘটনা ভিতর থেকে বিশ্লেষণ করলে সহজেই উপলব্ধি করা যায় মশার কাছে মানবসভ্যতা কতটা অসহায়।
বিষয়: বিবিধ
২২৯৫ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
“মশা বলছে, এত শক্তি তোদের তো মশারির ভেতরে গেছিস ক্যান ? ক্ষমতা থাকলে বাইরে আয়”। ) ) ) )
মশারির ভিতরে শুলে গরম আর বাইরে মশার কামড়(হুল)। মাঝে মধ্যে মনে হয় মশা যদি খাদ্য হইত কতইনা ভাল হইত!
যে ঘটনাটি বলেছেন সেটা সম্ভবত ঘটেছিল সৈয়দপুরে।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে আমরা আমাদের ইকো সিস্টেম নষ্ট করায় শিকারে পরিনত হচ্ছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন