অরেগনের পথে – ৫ (মাল্টনোমাহ ফল’স)

লিখেছেন লিখেছেন আইমান হামিদ ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৮:১৬:০১ সকাল



বেলা তখন প্রায় ২ টা।টিম্বারলীন লজ থেকে ফেরার পথে লাঞ্চ ও বিশ্রামের জন্য বেছে নিলাম স্থানীয় একটি সরাইখানায়। বাহির থেকে দেখতে অনেকটা আদিবাসীদের মন্দিরের মতো তবে ভিতরটা মুভি থিয়েটারই বলা যায়। ইচ্ছা ছিলো টিম্বারলীন লজ ও গভরম্যান্ট ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় জানালার পাশে বসে স্কি দেখতে দেখতে লাঞ্চ সাড়বো। কিন্তু সফর সঙ্গীদের মধ্যে একজন তৃণভোজী, আমি সহ দুইজন মুসলিম (তৃণ - মাংস উভয়ভোজী) আর একজন সর্বভুক হওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি।

বেলা প্রায় তিনটা,পরবর্তী গন্তব্য কলাম্বিয়া রিভার জর্জের পাশে অবস্থিত মাল্টনোমাহ ফল’স। আমাদের অবস্থান থেকে ঠিক ৬০ মাইল পশ্চিম-উত্তরে, পাহাড়ি রাস্তা বিধায় পৌঁছানোর সম্ভ্যাব্য সময় ১০০ মিনিট! যাত্রা পথে পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে দেখা মিললো অসংখ্য খামারবাড়ির। আমেরিকার অনেক মানুষ, লোকালয় পছন্দ করে না। তাই বসন্তের শুরুত থেকে গ্রীষ্ম পর্যন্ত তারা বিশাল এলাকাজুড়ে নিয়ে তৈরি খামার বাড়ীতে অবস্থান করে।অনেকে একাধিক পরিবার মিলে গ্রীষ্মের ছুটিতে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত বাড়ীগুলোতে।

যাহোক প্রায় দুই ঘণ্টা যাত্রা শেষে আমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছলাম।জায়গাটির নাম “ব্রাইডল ভেইল” !! এই স্থানের মূল আকর্ষণ বারোমাসি ঝর্ণা “মাল্টনোমাহ ফল’স”, মূলত মাল্টনোমাহ আদিবাসীর নামানুসারে এর নামকরণ। ল্যারচ মাউন্টেইনের ভূগর্ভস্থ পানি থেকে সৃষ্ট বিধায়, সারাবছর জুড়ে এর ধারা সমান ভাবে বহমান। দুই ধাপে বিভক্ত ঝর্নার মোট উচ্চতাপ্রায় ১৯০ মিটার। ঐতিহাসিক কলাম্বিয়া রিভার হাইওয়ে ও রেললাইনের পাশে অবস্থিত বিধায় প্রতি বছর ব্রাইডল ভেইলে অনেক পর্যটকের ভিড় জমে।

এবার চুড়ায় উঠার পালা।ঝর্ণার উচ্চতা প্রায় ১৯০ মিটার হলেও আমাদেরকে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে হাঁটতে হবে প্রায় এর দশগুন ( ২ মাইল), অর্ধেক পথ যাওয়ার পর সবাই বেশ হাঁপিয়ে উঠি। কিন্তু আশেপাশে যখন দেখি মহিলারা বাংলাদেশের উপজাতিদের মতো বাচ্চা কাঁধে নিয়ে দিব্যি চূড়ায় হেঁটে যাচ্ছে কিংবা লাঠিতে ভর করে চলা বয়স্ক যুগল মুখে ক্লান্তির ছাপ ও হাসি নিয়ে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে তখন ব্যাপারটা অনেকটা প্রেস্টিজ ইস্যুতে রূপ নিলো। সেইম অন আস বলে দৌড় শুরু আবার, বাকিরাও সমান্তরালে অনুসরণ করতে লাগলো। অবশেষে হাঁপাতে হাঁপাতে সেই চূড়া।

ল্যারচ মাউন্টেইনের ভূগর্ভস্থ পানি চূড়া বেয়ে গড়িয়ে পড়ার পূর্বে রূপ নিয়েছে আরেক পাথুরে নদীর। এর দৈঘ্য প্রায় ৫মাইল!! ড্রপ অফ পয়েন্ট থেকে খানিক নিচের দিকে তাকালাম, কলাম্বিয়া রিভার জর্জ,হাইওয়ে, নদীর দুপাশে রেলওয়ে, বনানী সবকিছু একসাথে ধরা দিলো। সাথে আরেকটি জিনিস ধরা দিলো অসীম শূন্যতা “হাইট ফোবিয়া”

চলবে.....................



ডিরেক্টরি



দুই ধাপের মধ্যবর্তী স্থানে ইটালিয়ান নির্মাণকৌশলে নির্মিত ব্রিজ থেকে



চূড়া থেকে নিচে



কলাম্বিয়া রিভার জর্জ



ড্রপ অফ পয়েন্ট



পাথুরে নদী

বিষয়: বিবিধ

১২৭৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

174884
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৯:২৯
দ্য স্লেভ লিখেছেন : বাহ দারুন দেখলাম। ইনশাআল্লাহ একদিন যাব। Happy আরও শোনার জন্যে বসে থাকলাম। চলতে থাকুক
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৯:৪১
128129
আইমান হামিদ লিখেছেন : আমার পালা শেষ এবার আপনার পালা
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৪:০০
128579
দ্য স্লেভ লিখেছেন : rehnuma bint anis apnar teacher?
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৫:৪৭
128584
আইমান হামিদ লিখেছেন : জি উনি আমার শিক্ষিকা
174958
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:৩২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অসংখ্য ধন্যবাদ প্রধানত ছবিগুলির জন্য।
আমেরিকায় জানি আদিবাসি যাদের কে ভুল করে রেড ইন্ডিয়ান বলা হয় তাদের জন্য সায়ত্বশাসিত অঞ্চল আছে। কোন আদিবাসি আমেরিকান গ্রাম বা শহরের গিয়ে থাকলে সেটা জানার বিশেষ ইচ্ছে রইল।
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৮
128211
আইমান হামিদ লিখেছেন : আমি যেই স্টেটে আছি সেখানে আদিবাসীদের বসবাস বর্তমানে নেই বললেই চলে সব এখন জাদুঘর। ভবিষ্যতে পেনসেলভেনিয়ার আমিশ কাউনটিতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে Happy
175326
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৬:০৯
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : সুন্দর জায়গা,ভালো লাগলো দেখে। ছবিগুলোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে Good Luck Rose
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৬:১৭
128585
আইমান হামিদ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File