ফেব্রুয়ারী ২৫, ২০০৯ -- ব্যাক্তিগত ডায়েরি থেকে
লিখেছেন লিখেছেন আইমান হামিদ ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১২:০৪:০২ দুপুর
এমনিতে খুব বেশী একটা প্রয়োজন ছাড়া ঢাকা যাওয়া হতো না। তবে ঘটনাক্রমে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ দিকে একটি বিতর্ক অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই ঢাকা যাই। যদিও ২০০৮ সালের নভেম্বরে ঠিক একই কারণে ঢাকা গিয়েছিলাম। বেশ ভালো অভিজ্ঞতা বলা যায়। তাই পরেরবার বেশ খানিকটা উৎসাহী ছিলাম।
সকাল প্রায় ১১ টা, চট্টগ্রাম থেকে আগত বিশাল গ্রুপ সহ আমরা সকালের নাস্তা সেরে শিশু একাডেমীর মিলনায়াতনে আসন পেতেছি। বিশিষ্ট বিতার্কিক, বক্তা এবং উপস্থাপক আব্দুন নূর তুশারের বক্তব্য শুনছি। এমন সময় একজন এগিয়ে এসে কানে কানে বললো
"ভাইয়া নীলক্ষেতের পাশে বিডিআর আর্মি যুদ্ধ শুরু হয়েছে" !!
কিছুক্ষন পর খবরটি সঞ্চালকের কানে গিয়ে পৌঁছে। মাত্র কিছুদিন আগে নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। তুশার সাহেবের কাছের মানুষরা মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন!! কিন্তু তিনি যেভাবে রাজনৈতিক কায়াদায় ক্ষেপে গিয়ে সাহসী বক্তব্য দিলেন তার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না। অবশ্য বুঝার কথাও নয়।
সবার মন আতঙ্ক গ্রস্থ। তিন দিনের অনুষ্ঠান দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই শেষ করতে হলো। দোয়েল চত্বরের সামনে এসে দাঁড়ালাম। আসেপাশে বিক্ষিপ্ত কিছু রিক্সা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছে না।
দুই একজন ভোরে ভোরে নাস্তা শেষ করে নীলক্ষেতে গিয়েছিলো কিছু বই কেনার জন্য। গোলাগুলি আরম্ভ হওয়ার পর দোকানের শাটার নামিয়ে অপেক্ষা করছিলো। অবশেষে সময় ক্ষেপণ করে প্রানের ঝুঁকি নিয়ে আমারদের মাঝে ফিরে এলো।
কিছুক্ষণ পর আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমাদের সাথেই উৎসবে যোগ দিতে আসা একজন কপোতীর বাসন্তী সাজে নাগরের সাথে ত্রিচক্রারোহন!! স্বাভাবিক, খুব স্বাভাবিক!! তাই হয়তো ফ্রান্সিস বেকন বলেছিলেন "বিপদের ভাবনা কে ভুলে থাকার জন্য আনন্দের মাদকতা প্রয়োজন! সেটাই হয়তো প্রেম"
যাহোক দলবল নিয়ে হোটেলে গিয়ে খবরে আসল কাহিনী দেখতে লাগলাম! বিডিআর এর পোশাক পরিহিত কর্মকর্তাদের লাশ নদীর তীরে, ড্রেনের পাশে পরে আছে। জীবনে এধরণের পরিস্থিতি মুখোমুখি হয়নি। সর্বত্র আতঙ্ক আর আতঙ্ক !
পাশাপাশি দেখলাম সাদা পতাকা নিয়ে সরকারের উচ্চ পদস্থরা পিলখানার আসেপাশে ঘুরাঘুরি করছে। দেখাগেলো আর্মি চারপাশ ঘিরে রেখেছে কিন্তু পরিস্থিতির কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
পরদিন বেশ ভয়ে ভয়ে কমলাপুর স্টেশনে যাই। কোনো ট্র্যাফিক জ্যাম নেই। চারিদিকে থমথমে অবস্থা। রাস্তাঘাটে মানুষের চোখেমুখে এক প্রকার আতঙ্ক, অবিশ্বাসের এবং অসহয়াত্বের ছাপ।
অবশেষে ট্রেনে উঠলাম। আতঙ্ক তবুও কাটলো না। আজ অব্দি কাটেনি !!
আপনাদের কেটেছে কিনা জানি না !
বিষয়: বিবিধ
১৪৫৩ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই হত্যাকান্ডের পিছনের কারন এবং দায়ি ব্যাক্তিদের একদিন অবশ্যই জনগনের মুখোমুখি হতে হবে।
আশা করছি হায়াত থাকতে থাকতে দেখে দেখে যেতে পারবো
মন্তব্য করতে লগইন করুন