"মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে...."
লিখেছেন লিখেছেন আশা জাগানিয়া ১০ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:১৭:২৮ দুপুর
যাক অবশেষে ফোন ধরলি!
আসসালামুআলাইকুম। কেমন আছিস?
ওয়ালাইকুম আসসালাম। জ্বী জনাবা আমি তো আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। কিন্তু তোকে আমার কি করতে ইচ্ছে করছে জানিস?
মুচকি হাসলো হৃদি তুহিনের কথা শুনে! কি করতে ইচ্ছে করছে শুনি আমার প্রাণ প্রিয় সখীর?
হাসবি না বুঝছিস! কষে একটা চড় দিতাম তুই সামনে থাকলে। মানুষকে টেনশনে রাখতে তো মজা তোর!ছোটবেলার বন্ধু না হলে দেখতি কি হত। হুহ! কই ছিলি এই কয়দিন? ফোনও ধরিস না, শুধু একটা ম্যাসেজ দিয়ে উধাও যে আমি পরে কথা বলছি।
কি আর হবে!
কিছু হয়নি, না?
শোন আসলে কিছু কারণে মন খারাপ ছিল তাই সময় নিচ্ছিলাম নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার। আর দেখ মন খারাপের সময় আমার মনেহয় আগে নিজেকে ঠিক হতে দেয়া উচিত। নয়তো সংক্রামক ব্যাধির মত তোকেও ধরতো, বুঝলি?
ও...ভাল। কিন্তু এটাও কি জানিস যে এভাবে আলাদা দলছাড়া হয়ে গেলে সেটাও ক্ষতিকর হতে পারে।
জ্বী আপুমণি জানি কিন্তু ব্যাপারটা এত বড় ছিল না যে সামলাতে পারতাম না তাই কিছু বলিনি।
হুমম...তা কি করলি?
বেশি কিছু করতে হয়নি অবশ্য। একটা ব্যাপার কি জানিস? ধর অনেক সময় ছোট খাট ব্যাপার গুলো জমে জমে কেমন মনটা খারাপ হয়। তখন যদি খাতা-কলম নিয়ে লিখে ফেলিস তোর ভাবনা গুলো মন অনেকটা হালকা হয়ে যায়।
এটা অবশ্য ট্রাই করিনি। তুই কোথায় পেলি এই আইডিয়াটা?
আগেই জানতাম কিন্তু পাত্তা দেইনি। কিন্তু ঐদিন প্রফেসর বলছিলেন যে আমরা আমাদের ভাবনাগুলোকে লিখে রাখলে তা রিলিজ করতে হেল্প করবে। অবশ্য গুরুতর ক্ষেত্রে তো মেডিকাল হেল্প নিতেই হয়। কিন্তু ধর নিত্যদিনের ব্যাপারটায় আমরা এটা করতে পারি। তারপর চাইলে তুই সেটা ছিঁড়েও ফেলতে পারিস।
ভালো বুদ্ধি।
হুমম...আর একটা ব্যাপার হচ্ছে আমরা যদি আমাদের চিন্তাগুলোতে হারিয়ে না যেয়ে সেগুলোকে নীরব দর্শক হিসেবে মনিটর করি সেটাও অনেকটা হেল্প করে। অনেকটা টিভি দেখার মত। টিভির প্রোগ্রাম আমরা দেখি কিন্তু জানি সেটা আমি নই। অনেক সময় চিন্তাতে এত হারিয়ে যাই মনেহয় চিন্তাগুলো আমি। কিন্তু আমি আমার চিন্তা নই এভাবে যখন দেখবো এবং এভাবে আস্তে আস্তে কনশাস্(conscious) লেভেলটা বাড়তে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
সেটাই। আসলে আমাদের সব চিন্তা তো সত্যি না।
হুমম...আমরা মনে করি সিচুয়েশন থেকে আমাদের ফিলিংস গুলো আসে। কিন্তু প্রফ যখন বললেন যে একশো ভাগ আসে আমাদের চিন্তা থেকে, সিচুয়েশন থেকে আছে জিরো পার্সেন্ট, তখন মানতে পারিনি সেভাবে। পুরো ব্যাপারটা এখনো হজম হচ্ছে না। যদিও বুঝতে পারছি উনার কথা ঠিক আছে। তাই ব্যাপারটা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। হাহাহা...
আলহামদুলিল্লাহ্, মিষ্টি মধুর হাসি শুনলাম অবশেষে।
সরি রে রাগ করিস না।
ওকে যা মাফ করলাম। কিন্তু নেক্সড টাইম করলে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা হবে বলে দিলাম।
ওকে দিস যা!
তোর কথাগুলো শুনে একটা উদাহরণ মনে পড়লো। ধর মানুষ মাত্রই দুনিয়ার জিনিস যেমন বাড়ি, গাড়ি, অর্থ ইত্যাদি আমাদের কত প্রিয়। কিন্তু ধর একটা মানুষ আগুনে পুড়ছে তখন তাকে এসব কিছু দিতে চাইলে তার কাছে কোন মূল্য থাকবে না এসবের। তার তখন চাওয়া থাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া। তেমনি দেখ দুনিয়ার কিছু কিছু মানুষের পরীক্ষা সেই আগুনে পড়া মানুষের মত। তার কাছে জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য যা না হলেই নয় তা পেতেই তার স্ট্রাগল। আর আমরা অনেকে সেই দলে পরি যাদের এনজয় করার মত অনেক নিয়ামাহ আছে। যদি কখনো মন খারাপ হয় তাহলে এই প্রশ্নটাও নিজেকে করে দেখতে পারি, আমার অবস্থা কি সেই আগুনে পড়া মানুষের মত নাকি দ্বিতীয় দলের লোকদের মত যাদের হয়ত অনেক ব্লেসিংয়ের কোন একটা নেই? তাই না!
ঠিক তাই! সেই হাদীস যেখানে রাসূল (সঃ) বলেছেন-“ যারা তোমার উপরে অবস্থান করছে তাদের দিকে তাকিয়ো না, তাদের দিকে তাকাও যারা তোমার নীচে রয়েছে।” কেননা কেউ যদি তারচেয়ে হতভাগ্যদের দিকে তাকায় তখন সে তার নিজের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ দেখতে পাবে এবং কৃতজ্ঞ হবে....কত সুন্দর করে বলে দেয়া আছে।
হু...সবচেয়ে যেটা থাকতে হবে তা হল কুরআন এবং সুন্নাহর অনুসরণ। তাহলে সত্যিকার সুখ পাওয়া যাবে যদি ম্যাটারিয়াল জিনিসের কমতি থেকেও থাকে। আর কখনো দুঃখ-কষ্ট এসে গেলেও তা ধৈর্য্য ধরতে সাহায্য করবে।
হুমম...
চিন্তা কর বাস্তব অভিজ্ঞতা বা আমাদের চারপাশে তাকালেই বোঝা যায় তার কত দরকার! আমরা মানুষরা আসলে কত বোকা ভাবলে। কার তৈরি স্টান্ডার্ড নেয়া উচিত আমাদের! যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাঁর নাকি তাঁর সৃষ্টি মানুষের যারা প্রকৃতগত ভাবেই দুর্বল তাদের তৈরি স্টান্ডার্ড? আর মানুষের স্টান্ডার্ড তো পরিবর্তনশীল এইজন্যই যে তা পারফেক্ট না এবং হবেও না। তাই আপডেট হতে থাকে। হিহিহি...মানুষকে যদি বলিস গাড়ির ইঞ্জিন তেলে না চালিয়ে পানি দিয়ে চালাতে। তখন কিন্তু সেটা সে করবে না, কারণ সে ভালোই বুঝে যে গাড়িটি যেভাবে তৈরি করা হয়েছে এবং যেটার যে কাজ সেভাবেই করতে হবে, নয়তো তা নষ্ট হবে!অথচ জীবনের এই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারেই আমরা কত উদাসীন!
হুমম...আসলেই।
কিছুক্ষণ নীরবতার পর হৃদি বলল, যাযাকাল্লাহু খায়ের দোস্ত। মনটা আরো একটু হালকা লাগছে তোর সাথে কথা বলে।
আলহামদুলিল্লাহ্, আমারো ভাল লাগলো তোর কথা শুনে। তাও আবার এতদিন পর! কপট রাগের ভান দেখিয়ে বলল তুহিন।
মুচকি হাসলো হৃদি।
বন্ধুর মনটা আর একটু ভালো করতে বলল তুহিন, আচ্ছা তোর মনে পড়ে গত বছর যখন অল্পের জন্য ম্যাথে খারাপ করলাম তখন তুই আমায় কি বলেছিলি?
কি বলেছিলাম? কত কথাই ত বলি তোকে। মনে করার চেষ্ঠা করলো কিছুক্ষন। মেঘ দেখে তুই করিসনে ভয় আড়ালেই তার সূর্য হাসে?
হু...তাই বলছি মেঘ দেখে তুই করিসনে ভয় আড়ালেই তার সূর্য হাসে, ইনশাআল্লাহ।
হুম...ঠিক তাই।
শোন এখন রাখছি। রাতে আবার কথা হবে ইনশাআল্লাহ। ভালো থাকিস।
ওকে রে, আল্লাহ হাফেজ।
বিষয়: বিবিধ
৪৯৭৮ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি মেঘ দেখে ভয় পাইনা। বজ্রপাতেবজ্রপাতেও ভয় পাইনা। আলহামদুলিল্লাহ
১০ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:৫৯
নইলে জুমুআহ'র নামাজ ....
আমার ভীষণ রকম ভালো লাগলো বুবুউন।
এমন লেখা কিন্তু আরও চাই হুম। না হয় আমাদের আরু আপুনি তো আছে
আড়ালে তার সূর্য হাসে
মৌনতার আকাশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভেলা
দেখো চেয়ে ঐ স্বপ্নরা ভাসে.....
আসলেই আমাদের মনে অনুভূতি রং ছড়ায় অভিজ্ঞতার রংধনু থেকে। যেহেতু না অভিজ্ঞতাকে মুছে ফেলা সম্ভব না, না সম্ভব চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করা। সেহেতু চিন্তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করার একটাই উপায় বা পথ! আর সেটি হচ্ছে শরীয়ত।
মাশা আল্লাহ! চমৎকার লিখেছো সোনামণি।
আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালা তোমার লেখাতে আরো বারাকাহ দিন। আমীন।
মাশা আল্লাহ! চমৎকার শিক্ষণীয় গল্প।
আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালা তোমার লেখাতে আরো বারাকাহ দিন। আমীন।
আচ্ছা কয়েকদিন পর পর উধাও হও কেন তুমি?!
কেমন আছো?
তোমার কি অবস্থা?
অনেক অনেক শুকরিয়া পড়ার জন্য।
অনেক শুভেচছা আপু
কেমন আছো?
মন্তব্য করতে লগইন করুন