“কুম্ভিলতা!!!!” সঞ্চালকবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ

লিখেছেন লিখেছেন আইমান হামিদ ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১১:০১:৫৩ সকাল



বাংলা অভিধানে কুম্ভিলতা বলে একটি শব্দ আছে। খুব একটা প্রচলিত নয়। বিশেষ করে যারা কুম্ভিলতায় আসক্ত তাদের ক্ষেত্রে শব্দটি সম্পর্কে খুব বেশী ধারণা থাকার কথা নয়।

এক কথায় প্রকাশ করোঃ

প্রশ্নঃ “অন্যের মৌলিক লিখা কোন প্রকার অনুমতি ছাড়া নিজের বলে চালিয়ে দেওয়া”

উত্তরঃ কুম্ভিলতা

ব্লগে টুকটাক লেখা লেখির সাথে জড়িত প্রায় দুই বছর যাবত। তবে শুরুটা আরও আগে। প্রায় ছয় বছর আগে। তখন বাংলাদেশে ব্লগিং এর ধারনা তেমন জনপ্রিয় ছিলো না। তাছাড়া প্রযুক্তিগত সুবিধাও ছিলো মানুষের নাগালের বাহিরে! তখন ছাত্র/ পেশাজীবীদের জন্য লেখালেখির অন্যতম মাধ্যম ছিলো দৈনিক পত্রিকা। সেই প্রক্রিয়াটি খুব একটা সুখকর ছিলো না। শুধু মাত্র বাছাইকৃত এবং পত্রিকার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট লিখা গুলো কেবল ছাপানো হতো।

বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্রুত প্রসারের ফলে আমাদেরকে আর প্রথাগত প্রচার মাধ্যমের (ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট) উপর তেমন নির্ভর করতে হয় না। বরং ইদানীং একটি ব্যাপার লক্ষণীয় যে প্রথাগত মিডিয়ার অধিকাংশ খবর সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্রিক!

ব্লগিং

বিশ্ববাসী ব্লগিং এর সাথে পরিচিত প্রায় এক দশকেরও বেশী সময় যাবত। তবে বাংলাদেশে ব্লগিং কালচার খুব বেশী পুরনো নয়। প্রযুক্তি সেবা হাতের নাগালে আসার সাথে সাথে জ্যামিতিক হারে পাল্লা দিয়ে বেড়ে উঠে বাংলা ব্লগ এবং ব্লগারের সংখ্যা। ব্যাপারটি আমাদের দেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক।

যেখানে গতানুগতিক প্রচার মাধ্যম জন্ডিসে আক্রান্ত সেখানে ব্লগিং বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোই একমাত্র অবলম্বন তথা রিক্ত চিত্তের মৌন ইচ্ছাগুলোকে মুক্তভাবে প্রকাশ করার উত্তম উপায়। সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর উপর নজর দিলেই এর প্রভাব সহজেই অনুমেয়।



বিগত দুই বছরের স্বল্পকালীন ব্লগিং অভিজ্ঞতায় দেখেছি আমাদের অনেক ব্লগার ভাই/বোনেরা কুম্ভিলতায় আক্রান্ত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কে ভাই আর কে বোন সেটা নির্ধারণ করাও মুশকিল হয়ে পরে কারন উনারা নিক/ ছদ্মনাম (pseudonym) ব্যাবহার করেন। তবে এই কুম্ভিলতার জন্য আমি সবাইকে দায়ী করছি না। এটা যেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তাই কপিরাইটের প্রয়োগ খুব বেশি একটা নেই বললেই চলে। তাছাড়া ভাষাতত্ত্বে “অ্যাক্যালচারেশন” বা বিপননতত্ত্বে “লেইট অ্যাডপটার” বলে কিছু ব্যাপার থাকে। তাই দ্রুত হাতের নাগালে আসায় অনেকে ব্লগিং এর কিছু কমন ম্যানার বা ইথিকস সম্পর্কে জ্ঞাত নন।

*** অনেককেই দেখি অন্যজনের পোষ্ট হুবহু কপিপেস্ট করে নিজে নামে চালিয়ে দেন! কোন প্রকার সৌজন্যতার বালাই নেই! বুঝলাম আপনার কাছে লিখাটি বেশ ভালো লেগেছে এবং জনস্বার্থে আপনি লিখাটি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান। কিন্তু লিখার সাথে লেখকের নাম উল্লেখ্য করতে সমস্যা কোথায়? আর তারও আগে আপনি ব্যাক্তিগত ভাবে লেখকের অনুমতি নেয়া উচিত।

*** ব্লগে দৃশ্যমান আরেকটি বিরক্তিকর ব্যাপার হচ্ছে, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের লিঙ্ক/কলাম কপিপেস্ট করে পোষ্ট আকারে দেয়া। অনেক সময় “ক্লিক দিস লিঙ্ক” শুধুমাত্র এভাবে পোষ্ট দেওয়া! এক কথায় যাকে ফ্লাডিং বলা যায়। ফলে যা হয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ মৌলিখ লিখা দ্রুতই চোখের আড়ালে চলে যায়। আর আপনি যদি কোনো বিশেষ খবর বা লিঙ্ক গুরুত্বপূর্ণ মনে করে ব্লগে শেয়ার করতে চান তাহলে তার উপর ছোট্ট করে ভূমিকা বা ফলোআপ লিখাতে পারেন। যাতে করে পাঠকের বুঝতে সুবিধা হয়।

অন্যদিকে ব্লগ হওয়া উচিৎ একজন ব্লগারের ব্যাক্তিগত এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা, উপলব্দি ও বিশ্লেষণের আলোকে গবেষণা মূলক লেখার সমাহার। পাশাপাশি সঠিক তথ্য ও তত্ত্বের সংমিশ্রন থাকা চাই। এক কথায় একজন ব্যাক্তির মৌলিক চিন্তার উন্মেষ ঘটানো।

*** অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ নিক ব্যাবহার করে অনেকেই পোষ্ট দেন বা ব্লগ লিখেন। তাদের কাজ বিভিন্ন আজেবাজে কমেন্ট করে লেখককে ইনভোক করা এবং আদর্শগত দ্বন্দ্বে লিপ্ত হওয়া। তাদেকে যথা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিৎ। আর সংশ্লিষ্ট ব্লগের মডারেটরদের প্রতি অনুরোধ উক্ত ব্যাপারগুলো আলোকে যেন যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়।

কুম্ভিলতায় আক্রান্তদের প্রতিঃ যেসব ভাই বোনেরা কুম্ভিলতায় আক্রান্ত তাদের আশাহত হবার কিছুই নেই। আপানারা নিশ্চই অনেকেই হার্ভার্ড ডিগ্রি ধারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত কলামিস্ট কাম সাংবাদিক ফরিদ জাকারিয়ার নাম শুনেছেন। তিনি বিশ্ব বিখ্যাত মিডিয়া জায়ান্ট সিএনএন এবং টাইম ম্যাগাজিনে এ কর্মরত। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে তিনি নিজেও কুম্ভিলতায় আক্রান্ত। অর্থাৎ আপনাদের মতো অন্যের লিখা অনুমতি ছাড়া নিজের বলে চালিয়ে দিয়েছেন। তবে তিনি প্রকাশ্যে তার ভুল স্বীকার করেছেন। সেটাই হচ্ছে আসল কথা।



তাছাড়া পৃথিবীর অনেক বড় বড় কবি সাহিত্যিকও ভিন্ন ভাষা থেকে লিখা আংশিক কপি বা তর্জমা করে নিজের নামে চালিয়েছেন। কালের বিবর্তনে এসব ব্যাপার গোপন থাকে না। তাই আধুনিক যুগে এসে আমরা কিছুটা ভদ্র ভাবে বলি আমাদের অমুক কবি বিলেত কিংবা পারস্যের তমুক কবি দ্বারা অনুপ্রাণিত বা প্রভাবিত হয়েছেন! অনুকরণ আর অনুসরণ দুটো কিন্তু এক জিনিস নয়। পাশাপাশি এ কথাও সত্য যে “স্কুল পালিয়ে নজরুল হওয়া যায় না”

সঞ্চালকদের প্রতিঃ আশা করছি আপনারা উক্ত বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন। সাধারণত এই ধরণের পরিস্থিতে ব্লগাররা বেশ আহত হন এবং ব্লগিং এর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। আর বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে সৃষ্টিশীল এবং মৌলিক ব্লগের বিকল্প নেই।

ফুট নোটঃ লিখার সাথে আংশিক বা পুরোপরি একমত হলে মুক্ত হস্তে পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন।

বিষয়: বিবিধ

১৭৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File