শুধু অন্তরে বিশ্বাস করার নাম কি ‘ঈমান’? ইসলাম কি শুধুমাত্র যার যার অন্তরে বাস করে?

লিখেছেন লিখেছেন উমার ০৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:৩৩:৫৩ দুপুর

এক দোকানদার ভাই ‘লংমার্চ’ নিয়ে কিছু আলোচনা করছিলেন, হঠাৎ এক ক্রেতার আগমন, কিসের আন্দোলন, কিসের কি? ধর্ম যার যার অন্তরে। আমার ইসলাম আমার অন্তরে বলে তিনি একটি বেনসন সিগারেট ধরিয়ে ধূয়া ফুকতে ফুকতে বেড়িয়ে গেলেন।

শুধু অন্তরে বিশ্বাস করার নাম কি ‘ঈমান’? ইসলাম কি শুধুমাত্র যার যার অন্তরে বাস করে?

আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল কারীমে ঈমানদারদের সম্বোধন করেছেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا

‘ইয়া আইয়ূহাল্লাহযিনা আমানু’ অর্থ: ‘হে ঈমানদারগণ’!

আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদের সম্বোধন করার পরপরই ঈমানদারদের কি করণীয় সে সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন।

কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হল:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلاةِ

অথর্: হে ঈমানদারগণ! ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। [সূরা বাকারা: ১৫৩]

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ

অর্থ: হে ঈমানদারগণ, যখন তোমরা সালাতে দন্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত (ধৌত কর)। [সূরা আল মায়িদা: ০৬]

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأنْصَابُ وَالأزْلامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

অর্থ: হে ঈমানদারগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।[সূরা আল মায়িদা: ৯০]

পবিত্র কুরআনুল কারীমে ‘ইয়া আইয়ূহাল্লাহযিনা আমানু’ দিয়ে অনেকগুলো আয়াত রয়েছে যেখানে ঈমানদার তথা মুমীনদের লক্ষ্য করে তাদের কি করণীয় সে সম্পর্কে বলা হয়েছে।

ঈমানদারদের কথা উল্লেখ করার পরই তার সাথে সাথে কর্ম উল্লেখ করা হয়েছে।

এরপর আসুন হাদীস থেকে কিছু উদাহরণ দেখে নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমান, ইসলাম ও মুসলিমের কথা যেখানে উল্লেখ করেছেন সেখানে কর্মের কথাও উল্লেখ করেছেন।

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু কতৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঈমানের শাখা সত্তরটিরও কিছু বেশী। এর সর্বোচ্চ শাখা হচ্ছে لا اله الا الله অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত ইলাহ নেই এ কথা স্বীকার করা, আর এর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে – রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আর লজ্জা ঈমানের একটি বিশিষ্ট শাখা। [সহীহ মুসলিম, ঈমান অধ্যায়]

এখানে লক্ষ্য করুন, لا اله الا الله এর ঘোষণা দেয়া এবং লজ্জা অন্তরের বিষয় কিন্তু রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা একটি কর্ম।

আরেকটি হাদীস দেখি,

আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, সর্বোত্তম মুসিলম কে? তিনি বললেন: সেই ব্যক্তি যার মুখ ও হাত থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে। [সহীহ মুসলিম, ঈমান অধ্যায়]

সর্বোত্তম মুসলিমের বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্মের সম্পৃক্ত করেছেন, মুখ দিয়ে কথা বলা এবং হাত হতে অপর ভাই নিরাপদ থাকা কর্মের অন্তর্ভূক্ত।

সুতরাং, ঈমান শুধু অন্তরের বিষয় নয় সেই সাথে মুসলিম হওয়া মানে এই নয় আমি কিছু বিশ্বাস শুধুমাত্র অন্তরে পোষণ করি। বরং ঈমান হচ্ছে, অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখ দিয়ে সেই অনুযায়ী কথা বলা এবং সেই অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করা।

অনেক মুসলিমাহ বলে থাকেন বা এই যুক্তি ব্যবহার করে থাকেন, মনের পর্দাই বড় পর্দা! অথবা অন্তরের পর্দাই বড় পর্দা!

আল্লাহ তা’আলা বলেন:

وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الإرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

অর্থ: আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। [সূরা আন নূর: ৩১]

লক্ষ্য করুন, লজ্জাস্থানের হিফাজত করা, আবৃত থাকা, কুরআনে উল্লেখিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্যের নিকট সৌন্দর্য প্রকাশ না করা, সজোরে পদচারণা না করা এগুলো কি শুধুমাত্র মনের বা অন্তরের পর্দা? মোটেই নয়। বরং মুমিন নারীদেরকে বল.. অর্থাৎ ঈমানদার নারীদের উল্লেখ করে তাদের কর্মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

কাজেই ঈমান ও ইসলাম শুধুমাত্র অন্তরের বিষয় নয় কিংবা আমি শুধুমাত্র বিশ্বাস করলাম আর আমার কাজ বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক হয় তাহলে এখন সময় এসেছে ইসলামকে ভালভাবে জানার, বুঝার এবং মানার। আল্লাহ তা’আলা আমাদের হক কথা বুঝার তৌফিক দান করুন, আমীন।

বিষয়: বিবিধ

১৫৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File