পরিণতি - পর্ব ২

লিখেছেন লিখেছেন রেহনুমা বিনত আনিস ০৮ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৭:৩৩:২৯ সকাল

আনন্দে উচ্ছ্বাসে দিন কাটে শান্তার। শোভন কোনদিন ফোন করে বলে, ‘আজ মাকে তোমার কথা একটু করে বললাম’; কোনদিন বলে, ‘আজ মা তোমার নাম জিজ্ঞেস করলেন’; আরেকদিন বলে, ‘মা তোমার ছবি দেখতে চেয়েছেন’।

একদিন ছুটির দিনে বিকেলে শুয়েবসে মনের ক্যানভাসে কল্পনার রংতুলিতে নানান ছবি আঁকছিলো শান্তা। কোন বেরসিক ফোন করল এ’সময়? অপরিচিত নাম্বার। অলসভাবে ‘হ্যালো’ বলে শান্তা। ওপাশ থেকে ভেসে আসে, ‘হ্যালো, আমি ঝর্ণা’।

শান্তা ঝর্ণা নামের কাউকে চেনেনা, কিন্তু ওপাশের গলাটা শুনে পরিচিত মনে হয়। ‘শান্তা, আমি তোমার পায়ে পড়ি, আমার একটা ছোট্ট সন্তান আছে, তুমি আমার সংসারটা ভেঙ্গে দিয়োনা’, কান্নার গমকে কথা বন্ধ হয়ে যায় মেয়েটার।

হঠাৎ বিবিধ নারীকন্ঠে চিৎকার শোনা যায়, ‘অ্যাই, ওকে ছেড়ে দে’, ‘খবরদার বললাম ওর গায়ে হাত তুলবি না’, ‘মাগো!’, ধুপধাপ কিলঘুষি, নারীদের সম্মিলিত চিৎকার আর কান্না ... লাইনটা কেটে যায়।

শান্তার মন থেকে সমস্ত সুখকল্পনা হাওয়ায় উড়ে যায়। সে নিশ্চিত এই মেয়েটাই ওকে শোভনের নাম্বার থেকে ফোন করে বলেছিল, ‘আমি শোভনের স্ত্রী। আমার একটা ছোট্ট সন্তান আছে ...’, সেই গলা ওর ভুল হতেই পারেনা। আজ আবার বলল, ‘শান্তা, আমি তোমার পায়ে পড়ি, আমার একটা ছোট্ট সন্তান আছে, তুমি আমার সংসারটা ভেঙ্গে দিয়োনা’। কে এই মেয়ে? কেন সে বার বার ওকে বিরক্ত করছে?

সন্ধ্যায় শোভন ফোন করল, মা রাজী হয়েছেন, আগামী মাসের এক তারিখে বিয়ে, ঢাকায়। বাঁধভাঙ্গা আনন্দের মাঝেও প্রশ্নটা ওর মনের ভেতর খচ খচ করতে থাকে। এক পর্যায়ে সে বলেই ফেলে, ‘শোভন, তুমি কি ঝর্ণা নামে কাউকে চেন?’

‘না তো! কেন?’

‘এই নামে একটা মেয়ে আজ আমাকে ফোন করে বলল আমি ওর সংসার ভেঙ্গে দিচ্ছি। আমি নিশ্চিত এই মেয়েটাই আমাকে বলেছিল সে তোমার স্ত্রী’।

‘শোন, তোমার হবু স্বামী যে মেয়েদের কাছে পাত্র হিসেবে কত পপুলার তারই প্রমাণ এটা। হবে কোন মেয়ে, আমার অজান্তে আমার প্রতি আকৃষ্ট। এখন তোমার সাথে বিয়ের কথা শুনে হিংসায় এমন করছে। মাথা থেকে এসব বাজে চিন্তা ঝেড়ে ফেল তো! আমাদের এই আনন্দের মূহূর্তটা আমি কোনভাবেই নষ্ট করতে চাইনা’।

এক তারিখে ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান করে শোভন আর শান্তার বিয়ে হয়ে যায়। শান্তার পক্ষ থেকে আসে কেবল ওর বাবা আর সবার বড় সৎভাইটি। শোভনের পক্ষ থেকে শুধু ওর মা। শান্তা কিছু বন্ধুবান্ধবকে দাওয়াত দেয়। শোভনকেও বলে ওর সহকর্মী, বন্ধুদের বলতে। কিন্তু শোভন ওর খরচ বাড়াতে চায়না বলে কাউকে বলেনি। শোভনের মাকে দেখে বেশ অবাক হয় শান্তা। ছোটখাটো, চুপচাপ এই মানুষটাকে দেখে সে কিছুতেই শোভনের বর্ণনার সাথে মেলাতে পারেনা। শোভন ওনাকে ভয় পাবে কি, ওনাকেই দেখে মনে হয় ছেলের ভয়ে তটস্থ! হাঁটতে চলতে ওনার প্রচন্ড কষ্ট হয়। বিয়ের পরদিনই উনি গোঁ ধরলেন বাড়ী চলে যাবেন। ছেলে বৌয়ের বাসায় উঠেছে সেটা তার ব্যাপার, তিনি কোনভাবেই পরের মেয়ের ঘাড়ের ওপর উঠে বসতে পারবেন না। অনেক অনুনয় বিনয় করে তাঁকে বোঝানো হোল। কিন্তু তিনি তাঁর স্বভাবসুলভ অস্পষ্ট উচ্চারণে ঘ্যানর ঘ্যানর করতে রইলেন। শোভন বলল, ‘আমি যাই, মাকে বাসে তুলে দিয়ে আসি’।

শান্তা কিছুতেই রাজী না। সে বলল, ‘চল, আমরা দু’জন গিয়ে তাঁকে বাড়ী পৌঁছে দিয়ে আসি। এই সুযোগে তোমাদের বাড়ীটাও আমার দেখা হয়ে যাবে’।

শোভন আপত্তি জানায়, ‘কি বল? নতুন বৌ কি এভাবে শ্বশুরবাড়ী যেতে পারে নাকি? তোমাকে স্বাগত জানাবে কে? অনুষ্ঠান করবে কে? মা তো এখানে!’

শান্তা কিছুটা দমে গিয়ে বলে, ‘ঠিক আছে, তাহলে তুমি গিয়ে মাকে বাড়ীতে দিয়ে এসো’।

এর দু’বছর পর। শান্তার একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে। শোভন বাচ্চা নিতে কিছুতেই রাজী ছিলোনা। কিন্তু শান্তা জানে বয়স তো আর বসে থাকবেনা, তাই সে একাই সিদ্ধান্ত নেয়। এখন সে মেয়ে মায়াকে নিয়ে প্রচন্ড খুশি। কিন্তু শোভনের যে কি হোল কে জানে! সে বলল, ঘরখরচ সে একা কাজ করে চালাতে পারবেনা। তাই তিনমাস পর ছোট্ট পুতুলটাকে পাড়ার এক মহিলার হাতে তুলে দিয়ে আবার কাজে যাওয়া শুরু করে শান্তা। ঘরের সব খরচ সে একাই চালায়। শোভনের টাকা মাকে পাঠিয়ে দিতে বলে। শোভন প্রথমে আমতা আমতা করলেও পরে রাজী হয়ে যায়।

একদিন শোভন বাথরুমে ঢুকেছে। ওর ফোনে একটা কল আসতে দেখে ফোন ধরে শান্তা। ওপাশ থেকে এক মহিলা খুব ব্যাস্তভাবে বলে, ‘মো ... শোভন কই? সে নাই?’

শান্তা বলে, ‘ও তো বাথরুমে। আপনি কে বলছেন? আপনার মেসেজটা বলে দিন, ও বেরোলে আমি কলব্যাক করতে বলব’।

‘আমি মুক্তা, শোভনের বড়বোন। ওকে বল মা খুব অসুস্থ। এখানে আর চিকিৎসা হবেনা, ঢাকা নিতে হবে। খরচ আমি দেব। সে যেন শীঘ্র ব্যাবস্থা করে’।

থ হয়ে চেয়ারে বসে পড়ে শান্তা। শোভনের বড়বোন? সে তো বাবামার একমাত্র ছেলে! ইনি তবে কে?

(চলবে - ইনশা আল্লাহ)

বিষয়: বিবিধ

২৪০৪ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

299764
০৮ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৮:০৮
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : যত দূর বোঝা যাচ্ছে, বিশ্রী সমাজের বিশ্রী সম্পর্কের গল্প... দায় তো এড়াতে পারি না, তাই দীর্ঘশ্বাস নিয়ে পড়তে হয়...
০৮ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ১০:০০
242660
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : আমার এক দাদী বলতেন, 'পরিস্কার থাকতে হলে ময়লা ঘাটতে হয়'। তাই যেখানে দেখলাম ছাই, উড়াইয়া দেখিতেছি তাই, কেউ পাইলেও পাইতে পারে অমূল্য রতন :Thinking
299770
০৮ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৯:৫৫
পুস্পগন্ধা লিখেছেন :
হুমম....।
০৮ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ১০:০১
242661
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : হুমম, খারাপ কিছুর পরিণতি ভাল হয় না।
299791
০৮ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ১০:৫৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ব্যোমকেশ ষ্টাইলে তবে সামাজিক হয়ে যাচ্ছে!!!
০৮ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ১১:১১
242675
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : পিওর প্রেমের গল্প আমি পড়িও না, লিখিও না। সামাজিক গল্পে যতটুকু প্রেম আসে এর বেশী জীবনে প্রয়োজন হয় বলে আমার মনে হয়না :Thinking Happy
০৮ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ১১:২৬
242679
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ব্যোমকেশ হল ডিটেকটিভ চরিত্র Crying Crying Crying
০৮ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০১:১৬
242693
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : জানি Happy
299818
০৮ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ১২:৫৪
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : **********অবরোধ**********
-----সারা ব্লগ অবরোধ------
০৯ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৯:৫০
242757
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : মনে হচ্ছে অবরোধ সফল হচ্ছে, ব্লগে কোন পাঠক নেই :Thinking
299847
০৮ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৯:২১
প্রগতিশীল লিখেছেন : বিয়ে হয়ে যায়; বাচ্চা হয়ে যায় থাক আর পড়লাম না...আপু আমি আপনার বিষয় মাথায় রেখে লিখি আর আপনি? Crying Crying
ভাল হচ্ছে চালান নিজের বিপক্ষে গেলেও পড়বো...
০৯ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৯:৫১
242758
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : আমি তো সিরিজ লিখতে পারিনা ভাই। গল্প বেশী লম্বা হয়ে গেলে ভাগ ভাগ করে দেই Happy
পড়েই দেখেন না, হয়ত ভাল লাগতেও পারে!
299930
০৯ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০১:৩৭
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : শান্তা মেয়েটাকে আমার কাছে বেশ বোকাই মনে হচ্ছে। সে আসলে ডুবন্ত মানুষের মত শোভনকে ধরে সামনে এগিয়ে যেতে চাইছে! পারিবারিক সাপোর্ট থাকলে হয়ত কাহিনী অন্যরকম হত!! যা-ই হোক গল্পের এগিয়ে চলার সাথে আমিও এগিয়ে যাচ্ছি। দেখা যাক কি হয়!!?
১০ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০২:০৫
242807
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : সঠিক বিশ্লেষণ আপা। তবে ভুলের পরিণতি অনেক সময় অনেক কঠিন হয়। আপনার মত সুন্দর করে জীবনের ঘটনা লিখতে পারিনা আপা, তবু চেষ্টা করছি একটা শিক্ষা তুলে ধরার। দু'আ করবেন Praying Praying
299933
০৯ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০২:১৫
নোমান২৯ লিখেছেন : মা কি আসল ছিল ? না ফেইক ? ফেইক মনে হল Surprised।যায় হোক,পড়ে ফেললাম ২য় পর্ব Happy। ভালো লাগলো । ধন্যবাদ Rose
১০ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০২:০৬
242808
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : হা হা, দেখেন পরের পর্বে মায়ের কথা আছে Happy
300045
১০ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০২:১২
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ছেলেটাকে ধোকাবাজ টাইপের মনে হচ্ছে। দেখি...
১২ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১২:৫৩
242960
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : হুমম
300176
১১ জানুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪১
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : শোভনকে ধোকাবাজ মনে হচ্ছে এই পর্ব পর্যন্ত...দেখি সামনে কি আছে...
১২ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১২:৫৪
242961
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : :Thinking
১০
300213
১১ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১১:১৪
আবু জান্নাত লিখেছেন : আগে তৃতীয় পর্ব পড়ে নেই............. তারপর কথা হবে।
১২ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১২:৫৪
242962
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : আচ্ছা :Thinking
১১
308045
০৯ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০৩:৫৬
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : তুমি আমার ঘুম, তবু তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখি না,
তুমি আমার সুখ, তবু তোমায় নিয়ে ঘর বাঁধি না,
তুমি আমার খোলা আকাশ , কখনো সূর্য দেখি না।।...।
তুমি আমার দিন থেকে রাত, আমি যে সময় জানি না...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File