পরিণতি - পর্ব ৫
লিখেছেন লিখেছেন রেহনুমা বিনত আনিস ১১ জানুয়ারি, ২০১৫, ১০:৩৭:০৭ সকাল
ঢাকায় ফিরে আগের মতই সংসার চলতে থাকে ওদের। গ্রামে যাবার ঘটনা নিয়ে কেউ কথা তোলেনা। শান্তা থাকে ওর নিজের জগত নিয়ে, আর শোভন পড়ে থাকে ওর মোবাইল নিয়ে। একদিন শান্তার মাথায় আসে, শোভনের তো কোন বন্ধু নেই, আত্মীয়স্বজন ওকে ঘৃণা করে, তাহলে সে সারাদিন মোবাইলে কি করে? একদিন কৌতুহলী হয়ে শোভন বাথরুমে থাকার সুযোগে কল হিস্ট্রি চেক করে শান্তা। শুধু একটা কল দেখাচ্ছে, আর পুরোটা ফাঁকা। অথচ শোভন সকাল থেকে অন্তত দশটা কল করেছে। ঐ নাম্বারে কল দিয়ে শুনতে পায় একটা অপরিচিত নারীকন্ঠ, মনের মাধুরী মিশিয়ে বলছে, ‘কি? আমাকে ছাড়া থাকা যায়না, না?’ হুঙ্কার শুনে পেছন ফিরে দেখে শোভনের উদ্যত হাত, ওর আর কিছু মনে নেই।
যখন জ্ঞান ফেরে তখন রাত। শান্তা নিজেকে আবিষ্কার করে ড্রয়িং রুমের ফ্লোরে, যেখানে সে পড়েছিলো সেখানেই। মায়া এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে ড্রয়িং রুমের সোফায়, চেহারাই বলছে ক্ষুধায় কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। বেডরুমে শোভন পুরো বিছানা জুড়ে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমোচ্ছে, নাক ডাকছে অল্প অল্প। শান্তার আজ রাতে ইউনিভার্সিটির বান্ধবীদের সাথে একটা ছোটখাটো পুণর্মিলনী হবার কথা ছিলো, স্লিপ ওভারের মত। সে কিছুক্ষণ সোফায় বসে ভাবে। তারপর বারান্দায় গিয়ে সেলফোন থেকে বান্ধবী আলিয়াকে কল দেয়, ‘আলিয়া, নাতাশা আনিকা ওরা এসে পৌঁছেছে? আমি পথে দোস্ত, জ্যামে আটকে আছি। ট্রাফিকের শব্দ শুনতে পাচ্ছিস না? কতক্ষণে পৌঁছাতে পারব জানিনা। কিন্তু পথে যেহেতু, কোন না কোন এক সময় তো পৌছবই। আজ সারারাত একটুও ঘুমাবো না, শুধু গল্প করব, এই আমি কথা দিলাম। খুব ক্ষিদে পেয়েছে। তুই টেবিলে খাবার দে’।
বারান্দা থেকে রান্নাঘর হয়ে বেডরুমে যায় শান্তা। কিছুক্ষণ পর মুখহাত ধুয়ে, জামাকাপড় বদলে, ব্যাগ আর ঘুমন্ত মায়াকে কোলে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় দরজাটা খোলা রেখে।
সারারাত গল্পগুজবে কাটিয়ে দুপুর বারোটার দিকে বাড়ী ফিরে শান্তা দেখে ঘরভর্তি পুলিশ। ‘কি ব্যাপার? আপনারা আমার ঘরে কি করছেন?’ পুলিশ অফিসার জিজ্ঞেস করেন সে কোথায় ছিলো, কোথা থেকে আসছে। শান্তা আলিয়ার নাম্বার দেয়। পুলিশ অফিসার আলিয়াকে ফোন করে নিশ্চিত হোন। তারপর বলেন, ‘সরি ম্যাডাম, কিছু মনে করবেন না। আমরা আপনাকে সন্দেহ করছিনা, কিন্তু এটা রুটিন চেক ছিলো। আই অ্যাম অ্যাফ্রেড আই হ্যাভ স্যাড নিউজ ফর ইউ। আমরা অনুমান করছি আপনারা যাবার পর আপনার হাজব্যান্ড দরজা খোলা রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। বাসায় সম্ভবত ডাকাত পড়েছিল। হয়ত আপনার হাজব্যান্ড ঘুম থেকে জেগে যান, ওরা ওনাকে খুন করে সম্ভবত ভয়ে পালিয়ে যায়। ঘরের জিনিসপত্র তেমন কিছুই নিতে পারেনি। আই অ্যাম সরি ফর ইয়োর লস’।
শান্তা কোন কথা বলতে পারেনা। মায়াকে শক্ত করে চেপে ধরে সোফায় বসে পড়ে। একজন মহিলা পুলিশ অফিসার এসে ওকে বাতাস করতে থাকে। দুই চোখে অশ্রুর বান ডাকে শান্তার। সে মনে মনে বলে, ‘আই অ্যাম নট’।
(সমাপ্ত)
বিষয়: বিবিধ
৩১৬৬ বার পঠিত, ৩৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সব কিছু যেনেও যদি এই লোকের সাথে সংসার করে তবে দোষ টা কার???
কেউ কেউ যখন বুঝতে পারে ভুল হয়ে গিয়েছে তখন এর প্রতিকার করতে গিয়ে আরো বড় ভুলের মধ্যে পতিত হয়। সেটাই ঘটেছে শান্তার ক্ষেত্রে।
শিক্ষা, পাপের পরিণতি ভাল হয়না, দুই পক্ষের কারো জন্যই। :
গল্পটার আগাগোড়া পুরোটাই অসাধারন মজার হয়েছে।
পুরোটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ
হুমম, ‘আই অ্যাম নট’......।
এদের এরকমই হওয়া উচিত!!! আগের পর্ব গুলি পড়ে বেশ কস্ট হচ্ছিল, এ পর্বে এসে তার কিছুটা কমল.....এট লিস্ট একটা প্রতারকের হাত থেকে তো মুক্তি পাওয়া গেলো...
অন্য নায়ক ধরবে। সময়ের ব্যাপার মাএ।
দেখি নায়িকাকে কোন পথে নেন।
তবে শান্তার যে শিক্ষা হয়েছে আশা করা যায় সে ঝর্ণার মত ভাল হবার চেষ্টা করবে।
পুরোটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই
"শান্তার আজ রাতে ইউনিভার্সিটির বান্ধবীদের সাথে একটা ছোটখাটো পুণর্মিলনী হবার কথা ছিলো, স্লিপ ওভারের মত। "
এই লাইনটি গল্পের প্রয়োজনে নয়, বরং গল্প শেষ করার প্রয়োজনে এসেছে (একটু তাড়াহুড়া মনে হয়েছে আমার কাছে)।
আপাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।।
আপু কি হারিয়ে গেলেন???
দোয়া করি, চাই-ও
ঈদ মোবারক!!
প্লিজ, কারো দিকে আর তাকিয়ে থাকা নয়, কেউ আসুক অথবা নাই আসুক, আপনি আসছেন, লিখছেন, ভালো কিছু উপহার দেয়ার চেষ্টা করছেন, এটাই নিশ্চিত করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন