ইসলামী ব্যাংকের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ (পর্ব-১)
লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর সালেহ মতীন ২২ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:০৩:১৭ দুপুর
ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে সারা দুনিয়া এখন ভাবছে। এ ব্যাপারে আমার কিছু রচনা সম্মানিত ব্লগার ও পাঠক ভাই-বোনদের উদ্দেশে শেয়ার করতে চাই। প্রকাশিত বিষয়ে সমালোচনা, পরামর্শ, সংশোধন সাদরে গৃহীত হবে। বিষয়টি নিতান্তই বেরসিক বিষয়বস্তুর তালিকায় পড়ে, সুতরাং ইহা যদি কারো বিরক্তি উৎপাদন করে তবে আগে ভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
পর্ব-১
ইসলামী শারীআহ্ অনুসরণে পৃথিবীতে কোন ব্যাংকিং ব্যবস্থা চলতে পারে এমন ধারণা অস্বীকারকারি লোকের সংখ্যা নেহায়েৎ কম ছিল না। বিশেষত ইসলামকে যারা শুধু ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করে তাদের মতামত এ রকম যে, ইসলাম পরম পবিত্র ধর্ম; পবিত্র মসজিদ ঘরেই এটি মর্যাদার সাথে সংরক্ষিত থাকবে, অর্থনীতি, রাজনীতি কিংবা ব্যাংকিং ব্যবস্থার মতো জায়গায় এর না আসাই ভালো। ইসলামী ব্যাংকিং এর অস্তিত্ব নিয়ে অনেকে অজ্ঞতাপ্রসূত প্রশ্নও তুলেছে। প্রকৃতপক্ষে ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং কোন উপহাসের বিষয় নয়, কল্পনাবিলাস কিংবা স্বপ্নপ্রসূত বিষয় নয় ইসলামী ব্যাংকিং শক্তিশালী অস্তিত্ব সমৃদ্ধ মানবকল্যাণের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ একটি সর্বজনীন নীতি।
সময়ের ব্যবধানে ইসলামী শারী‘আহ্ মোতাবেক পরিচালিত ব্যাংক আজ বাস্তব ও ধ্রুব সত্য। এমনকি বিশ্বের অনেক অমুসলিম দেশেও ইসলামী ব্যাংক দ্রুত বিস্তার লাভ ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অনেক অমুসলিম দার্শনিক সুশৃঙ্খল ইসলামী জীবনপদ্ধতি ও ইসলামী অর্থনীতির বাস্তবায়নকে আগামী শতাব্দীর মানবসমাজে সামাজিক সুবিচার, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি এবং সর্বোত্তম কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে বলে বিশ্লেষণমূলক অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এর একটি অনুকূল কারণ হলো, সাধারণভাবে বলা যায়, যেখানে সনাতন অর্থনীতি ধনাত্মক বক্তব্যের উপর বেশি জোর দেয়, সেখানে ইসলামী অর্থনীতি জোর দেয় আদর্শবাদী বক্তব্যের উপর। এখানে পার্থক্যকারি হিসেবে যে উপাদানটি কাজ করে তা হলো মূল্যবোধ যা ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অন্তর্নিহিত শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করে।
ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ইসলামী চিন্তাধারার সূচনা
আধুনিক ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা অনেকটা পরে হলেও এ ব্যাংকের মৌলিক ভিত্তি ও পদ্ধতিগত বিচারে বাস্তবিক পক্ষে এর উৎপত্তি হয়েছিল প্রায় ১৫০০ বছর আগে হযরত মুহাম্মদ(স.) এর সময়ে। রাসূলুল্লাহ(স.) নিজেই ছিলেন এ পদ্ধতির কৃতি উদ্যোক্তা। ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ(স.) নবুয়তের অনেক আগেই তাঁর শৈশব কালে অসাধারণ সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্ততার জন্য সকল গোত্রের কাছে গ্রহণযোগ্য ‘আল আমীন’ উপাধি লাভ করেন। একজন সেরা ও দূরদর্শী ব্যবসায়ী হিসেবেও মক্কায় তাঁর পরিচিতি ও সুনাম বিস্তৃতি লাভ করে। রাসূলুল্লাহ(স.) খাদীজা(রা.) নাম্নী মক্কার একজন ধনাঢ্য বিধবা মহিলার সাথে এক ব্যবসায়িক লেনদেনে চুক্তিবদ্ধ হন। বলা বাহুল্য যে, ঐ ব্যবসায়িক লেনদেনই ন্যায়ভিত্তিক ইসলামী অর্থব্যবস্থার সূচক হিসেবে ইতিহাসে প্রমাণ পাওয়া যায়। মুদারাবা নীতিমালার ভিত্তিতে পরিচালিত ঐ ব্যবসায় হযরত খাদীজা(রা.) ছিলেন ‘সাহিব আল মাল’ এবং রাসূলুল্লাহ(স.) ছিলেন মুদারিব। রাসূলুল্লাহ(স.) এর দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও অসাধারণ সততায় অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবসায়ে প্রচুর মুনাফা অর্র্জিত হয় এবং তাঁর ব্যবসায়িক সাফল্যের সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। উক্ত ব্যবসার কোন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ বা বাণিজ্যিক অবকাঠামো না থাকলেও নীতি ও পরিচালনার আদল ছিল সম্পূর্ণ আধুনিক ইসলামী ব্যাংকিং এর অনুরূপ। রাসূলুল্লাহ(স.) এর ব্যবসায়িক সাফল্যের চিত্র দেখে সমসাময়িক আরো অনেক সম্পদশালী এ ধরনের অংশীদারি কারবারে আগ্রহের সাথে পুঁজি বিনিয়োগ করে।
[চলবে]
বিষয়: বিবিধ
১৮১৬ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সাথেই আছি.....
অনেক আলেম উলামার এই ব্যাংকিং সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারণে উল্টা পাল্টা বক্তব্য ফতোয়া দিয়ে থাকেন।
তবে সমাজে এদের প্রভাব কম ।
দেখা যাচ্ছে গ্রাম গন্জের আধা শিক্ষিত মানুষের মাঝে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যাবস্থার কদর দিন দিন বাড়ছে।
ইসলামী ব্যাংকিং ব্যাবস্থার অগ্রগতি কামনা করি।
বাদ দিলাম এবার ডাইরেক্ট বিজনেসের মুনাফা – পূর্ব থেকেই হালাল রিটার্ণ অন ইনভেষ্টমেন্ট কিভাবে নিরূপন করে? যেখানে ব্যবসা-ই তার ব্যবসা শেষ করে না একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত – এরকম রিটার্ণতো কখোনোই নিরূপন করা সম্ভব না পূর্ব থেকে, সেখানে আমানতের উপর অথবা বিনিয়োগের উপর কিভাবে লাভ নির্ধারণ হয় পূর্ব থেকেই?
আর এটাকে আমি না, বিশ্লেষক প্রায় সব অর্থনীতিবিদই প্রতিষ্ঠিত না শুধু, তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বিশ্লেষন করে প্রমাণও করে ছেড়েছেন।
তবে আর্থিকভাবে মুনাফা মানে যে ওজনে কম দিয়ে প্রতারনা – তা একদল গোপন রাখতে চাইলেও - কোন দলই তা অস্বীকার করতে পারেনি।
কিন্তু মাঝারি কিংবা বড় ব্যবসায়ীদের কাছে লাভ কখনই পারিশ্রমিক না! সেটা আরেক প্রকারের সুদ মানি-ক্যাপিটাল এর উপরে। এদের ক্ষেত্রে –
মুনাফা = মোট বিক্রয় – মোট খরচ
মোট খরচ = মাল/সার্ভিসের খরচ + পারিশ্রমিক
পারিশ্রমিক = লেবারের বেতন + মজুরী + মালিক/পরিচালকের সম্মানী।
এখানে দেখেন এদের ক্ষেত্রে লাভ মানে পারিশ্রমিকের উপরে আরেকটা কিছু। এটা তাদের স্বাভাবিক হিসাব-নিকাশের দাবী অনুযায়ী সুদ এর উপরে নির্ভরশীল পুরোপুরি। এ লাভকে তারা বলে রিটার্ণ অন ক্যাপিটাল ইনভেষ্টেড এবং এ রিটার্ণ অবশ্যই সুদ এর চাইতে বেশী হতে হবে।
এ ধরনের মাঝারি ব্যবসায়ীরা দাবী করে তারা হালাল ব্যবসা করে, কিন্তু আদতে তারা সুদখোর। কারণ সুদের চাইতে লাভ বেশী না হলে তারা ব্যাংকে টাকা রেখে সুদ খাবে, আর লাভ সুদের চাইতে বেশী হলে তারা লাভের জন্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করবে – মোট কথা সুদ/লাভ যেখানে বেশী তারা তাদের মানি ঐখানেই ডিপোজিট করবে – এদের নিয়্যতটাই হচ্ছে পারিশ্রমিক তো নিবেই এবং তা ছাড়াও টাকার উপরে বিনাশ্রম লাভ অর্জন।
এধরনের ইচ্ছাকৃত বিনাশ্রম উপার্জনকে কি বলা যায়? - লাভ? নাকি সুদ? – প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় বলা হয় - এধরনের বিনাশ্রম উপার্জনের ইন্সেন্টিভ না থাকলে নাকি ক্যাপিটালিষ্টরা ইনভেষ্টই করবে না!
অর্থকষ্ট, দারিদ্র এর কারণ হিসেবে অনেকেই একজন ব্যক্তির অযোগ্যতা প্রমাণ করতে চাইলেও – এসবই মূলত পূজিবাদের/মানি-একুমুলেশনের রিপল-ইফেক্ট। সাধারণ মানুষের দোষ খুব একটা নাই, যদি বলা হয় তারা অযোগ্য বা বোঝে না!
মন্তব্য করতে লগইন করুন