বাংলাদেশঃ ইসলাম - সমকালীন ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন আইমান হামিদ ০৬ মে, ২০১৩, ০৮:৩৪:১৬ সকাল
কয়েক সাপ্তাহ আগের কথা, বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাত হাজার মাইল দূরে জাতির তথাকথিত মেধাবী মুখ গুলো সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ধর্মীয় দীক্ষার নামে একত্রিত হয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে ওই ঘরোয়া মজলিশে আমার মতো অধমের অনাকাঙ্ক্ষিত অনুপ্রবেশ ঘটে। সীমিত বুঝ নিয়ে, ধর্ম নিয়ে রাঘব বোয়ালদের আদিখ্যেতা দেখছিলাম। আলোচনার বিষয়বস্তু যখন “জাস্টিস ইন ইসলাম” তখন মুখ ফসকে উপমহাদেশীয় ধাচের নারীবাদীদের ইসলাম কে নিয়ে বিদ্বেষ ছড়ানো প্রোপ্যাগান্ডা ও মদিনা সনদনিয়ে সরকারের ডিভাইন তামাশার সমালোচনা করেছিলাম। তখন উপস্থিত অনেকের মধ্যে বয়সে অগ্রজ তিন-চারজন একদা সোনার বাংলার তথাকথিত মেধাবীমুখ গুলো চিরচারিত লিবাস ছেড়ে অনেকটা আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তাদের একটাই কথা ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের মামলা এই ভিন দেশে কেনো!
অথচ ওরাই মাত্র কয়েকদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ডরমিটরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন শহরের ডাউনটাওনে জড়ো হয়ে শাহাবাগীদের পক্ষে প্রচার-প্রচারনা চালিয়েছিলো? আমি লিঙ্কন সেন্টার বা ওয়াশিংটন স্কয়ারের নাম শুনেছি তবে শাহাবাগ নামে অ্যামেরিকায় কোনো স্কয়ার আছে বলে আমার জানা নাই। শুধু তাই নয় ভাষা দিবস ও বিজয় দিবসেও থাকে তাদের বিশাল আয়োজন। কিন্তু আমি যতদূর জানি আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসতো ৪ ঠা জুলাই! এবং সর্বশেষ জাকজমক ভাবে পহেলা বৈশাখ উৎযাপন। থার্টি ফাস্ট নাইট মেইক সেন্স কিন্তু পহেলা বৈশাখ এইটা আবার কি জিনিস!!!
আমি এইসব উৎসব উৎযাপনের বিপক্ষে নয়। এতো কিছুর বলার মোদ্দা কথা হচ্ছে তথাকথিত সুশীল মুক্তমনাদের দ্বিমুখী কর্মকাণ্ড তুলে ধরা যা আমার মতো অকালকুষ্মাণ্ডদের মাঝে মাঝে ব্যাথিত ও বিভ্রান্ত করে।
ইসলাম কি শুধু আকিকা করা, বিয়ের মন্ত্র পড়ানো বা মৃত দেহ সৎকারের জন্য এসেছে। আমার মানার অক্ষমতা থাকতে পারে তাই বলে আমি যা পালন করি তা সঠিক বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা এক প্রকার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের শালিম যা ঠিক ইসলামের মূল এসেন্সের বিপরীত।
আর তথাকথিত স্যাকুলারিজম বা উত্তোরাধুনিকতাবাদকে সুশীলদের এরূপে আলিঙ্গন মোটেও প্রণয় প্রসূত নয় বরং এক প্রকার সহজলভ্য ও ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস তাদেরকে এর পেছনে ছুটতে বেশ মোহিত ও প্রভাবিত করে।
তারা কথায় কথায় ধর্মীয় বিশ্বাসকে জাতিগত পরিচয়ের মুখোমুখি দাড় করায়! বলে ভাই আগে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দেন, আপনি বাঙ্গালী না মুসলিম??? অনেকটা হাস্যকর প্রশ্ন বটে মানুষের জন্ম, বর্ণগোত্র এসবের উপর তার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই তবে বিশ্বাসের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন নিয়ন্ত্রণযোগ্য। ইতিহাসের অতিরঞ্জনে বহুবার উঠে এসেছে জাতীয়তাবাদ নিয়ে কামড়াকামড়ি চূড়ান্ত ভাবে পুরো জাতির সামষ্টিক দৈনতা ও হীনমন্যতাকে উন্মোচন করে। অনেক ক্ষেত্রে সংশয়বাদীরা জাতীয়তাবাদের ছায়ায় নিজেদের অতৃপ্ত আত্নার প্রশান্তি খোঁজে আর তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা ও লালন-পালনের ঈমানি দ্বায়িত্ব পালন করেন তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের ট্যাবলেট গেলানো শাসকগোষ্ঠী। তাই মুক্তিযুদ্ধোত্তর সময় থেকে শুরু করে আজ অব্দি দেশে গজিয়ে উঠেছে উৎপাদন বিমুখ এক শ্রেণীর শহুরে বুর্জুয়া। তাদের উত্থান ক্ষমতাবানদের প্রত্যক্ষ মদদও স্বার্থেই হয়েছে। এদেরই একটি বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের শিক্ষাব্যাবস্থা ও প্রচারমাধ্যম!
বর্তমান যুব সমাজের মধ্যে ধর্মীয় অনুশাসন ও অনুশীলন নিয়ে একপ্রকার হীনমন্যতা ও অস্থিরতা কাজ করে।যেহেতু প্রচারমাধ্যম ও শিক্ষাব্যাবস্থা উভয় প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ শহুরে বুর্জুয়া শ্রেণী দ্বারা তাই তারা ধর্মচর্চা কে দাড় করিয়েছে আধুনিকতা ও বিজ্ঞানচর্চার বিপরীতে!! তাদরকে মোটামুটি সফলই বলা চলে কারন তার যুবসমাজকে এইটা বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে ধর্ম ও প্রগতি উভয় ব্যাস্তানুপাতে চলে।
মাস খানেক আগে সমবয়সী এক যুবকের সাথে পারিবারিক মজলিসে কুশল বিনিময় করছিলাম। হিনমন্যতার সাক্ষাৎ চিত্র যাকে বলে আর কি। প্রবাসে বাঙ্গালীদের মৌলিক সমস্যার অন্যতম দেশের প্রশাসনিক ব্যাবস্থা নিয়ে তুলোধুনা করা! যাহোক কিছুক্ষন পরসে অনেকটা গর্ব ও হতাশা উভয়ের সংমিশ্রনে বলছিলো ইউনিতে তার সহপাঠী ভিনদেশী বালিকা বন্ধু (এর চাইতে ভাল তর্জমা জানা নেই) তাকে জিজ্ঞাসা করেছে "তোমরা মুসলমানরা এতো আগ্রাসী বা সেনসেটিভ কেনো? অন্যান্য ধর্মের মানুষরাতো এমন হয় না!"
সে নাকি প্রশ্নটি শোনার পর বেশ বিব্রত বোধ করেছিলো। প্রাথমিক পরিচয় আর ভিন্ন সমাজ ব্যাবস্থা তাই বেশী কিছু বলার সুযোগ ছিলো না। আরেহ!! দ্যা টার্ম “গার্ল ফ্রেন্ড” ইটশেল্ফ ইজ করাপ্টেট, লেট অ্যালোন আদার ডিস্কাশন!!! কিন্তু না আপনি তাকে এভাবে আপ্রোচ করলে সে আপনার কথা শুনবে না। কারন আপনার বিপরীতে মাওলানারা তাদের আমলনামা নিয়ে তৈরি আছেন। গতানুগতিক ভাবে তারা বলবে প্রেম করার সময় প্রেম করবে, আকাশ দেখার সময় আকাশ দেখবা, বাকিটা ব্যক্ত বলিয়া গণ্য হইলো!
জবাবে আমি তাকে বললাম একজন মুসলমান হিসেবে তার ভুল ভাঙ্গানোর দ্বায়িত্ব আপনার ছিলো। আর আপনি জানেন তো নিদিষ্ট শর্ত সাপেক্ষ্যে আপনি একজন ইহুদীবা খৃস্টান নারীকে বিয়ে করতে পারেন! আর আপনি যদি পশ্চিমা জীবনরীতিতে এতোটাই আসক্ত বা অনুরক্ত হন তবে তাদের মতো পেশাগত অবস্থান ও সামাজিক মর্যাদা লাভ করে করবেন তখন জিনিসটা কিছুটা যুক্তিযুক্ত মনে হবে।
বছরাধিকাল যাবত বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সর্বোপরি সমাজব্যবস্থায় যেই অস্থিরতা ও অরাজগতা চলছে তার নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে কমবেশী সবাই জ্ঞাত। কিছু নিরীহ নিষ্পাপ মানুষ প্রান হারাবে। হয়তো এক সময় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আর জনবহুল দরিদ্র দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা পুরোপুরি নির্মূলযোগ্য নয়। এই বাস্তবতাও আমাদেরকে মাথায় রাখাতে হবে।
তবে আমার কাছে যে ব্যাপারটি সবচাইতে ভয়াবহ মনে হয় তা হচ্ছে, ক্রমাগত যুব সমাজের মগজ ধোলাই ও ইসলাম বিদ্বেষী করে তোলা। যার আফটার ম্যাথ জাতিকে বহুদিন ভোগাবে।
পরিশেষে ইসলাম কে লিবারেল হিউম্যানিজম বা ফেমিনিজম তত্বে ফেলে বিচারকরলে অনেক কিছুটা বেখাপ্পা ও অযৌক্তিক মনে হবে। ইসলামকে বিচার করতে স্ট্রাকচারালিজম(structuralism)তত্বে বিচার করতে হবে। আর ধর্মীয় জ্ঞান না থাকলে এই ব্যাপারে অযথা সমালোচনা না করে নীরব থাকাই উত্তম ও যুক্তিযুক্ত।
বিষয়: বিবিধ
১৮৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন