কতিপয় চিঁছকে চোর ও একটি গণদাবী!

লিখেছেন লিখেছেন আরইউ মজুমদার ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৫:৫৯:৪১ বিকাল

আজকে মনটা যেন একটু এলোমেলো চিন্তা করছে কি লিখব স্থির করতে পারছিলাম না লিখার তো অনেক কিছুই আছে এতো বিষয়ে একসাথে লিখা তো আসলে সম্ভব না। তার পরও স্থির করলাম কিছু একটা লিখতে হবে। যেহেতু শিরোনাম দিলাম “কতিপয় চিঁছকে চোর ও একটি গণদাবী” সেহেতু আগে ছোট্ট একটা চোরের গল্প শুনাই। ১৯৯৬ সালের জুলাই কি আগস্ট তখন আমি SSC পরীক্ষার্থী পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত, রাতজেগে পড়াশুনা আবার সকালে প্রাইভেট পড়তে যাব তাই একটু ঘুমানো দরকার মনে হয় ১ ঘন্টাও ঘুমাতে পারিনি, পাশের ঘর থেকে আমার বড় চাচী চিৎকার করতে লাগল চোর চোর আমরা সবাই ঘুম থেকে উঠে হন্তদন্ত হয়ে যেতে চোর তখন লাপাত্তা। দাদ বল্লেন কি নিয়ে গেছে সেটা আগে দেখ, টাকা পয়সা, মোরগ, মাছ ধরার জাল ইত্যাদি নিয়ে চোর পালাল। তার আগের দিন একই চোর দাদার চার্জ লাইট ও কিছু টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়। কিভাবে নিশ্চিত হলাম একই চোর দু’দিন আমাদের বাড়িতে চুরি করল, দাদা, বাবা, কাকা এবং আমার বড় জেঠাত ভাই ততক্ষণে চিন্তা করল চোরকে পাহারা দিতে হবে, চোরের যেহেতু গাড়ি নেই চোর তো পায়ে হেঁটে পালাবে, আমাদের পাশ্ববর্তী গ্রামে একজন নাম করা বুইল্ল্যা চোর আছে সবার সন্দেহের তীর তার দিকে, আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম তাকে পাহারা দিয়ে ধরতে হবে যেই সিদ্ধান্ত সেই কাজ। আমরা মানুষ ৫ জন বিকল্প পথে তাড়াতাড়ি গিয়ে নদীর পাড়ে দাঁড়ালাম, রাত সাড়ে ৩ টা থেকে টানা পাহারা শেষমেস বিরক্ত হয়ে বাড়ীর পথে প্রস্থান করবে বলে কিছু দুর এগুলাম, কিন্তু আমার মনে একটু খুঁতখুতি তাই পেছনে পেছনে নদীর পাড়ের দিকে বার বার তাকানো তখন ফজরের নামাজের আযান দিচ্ছে। আবচা অন্ধকার তখনও আছে, দেখলাম একটা লোক মাথায় একটা গাঁট্টি নিয়ে তরতর করে হাঁটছে, আমি সবাইকে বল্লাম দেখেন একজন লোক যাচ্ছে, সবাই আবার দৌঁড়ে গিয়ে তার সামনে পড়তেই আমার জেইয়া (জেঠা) বলে উঠলো বুইল্ল্যানেরে এই কথা বলার সাথে সাথে তার মাথার গাট্টি আমার জেঠার গায়ে মেরে দিল দৌড়, তার আগের দিন চুরি করা চার্জ লাইট আমাদের চোখের উপর জ্বালিয়ে ধরে পালানের চেষ্টা করে আমার হাতেও শক্তিশালী চার্জ লাইট থাকার কারণে আমাদের জন্য একটু ভালো হল আমি তীব্র বেগে ধেয়ে আসা দেখে সে পেছনে দৌড় দিল পেছনে আমিও দৌড়াতে থাকলাম। আমার এক হাতে চার্জ অন্য হাতে একটি দা (তরকারি কাটার) ছিল। সেই দা দিয়ে তাকে কোপ না দিয়ে দিলাম তার পিঠে বারি, একটু আগে সামন্য বৃষ্টি হওয়ার কারনে রাস্তা ছিল ভেঝা বারি দেয়ার সাথে সাথে পিচ্ছিল খেয়ে পড়ে গেলাম এই সে কাজে লাগিয়ে আমার দা দিয়ে আমাকে কোপ দিতে উদ্ধত হলে তৎক্ষনাৎ দিলাম ঢুঁস, ঢুঁস দেয়ার সাথে সাথে দু’জন মিলে রাস্তার ধারে কলমি গাছের জংগলে। বাগ্যিস সেদিন আমি তার গায়ের উপরে থাকার কারনে তার গাঁড়সহ পা আমার বেষ্টনির মধ্যে তাকে কাবু করতে পেরেছিলাম, সেও কিন্তু বসে ছিলনা সে নিচে দিয়ে হাত দিয়ে আমার অন্ডকোষ ধরে টান আর মুখ দিয়ে আমার দু’হাতে কামড়ানি শুরু করে দিল আমি দিলাম চিৎকার। সাথে সাথে সবাই এসে দিল মার। মারতে মারতে সমজোতা হল তুই দা ছেড়ে দে তোকে আর মারব না, পরে তাই হল। পর দিন এলাকায় এ নিয়ে বিশাল তোলপাড় আমি যেহেতু সকালে প্রাইভেট পড়তে তখন সবাই বলতে লাগল চোর মেরে বীর হয়ে গেলা। সে দিন থেকে আমাদের গ্রামে একটি গণদাবী উঠলো আজ থেকে চোর পাহারা দিতে হবে এভাবে প্রায় মাস দু’য়েক অতিক্রম হল মাঝে সে এক দু’দিন এসেছে কিন্তু তাঁকে আমরা আর পাইনি।

অত্যন্ত ব্যাথাতুরভাবে গত সাড়ে চার বছর আমরা দেখতে পাচ্ছি চরম বিশৃংখলা নৈরাজ্যজনক অবস্থা। এসবের মধ্যে একে একে যোগ হয়েছে তথাকথিত বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাণপ্রিয় বাহিনী সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করার চক্রান্ত, শেয়ার বাজারের কেলেন্কারী যার কারণে আমার মত হাজারও যুবক রুটিরোজগারের পথ হারিয়ে ছন্নছাড়া হয়েছে, হলমার্ক কেলেন্কারী, ডেস্টিনি কেলেন্কারী, রেলওয়ের কালোবিড়াল, পদ্মা সেতুর দুই আবুল ইত্যাদী আরও অনেক কেলেন্কারী এদেশের ষোল কোটি মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছে। স্বাধীনতার ৪১ বছরে এত বড় দুর্নীতির ক্ষতিয়ান আর কোন সরকারের আমলে হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। একমাত্র হলমার্ক এবং ডেস্টিনির কতিপয় চোর ছাড়া বাকী সবাই বহল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে বীর দর্পে। প্রখ্যাত সাংবাদিক এবিএম মূসা তো স্পষ্টই বলেছিলেন এদেরকে যেখানেই দেখবেন সেখানেই তুইচোর বলে সম্ভোধন করতে। আজকেও প্রথম আলোর লিড শিরোনাম হয়েছে “১১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে দেশ থেকে লাপাত্তা” এখানে নাম এসেছে বিসমিল্লাহ গ্রুপ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের তারা জনতা, প্রাইম, শাহজালাল, প্রিমিয়ার ও যমুনা ব্যাংক থেকে টাকা জালিয়াতি করেছে। আর প্রত্যেকটি দুর্নীতিই বড় বড় দুর্নীতি। মাথা নষ্ট হওয়ার মত এত বড় বড় দুর্নীতি গুলোর কোনরুপ কার্যকর ব্যবস্থা ছাড়াই পর্দার আড়ালে ছলে যাচ্ছে, মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠা থেকে মুছে ফেলার জন্য নিত্যনতুন সব আজগুবি গাঁজাখুরী ইস্যুনিয়ে দেখা গেছে সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সরকারের আমলা-মন্ত্রী সবাই এসব ইস্যুগুলিকে ধামাছাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে।

সরকারের শেষ সময়ে এসে এখন শুরু করেছে নতুন নাটক। তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের নামে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দেয়ার জন্য নতুন শাহবাগের মোড়ে ফ্যাসিবাদী আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। কিছু নাস্তিক মার্কা লোককে দিয়ে এই নাটকের জন্ম শুরু করানো হলেও এখন আওয়ামীলীগ ই তাদেরকে শেল্টার দিচ্ছে, সরকার তাদেরকে নিরাপত্তা, খাদ্য পানি সব কিছু সরবরাহ করছে, আর গণদাবীর ধুয়াতুলে বাড়াটে মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করে জনগণের সেন্টিমেন্টকে বিভ্রান্ত করছে। এরা সেটাকে গণদাবী আখ্যা দিয়ে আসছে অথচ তাদেরকে জনগণ চিনেই না। দেশের শতকরা ৮৮ % মানুষ মুসলমান তাদের দাবীর সাথে কয় শতাংশ মানুষ আছে তার জরিপ চালালে আমার মনে হয় ২০ শতাংশের উপরে যাবেনা। তাহলে কিভাবে একে গণদাবী বলা যায়? অথচ তাদের মূলদাবী হওয়ার দরকার ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার। শুধু এখানেই শেষ নয় তারা ইসলামী রাজনীতি বন্ধের চক্রান্ত করছে। তাদের দৌরাত্ব এতদূর অগ্রসর হয়েছে যে তারা মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং ইসলামের বিরুদ্ধে চরম অবমাননাকর কথা ও আজে বাজে পোস্ট দিয়ে তৌহিদী জনতার হৃদয়ে আঘাত করেছে, তাদের এইসব দৌরাত্ব কোন ঈমানদার মানুষের ঈমান থাকতে মেনে নিতে পারেনা। তাদের নগ্নতার বাড়াবাড়ী তসলিমা নাসরিনের নাস্তিক্যবাদীতাকেও হার মানিয়েছে, তাসলিমা নাসরিনের যেমন বাংলার মাটিতে জায়গা হয়নি এদের ও জায়গা হবে না ইনশা’আল্লাহ। আর এমন একটি ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসেছে যা ৩৯ বছর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মিমাংষা করে দিয়ে গেছেন। আমার মনে হয় এসব করা হচ্ছে শুধু সরকারের বড় বড় দুর্নীতিগুলোকে ডাকা দেয়ার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। এদেরকে এখুনি শায়েস্তা করতে না পারলে এরা পালিয়ে যাবে। আজ একটাই গণদাবী হওয়া দরকার “জনগণের এক দাবী, দুর্নীতিবাজদের বিচার করি, হৈ হৈ রৈ রৈ দুর্নীতিবাজরা গেল কই”। এদেরকে ধরার জন্য পাহারা বসাতে হবে যেমন আমরা বসেছিলাম বুইল্ল্যা চোরকে ধরার জন্য। আসলে ঐ বুইল্ল্যা চোর থেকে ও জগন্য। আসুন এদের প্রতিরোধ করি। আসুন গণদাবী তুলি নাস্তিকমুক্ত, দুর্নীদিমুক্ত, চোরমুক্ত এবং ফ্যাসিবাদমুক্ত সুন্দর বাংলাদেশ চাই। তাই আসুন জাতিয়তাবদী ও ইসলামী শক্তি একত্রিত হয়ে এদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলি।

বিষয়: বিবিধ

১৪৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File