ইসলামী ব্যাংকের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ (পর্ব-৬)

লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর সালেহ মতীন ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১০:৪৪:৫৪ সকাল



[পূর্ব প্রকাশিতের পর]

ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে সারা দুনিয়া এখন ভাবছে। এ ব্যাপারে আমার কিছু রচনা সম্মানিত ব্লগার ও পাঠক ভাই-বোনদের উদ্দেশে শেয়ার করতে চাই। প্রকাশিত বিষয়ে সমালোচনা, পরামর্শ, সংশোধন সাদরে গৃহীত হবে। বিষয়টি নিতান্তই বেরসিক বিষয়বস্তুর তালিকায় পড়ে, সুতরাং ইহা যদি কারো বিরক্তি উৎপাদন করে তবে আগে ভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

পর্ব-৬

ইসলামী ব্যাংকিং এর ইতিহাসে ১৯৬৩ সালের গুরুত্ব অপরিসীম। ঐ বছর মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে প্রায় একশ’ কিলোমিটার দূরে অবহেলিত ব-দ্বীপ ‘মিটগামারে’ প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সেভিংস ব্যাংক’ (Savings Bank), যা আধুনিক বিশ্বের প্রথম আনুষ্ঠানিক ইসলামী ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃত। একে ‘মিটগামার ব্যাংক’ও (Mit Ghamr Bank) বলা হয়। ড. আহমদ নাজ্জার ছিলেন এ ব্যাংকের চিন্তানায়ক ও প্রতিষ্ঠাতা। মধ্য ও নিম্নবিত্তদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাকে পুঁজিবাদের প্রত্যক্ষ প্রভাব থেকে মুক্ত করা, দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা, দুস্থ ও অসহায়গণের কল্যাণ করার মহান ব্রত নিয়ে আল্লাহ্্ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে তিনি এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ৪ বছরে ব্যাংকটি প্রায় ১০ লক্ষ গ্রাহক সংগ্রহ করে। এ ছাড়াও ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত শুধু মিশরেই ৯টি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন মিশরের শাসন ক্ষমতায় ছিল জামাল আব্দুন নাসের। ১৯৬৭ সালে মিশরের সব ক’টি ইসলামী ব্যাংককে তিনি নিষিদ্ধ করেন। এরপরই জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষোভের মাত্রা ক্রমবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকার নতি স্বীকারে বাধ্য হয় এবং ১৯৭১ ‘নাসের সোস্যাল ব্যাংক’ নামে একটি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে।

১৯৭০ সালে OIC দেশসমূহের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে মুসলিম দেশসমূহে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তে ইসলামী ব্যাংকিং এর জন্য অপেক্ষমাণ মুসলিমগণ আশান্বিত হন। ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বরে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত ওআইসির প্রথম অর্থমন্ত্রী সম্মেলনে একটি আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৭৪ সালের আগস্ট মাসে অর্থমন্ত্রীগণ আইডিবি চার্টারে স্বাক্ষর করেন এবং ১৯৭৫ সালের ২০ অক্টোবর জেদ্দায় প্রতিষ্ঠিত হয় মুসলিম উম্মাহর অর্থনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণকারি বহুল কাক্সিক্ষত আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংক আইডিবি (Islamic Development Bank- IDB)।

১৯৭৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘First Muslim Interest free Business Institution’ ১৯৭৭ সালে সুদানে ‘ফয়সল ইসলামিক ব্যাংক অব সুদান’ (Foysol Islamic Bank of Sudan) এবং মিশরে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ফয়সল ইসলামিক ব্যাংক অব ঈজিপ্ট’ (Foysol Islamic Bank of Egypt)। ১৯৭৭ সালে ‘কুয়েত ফাইন্যান্স হাউজ’ (Quait Finance House) এবং বাহামা দ্বীপপুঞ্জে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড’ (Islamic Investment Company Limited)। একই সালে সৌদি আরবে গঠিত হয় International Association of Islamic Banks (ইসলামী ব্যাংকসমূহের আন্তর্জাতিক সংস্থা)। এ সংস্থা বিশ্বের ইসলামী ব্যাংকসমূহের স্বার্থ সংরক্ষণ, নীতিমালা প্রণয়ন ও কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে জন্ম লাভ করে।

১৯৭৮ সালে জর্দানে ‘জর্দান ইসলামিক ব্যাংক ফর ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট’, ‘ইসলামিক ব্যাংকিং সিস্টেম ইন্টাঃ হোল্ডিং, এস এ, লুক্সেমবার্গ এবং ‘ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট কোং অব দি গাল্ফ (সারজাহ)’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বছর পাকিস্তান তার সমগ্র ব্যাংকব্যবস্থাকে ইসলামীকরণের ঘোষণা দেয়। ১৯৭৯ সালে মুসলিম-অমুসলিম দেশের পাশাপাশি শুধু ইরানেই ৭টি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৭৯ সালে আরো কয়েকটি দেশে ইসলামী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। এর মধ্যে রয়েছে ‘বাহরাইন ইসলামিক ব্যাংক বি.এস, বাহামা দ্বীপপুঞ্জে ‘ফয়সল ইসলামিক ব্যাংক অব বাহামাস লিমিটেড’। একই সালে পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক ও অর্থলগ্নিকারি প্রতিষ্ঠান আত্মপ্রকাশ করে।

ইসলামী ব্যাংকিং এর যাত্রাপথে ১৯৮০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে ইসলামী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে সেগুলো হলো :

যুক্তরাজ্যে ‘আল-রাজী কোম্পানি ফর ইসলামিক, কাতারে ‘ইসলামিক এক্সচেঞ্জ এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি, মিশরে ‘ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর ইনভেস্টমেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট’ এবং ‘ব্যাংক মিশর ইসলামিক ব্রাঞ্চ নামে ২টি প্রতিষ্ঠান আত্মপ্রকাশ করে। এ বছর বাহরাইনে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বাহরাইন ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি। ভারতে ‘আল-আমিন ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি এবং সুইজারল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘শারী‘আহ্ ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেস এসএ’ নামে একটি ইসলামিক অর্থলগ্নিকারি প্রতিষ্ঠান।

১৯৮১ সালে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইসলামিক ফাইন্যান্স হাউজ পিএলসি (ইংল্যান্ড), সুদানে ‘ইসলামিক ব্যাংক ফর ওয়েস্টার্ন সুদান’, জর্দানে ‘ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট হাউজ’ এবং বাহরাইনে ‘আরব ব্যাংকিং কর্পোরেশন’। ১৯৮২ সালে যুক্তরাজ্যে ২টি ইসলামী প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। এদের একটি হলো ‘ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি অব ইউকে এবং অপরটি ‘ফার্স্ট ইন্টারেস্ট ফ্রি ফাইন্যান্স কনসোর্টিয়াম’। এ বছর সুদানে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আল-বারাকা ইসলামিক ব্যাংক, সৌদি আরবে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আল বারাকা ইনভেস্টমেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। ফিলিপাইনে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আমানাহ্ ব্যাংক লামাবাঙ্গা’, সাইপ্রাসে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ফয়সল ইসলামিক ব্যাংক অব কিবরিজ লিমিটেড তুর্কী সাইপ্রাস’ এবং বাহরাইনে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মাশরিফ ফয়সল আল ইসলামিক।’

১৯৮৩ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড’। এ বছর বিশ্বের অন্যান্য দেশে আরো কিছু ইসলামী ব্যাংক ও অর্থলগ্নিকারি প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। বাহরাইনে ‘ফয়সল ইসলামিক ব্যাংক অব বাহরাইন’, ডেনমার্কে ‘ইসলামিক ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল’, গিনিতে ‘ফয়সল ইসলামিক ব্যাংক অব গিনি’, মৌরিতানিয়ায় ‘আল বারাকা ইসলামিক ব্যাংক’, মালয়েশিয়ায় ‘ব্যাংক ইসলাম মালয়েশিয়া বারহাদ (বিআইএমবি)’, সুদানে ‘সুদানিজ ইসলামিক ব্যাংক’, কাতারে ‘কাতার ইসলামিক ব্যাংক’, এবং নাইজারে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ফয়সল ইসলামিক ব্যাংক অব নাইজার’। এ বছর তুরস্কেও একটি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সে দেশের পার্লামেন্টে ইসলামিক ব্যাংকিং আইন পাশ করে।

১৯৮৪ সালে বাহরাইনে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আল বারাকা ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক বিএসসি (ইসি), গিনিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি’, সৌদি আরবে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আল-রাজী ব্যাংকিং এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন’, নাইজার ও সেনেগালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি’ এই একই নামে নামে আলাদা আলাদা দুটি ইসলামী অর্থলগ্নিকারি প্রতিষ্ঠান। এ বছর তুরস্কে ২টি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা লাভ করে। একটি হলো ‘আল-বারাকা তার্কিস ফাইন্যান্স হাউজ’ এবং অপরটি ‘ফয়সল ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশন’। ১৯৮৫ সালে পাকিস্তানে কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এদের মধ্যে রয়েছে ‘ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান’, ‘হাবিব ব্যাংক লিমিটেড’, ‘ইউনাইটেড ব্যাংক লিমিটেড’, ‘মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড’ এবং ‘এলায়েড ব্যাংক অব পাকিস্তান লিমিটেড’। ১৯৮৫ সালে পাকিস্তান ও সুদানে সুদভিত্তিক ব্যাংকিং লেনদেন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে ‘আল বারাকা ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড’, জর্দানে ‘জর্দান ফাইন্যান্স হাউজ, আম্মান’ ও ‘ন্যাশনাল ইসলামিক ব্যাংক’, সুদানে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইসলামিক কো-অপারেটিভ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।

বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে ইসলামী ব্যাংকসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয় সেগুলো হলো: বাংলাদেশে ‘আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড’, ‘সোস্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড’, ইন্দোনেশিয়ায় ‘ব্যাংক মুয়ানামাত ইন্দোনেশিয়া’ ও ‘ব্যাংক শারী‘আহ্’, মালয়েশিয়ায় ‘ব্যাংক আল বারাকা মালয়েশিয়া’, আফগানিস্তানে ‘ইসলামিক ব্যাংক আফগানিস্তান’, ফিলিস্তিনে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক ব্যাংক’। বাংলাদেশে ২০০১ সালে ‘শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড’, ২০০৩ সালে ‘এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড’ এবং ২০০৯ সালে ‘ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

[চলবে.....।][পূর্ব প্রকাশিতের পর]

ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে সারা দুনিয়া এখন ভাবছে। এ ব্যাপারে আমার কিছু রচনা সম্মানিত ব্লগার ও পাঠক ভাই-বোনদের উদ্দেশে শেয়ার করতে চাই। প্রকাশিত বিষয়ে সমালোচনা, পরামর্শ, সংশোধন সাদরে গৃহীত হবে। বিষয়টি নিতান্তই বেরসিক বিষয়বস্তুর তালিকায় পড়ে, সুতরাং ইহা যদি কারো বিরক্তি উৎপাদন করে তবে আগে ভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

পর্ব-৬

ইসলামী ব্যাংকিং এর ইতিহাসে ১৯৬৩ সালের গুরুত্ব অপরিসীম। ঐ বছর মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে প্রায় একশ’ কিলোমিটার দূরে অবহেলিত ব-দ্বীপ ‘মিটগামারে’ প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সেভিংস ব্যাংক’ (Savings Bank), যা আধুনিক বিশ্বের প্রথম আনুষ্ঠানিক ইসলামী ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃত। একে ‘মিটগামার ব্যাংক’ও (Mit Ghamr Bank) বলা হয়। ড. আহমদ নাজ্জার ছিলেন এ ব্যাংকের চিন্তানায়ক ও প্রতিষ্ঠাতা। মধ্য ও নিম্নবিত্তদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাকে পুঁজিবাদের প্রত্যক্ষ প্রভাব থেকে মুক্ত করা, দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা, দুস্থ ও অসহায়গণের কল্যাণ করার মহান ব্রত নিয়ে আল্লাহ্্ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে তিনি এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ৪ বছরে ব্যাংকটি প্রায় ১০ লক্ষ গ্রাহক সংগ্রহ করে। এ ছাড়াও ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত শুধু মিশরেই ৯টি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন মিশরের শাসন ক্ষমতায় ছিল জামাল আব্দুন নাসের। ১৯৬৭ সালে মিশরের সব ক’টি ইসলামী ব্যাংককে তিনি নিষিদ্ধ করেন। এরপরই জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষোভের মাত্রা ক্রমবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকার নতি স্বীকারে বাধ্য হয় এবং ১৯৭১ ‘নাসের সোস্যাল ব্যাংক’ নামে একটি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে।

১৯৭০ সালে OIC দেশসমূহের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে মুসলিম দেশসমূহে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তে ইসলামী ব্যাংকিং এর জন্য অপেক্ষমাণ মুসলিমগণ আশান্বিত হন। ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বরে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত ওআইসির প্রথম অর্থমন্ত্রী সম্মেলনে একটি আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৭৪ সালের আগস্ট মাসে অর্থমন্ত্রীগণ আইডিবি চার্টারে স্বাক্ষর করেন এবং ১৯৭৫ সালের ২০ অক্টোবর জেদ্দায় প্রতিষ্ঠিত হয় মুসলিম উম্মাহর অর্থনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণকারি বহুল কাক্সিক্ষত আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংক আইডিবি (Islamic Development Bank- IDB)।

১৯৭৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘First Muslim Interest free Business Institution’ ১৯৭৭ সালে সুদানে ‘ফয়সল ইসলামিক ব্যাংক অব সুদান’ (Foysol Islamic Bank of Sudan) এবং মিশরে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ফয়সল ইসলামিক ব্যাংক অব ঈজিপ্ট’ (Foysol Islamic Bank of Egypt)। ১৯৭৭ সালে ‘কুয়েত ফাইন্যান্স হাউজ’ (Quait Finance House) এবং বাহামা দ্বীপপুঞ্জে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড’ (Islamic Investment Company Limited)। একই সালে সৌদি আরবে গঠিত হয় International Association of Islamic Banks (ইসলামী ব্যাংকসমূহের আন্তর্জাতিক সংস্থা)। এ সংস্থা বিশ্বের ইসলামী ব্যাংকসমূহের স্বার্থ সংরক্ষণ, নীতিমালা প্রণয়ন ও কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে জন্ম লাভ করে।

১৯৭৮ সালে জর্দানে ‘জর্দান ইসলামিক ব্যাংক ফর ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট’, ‘ইসলামিক ব্যাংকিং সিস্টেম ইন্টাঃ হোল্ডিং, এস এ, লুক্সেমবার্গ এবং ‘ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট কোং অব দি গাল্ফ (সারজাহ)’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বছর পাকিস্তান তার সমগ্র ব্যাংকব্যবস্থাকে ইসলামীকরণের ঘোষণা দেয়। ১৯৭৯ সালে মুসলিম-অমুসলিম দেশের পাশাপাশি শুধু ইরানেই ৭টি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৭৯ সালে আরো কয়েকটি দেশে ইসলামী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। এর মধ্যে রয়েছে ‘বাহরাইন ইসলামিক ব্যাংক বি.এস, বাহামা দ্বীপপুঞ্জে ‘ফয়সল ইসলামিক ব্যাংক অব বাহামাস লিমিটেড’। একই সালে পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক ও অর্থলগ্নিকারি প্রতিষ্ঠান আত্মপ্রকাশ করে।

ইসলামী ব্যাংকিং এর যাত্রাপথে ১৯৮০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে ইসলামী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে সেগুলো হলো :

যুক্তরাজ্যে ‘আল-রাজী কোম্পানি ফর ইসলামিক, কাতারে ‘ইসলামিক এক্সচেঞ্জ এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি, মিশরে ‘ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর ইনভেস্টমেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট’ এবং ‘ব্যাংক মিশর ইসলামিক ব্রাঞ্চ নামে ২টি প্রতিষ্ঠান আত্মপ্রকাশ করে। এ বছর বাহরাইনে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বাহরাইন ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি। ভারতে ‘আল-আমিন ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি এবং সুইজারল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘শারী‘আহ্ ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেস এসএ’ নামে একটি ইসলামিক অর্থলগ্নিকারি প্রতিষ্ঠান।

১৯৮১ সালে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইসলামিক ফাইন্যান্স হাউজ পিএলসি (ইংল্যান্ড), সুদানে ‘ইসলামিক ব্যাংক ফর ওয়েস্টার্ন সুদান’, জর্দানে ‘ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট হাউজ’ এবং বাহরাইনে ‘আরব ব্যাংকিং কর্পোরেশন’। ১৯৮২ সালে যুক্তরাজ্যে ২টি ইসলামী প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। এদের একটি হলো ‘ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি অব ইউকে এবং অপরটি ‘ফার্স্ট ইন্টারেস্ট ফ্রি ফাইন্যান্স কনসোর্টিয়াম’। এ বছর সুদানে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আল-বারাকা ইসলামিক ব্যাংক, সৌদি আরবে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আল বারাকা ইনভেস্টমেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। ফিলিপাইনে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আমানাহ্ ব্যাংক লামাবাঙ্গা’, সাইপ্রাসে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ফয়সল ইসলামিক ব্যাংক অব কিবরিজ লিমিটেড তুর্কী সাইপ্রাস’ এবং বাহরাইনে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মাশরিফ ফয়সল আল ইসলামিক।’

১৯৮৩ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড’। এ বছর বিশ্বের অন্যান্য দেশে আরো কিছু ইসলামী ব্যাংক ও অর্থলগ্নিকারি প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। বাহরাইনে ‘ফয়সল ইসলামিক ব্যাংক অব বাহরাইন’, ডেনমার্কে ‘ইসলামিক ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল’, গিনিতে ‘ফয়সল ইসলামিক ব্যাংক অব গিনি’, মৌরিতানিয়ায় ‘আল বারাকা ইসলামিক ব্যাংক’, মালয়েশিয়ায় ‘ব্যাংক ইসলাম মালয়েশিয়া বারহাদ (বিআইএমবি)’, সুদানে ‘সুদানিজ ইসলামিক ব্যাংক’, কাতারে ‘কাতার ইসলামিক ব্যাংক’, এবং নাইজারে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ফয়সল ইসলামিক ব্যাংক অব নাইজার’। এ বছর তুরস্কেও একটি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সে দেশের পার্লামেন্টে ইসলামিক ব্যাংকিং আইন পাশ করে।

১৯৮৪ সালে বাহরাইনে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আল বারাকা ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক বিএসসি (ইসি), গিনিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি’, সৌদি আরবে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আল-রাজী ব্যাংকিং এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন’, নাইজার ও সেনেগালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি’ এই একই নামে নামে আলাদা আলাদা দুটি ইসলামী অর্থলগ্নিকারি প্রতিষ্ঠান। এ বছর তুরস্কে ২টি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা লাভ করে। একটি হলো ‘আল-বারাকা তার্কিস ফাইন্যান্স হাউজ’ এবং অপরটি ‘ফয়সল ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশন’। ১৯৮৫ সালে পাকিস্তানে কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এদের মধ্যে রয়েছে ‘ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান’, ‘হাবিব ব্যাংক লিমিটেড’, ‘ইউনাইটেড ব্যাংক লিমিটেড’, ‘মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড’ এবং ‘এলায়েড ব্যাংক অব পাকিস্তান লিমিটেড’। ১৯৮৫ সালে পাকিস্তান ও সুদানে সুদভিত্তিক ব্যাংকিং লেনদেন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে ‘আল বারাকা ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড’, জর্দানে ‘জর্দান ফাইন্যান্স হাউজ, আম্মান’ ও ‘ন্যাশনাল ইসলামিক ব্যাংক’, সুদানে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইসলামিক কো-অপারেটিভ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।

বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে ইসলামী ব্যাংকসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয় সেগুলো হলো: বাংলাদেশে ‘আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড’, ‘সোস্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড’, ইন্দোনেশিয়ায় ‘ব্যাংক মুয়ানামাত ইন্দোনেশিয়া’ ও ‘ব্যাংক শারী‘আহ্’, মালয়েশিয়ায় ‘ব্যাংক আল বারাকা মালয়েশিয়া’, আফগানিস্তানে ‘ইসলামিক ব্যাংক আফগানিস্তান’, ফিলিস্তিনে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক ব্যাংক’। বাংলাদেশে ২০০১ সালে ‘শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড’, ২০০৩ সালে ‘এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড’ এবং ২০০৯ সালে ‘ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

[চলবে.....।]

বিষয়: বিবিধ

৬৪১২ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

172825
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:৪১
প্রিন্সিপাল লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ, সুন্দর বিষয় শিক্ষা দেয়ার জন্য।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:১৬
126432
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
172835
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:৪৮
গৃহস্থের কইন্যা লিখেছেন : <iframe src="//player.vimeo.com/video/60486229" width="500" height="375" frameborder="0" webkitallowfullscreen mozallowfullscreen allowfullscreen></iframe>

ইসলামের নামে ইসলামী ব্যাংকের প্রতারনা from P D on Vimeo.

172887
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:০৪
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : পিছালামি ভেংক নাকি জামাতি ভেংক Straight Face Straight Face
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:০৯
126460
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : অসুন্দর ও বক্র মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ দেয়া যায় কিনা আপনিই বলুন ?
172951
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:০০
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : আপনার সুন্দর ও দরকারী লেখাটি থেকে অনেক কিছু জানার আছে । আপাতত: প্রিয়তে রাখছি, পড়ে পড়ে নিব ইনশাআল্লাহ ।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৩
126523
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : ধন্যবাদ বাহার ভাই উৎসাহ দেয়ার জন্য।
173020
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : গত দশ বছরে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় ও বেশকিছু ইসলামি ব্যাংক এবং ফাইনান্স হাউজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইসলামি ব্যাংক এর ধারনা ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই ১৯ শতকের শেষ দিকে মুনশি মেহেরুল্লাহর উদ্যোগে যশোরে এবং ২০ শতকে কয়েকজন ইসলামি ব্যাক্তির চেষ্টা কক্সবাজারে সমবায় ভিত্তিক ইসলামি ব্যাংক এর প্রচেষ্টা হয়েছিল।
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:০৭
126779
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : ধন্যবাদ সবুজ ভাই তথ্য শেয়ার করার জন্য।
173035
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৫
বুড়া মিয়া লিখেছেন : আজকে অনেক ব্যাংকের নাম জানা হলো
ভালো লাগলো
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:০৯
126780
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ। সুচিন্তিত পরামর্শ প্রার্থনা করছি।
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:৫৯
126849
বুড়া মিয়া লিখেছেন : থিওরী অব ইন্টারেষ্ট প্রকাশ্য প্রতারণা – প্রিন্ট করে মানিষ্টক বাড়িয়ে বলা হচ্ছে লাভ দিচ্ছি, কিন্তু তাতে অ্যাবসলুট ইনফ্লেশন ছাড়া মূলত আর কিছুই হচ্ছে না, লাভতো বহু দূরে – ১০০% মানিষ্টক প্রিন্টের মাধ্যমে হয়ে যাচ্ছে বছর শেষে ১০৫%/১১০% যার ইম্প্যাক্ট প্রাইসে পড়ে সঞ্চয়কারীর আসলে কোন লাভই হচ্ছে না।

ইন্টারেষ্টের মূলা দিয়ে যা হচ্ছে তা - সমস্ত মানুষের সঞ্চয়কে লাভের মিথ্যা কথা বলে কৌশলে নিয়ে ব্যাংক তার ইচ্ছামতো জায়গায় ওকে ব্যবহার করে পুজিবাদীদের সহায়ক হিসেবে কাজ করছে, আর মকারের মতন বলতেছে চাহিবা মাত্র আমরা ব্যাংক গ্রাহকের টাকা ফেরত দিবো – এটা ব্যাংকের পক্ষে কোনভাবেই দেয়া সম্ভব না। এক্সট্রিম পজিশন বোঝার জন্য সব-সময়ই সহজ – যুদ্ধ/দুর্ভিক্ষের সময় যখন সঞ্চয়কারী তার ১০০% মানি ফেরত যাইবে, ব্যাংক সে টাকাতো আরেকজনকে দিয়ে দিছে এবং সে টাকা নিয়ে লোনের টাকাকে কনভার্ট করেছে রিয়েল অ্যাসেটে/কনজিউমেবলসে, এবং ব্যাংক মিনিমাম লিকুইডিটি মেইন্টেইন করে গ্রাহককে কোনমতে ঠেকিয়ে রেখেছে। এ মিনিমাম (ধরি ১৫%) লিকুইডিটি দিয়ে ১০০% কিভাবে ফেরত দিবে আর টাকা ফেরত না দিলে কি দিবে তার বিনিময়ে? সামান্য কিছু অকেশনে কল-মানি-রেট দেখে বোঝা যায় এমনিতেই ওরা পারে না।

এ ধরণের ক্ষেত্রেও ব্যাংক টাকার বিনিময়ে কিছুই ফেরত দিতে পারবে না – নরমালী একটা টাকার গ্যারান্টি সরকার দিচ্ছে যে এর বিনিময়ে কিছু চাহিবা মাত্র দিতে বাধ্য থাকিব (এখন অবশ্য তাও দিতে পারবে না, বর্তমান মানিষ্টক অ্যাকাউন্ট দেখলেই তা পরিস্কার হয়, গোল্ড-সিলভার খুব সামান্য) – এর হোল্ডারকে। সঞ্চয়কারীর টাকা প্রতারণার মাধ্যমে নিয়ে গিয়ে হোল্ডার হচ্ছে আরেকজন, সঞ্চয়কারীতো কিছুই পাবে না – বরং সে তার সঞ্চয় মিথ্যা প্রলোভনে হাতছাড়া করে পুজিবাদীদের ব্যবহার করে আরেকভাবে প্রতারিত হয়ে পুজিবাদিদের লাভ করতে দিচ্ছে।

আর সর্বশেষ - অ্যাবসলুট ইনফ্লেশন ছাড়া মানি নির্দিষ্ট পরিমান, তা ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন জনে; সাগরে সুনামী হলেও যেমন পানি বৃদ্ধি পায় না – বরং এক জায়গায় কমে গিয়ে আরেকজায়গায় বেড়ে যায়। ঠিক তেমনি লাভের মাধ্যমে আরেকজনের টাকা কমিয়ে একজনের টাকা বেড়ে যায়। তাই প্রত্যেক লাভেরই সমান ক্ষতি বিদ্যমান।

তাই ইসলামীক ব্যাংকিং এর মানিকে ক্যাপিটাল বলে সে ক্যাপিটাল ইউটিলাইজেশন এর নামে এসব প্রতারণা বাদ দিয়ে পরিশ্রমের বিনিময়ে ব্যবসার মাধ্যমে সার্কুলেশন মিন্স হিসেবে সে মানি-ম্যামেজমেন্ট এর কন্সেপ্ট অবশ্যই ভালো। ইসলামী ব্যাংকিং তার আদর্শ নিয়ে এগিয়ে যাক এটা আমাদের সবারই কাম্য।
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:৪৭
126875
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : চমৎকার বিশ্লেষণের জন্য ধন্যবাদ।
173038
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৫
সাদাচোখে লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ এই জন্য যে - ইসলামী ব্যাংকের ইতিহাস নিয়ে লিখার জন্য এবং সুদের বিরুদ্ধে এর উত্থান বিষয়ে আলোকপাত করার জন্য।

আমি আপনার ৬টি খন্ডে যে বিষয়টি মিস করছিলাম - তা হল প্রচলিত ব্যাংকের প্রোডাক্ট সমূহের সাথে ইসলামী ব্যাংক এর প্রডাক্ট সমূহের পার্থক্য কি এবং কিভাবে তা বুঝতে।

যদিও আপনি মুদারাবা কথাটি এনেছেন এবং বলছেন মোহাম্মদ সঃ এর সময় অগ্রীম কেনা বেচার কথা - কিন্তু পাঠক হিসাবে এটা পরিষ্কার হয়নি যে - মোহাম্মদ সঃ যখন খেজুরের ওজন এর কথা বলেছিলেন কিংবা অগ্রীম/বাকিতে কেনা বেচা করেছিলিনে - তখন কি ঐ লেনদেন এর বিপরীতে অতিরিক্ত কোন চার্জ নিয়েছিলেন কিনা?

আমি এ বিষয়টি বুঝার চেষ্টা করছিলাম বিশেষ করে গত ৪/৫ মাস ধরে।

এ নিয়ে পড়তে গিয়ে আমি কয়েকটি স্ট্রেন্জ বিষয়ের মুখোমুখি হয়েছি। আমি চেষ্টা করছি আমার এ অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে একটা লিখা লিখবো।

ঐ পড়ালিখার সামারি অনেকটা এমন যে,

১। ইসলামে সুদ বলা হচ্ছে 'সময়' এর ব্যবধানের জন্য - কোন এক পক্ষ অপর পক্ষকে ধার দেয়া কোন পন্যের বিনিময়ে অতিরিক্ত পন্য গ্রহন করা। এককথায় পন্্যের/টাকার বিনিময় মূল্য কখন ও সময়ের ব্যবধানে বাড়বে না। যে জন্য মজুদদারী করে কোন পন্যের ক্রাইসিস করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন ও সুদ খাওয়া বলে সাব্যস্ত হয়।

সো আমার বুঝা দরকার প্রকৃতপক্ষে কোথায়, কিভাবে ইসলামী ব্যাংক সময়ের ব্যবধানে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে না - কিংবা মুদারাবা ইত্যাদি কিভাবে ইসলামের প্রামান্য দলিলাদির সাথে ম্যাচ করে - আর যদি করে তবে কেন তা প্রচলিত ব্যাংক লিজিং ইত্যাদি প্রডাক্ট এর সাথে কন্ট্রাডিক্ট হয়?

বরং কি এটা সত্য নয় যে, মোহাম্মদ সঃ - শেষ জামানায় - পৃথিবীতে রিবার সর্বগ্রাসী রূপের যে কথা বলেছিলেন - তাই জেনে বা না জেনে আমরা সত্য করে ফেলছি এবং নিজেদের ও জড়িয়ে ফেলেছি।

ধন্যবাদ।

০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৫৩
126646
বুড়া মিয়া লিখেছেন : সাদাচোখের সাথে আমি আরেকটা বিষয় নিয়ে আসতে চাই।

ইসলামে ক্রয়-বিক্রয়ই শুধু করা যাবে এবং সেটা হতে পারে প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস।

যেহেতু জানামতে ইসলামী ব্যাঙ্কিং এর ক্ষেত্রে এ ধরণের ক্রয় বিক্রয়ে তিনটা পক্ষ দৃশ্যমান হয়, যথা (১) বিনিয়োগকারী/অংশীদার (যাকে অর্ডিনারী ব্যাংকিং এ ডিপোজিটর বলে) (২) ব্যাংক, এবং (৩) ক্রেতা/অংশীদার (যাকে অর্ডিনারী ব্যাংকিং এ বরোয়ার বলে)।

ক্রয়-বিক্রয় ছাড়া কিছু না করা গেলে - এখানে ব্যাংক এর ২ টা ব্যবসা করতে হবে বলে মনে হয় –

১) যখন বিনিয়োগকারী/ডিপোজিটর এর থেকে ধার/আমানত গ্রহণ করবে সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী/ডিপোজিটর এর টাকা – একটা নির্দিষ্ট ব্যবসায় লাভের ভাগ নির্ধারণ করে ব্যাংক সে ব্যবসার অপারেটর হিসেবে বিনিয়োগকারী/ডিপোজিটর এর সাথে একটা কন্ট্রাক্ট থাকবে (এখানে বিনিয়োগকারীকে অপারেটর হিসেবে নেয়া হনি কারণ ডিপোজিটররা অপারেটর হতে চায় না)। এবং এ ব্যবসায় ব্যাংক শুধু ক্রয়/উতপাদন করে বিক্রয় করতে পারবে ধারে মূল্য নির্ধারণ করে (যেহেতু অপারেশনটা অর্ডিনারী ব্যাংকিং এর মতোই) এবং এক্ষেত্রে এ টাকা ব্যাংক অন্যকে ধার/লোন দিতে পারবে না, কারণ ব্যাংক নিজেই গ্রহীতা – আরেকজনকে দিলে একজন থেকে টাকা গ্রহণ করে আরেকজনকে টাকা প্রদান এর মাধ্যমে বিনা পরিশ্রমে লাভ এর প্রশ্ন এসে যায়।

২) ব্যাংক তার নিজের টাকা (ক্যাপিটাল) অন্যকে ধার দিয়ে একইভাবে লাভের অংশ নির্ধারণ করে ধারগ্রহীতার সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে পারে – সেক্ষেত্রে ধারগ্রহীতা অথবা ধারগ্রহীতা+ব্যাংক কাঙ্খিত ব্যবসায় অপারেটর হিসেবে কাজ করতে পারবে এবং ব্যাংক তার ক্যাপিটাল দিয়ে এককভাবে নগদ ক্রয় করে বাকীতে বিক্রি করেও নিজে লাভ করতে পারবে।

কুর’আন-হাদীস অনুযায়ী এ ব্যবসায়ে এখনও আমিও ছাত্র পর্যায়ের; তাই সালেহ ভাইকে জ্বালাতন।

শুধু এ বিষয় দু’টো কুর’আন-হাদীস এর রেফারেন্স অনুযায়ী কিভাবে করতে হবে এবং এর বাইরেও কিছু করা যাবে কি না - তার ব্যাখ্যাসমেত কোন বই থেকে থাকলে আশা করি সালেহ ভাই আমাদের রেফার করবেন।
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৩:৪৫
126733
সাদাচোখে লিখেছেন : @ বুড়ামিঞা ভাই, আপনি এ বইটি পড়তে পারেন - যা প্রচলিত ব্যাংকিং ও অর্থ তথা মানি - এর বিপরীতে সম্পূর্ন একটি ভিউ আপনার সামনে উপস্থাপন করবে।

The Prohibition of Riba
In the Qur'an and Sunnah

by: Imran Hossain

Thanks
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:২২
126782
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : অসংখ্য ধন্যবাদ অাপনাকে। আপনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারনা করেছেন। একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার, শুধুমাত্র সময়ের ব্যবধানে নির্ধারিত হারে অতিরিক্ত প্রাপ্তি হলো সুদ। অর্থাৎ অর্থদাতার কাছে কোন পরিস্থিতিই গ্রাহ্য হবে না- তাকে পূর্ব নির্ধারিত হারে বর্ধিত অর্থ পরিশোধ করতেব্ই হবে। আর পূর্ব থেকে নির্ধারিত করা হয়নি, তাহলে পরে সেটা কিসের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে ? ভিত্তিটা হলো অর্থটা যেখানে খাটিয়েছেন (সেটা পণ্যের ব্যবসা হতে পারে, শিল্পোৎপাদন হতে পারে, চাষাবাদ হতে পারে ইত্যাদি) সেখান থেকে প্রাপ্ত আয়। তার মানে হলো সেটা ব্যবসাতে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থ সঞ্চয়কারী যদি অর্থ সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানকে (ব্যাংক বা অন্য প্রতিষ্ঠানে এ ধরণের ব্যবসা বা কারবারের অনুমতি দিয়ে থাকে এবং তা থেকে অর্জিত আয় কম-বেশি যাই হোক মেনে নিতে রাজী হয় এ ধরণের সঞ্চয় থেকে প্রাপ্ত নির্ধারিত বাড়তি অায় সুদ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার সুযোগ নেই। আমি যতদূর জানি ইসলামী ব্যাংকসমূহ এ ধরণের নীতিতে পরিচালিত হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:৩৩
126792
বুড়া মিয়া লিখেছেন : সাদাচোখ এবং সালেহ ভাই উভয়কেই ধন্যবাদ
174159
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:৩৮
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : অনেক অজানে তথ্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৯:৫৬
127750
ডক্টর সালেহ মতীন লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাইজান সাথে থাকার জন্য।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File