আল কোরানে বিবর্তনবাদঃ 'সত্য/মিথ্যা' ও 'ভাল/মন্দ'র সংজ্ঞা
লিখেছেন লিখেছেন পার্টিশন ৪৭ ২৪ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৩৪:৪৬ সকাল
সমসাময়িক ঘটনা প্রবাহ কেন ঘটে, স্রষ্টা ও প্রকৃতির কি উদ্দেশ্য এর পিছনে তা আমরা সাধারণত চিন্তা করি না। দর্শন সম্পর্কিত ভিন্ন ধারার এ লেখাটি প্রথম পোষ্ট করা হয়েছিল ১২ সেপ্টেম্বর ২০১১-এ বন্ধ হওয়া এসবি ব্লগে। নূতন এই ব্লগের পাঠকদের উদ্দেশ্যে পুনরায় এটি সংশোধিত আকারে পুনরায় পোষ্ট করা হল।
বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এবং তার সৃষ্টি ও কর্মজগতের মধ্যে দুটি বিপরীতমুখী ও পরস্পর বিরোধী ধারা রয়েছে। তার একটি অপরটির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড়িয়ে অনবরত স্বীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছে। একটির কাজ সৃষ্টি ও উন্নতি সাধন, অপরটির কাজ বিনাশ। সব কিছুই এ দুটো শক্তির পারস্পরিক টানাপোড়নে জর্জরিত হয়েই আত্মপ্রকাশ করে। পরস্পর বিরোধী এ দুটি শক্তির সংঘর্ষ ও তার পরিণাম নিয়েই এই পৃথিবী। এই পরস্পর বিরোধী তত্ত্ব ও অবস্থাকে আমরা বিভিন্ন যুগে ভিন্ন ভিন্ন নামে আখ্যায়িত করতে দেখি। এর আদি নাম ‘সৃষ্টি ও ধ্বংস’। অর্থাৎ পৃথিবীতে কোন বস্তু গড়ে ওঠে, সুশোভিত হয়, সবল ও সুস্থ্য হয়, কিংবা ভেঙ্গে যায়, বিক্ষিপ্ত হয় ও নিশ্চিহ্ন হয়। এখানে গড়ে ওঠার দিকটা হল সৃষ্টি এবং নিশ্চিহ্ন হবার দিককে বলা হয় ধ্বংস। এটা ছিল মানুষের সাধারণ ধারণার যুগ।
বিজ্ঞান ও দর্শনের যুগে বিষয়টিকে বুঝানোর জন্য ‘অস্তিত্ব ও শূন্যতা’ পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীতে ক্রমাগত অস্তিত্ব ও শূন্যতার ধারা বয়ে চলছে। বিভিন্ন রূপ নিয়ে বহু কিছুর আবির্ভাব হয়, আবার সেগুলো বিলীন হয় বা লোপ পেয়ে যায়। রূপ নেয়াকে ‘অস্তিত্ব’ এবং লোপ পাওয়াকে ‘শূন্যতা’ বলা হয়। জড়বিজ্ঞানে এ দুটি তত্ত্বকেই অন্য নামে ডাকা হয়। যেমন- পজিটিভ-নেগেটিভ, আকর্ষন-বিকর্ষন। জীববিজ্ঞানে বলা হয় অর্জন-বর্জন। নৈতিকতার ক্ষেত্রে বলা হয় গ্রহণ-বর্জন, ভাল-মন্দ, পাপ-পুন্য, আলো-আঁধার। সমগ্র সৃষ্টি ও তার শাখা-প্রশাখার মধ্যে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় সেখানে রয়েছে সবলতা-দুর্বলতা, বিকাশ-লোপ, সমতা-অসমতা। দেহের ক্ষেত্রে বলি সুস্থ্যতা-অসুস্থ্যতা, জীবন-মরণ। জীবন হল কর্মপ্ররনার নাম, মরণ হল হতাশা ও মৃত্যুর বার্তা। আইনের ভাষায় বলা হয় শৃঙ্খলা ও বিশৃঙ্খলা। যত নামই দেয়া হোক না কেন, মূলত সবই এক এবং যথাক্রমে সৃজন ও ধ্বংসের কাজ করে যাচ্ছে।
ডারউইনের বিবর্তনবাদ একটি আলোচিত বা সমালোচিত বিষয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ধার্মিক লোকেরা এটি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন। এটার কারন সম্ভবত জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা। মানুষের জ্ঞান সীমাবদ্ধ, তবে তা বিকাশমান। এই জ্ঞান বংশ পরম্পরায় জমা হচ্ছে এবং তার পরিধি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আমাদের পুর্বপুরুষরা যা বুঝতেন না, তার অনেক কিছুই এখন আমরা বুঝি। আজ আমাদের কাছে যা বোধগম্য নয়, আমাদের অধস্তন বংশধরদের কাছে তা খুবই সহজ বিষয় হয়ে ধরা দিতে পারে। ডারউইনের বিবর্তনের তত্ব হয়ত নির্ভুল নয়। কিন্তু তার এই আবিস্কার সৃষ্টি জগতের অনেক কিছুর ক্ষেত্রেই মানুষের বোধগম্যতায় এক বিপ্লব সাধন করেছে। আজ একথা সর্বজন স্বীকৃত যে, সমগ্র সৃষ্টি জগৎ ব্যাপী অস্তিত্বের সংগ্রাম বিদ্যমান। এখানে প্রকাশ পায় ‘প্রকৃতির মনোনয়ন’ (natural selection) এবং ‘যোগ্যতমের বেচে থাকা’ (survival of the fittest)-র গভীর তত্ত্বটি। সৃষ্টি জগতের সব বিবর্তন ও বিপ্লবের মুলে এ রীতিই কাজ করছে। প্রকৃতির নিয়ম হচ্ছে যে, সে যোগ্য ও শক্তিমানকে বেছে নেয় বাচিয়ে রাখার জন্য, আর দুর্বলকে ছাটাই করে ধ্বংস করে দেয়। দুনিয়ায় কত প্রাণীই তো এসেছিল, কিন্তু পৃথিবী তাদের ভিতর থেকে যোগ্যতরকে বেছে নিয়ে বাচার অধিকার দিয়েছে। ডারউইন তার তত্ব প্রয়োগ করেছিলেন জীবজগতের শারিরিক বিকাশ ও শক্তিমত্তার ক্ষেত্রে। কালক্রমে এই তত্বের গুরুত্ব যোগ্যতার অর্থে সব দিকের যোগ্যতাকেই বুঝাচ্ছে। এই যোগ্যতা হতে পারে শারিরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, বস্তুগত, ভাষা ও সাংস্কৃতিক সকল ক্ষেত্রে।
সমস্ত জীবজগতের উপর মানুষ বুদ্ধির মাধ্যমে প্রাধান্য বিস্তার করছে এবং নিজের অস্তিত্বের স্বার্থেই তাদেরকে ব্যবহার করছে। আবার মানুষের নিজেদের মধ্যেও চলছে নির্বাচনি খেলা। প্রকৃতি খারাপকে ঝেরে ফেলে ভালকে বেছে নিচ্ছে মানুষের মধ্যেও। অসংখ্য ভাষার সৃষ্টি হলেও অধিকতর গ্রহণযোগ্য ও সমৃদ্ধ ভাষাগুলো টিকে আছে, বাকিগুলো লোপ পেয়েছে। মেধাবী ও সুশৃঙ্খল জাতিগুলো পদানত ও আজ্ঞাবহ করছে বিশৃঙ্খল জাতিগুলোকে। মানব সমাজে হাজার ধরনের মতামত ও চিন্তাধারা সৃষ্টি হয়, প্রসারও লাভ করে, কিন্তু মানব জাতির উৎকর্ষ সাধনের জন্য যেটি অপেক্ষাকৃত উত্তম সেটাই টিকে থাকে এবং খারাপগুলো লোপ পায়, বিলীন হয়ে যায়। বস্তুতঃ এ সৃষ্টি জগৎ ক্রমাগত উন্নতি ও পরিণতি বা পুর্ণতার দিকেই ধাবিত হচ্ছে। মানুষ ও বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের বিবর্তনে ক্রমাগত উন্নতি ও পুর্নতার পক্ষে যা কিছুই সহায়ক ও সামঞ্জস্যপুর্ণ তাই সত্য ও কল্যাণকর, আর বাকি সবই মিথ্যা। এ উদ্দেশ্য সাধনে শক্তি ও যোগ্যতা বলতে যা বুঝায় তাই ন্যায়, তাই সত্য, তাই সততা ও পুণ্য।
সৃষ্টি জগতে এই সত্যের বৈশিষ্টই হচ্ছে সাফল্য, জয়, স্থৈর্য ও স্থায়িত্ব। ক্ষতি ও ধ্বংস তার ধারে কাছেও ঘেষতে পারে না। এটি কেবল মাত্র টিকে থাকার জন্যই সৃষ্টি হয়েছে। পক্ষান্তরে সত্যের বিপরীত বা বাকি সমুদয় বিকল্পই হল মিথ্যা, যা কেবল মাত্র লয় হবার জন্যই এবং যা কখনও সাফল্যের মুখ দেখবেনা ও সত্যের ওপর জয়ী হতে পারবেনা। সত্য-মিথ্যার এ প্রশ্ন বড়ই জটিল। এ প্রশ্নর উত্তর দেয়ার জন্যই বড় বড় মনিষীদের জন্ম হয়েছে, যুগে যুগে নবী-রাসুল ও ধর্মগুরুদের আবির্ভাব হয়েছে। এ নিবন্ধ সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য বুঝার একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
কুরানের বহুস্থানে প্রাকৃতিক নির্বাচন ও বাচার লড়াই সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেমন সুরা রা’আদ-এ আল্লাহ বলেন-
أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَالَتْ أَوْدِيَةٌ بِقَدَرِهَا فَاحْتَمَلَ السَّيْلُ زَبَدًا رَّابِيًا ۚ وَمِمَّا يُوقِدُونَ عَلَيْهِ فِي النَّارِ ابْتِغَاءَ حِلْيَةٍ أَوْ مَتَاعٍ زَبَدٌ مِّثْلُهُ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْحَقَّ وَالْبَاطِلَ ۚ فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاءً ۖ وَأَمَّا مَا يَنفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ “তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর স্রোতধারা প্রবাহিত হতে থাকে নিজ নিজ পরিমাণ অনুযায়ী। অতঃপর স্রোতধারা স্ফীত ফেনারাশি উপরে নিয়ে আসে। এবং অলঙ্কার অথবা তৈজসপত্রের জন্যে যে বস্তুকে আগুনে উত্তপ্ত করে, তাতেও তেমনি ফেনারাশি থাকে। এমনি ভাবে আল্লাহ সত্য ও অসত্যের দৃষ্টান্ত প্রদান করেন। অতএব, ফেনা তো শুকিয়ে খতম হয়ে যায় এবং যা মানুষের উপকারে আসে, তা জমিতে অবশিষ্ট থাকে। আল্লাহ এমনিভাবে দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন।” (১৩:১৭)
এ আয়াতটির কয়েকটি কথার মধ্যে আল্লাহ তায়ালা তার গোটা সৃষ্টি তত্ত্বকে বুঝিয়েছেন। অস্তিত্ব রক্ষার ব্যাপারে প্রাকৃতিক নির্বাচন ও যোগ্যতরের বাচার বিধানই এখানে স্পষ্ট। এখানে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, যা কিছু মানুষ ও সৃষ্টি জগতের কল্যাণ আনে তাই পৃথিবীতে টিকে থাকবে। আর যা কিছু অকল্যাণকর তা ফেনা ও আবর্জনার মতই ঝেরে ফেলা হবে। এটা কখনো হতে পারে না যে, পানির মতই ফেনা আর খাটি সোনার মতই ময়লা টিকে থাকবে। এভাবেই আল্লাহ মানুষকে ন্যায় ও অন্যায়কে উপমার মাধ্যমে বুঝিয়েছেন। সত্য, ন্যায় ও কল্যাণ একই বিষয় এবং তা হচ্ছে যোগ্যতম, উত্তম ও সৃষ্টির সাথে সামঞ্জস্য পুর্ণ। সুতরাং তাই টিকে থাকবে আর বাকি সব লোপ পাবে।
একই ভাবে সুরা বাকারায় আল্লাহ তায়ালা একদল বা জাতি কর্তৃক আরেকদল বা জাতিকে শায়েস্তা করার মাধ্যমে কল্যাণকে প্রতিষ্ঠিত রাখার ব্যবস্থা করেছেন। যেমন-
فَهَزَمُوهُم بِإِذْنِ اللَّهِ وَقَتَلَ دَاوُودُ جَالُوتَ وَآتَاهُ اللَّهُ الْمُلْكَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَهُ مِمَّا يَشَاءُ ۗ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ “তারপর ঈমানদাররা আল্লাহর হুকুমে জালূতের বাহিনীকে পরাজিত করে দিল এবং দাউদ জালূতকে হত্যা করল। আর আল্লাহ দাউদকে দান করলেন রাজ্য ও অভিজ্ঞতা। আর তাকে যা চাইলেন শিখালেন। আল্লাহ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেতো। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ একান্তই দয়ালু, করুণাময়।” (২:২৫১)
পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা অক্ষুন্ন রাখার জন্য মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর পদ্ধতি হচ্ছে এই যে, তিনি বিভিন্ন মানব গোষ্ঠী ও দলকে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত দুনিয়ায় ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভের সুযোগ দিয়ে থাকেন যতদিন তাদের অনুসৃত পথ আল্লাহর ইচ্ছার সাথে, সৃষ্টির কল্যাণকর বিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য পুর্ণ থাকে। কিন্তু যখনই কোন দল সীমা ছাড়িয়ে যেতে থাকে তখনই তিনি অন্য একটি দলের সাহায্যে তার শক্তির দর্প চূর্ণ করে দেন। যদি কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা চিরন্তনভাবে একটি জাতি ও একটি দলের মধ্যে কেন্দ্রীভূত করে রাখা হতো এবং তার ক্ষমতার দাপট ও জুলুম-নির্যাতন হতো সীমাহীন ও অশেষ, তাহলে নিসন্দেহে আল্লাহর এই রাজ্যে মহা বিপর্যয় নেমে আসতো।
‘সত্যের জয় ও মিথ্যার লয়’ - এই তত্ব ও বিধানই হচ্ছে আল কুরানের সর্ববিধ শিক্ষার বুনিয়াদ। এই চিরন্তন সত্যের উপরে যে সব মুর্খ ও উদাসীন সন্দেহ ও বাদানুবাদ সৃষ্টি করেছে, তাদের সব সন্দেহ ও বাদ-প্রতিবাদের বিস্তারিত জবাব দেয়া হয়েছে। কুরানের বিভিন্ন স্থানে এ দুটো বিষয়কে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়েছে, যদিও সবখানেই সে দুটোর বৈশিস্ট অক্ষুন্ন রয়েছে। কোথাও সাদা কথায় সে কথা ঘোষণা করা হয়েছে, কোথাও তার সমর্থনে দলিল-প্রমান দাঁড় করা হয়েছে। কোথাও উদাহরণ সহ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে, কোথাও বিভিন্ন দেশ ও জাতির ইতিহাস তুলে ধরে ব্যাপারটিকে স্থায়ীভাবে স্মরণ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আদি হতে অন্ত পর্যন্ত পর্যন্ত এ নীতিই অব্যাহত থাকবে বলে কোথাও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কুরান পাক ও আল্লাহর ধর্মের এ চিরন্তন বিধানের ভিত্তি এতই ব্যাপক যে, শিক্ষা ও মত পথের সব শাখা-প্রশাখা জুড়েই তার প্রসারটা দেখা যায়। আদেশ-নিষেধ, আইন-কানুন, ঔদাসিন্যের বিরুদ্ধে সতর্কবানী বলতে যা কিছু বুঝায় সবই এই বিধানের খাতিরে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি ও তার মালিক বা নিয়ন্তাকে নিয়ে গবেষণা বা ধ্যান করতে বলা হয় এ সত্য অর্জনের জন্যই।
মানুষের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা লাভের উপায় তিনটি। ইন্দ্রিয়গত, মনন বা চিন্তা শক্তি এবং ওহী। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞানের যেখানে শেষ হয়, সেখান থেকেই মননশীলতার শুরু। কিন্তু এই মনন শক্তি অসীম নয়। এমন অনেক তথ্য ও জিজ্ঞাসা রয়েছে যেগুলোর জবাব খুজতে গিয়ে মানুষের বুদ্ধি ও অনুভুতির সম্মিলিত শক্তিও ব্যর্থ হয়। একজন জ্ঞানী ব্যক্তি যে বয়সে এসে সৃষ্টিজগতের অনেক কিছুর রহস্য ভেদ করেন সে বয়সে তার মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়, ফলে জীবৎকালে কারও পক্ষে সৃষ্টিজগতের পরিপুর্ন রহস্যভেদ সম্ভব হয় না। তিনি তার জ্ঞান রেখে যান তার পরবর্তি প্রজন্মের কাছে। পরবর্তি প্রজন্ম তার পুর্বপুরুষের রেখে যাওয়া জ্ঞানের সাথে আরও কিছু যোগ করেন। এভাবে মানুষের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হতে থাকে। ফলে মানুষের জ্ঞানেরও বিবর্তন হয়। এক সময় মানুষ হিসাব জানত না, জ্ঞান বিজ্ঞানের আলোচনা ছিল সীমাবদ্ধ। এই জ্ঞানের বিকাশের সাথে সাথে সৃষ্টি তত্ত্ব মানুষের কাছে স্পষ্টতর হতে থাকবে। কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের জন্য লিখিত এই কুরানের আয়াতের অর্থ সমূহ আরও বেশি বোধগম্য হবে। নবী-রসূলগন ছিলেন ওহীপ্রাপ্ত, সরাসরি সৃষ্টি কর্তা কর্তৃক পরিচালিত। মানুষের সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ জ্ঞানের কারনে ওহীর প্রয়োজন ছিল। বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। সাধারণ মানুষ তার মননশীলতা বিকাশের সাথে সাথে একসময় আল্লাহর অপার সৃষ্টি তত্ত্ব অনুধাবন করতে পারবে, আল্লাহকে চিনতে পারবে। আর এ কারণেই হয়ত নবীর আগমনের প্রয়োজন বন্ধ হয়ে গেছে।
(ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ লিখিত "যে সত্যের মৃত্যু নেই" অবলম্বনে)
বিষয়: বিবিধ
১৬২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন