রাজনীতিতে বর্ণচোরা চরিত্রের অনুপ্রবেশ

লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর সালেহ মতীন ১৭ নভেম্বর, ২০১৩, ০৫:৫৫:০২ বিকাল



এরশাদকে নিয়ে বর্তমানে বেশ আলোচনা হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে তাকে নিয়ে লেখা ২০০৬ সালে আমার একটি কলাম এখানে ব্লগের পাঠক ভাই-বোনদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করছি।

রাজনীতিতে বর্ণচোরা চরিত্রের অনুপ্রবেশ

আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের বয়স ৩৫ পূর্ণ হতে চলেছে। মহাকালের হিসাব খাতায় এ সময়টা খুব বেশি দীর্ঘ নয়। কিন্তু অন্য দৃষ্টির বিচারে এ সময়টাকে মোটামুটি সুদীর্ঘও বলা চলে। দুনিয়ার অন্যান্য জাতির ইতিহাস উল্টিয়ে আমরা দেখেছি, এ সময়ের মধ্যে অনেক দেশেই ভাঙা-গড়ার খেলা চলেছে বিপুল পরিমাণে। সমৃদ্ধির পথে অগ্রগতি বলতে যা কিছু বুঝায় এশিয়া মহাদেশের কোন কোন দেশে সেটিও সাধিত হয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। শান্তি ও সমৃদ্ধির গতিশীল পথে অনেক দেশই আমাদের টপকে এগিয়ে গেছে অনেক দূরে। আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছি ভিতরে রাস উৎসবের মতো নিরন্তর গোষ্ঠী স্বার্থ। সুস্থ ও শক্তিশালী চিন্তার অনেক মস্তিস্কে এখন এই ধারণা বদ্ধমূল হতে দেখা যাচ্ছে যে, এই সুদীর্ঘ ৩৫ বছরে বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র অবয়বের একটি সবুজ ঘেরা দেশকে একবার নয় কয়েকবার স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তোলা সম্ভব ছিল। বড়ই পরিতাপের বিষয়, জাতি কথিত স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও সমৃদ্ধি থেকে দু:খজনকভাবে বঞ্চিত হয়েছে। শান্তির কাক্সিক্ষত সূর্য বরাবরই রয়ে গেছে ঘনকালো মেঘের আড়ালে। সীমাহীন ব্যর্থতার অদ্ভুত গ্লানি জাতিকে হজম করতে হচ্ছে বার বার। এ দেশের শান্তিপ্রিয় নিরীহ মানুষ এমনটি কখনই আশা করেনি।

বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও ক্ষমতার হাতছানির দুর্বার প্রেক্ষাপটে। জাতি রাষ্ট্রীয়ভাবে শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছিল এবং এ কারণে স্বাধীনতার প্রয়োজনটা ছিল অনিবার্য। তবে স্বাধীনতা আনয়ণকারী কথিত নেতার সশ্রদ্ধ প্রণাম যারা মাথায় তুলতে চায় তাদের বিভ্রান্ত ও সুবিধাবাদী দৃষ্টিতে তিনি পিতৃতূল্য হয়তবা কিন্তু ইতিহাসের অকাট্য সাক্ষী দেশের মানুষের জন্য নিজের জীবন দেয়ার হাস্যকর ও ধুম্র প্রতিশ্রুতি দিলেও ক্ষমতার ব্যাপারে তিনি ছিলেন নির্লোভ এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুবিধাবাদী ও স্বৈরাচারের উপযুক্ত তালিম নিয়ে তেজোদীপ্ত ভারী কণ্ঠের ভাষণে দেশের অনেককে তিনি মুগ্ধ করেছিলেন বটে কিন্তু বোদ্ধা মহলের কাছে তার বর্ণচোরা চরিত্র ঠিকই উম্মোচিত হয়েছিল। চটকদারি ভাষণের আড়ালে জনগণকে স্বৈরশাসন উপহার দেয়ার সুপ্ত ও বিকৃত বাসনা যে তার মধ্যে লুকায়িত ছিল জাতি তা টের পেয়েছিল স্বাধীনতা অর্জনের অব্যবহিত পরেই। স্বাধীনতার গোড়ার সেই রাজনৈতিক পরিবেশ জাতির কাঁধ থেকে নেমে যায়নি। উত্থান-পতন, আঁকা-বাঁকা অমসৃণ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ এখন যেখানে অবস্থান করছে সেখানে অনেক সংখ্যক রাজনীতিকের জমজমাট পদচারণা। আদর্শ, কর্মসূচি ও দৃষ্টিভঙ্গিতে বিস্তর ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও সবাই গণতন্ত্রের রাস্তায় সদর্পে হাঁটা হাঁটি করছে। কারো কারো দলীয় কর্মযজ্ঞ নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করলে ভ্রান্ত গোষ্ঠী স্বার্থ উদ্ধারের জন্য রাজনীতিই যে তাদের অদ্ভুত উপজীব্য তা সহজে বুঝা যায়, বাইরে থেকে তা অনুমান করার সুযোগ কম। মারাত্মক দু:সংবাদ হলো, এ সমাবেশে বর্ণচোরা চরিত্রের রাজনীতিকের অনাকাক্সিক্ষত অনুপ্রবেশ ঘটেছে। অতি দ্রুত পরিবর্তনশীল অগভীর চিন্তার মস্তিস্ক নিয়ে এরা রাজনীতিকে রীতিমত খেলার মাঠ হিসেবে বিবেচনা করছে এবং যথেচ্ছা ডিগবাজি খেলছে। নীতি কিংবা আদর্শের ভা-ার এদের শূন্য। বয়সের ভারে হোক আর ভূতের আছরে আচ্ছন্ন বিবেকের পরবশে হোক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধাক্কা ধাক্কি তাদের অব্যাহত রয়েছে। খোদ তাদের ভক্তরা পর্যন্ত এই ডিগবাজিতে দিশেহারা।

স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র ১০ বছরের মাথায় দেশে সামরিক শাসনের বজ্র নেমে আসে। তৎকালীন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ দেশকে তার ভাষায় অরাজকতা থেকে রক্ষা করার সুবিধাবাদী ও সস্তা দেশাত্মবোধ প্রকাশ করে দেশ শাসন শুরু করেন। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আ: সাত্তারকে বিতাড়িত করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে স্বঘোষিত অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তিনি। গণতন্ত্রের বিকাশ লাভের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আরেকবার পতনের মুখোমুখি হয়। ৭৪-৭৫ এর সীমাহীন দুর্ভিক্ষ আর চরম স্বৈরাচারী দু:শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট জাতি ঘুরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতে এইচ এম এরশাদ গণতন্ত্রের দ্বারকে শক্ত হাতে রুদ্ধ করার সমুদয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সামরিক শাসক থেকে অতি অল্প সময়েই তিনি স্বৈরশাসকে পরিণত হন। নির্বাচিত সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করে সেনা ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও ফেরা তার হয়নি। ক্ষমতার স্বাদ তাকে এতই মোহাবিষ্ট করে ফেলে যে, সেনা প্রধানের পদ থেকে অবসর নিয়ে তিনি পুরোপুরি রাজনীতিতে ঢুকে পড়েন। বলা ভাল, তার বর্ণচোরা চরিত্রের বহি:প্রকাশের সূচনা এখান থেকেই। রাজনৈতিক স্থিরতা ও আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার কথা বিবেচনা করে উৎকণ্ঠিত জনগণের কিছু অংশ তাকে সাময়িকভাবে সমর্থন জানালেও স্বৈরাচারী মনোভাব ও দুর্নীতির কারণে ক্রমাগতভাবে তিনি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। রাষ্ট্রীয় দুবৃত্তায়নের সম্যক সূচনাকারী হিসেবে আমরা তার নাম উচ্চারণ করতে পারি। গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে লোক দেখানো কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন সে সময় দেশে অনুষ্ঠিত হয়েছিল কিন্তু তা কারচুপির সীমাহীন মাত্রায় এতই দূূষিত ছিল যে, দেশে-বিদেশে সে নির্বাচনের ন্যূনতম গ্রহণযোগ্যতা তো দূরের কথা ইতিহাসের কুখ্যাত ভোট ডাকাত হিসেবে জাতি আজও তার নাম সনিন্দ স্মরণ করে।

এভাবেই নয় নয়টি বছর বাংলাদেশ হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বেপরোয়া দু:শাসনে কাটিয়েছে। দেশ সার্বিক উন্নয়ন কর্মকা- সবচেয়ে পশ্চাৎমূখী হয়েছে এ সময়কালেই। স্বাধীনতার ১০/১২ বছর পর দেশের যখন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির চমৎকার সম্ভাবনাময় ও বাড়ন্ত সময় তখন স্বৈরশাসক এরশাদ তার বর্ণচোরা চরিত্রের দু:শাসনের মাধ্যমে দেশকে ঠেলে দেন অনেক পিছনে। আজ জাতিকে তিলে তিলে তার মাশুল দিতে হচ্ছে। সামান্য নীতি, স্বচ্ছতা ও মূল্যবোধ যদি এসব নেতাদের চরিত্রে থাকত তাহলে দেশ ও জাতি অনেক বেশি উপকৃত হতো। ভাবতে অবাক লাগে দেশে অতন্দ্র প্রহরীর মতো সজাগ কোটি কোটি জনগণ থাকতে কীভাবে এরশাদের মতো চরিত্রহীন স্বৈরশাসক প্রায় এক দশক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকতে সক্ষম হলো ! এ চিন্তা মাথায় এলেই আমি লজ্জা পাই। শুধু আমি নই এ লজ্জা আমার মতো আরো কোটি কোটি জনতার। ইতিহাসের দুর্বোধ্য এ অংশটুকু আমি পাঠ করতে অনিচ্ছা বোধ করি। অস্থির ও ভ্রান্ত চিন্তা-ভাবনার রাজনৈতিক নেতাদের চিনতে ভুল করলে জাতিকে আরো বড় মাশুল দিতে হবে আগামীতে। সময়ের খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে দেশের সঠিক উন্নতি-অগ্রগতির আত্মবিশ্লেষণ এবং নিজেদের করণীয় বিষয়ে সচেতনতা অনুভবের নিরন্তর সময় এখন।

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কুড়ি বছর আগের সেই বর্ণচোরা দৃষ্টিভঙ্গি খুব একটা বদলেছে বলে মনে হয়না। তার গঠিত জাতীয় পার্টি এখন বহুভাগে বিভক্ত। আরো কতভাগ হতে পারে তা আমরা দেখার অপেক্ষায় আছি। শুধু বিভক্তিতেই ক্ষান্ত নয়- রীতিমত কোন্দল ও দলীয় বিরোধিতার সবরকম আচার আচরণ ভগ্ন দলগুলো প্রদর্শন করে চলেছে। এতকিছুর মাঝেও জাতীয় পার্টির ক্ষুদ্র অংশের অদূরদর্শি নেতা এরশাদ সাংঘাতিক অস্থিরতা ও সিদ্ধান্তহীনতার রোগে আক্রান্ত। দ্বিপ্রহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেটুকু সময় তার মধ্যে তিনি একাধিকবার সিদ্ধান্ত বদলান। তাকে পল্লীবন্ধু হিসেবে বিবেচনা করার কারণে কিছু অনুসারী যদিও তাকে দরদী রাজনীতিক হিসেবে গণ্য করতেন বর্তমানে তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অদূরদর্শিতা ও অস্থিরতায় তারাও নির্বাক হয়ে পড়েছেন। কোন অজ্ঞাত কারণে তাদের উজ্জীবিত মূল্যবোধ নি:শেষিত হবার দ্বার প্রান্তে। অসুস্থ ও রহস্যময় রাজনীতিতে নেতা আক্রান্ত হলে অন্তত: গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দাওয়া মেলানো সহজ হয় না। কোন কোন ক্ষেত্রে বৈদ্য ডেকে হাতুড়ে চিকিৎসায় আয়ূর্বেদিক অনুপান মিশিয়ে ছাল বাকলের বড়ি গুলিয়ে খাওয়াতে হয়।

জাতীয় পার্টির এই নেতা তার আপন চরিত্রকেও কম কলঙ্কিত করেননি। অনেক আগে থেকেই তার ব্যাপারে এ রকম কথা শুনা যায়। আত্মমর্যাদাবোধের কী পরিমাণ অভাব যে এই জাতীয় নেতার মধ্যে রয়েছে তার হিসেব নিকেশ কষতে বিষ্মিত হতে হয়। নারীঘটিত চারিত্রিক দূষণ আমাদের রাজনীতিতে সম্ভবত: হাতে গোনা দুই/একজনের মধ্যেই পাওয়া গেছে। এ পর্বে তিনি সমহিমায় উজ্জ্বল। এত কিছুর পরও রাজনীতিতে কোন্ মুখ নিয়ে অবস্থান করেন সে হিসেব মিলাতে আমার মতো অনেকেই হিমসিম খান। জনগণের বেপরোয়া চাপে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৫ বছর আগে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হলেও তার কৃত দুর্নীতির ধ্বংসাবশেষ এখনো আদালতে পরিপূর্ণ নিষ্পত্তি হয়নি। সুবিধাবাদী চিন্তা-ভাবনায় কিছুদূর অগ্রসর হয়ে আবার তিনি পিছুটান মেরেছেন। অবশ্য কিছু সুবিধা তিনি অর্জন করে নিতে সক্ষমও হয়েছেন। জনগণের মধ্যে ধোকাবাজির রাজনীতিকে সমথূন করার মতো এতটুকু প্রবণতা আমি কখনো দেখিনি। তবে ধোকাবাজির রাজনীতি নির্ভর হয়েও যে সব দল কিছু জনসমর্থন আদায়ে সক্ষম হয়, তারা জনগণকে তাদের ধোকাবাজি বুঝতে না দিয়েই সমর্থনটুকু লাভ করে।

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ধারা পর্যবেক্ষণ করলে একটা ধারণা পরিষ্কার হয় যে, একদলীয় রাজনীতি বোধ হয় এখানে ক্রমেই বিপন্ন হয়ে পড়ছে। দলগুলো হয়ে পড়ছে জোটভিত্তিক রাজনীতিনির্ভর। ছোট-বড়, খ্যাত-অখ্যাত বহু দলের সমন্বয়ে ৪ দল, ১৪ দল এ রকম সমবেত হওয়াটাই রাজনীতিকরা সানন্দে স্বাগত জানাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। আবার এমনও ঘটছে যে, কোন জোট নিজের অস্তিত্বের দৈন্যতায় আরেকটি জোটে প্রবেশ করে অন্তত: মিডিয়া কাভারেজ নিচ্ছে। যেমন ; ১৪ দলীয় জোটে রয়েছে ১১ দলের একটি নাম মাত্র জোট। অবশ্য এ জোটের ১১টি দলের আদৌ কোন অস্তিত্ব আছে কিনা তা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন রয়েছে। এদের ২/১টি দলের নাম মাত্র অস্তিত্ব থাকলেও তাদের জনসমর্থনের দুভিক্ষ দেখলে বান্তবিকই করুণা হয়। এ সব দলের কেন্দ্রীয় নেতারা জাতীয় নির্বাচনে একটি আসন থেকে যে পরিমাণ ভোট পান তা টেস্ট ক্রিকেটে ব্রায়ান লারার একক সর্বোচ্চ রানের চেয়েও কম। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদও একটি জোটে যাওয়ার প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে নাটকীয়ভাবে সিদ্ধান্ত পাল্টে রাজনীতিতে একাই দণ্ডায়মান থাকার ঘোষণা দেন। তবে শোনা যাচ্ছে তিনি নাকি আরেকটি জোটে যাওয়ার নীতিগত চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছেন। তার এ চিন্তা বাস্তবায়িত হলে সম্ভবত তিনি তারই সমতল আদর্শের রাজনীতিকে খুঁজে পাবেন। কথা কাজে অমিল এবং ধ্বংসাত্মক গণবিরোধী কর্মসূচি বাস্তবায়নের অসুস্থ বদ অভ্যাসে যে নেতারা সংক্রমিত তাদের সাথে তাল মেলাতে এরশাদের সম্ভবত: কোনরূপ অসুবিধা হবে না।

ঢাকা

২৪ নভেম্বর, ২০০৬



বিষয়: বিবিধ

১৩১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File