ইসলামী ব্যাংকের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ (পর্ব-৩)
লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর সালেহ মতীন ৩০ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:৩৫:৩০ দুপুর
[পূর্ব প্রকাশিতের পর]
[ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে সারা দুনিয়া এখন ভাবছে। এ ব্যাপারে আমার কিছু রচনা সম্মানিত ব্লগার ও পাঠক ভাই-বোনদের উদ্দেশে শেয়ার করতে চাই। প্রকাশিত বিষয়ে সমালোচনা, পরামর্শ, সংশোধন সাদরে গৃহীত হবে। বিষয়টি নিতান্তই বেরসিক বিষয়বস্তুর তালিকায় পড়ে, সুতরাং ইহা যদি কারো বিরক্তি উৎপাদন করে তবে আগে ভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।]
পর্ব-৩
ইসলামী ব্যাংকের ক্রমবিকাশ
রাসূলুল্লাহ(স.) এর ইন্তেকালের পর খুলাফায়ে রাশেদার যুগে এবং তৎপরবর্তী খলীফাগণের শাসনামলে ইসলামী সাম্রাজ্য দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে বিস্তৃতি লাভ করে। ইসলামের সুমহান বাণী প্রচার এবং তা জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করার আমন্ত্রণবার্তা নিয়ে সাহাবীগণ তদানীন্তন বিভিন্ন রাষ্ট্রে গমন করেন। শাসনাঞ্চলের আওতায় আসা কিংবা না আসা অঞ্চলসমূহে দাঈ সাহাবীগণ ইসলামের অপরিহার্য জীবনাচার সম্মন্ধে জনগণের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক ধারাবাহিকতা তৈরি করতে থাকেন। ইসলামী অর্থনীতি তথা সুদমুক্ত লেনদেন ব্যবস্থার প্রচলন তারাও বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দিতে থাকেন। সর্বত্র ইসলামী ব্যাংকিং এর আদলে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া সম্ভবপর না হলেও ক্ষুদ্র আকারে কিংবা চিন্তায় এ ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁরা আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। মানুষকে ইসলামের জান্নাতী পয়গাম শোনানোর মহান ব্রত নিয়ে ছুটে চলা মহা মনীষীগণ জীবনের অপরিহার্য প্রয়োজনীয় অর্থনীতিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন। তাঁরা অবশ্যই জানতেন যে, অর্থনীতি হলো মানবজীবনের চালিকা শক্তির মূল নিয়ামক। অর্থনীতিকে বাদ দিয়ে আর যাই হোক জীবনদর্শনের প্রতি মানুষকে আহ্বান জানানো নিষ্ফলতার নামান্তর।
ইসলামী অর্থব্যবস্থার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক জীবন পরিচালনায় ইসলামের প্রথম পর্যায়ের সাহাবীগণ(রা.) ছাড়াও আব্বাসীয় যুগের বিশিষ্ট দার্শনিক ও চিন্তাবিদগণ অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। বিশ্ব অর্থনীতির অন্ধকার পরিবেশে তাদের চিন্তা ও প্রচেষ্টা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয়। কল্যাণকামী মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা অনুধাবন করে দক্ষ ও দুরদর্শী চিন্তার সমন্বয়ে তারা এ কাজে ব্রতী হন। পরবর্তীতে আবু ইউসুফ(৭৩১-৭৯৮), শায়বানী(৭৫০-৮০৪), আবু উবাইদ, ইয়াহিয়া আবু আদম(৭৫২-৮১৮), কুদামা বিন জাফর(মৃত্যু ৯৪৮), আল মাওয়ার্দি, ইব্ন হায্ম(৯৯৪-১০৬৪), আল ফারাবী(৯৫০), নাসিরুদ্দীন তুসী(১২০১-১২৭৪), ইব্ন তাইমিয়া(১২৬২-১৩২৮), ইব্ন কাইয়ুম(১২৯২-১৩৫০), শাতিবী(মৃত্যু ১৩৮৮), দিমাশকী, ইব্ন খালদুন(১৩৩২-১৪০৬), ইমাম গাযালী(১০৫৯-১১১১), আল হারীর(১০৫৪-১১২২), আহমাদ আলী আল দালাযী(মৃত্যু ১৪২১) থেকে শুরু করে অষ্টাদশ শতাব্দীর শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী(১৭০৩-১৭৬৩) পর্যন্ত ইসলামী চিন্তা ও দর্শনের ক্ষেত্রে বহু সংখ্যক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক অর্থনৈতিক চিন্তার বিভিন্ন শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। সরকারি ব্যয়, গার্হস্থ্য অর্থনীতি, বিনিময়বাণিজ্য, কর, শ্রম বিভাজন, একচেটিয়াবাদ, মূল্য নিয়ন্ত্রণ তথা অর্থ-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তাদের অবদান সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিশ্ববাসীকে পথ প্রদর্শন করেছে এবং পদ্ধতিগত অর্থনৈতিক চিন্তার ক্ষেত্রে হাজার বছরের এক অব্যাহত ধারা রচনা করেছে।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ইসলামী সভ্যতার বিকাশের শুরু থেকে প্রায় হাজার বছরব্যাপী ইসলামের সুপ্রতিষ্ঠিত প্রভাব কালে অর্থনৈতিক চিন্তা ও কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে মুসলিমগণের নেতৃত্ব অব্যাহত ছিল। উমাইয়া শাসনামলে মুসলিমগণের ব্যাংকিং লেনদেনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি হয়। এ ক্ষেত্রে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের সময়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে পারস্য দেশীয় পর্যটক নাসের খসরু বসরায় ব্যাংকিং লেনদেনের ব্যাপক প্রচলন করেন। তাঁর সফরনামায় এ বিষয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়।
[চলবে ----]
বিষয়: বিবিধ
১৫৬১ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন