হিজড়া-নামাঃ-১
লিখেছেন লিখেছেন সোনার বাংলার আহমদ ২১ মার্চ, ২০১৩, ১২:১৫:১৯ দুপুর
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ ৬৮-৬৯ সালের প্রেক্ষাপটে ছাত্র রাজনীতির অবস্থা বর্ণণা করতে গিয়ে তার মাতাল হাওয়ায় বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের অবস্থা বর্ণণা করতে গিয়ে লিখেছিলেন
“যারা এই দলে, ধরেই নেয়া হত তাদের মধ্যে মেয়েলিভাব আছে। তারা পড়ুয়া টাইপ। রবীন্দ্রনাথ তাদের গুরুদেব। এরা পাঞ্জাবি পরতে পছন্দ করে। গান বাজনা, মঞ্চনাটক জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত থাকে। এদের ভাষা শুদ্ধ। নদীয়া শান্তিপুর স্টাইল। যে কোন বিপদ আপদে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে এরা পারদর্শী। মিছিলের সময় পালানোর কথা বিবেচনায় রেখে এরা পেছন দিকে থাকে। এ দলটির আবার দুই ভাগ। মতিয়া গ্রুপ, মেনন গ্রুপ। এক দলের উপর চীনের বাতাস বয়, আরেক দলের উপর রাশিয়ার বাতাস বয়”।
হুমায়ুন আহমেদ সত্তর দশকের leftist দের যে চিত্র এঁকেছিলেন তাতে পড়াশুনার কিছু ঘাটতি এবং রবীন্দ্রভক্তির বদলে গঞ্জিকা ভক্তি ছাড়া বাকি অভ্যাস গুলো অদ্যবধি রয়েছে। কোথাও কোথাও বৃদ্ধি পেয়েছে যেমন মেয়েদের মত চুল লম্বা রেখে খোপা করা, হাতে চুড়ি, বালা পড়া ইত্যাদি। তবে প্রতিভাবান এই কথাসাহিত্যিক leftist ছেলেদের এই half ladies এর মত আচরণের কথা বললেও leftist মেয়েদের কথা বোধ করি খেয়াল করেন নি।
এই দলের ছেলেদের মধ্যে যেমন মেয়েলিপনা দেখতে পাওয়া যায়, তেমনি মেয়েদের মধ্যেও ছেলেপনা দেখতে পাওয়া যায়। যেমন ছেলেদের পাঞ্জাবি, শার্ট, জিন্স প্যান্ট পরা, ধূমপান ও গঞ্জিকা সেবন, জোর গলায় কথা বলা এবং স্লোগান দেওয়া, সমান অধিকারের নামে কোথাও কোথাও অতিরিক্ত ও বিশেষ অধিকার দাবী করা ইত্যাদি।
ছেলেদের মধ্যে মেয়েলি প্রবণতা এবং মেয়েদের মধ্যে ছেলেপনা অর্থাৎ একই ব্যক্তির মধ্যে একই সাথে ছেলে ও মেয়ে হওয়ার প্রবণতা আমরা শারীরিক গঠণে ত্রুটি সম্পন্ন একটি গোষ্ঠীর মধ্যে পাই, যাদেরকে বলা হয় বৃহন্নলা (এই নামে স্যারের একটি উপন্যাসও আছে)। সর্বসাধারণের কাছে যারা “হিজড়া” নামে পরিচিত।
বিস্ময়কর হলেও এটি সত্য যে বামপন্থী ছেলেমেয়েদের মানস, আচার আচরণ, প্রবৃত্তি, ধর্মচেতনা, বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিশ্লেষণ করলে “হিজড়া” সম্প্রদায়ের সাথে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। পার্থক্য এক দলের ত্রুটি শারীরিক আর অপর দলের ত্রুটি মানসিক। তবে আচার আচরণ ও ব্যবহারে উভয় ত্রুটিরই ফলাফল বেশ কাছাকাছি প্রকৃতির।
হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন যে এদের এক গ্রুপের উপর দিয়ে চীনের বাতাস বয় এবং আরেক গ্রুপের উপর দিয়ে রাশিয়ার বাতাস বয়। এদের উপর দিয়ে কখনও মক্কা, মদীনা, গয়া, কাশী বাংলাদেশের বাতাস বয় না। অথচ দেশের সাধারণ মানুষের উপর দিয়ে মক্কা, মদীনা, গয়া, কাশী ও বাংলাদেশের বাতাস বয়। এক্ষেত্রে হিজড়া শ্রেণীর মতই চিন্তা চেতনায় আপামর জনসাধারণ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং ক্ষুদ্র প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়। খেয়াল করার মত একটি বিষয় হল এরা মুলতঃ শ্রেণী সংগ্রামী হয়েও মাঝে মাঝে জাতীয়তাবাদী ভাবধারায় নিজেদের প্রকাশ করার চেষ্টা করে। বর্তমান এবং ৭১ পূর্ববর্তী সময়সহ এদের মূল তাত্ত্বিক শ্লোগান হল, “দুনিয়ার মজদুর এক হও, লড়াই কর”, এই মজদুরদের মধ্যে কিন্তু পাকিস্তানি মজদুরও ছিল এবং এখনও আছে, যদিও সাধারণ মানুষ তখন শ্লোগান দিয়েছিল “বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর”। অর্থাৎ এদেরকে আমরা বলতে পারি একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের স্থানীয় শাখা। এজন্য এদেরএকটি মূল সংগঠনের নাম হচ্ছে “বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি”। এক্ষেত্রে এদের জাতীয়তাবাদী কথা এবং মুক্তিযুদ্ধের আবেগ অনেকটাই কৌশলপূর্ণ। ইদানীং আবার শ্রেণী সংগ্রামের নামে বুর্জোয়াদের সাথে power structure এ এসে হালুয়া রুটিতে ভাগ নিতেও দেখা যাচ্ছে এদের। এই মানসিক হিজড়া বামপন্থীরা এদেশের আপামর মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সহ সকল ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় চেতনা, বিশ্বাস এবং বিশেষ করে সামগ্রিকভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। এই ক্ষুদ্রগোষ্ঠী হিজড়াদেরকে চিহ্নিত করার প্রয়োজন রয়েছে।
(কালেক্টেড)
বিষয়: বিবিধ
১৪৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন