অরেগনের পথে – ৩ “বাংলাদেশ বনাম পাকিস্থান”

লিখেছেন লিখেছেন আইমান হামিদ ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১০:৩৮:৫০ সকাল





অনেক কবি সাহিত্যিককে বলতে শুনি বর্ষা তাদের প্রিয় ঋতু। মাধ্যমিক – উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীকে অনেকটা আরোপিত ভাবে আমার প্রিয় ঋতু রচনায় “বর্ষাকাল” লিখতে হয়। তবে বর্ষাকাল আমাকে মোটেও অনুপ্রাণিত করে না। আর মাসের ত্রিশ দিন যদি একনাগাড়ে বারিধারা প্রবাহমান থাকে তাহলে সেটা প্রায় তিক্ততার পর্যায়ে চলে যায়।

আমেরিকার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল অর্থাৎ ওয়াশিংটন ও অরেগন অঙ্গরাজ্যে বছরের অনেকটা সময় জুড়ে মেঘাচ্ছন্ন থাকে। অধিকাংশ সময় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি আর কালভাদ্রে তুষারপাত এই হলো অরেগনের আবহাওয়া। শুধু আবহাওয়া নয়, অরেগনের প্রকৃতিতেও রয়েছে প্রচুর বৈচিত্র। চারিদিকে আঁকাবাঁকা ধোঁয়াশা সিক্ত পাহাড়ি পথ আর দিগন্ত জোড়া ক্রিসমাস ট্রি’র সমাহার। শুনেছি গ্রীষ্মের অরেগন নাকি আরও বেশী সরব ও জীবন্ত, হয়তো ক্ষণস্থায়ী বিধায়! তবে আমার মতো কোলাহল প্রিয় মানুষের এসব মোটেও ভালো লাগার কথা নয়। সবকিছু কেমন যেনো কর্দমাক্ত আকাশ আর মেঘাচ্ছন্ন মাঠের মতো!



ইতিমধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো মাসিক কোরআন স্টাডি সার্কেলে অংশগ্রহণের সুযোগ মিলেছে। উক্ত আলোচনায় মূল বিষয়বস্তু ছিলো “জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিম মনীষীদের অবদান”

বরাবরের মতো একজন মূল বক্তা বিষয়টিকে বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করেন। পরবর্তীতে বাকীরা বিষয় সম্পর্কিত প্রশ্ন ও মন্তব্য করেন। আলোচনায় মুসলিম বিশ্বের অতীত ও বর্তমান প্রেক্ষাপট সহ অনেক কিছু উঠে এসেছে। তবে প্রশ্নোত্তর পর্বে অনুসন্ধান প্রসূত একটি প্রশ্ন করে বেশ বেকায়দায় পড়েছিলাম। আমার প্রশ্ন ছিলো ধর্মীয় অনুশাসন মেনে বর্তমান সময়ে একজন ছাত্র বা ছাত্রী কি বিজ্ঞান চর্চা করতে পারে কিনা? প্রত্যাশিতভাবে ইতিবাচক উত্তর পেয়ে সম্পূরক প্রশ্ন করলাম তাহলে কেনো আমাদের দেশের বিজ্ঞান মনস্ক বিজ্ঞ লেখকবৃন্দ ধর্মকে বিজ্ঞান চর্চায় বাধা বা অন্তরায় হিসেবে উপস্থাপন করেন? কিংবা শুধুমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাস লালন এবং অনুশাসন মেনে চললেই একজন ছাত্র বা তরুণ কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কথিত রাজনৈতিকগোত্র ভুক্ত করা হয়?

প্রশ্নটি উপস্থাপন করার পর অনেকের চেহারায় কিঞ্চিৎ অস্থিরতা লক্ষ্য করলাম। কারণ আমি উদাহরণ স্বরূপ অনেকের প্রিয় লেখক, এমনকি আমার নিজেরও ডঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবালের নাম উচ্চারণ করেছি! আগেই বলেছিলাম অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাশকৃত, পিএইচডি ধারী, ইন্টেলে কর্মরত সফল প্রকৌশলী। যাহোক সঞ্চালক আমার যুক্তির পক্ষে তার মতামত দিয়ে দ্রুত প্রশ্নোত্তর পর্বের ইতি টানলেন।

পরবর্তীতে ভোজনপর্বে অনেকের সাথে পরিচয়ের সুযোগ ঘটে। অনেকে নিজের ব্যাক্তিগত পরিচয় দিয়ে পরোক্ষভাবে আমার প্রশ্নটির কথা উল্লেখ করেন আর দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের অনুরোধ জানান। কিন্তু আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর এখনো অজানা !



“বাংলাদেশ বনাম পাকিস্থান”

সবে মাত্র একমাস গত হলো কাজে, একদিন সকালে অফিসে পোঁছে ইমেইল খুলে দেখি ম্যানাজারের মেইল। শিকাগো থেকে নতুন একজন ব্যাক্তি আমাদের ল্যাবে জয়েন্ট করছে। তার রিপোর্টং থেকে শুরু করে ওরিয়েন্টেশনের দ্বায়িত্ব আমার উপর ন্যাস্থ করা হয়েছে। নাম দেখে বুঝে নিলাম মুসলমান, বাকিটুকু আন্দাজ করতে পারছিলাম না।

যাহোক নির্ধারিত দিনে তার সাথে সাক্ষাৎ হলো। পরিচয় পর্বে জানতে পারলাম সে আমার সমবয়সী, জন্মসূত্রে পাকিস্থানি এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়, আরবানা শেম্পেইন’র স্নাতক।

শুরু থেকেই তার সাথে বেশ সু সম্পর্ক গড়ে উঠে। তার জন্মস্থান পাকিস্থানের অ্যাবোটাবাদে! তথ্যটি শুনতেই আমি হাসি ধরে রাখতে পারলাম না। সে আত্নপক্ষ সমর্থন করে বললো দেখো এটা ছোট একটা শহর সবাই সবাইকে চিনে। তাছাড়া পাশেই সামরিক বাহিনীর বিশাল ক্যাম্প। ইচ্ছাকৃত ভাবে সামরিক বাহিনীকে দোষারোপ করার জন্যই এমনটি করা হয়েছে। জবাবে তার কথা বিশ্বাস করেছি বলে তাকে আশ্বস্ত করলাম।

ডিসেম্বরের ১৭ তারিখে ল্যাবে পৌঁছে প্রসঙ্গক্রমে তাকে বললাম গতকাল আমাদের বিজয় দিবস ছিলো। কাজের ফাঁকে, লাঞ্চ ব্রেকে তার সাথে অনেক এই ব্যাপার নিয়ে অনেক কথা হলো

ঃ তা ভাই তোমরা পাকিস্থান থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলে কেনো ?

ঃ হম চিন্তার বিষয়ম আমার মনে হয় আমরা আত্নঘাতী বোমা হামলায় মরতে চাইনি তাই। বুঝতে পেরেছো ?

ঃ তুমি কি বুঝতে চাইছো ?

ঃ কিছুই না , মজা করছিলাম, দেখো ওই সময় তোমরা আমাদের দ্বারা শাসিত হতে চাও নি। আমরা নির্বাচনে জিতেছিলাম এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিলাম, কিন্তু তোমরা অস্বীকার করেছো এবং পরবর্তীতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছো।

ঃ ওহ!! বুঝতে পেরেছি, কিন্তু পাকিস্থানের অধিকাংশ জনগন মনে করে ওটা ছিলো ভারতীয়দের ষড়যন্ত্র, তারা ইউনাইটেড পাকিস্থানকে ভাঙতে চেয়েছিলও। মনে করে দেখো ১৯৬৫ সালে আমাদের সাথে ওদের যুদ্ধ হয়েছিলো।

ঃ ভালো কথা, এটা ভুলে যেও না যে পাকিস্থান সৃষ্টির পক্ষে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলো সে ছিলও একজন বাংলাদেশি! প্রশ্নাতীত ভাবে সেটা বেশ ভালো উদ্যোগ ছিলও কিন্তু পরবর্তীতে তোমরা সব সম্ভবনা নষ্ট করেছো।

ঃ তা তোমরা বাংলাদেশীরা ব্যাপারটিকে কিভাবে দেখো?

ঃ দেখো ব্যাপারটি প্রায় ১৬ কোটি মানুষের অভিমতের ব্যাপার। আমি কি করে জানবো প্রত্যেকে ব্যাপারটিকে কিভাবে দেখে! তোমরা অনেক নিষ্পাপ মানুষকে হত্যা করেছো, অনেক নারীকে ধর্ষণ করেছো, সুতরাং তোমাদের সাথে একত্রে থাকার কোন প্রশ্নই আসে না। পাশাপাশি আমি ভারতীয়দের ভুমিকা নিয়েও সচেতন। তারা এমনটিই চাইবে এতে অবাক হবার কিছু নেই। কিন্তু তোমরা সেই সুযোগ এবং পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলে। তুমি কি দেখতে পারছ না প্রতিদিন পাকিস্থনে মানুষ আত্নঘাতী বোমা হামলায় মারা যাচ্ছে !

ঃ আমি তোমার সাথে দ্বিমত পোষণ করবো না, দেখো পাকিস্থানের সাধারণ জনগণ এমনটি কখনো চায়নি! সব কিছুর জন্য দুর্নীতিবাজ শাসকরাই দায়ী। মানুষ চায় শান্তি, মানুষ চায় তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে। কিন্তু প্রতিটি সময় শাসকগোষ্ঠী মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে পুঁজি করে তাদের স্বার্থ হাসিল করেছে।

ঃ এখন তুমি বুঝতে পেরেছো, আমাদের এখানেও একই অবস্থা। আমাদের আছে মিঃ টেন পারসেন্ট, পরীক্ষিত দেশ প্রেমিক সহ আরও অনেকে। আমি যেটা মনে করি তা হচ্ছে সবকিছুর মুলে ছিলও দুই উইংসএর এলিটদের ক্ষমতা এবং ভাগবাটোয়ারার লড়াই। যারা নিজেদের স্বার্থের জন্য সবকিছুই করতে পারে! এবং প্রত্যেক বার তারা ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করেছে।

ঃ ঠিক তাই, আমাদের ও মিঃ টেন পারসেন্ট আছে ।

ঃ কে ?

ঃ হাহহাহ, জারদারি, তুমি কি জানো যে পাকিস্থানের অনেক মানুষ মনে করে সেই বেনেজির কে হত্যা করেছে ?

ঃ সিরিয়াসলি!!!! অবাক হবার কিছুই নেই, আমি তোমাকে আগেই বলেছি তাড়া নিজেদের স্বার্থের জন্য সবকিছুই করতে পারে।

ঃ যাহোক আমি চাই সৎ এবং যোগ্য মুসলিম নেতৃত্ব দেখতে চাই, যে ভালো কিছু বয়ে আনবে

ঃ হম আমিও তাই চাই।

চলবে...

ফুট নোটঃ বাঙ্গালী এবং পাঞ্জাবী ভারতীয় উপমহাদেশের প্রভাবশালী, অগ্রগামী, গোঁয়ার এবং গাদ্দার দুটি জাতি। এদের কারণে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা, পাকিস্থান সৃষ্টি এবং পাকিস্থান ভঙ্গ উভয় ঘটেছে

অরেগন ২০১২

বিষয়: বিবিধ

১৬০১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

177237
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:১০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো
তবে উপসংহার টা একটু বেশি সরলীকরন হয়েগেছে।
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:২৪
130392
আইমান হামিদ লিখেছেন : মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ
179733
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:১৪
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : কর্দমাক্ত আকাশ আর মেঘাচ্ছন্ন মাঠ জেনুইনলি আমার ভাল লাগে Day Dreaming
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:২০
132754
আইমান হামিদ লিখেছেন : অতি শীঘ্রই তেমন একটি স্থানে আপনার স্থানান্তর ঘটুক

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File