ভাই বোন
লিখেছেন লিখেছেন রেহনুমা বিনত আনিস ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৯:০৬:৫৪ সকাল
ক’দিন আগে রাদিয়ার এক বান্ধবীর বাসায় আমাদের কয়েক বান্ধবীর সপরিবারে দাওয়াত ছিলো। আমাদের বান্ধবীদের মেলা মানেই রাদিয়ার বান্ধবীদের মেলা, যেহেতু আমাদের কন্যা সন্তানের সংখ্যা বেশী এবং মেয়েদের বয়স কাছাকাছি। হাফিজ সাহেবের কাজে যেতে হবে, আমার শরীর খারাপ লাগছিলো, কিন্তু আবার রাদিয়ার আনন্দটাও নষ্ট করতে ইচ্ছা করছিলোনা, তাই আমরা রিহামকে নিয়ে চলে এলাম। রাদিয়াকে এক বান্ধবী বাসায় যাবার সময় নামিয়ে দেবেন।
বাসায় এসে রিহামের অস্থিরতা দেখে কাছে ডেকে নিলাম। চোখে দিয়ে পানি পড়ছে দেখে জিজ্ঞেস করলাম রাদিয়াকে ফোন করে দেব কি’না। ফোন করার পর প্রথমে ওকে খুব বকাবকি করল, তারপর জিজ্ঞেস করল কতক্ষণে আসবে। রাদিয়া বলল, ‘ধর আধঘণ্টা’। সাথে সাথে রিহাম সময় গণনা করতে শুরু করল। ওকে ব্যাস্ত রাখার জন্য জিজ্ঞেস করলাম, ‘আচ্ছা, তুমি যে সবসময় রাদিয়াকে জ্বালাও, এখন ভেবে দেখ, রাদিয়া তোমাকে নাস্তা বানিয়ে দেয়, ভাত খাইয়ে দেয়, জামাজুতা পছন্দ করে কিনে দেয়, তোমার রুম গুছিয়ে দেয় ... এখন বল রাদিয়া বাসায় না থাকলে কেমন লাগে?’
‘উমম, একটু একটু খারাপ।’
‘তবু তুমি বলবে তুমি রাদিয়াকে ভালোবাসোনা?’
গম্ভীর চেহারা বানিয়ে রিহাম বলল, ‘আমি আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসি।’
‘তারপর?’
‘মুহাম্মাদ (সা)কে।’
‘তারপর?’
‘আদম (আ) থেকে অন্যান্য নবীদের।’
‘তারপর?’
‘তোমাকে।’
‘তারপর?’
‘মনে হয় ... আব্বুকে?’
‘তারপর?’
‘তারপর ... আর নাই।’
‘কেন রাদিয়াকে?’
খুব লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলল, ‘হয়ত একটু একটু।’
একটু একটুর পরিমাণ বুঝে হাসতে হাসতে বললাম, ‘চল, ঘুমাতে চল।’
বলল, ‘নাহ, আরেকটু অপেক্ষা করে দেখি।’
দুই মিনিটের ভেতর শুরু হোল, ‘এতক্ষণ দেরী করছে কেন? নাহ, ওকে আর এভাবে রেখে আসা যাবেনা। আম্মু, একটু ফোন করে দেখ তো!’
ওরা এতক্ষণে নিশ্চয়ই ঐ বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে ইত্যাদি নানান বুঝ দিয়ে শুতে নিয়ে গেলাম, নইলে যতক্ষণ জেগে থাকবে ততক্ষণ এই অস্থিরতা চলবে। এর মধ্যে দু’বার উঠ এলো দরজা চেক করতে, একবার এসে দু’খানা ফোন এনে মাথার পাশে রাখল যদি ওর বোন ফোন করে, আরো কয়েকবার নালিশ করল, ‘নাহ, রাদিয়াকে এভাবে রেখে আসা যাবেনা’, তারপর আপনমনে বির বির করতে করতে নিজের অজান্তে ঘুমিয়ে পড়ল।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেও ভাবনায় পড়ে গেলাম, রাদিয়াকে বিয়ে দিলে রিহাম কি অবস্থা করবে?!
রাদিয়া ফিরল তখন প্রায় সোয়া এগারোটা। ঘরে ঢুকেই, ‘রিহাম, রিহাম’ শুরু করল। তাড়াতাড়ি চুপ করিয়ে শুতে পাঠালাম। রিহাম জেগে গেলে শুরু হবে আরেক বকাবকি পর্ব!
আরেকদিন আমার শান্তশিষ্ট লেজবিশিষ্ট কন্যা লেজের আগায় কি অবশিষ্ট আছে তা দেখিয়ে আমাকে হতভম্ব করে দিলো। সবাই জানে সে খুব ভদ্র, চুপচাপ, কর্মঠ মেয়ে। সেদিন কিছু বাচ্চাকাচ্চা এসেছে আমাদের বাসায় বেড়াতে। রিহাম ওদের সাথে খেলছে। এর মধ্যে রাদিয়া এসে বলল, ‘আম্মু, রিহামের কি হয়েছে দেখ তো। ও নীচের তলায় গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদছে।’
বললাম, ‘কারো সাথে মনোমালিন্য হয়েছে হয়ত। আমিও জনসমক্ষে কাঁদতাম না। কাঁদুক কিছুক্ষণ, তারপর ঠিক হয়ে যাবে’।
সে খুব চিন্তিত হয়ে বলল, ‘আম্মু, আমার মনে হয় ওরা কেউ কিছু বলেছে। রিহাম তো কক্ষনো কাঁদে না। তুমি একটু দেখ কেন কাঁদছে।’
রাদিয়াকে আশ্বস্ত করার জন্য রিহামকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কেন কাঁদছে। সে বলল, ‘কই? না তো!’
তারপর আমাকে ঘুরিয়ে দিয়ে আবার নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল।
ফিরে এসে রাদিয়াকে বললাম, ‘কারো কথায় মনে আঘাত পেয়েছে হয়ত। এমন আঘাত জীবনে অনেক পেতে হবে। কাঁদুক। একসময় শক্ত হতে শিখে যাবে।’
রাদিয়ার এতে সন্তুষ্টি এলোনা। আমি আমার রুমে চলে যাবার পর সে অনেকভাবে চেষ্টাচরিত্র করে উদ্ধার করল, রিহামকে কেউ বলেছে বিজ্ঞানীরা বোকা হয়। সে যেহেতু এখন থেকেই নিজেকে একজন বিজ্ঞানী মনে করে, এই কথায় সে গুরুতর আহত বোধ করেছে। পরে জানতে পারলাম রাদিয়া এসে ঐ বাচ্চাকে শাসিয়েছে, ‘শোন, মানুষকে মনে আঘাত দিয়ে কথা বলবেনা। আমি যদি আবার শুনি তুমি কাউকে মনে কষ্ট দিয়েছ তখন আমি তোমাকে আর এত সুন্দর করে বলবনা।’
ভাইয়ের সুরক্ষায় আমার নম্র ভদ্র মেয়ের এই দশা! ভাবলাম, হায়রে, ভাইবোন নিজেরা যতই মারামারি করুক, মুখে যতই অস্বীকার করুক, ভেতরে ভেতরে টান থাকে ঠিকই।
এক সময় এই ভালোবাসার রূপ পরিবর্তন হয়ে যায়। যারা বোকা তারা ভাবে অমুক বা তমুকের প্রভাবে ভাইবোনের মাঝে দেয়াল চলে এসেছে। যারা বুদ্ধিমান তাঁরা বোঝেন, এই সম্পর্কে যদি কেউ দেয়াল দিতে পারে তবে সেটা ভাই বা বোন নিজেই – সেই দেয়াল হতে পারে স্বার্থের, সেই দেয়াল হতে পারে দায়িত্বের, সেই দেয়াল হতে পারে বাস্তবতার। কিন্তু যখন একে অপরের প্রয়োজন পড়ে তখন সেই দেয়াল ভেঙ্গে গুড়িয়ে পড়তে এক সেকেন্ডও সময় লাগেনা। যারা বাস্তববাদী তাঁরা জানেন ভালোবাসার প্রকাশ বয়স এবং সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়। সুতরাং, সেই প্রকাশভঙ্গির পার্থক্যও ভালোবাসার আধিক্য বা অভাবের পরিচায়ক নয়। সুতরাং, যারা বোঝেন তাঁরা এই দুরত্ব নিয়ে চিন্তিত হন না মোটেই। কারণ এই দুরত্ব শারীরিক হলেও মানসিক হয়না মোটেই, যদি না ভাইবোন নিজেই দেয়াল তুলে দেয়। অথচ ভালোবাসা দেয়াল টপকে যেতে পারে অনায়াসেই! আর যে ভালোবাসা দেয়ালের বাইরে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে, তা আদতেই ভালোবাসা কি’না ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
৫৪৩২ বার পঠিত, ১১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মহান আল্লাহ তাদের আন্তরিক বন্ধন উভয় স্থানে জাগরূক রাখুন।আমিন।
হুম ---- এগুলো কিনটু একজনের খোয়াব ছিলো।
মাতা-পিতার পরেই সবচেয়ে নিঃস্বার্থ ভালবাসা ভাই-বোনের সম্পর্কে!
সময়-অবস্হান-বয়সের প্রেক্ষাপটে এর ধরণে বিবর্তন আসলেও শেষ হয়ে যায় না কখনই!
ভাল লাগল উপস্হাপনা! অনেক ধন্যবাদ !!
এই দেয়াল স্বার্থের, তবে এই দেয়ালের পিছনে কিছু --------- আছে !!
হাফিজ ভাই অনেক sacrificing মন মানসিকতার মানুষ !!!!!!! ঠিক না কি বেঠিক??
জানতে চান কিভাবে ??
এইভাবে: রেহনুমা ,(বিনত আনিস ) ---রাদিয়া ----- রিহাম ---- । আশা করি অভিমান করবেন না !!!!
(দীর্ঘশ্বাস ছাড়ার ইমো হইবেক।)
মহান আল্লাহ তাদের আন্তরিক বন্ধন উভয় স্থানে জাগরূক রাখুন।আমিন।
সহমত
ভাই বোনের অকৃত্রিক ভালোবাসায় সত্যি অভিভূত, এই ভালোবাসা যদিও বা মুখে উচ্চারন করে ঘোষনা দেয়া হয়না তথাপি মনের মুকুরে সর্বক্ষন তার সুর বাজিয়ে যায়, প্রতিধ্বনি রেখে যায়!
চমৎকার পোস্টের জন্য শুকরিয়া! উপরের ছবিটি আমার খুবি ফেভু! এস বিতে দিয়েছিলাম!
আপু এখন একটু ভালো আছেন তো?
ছবিটা মনে ছিলো, তাই পুণর্ব্যাবহার করলাম
বর্ণিত ঘটনার পর তোমার সাথে কথা হয়েছিল। এখন ভাল আলহামদুলিল্লাহ
দু'আ কোর আপু
খুব ভালো লাগলো পড়ে। দোয়া রইলো দুজনের জন্য
আপনার নামটা দেখলেই আমার কেবল এই কবিতাটা আপনাকে শোনাতে ইচ্ছে করেঃ
He drew a circle that shut me out-
Heretic , rebel, a thing to flout.
But love and I had the wit to win:
We drew a circle and took him In !
জানতে চান কিভাবে ??
এইভাবে: রেহনুমা ,(বিনত আনিস ) ---রাদিয়া ----- রিহাম ---- । হা-- হা--হা !
আপনাকে স্বাগতম
আমাদের জন্যও দু'আ করবেন
শেষে এসেও প্রানজুড়ানো মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ
বিয়ে করার আগেই স্ত্রীকে নেগেটিভ দৃষ্টিতে দেখছেন? আপনার বোনরাও কিন্তু কারোর স্ত্রী :
অনাগতার জন্য টান দেখে ভাল লাগল
ভাই বোনের সম্পর্ক সব সময় শক্ত বন্ধনের।
আমাকেও আল্লাহ তিন বোন দিয়েছে।
অনেক হ্যাপি আমরা।
অনেক ভালবাসে আমাকে। অনেক।
যারা বাস্তববাদী তাঁরা জানেন ভালোবাসার প্রকাশ বয়স এবং সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়। সুতরাং, সেই প্রকাশভঙ্গির পার্থক্যও ভালোবাসার আধিক্য বা অভাবের পরিচায়ক নয়। সুতরাং, যারা বোঝেন তাঁরা এই দুরত্ব নিয়ে চিন্তিত হন না মোটেই। কারণ এই দুরত্ব শারীরিক হলেও মানসিক হয়না মোটেই, যদি না ভাইবোন নিজেই দেয়াল তুলে দেয়। অথচ ভালোবাসা দেয়াল টপকে যেতে পারে অনায়াসেই!
My sisters love me very much. Alhamdulillah
তবে বিয়ে করে এক্কেবারে রেডিমেড পাঁচখানা পেয়েছি
সত্যি আপা জীবনটা কঠিন আঘাত দেখতে দেখতে এখন কি তা হলে নিরেট পাথর হয়ে গেল নাকি ?
Click this link
'......তখন আমি তোমাকে আর এত সুন্দর করে বলবনা', কি সুন্দর ভাষা, কি সুন্দর বাচনভঙ্গি, উপযুক্ত মায়ের উপযুক্ত কন্যা। আল্লাহর নিকট ওদের দুজনের জন্য প্রানভরে দোয়া করছি।
বাচনভঙ্গি দিয়ে কি হবে যখন কথাটা শুনতে থ্রেটের মত শোনাচ্ছে?
আমি ধারণাও করতে পারিনি আমার কন্যা এভাবে কথা বলতে পারে!
আমার বড় বোন নাই, ছোট বোনদের ভালোবাসি এতটুকু জানি, খুব বেশি কিনা জানিনা। তবে আমার মেয়ে আমার ছেলেকে খুব আদর করে, ওরে একটা খেলনার মত ভাবে । তবে মাঝে মাঝে মাইর দেয় আর বলে ফেলে দা , ফেলে দাও! কিছুক্ষণ পরই আবার কান্না ছেলে কান্না করলে মেয়ে আগেয় যেয়ে আদর শুরু করে দেয়।
আপনারা মিস করেন ওনার লেখা আর আমি মিস করি লেখার টাইপিং
মজা পেলাম আপনার মেয়ের দুষ্টমিষ্টি ভালোবাসার কথা শুনে
অনেক সুন্দর পোস্ট ।
কিন্তু দিনদিন এ সম্পর্ক হাল্কা হয়ে আসছে ।
অন্নেক ধন্যবাদ আপনাকে ।
এক কথায় অপূর্ব।
ষ্টিকি পোষ্টে অভিনন্দন।
তবে ছোট ছোট পয়েন্টগুলো আপনি খেয়াল করলেন দেখে ভীষণ ভালো লাগছে
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ আপু
আমাদের সবার সন্তান্দের আল্লাহ আদর্শ বান্দা হিসেবে কবুল করে নিন, আমীন
আনন্দময় ভুবন
ভাই-বোন
রঙিন স্বপন
ভাই-বোন
উচ্ছাসিত ক্ষন
ভাই-বোন
দুষ্টুমির বিচ্ছুরণ
ভাই-বোন
এক ডোরে বাঁধা মন
ভাই-বোন
দুঃখ সুখের কন্দন
ভাই-বোন
রক্তের অটুট বন্ধন
ভাই-বোনের সম্পর্ককে আকঁতে বসলে মনের সব রঙ ফুরিয়ে যাবে কিন্তু চিত্রটি তখনো থেকে যাবে অসম্পূর্ণই। এ এক অধরা উপলব্ধির মায়াময় উপাখ্যান....
অনেক অনেক দোয়া রইলো রাদিয়া ও রিহামের জন্য।
দু'আর জন্য অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ
দেখ তো দুষ্ট আরোহীটা তোমার কবিতাকে অ্যাানিমেশন করে কি হাল করেছে!
আনন্দময় ভুবন
ভাই-বোন
রঙিন স্বপন
ভাই-বোন
উচ্ছাসিত ক্ষন
ভাই-বোন
দুষ্টুমির বিচ্ছুরণ
ভাই-বোন
এক ডোরে বাঁধা মন
ভাই-বোন
দুঃখ সুখের কন্দন
ভাই-বোন
রক্তের অটুট বন্ধন
ভাই-বোনের সম্পর্ককে আকঁতে বসলে মনের সব রঙ ফুরিয়ে যাবে কিন্তু চিত্রটি তখনো থেকে যাবে অসম্পূর্ণই। এ এক অধরা উপলব্ধির মায়াময় উপাখ্যান....
অনেক অনেক দোয়া রইলো রাদিয়া ও রিহামের জন্য আমার পক্ষ থেকেও।
অ্যাানিমেশনের জন্য প্লাস দু'আর জন্য অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু। আল্লাহ আমাদের সবার সন্তানদের উত্তম বান্দা হিসেবে কবুল করে নিন
ধন্যবাদ
আমার ব্লগে স্বাগতম >- >- >-
তবে চুরি করা ভালো নয়, নাম পরিবর্তন করলে ভালো হয়। লিচুচাষী হলে কেমন হয়? : : :
এরা সবাই ভাই, এদের বড় বোন আছে ছোট বোন নেই
মন্তব্য করতে লগইন করুন