আসসালামু আলাইকুম
লিখেছেন লিখেছেন রেহনুমা বিনত আনিস ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৬:০৮:৪১ সকাল
আসসালামু আলাইকুম – আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক! এটাই হবে জান্নাতবাসীদের পারস্পরিক সম্ভাষন। আমাদের আদিপিতা আদম (আ) ফেরেস্তাকুলের সাথে প্রথম সাক্ষাতে তাঁদের এভাবেই অভিবাদন জানান এবং সৃষ্টির সেরা জীব হবার দাবীদার হিসেবে নিজের অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করেন। মানবকুলশ্রেষ্ঠ রাসূল (সা)কে সালামের প্রতিযোগিতায় কেউ কোনদিন হারাতে পারেনি, সালাম প্রদানকারী সালাম গ্রহীতার চেয়ে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী, তিনি আক্ষরিক অর্থেই সর্বাধিক মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। সালাম দাতা অবশ্য অন্যদিকেও সালাম গ্রহীতার চেয়ে শ্রেয় অবস্থানে থাকে। কারণ রাসূল (সা) বলেছেন সালামের জবাব ততোধিক অথবা ন্যূনপক্ষে সমান দু’আর মাধ্যমে দিতে। যারা সালামের তাৎপর্য বোঝেন তারা পরস্পর প্রতিযোগিতা করেন সালাম দেয়ার ব্যাপারে।
অভিবাদন হিসেবে সালামের শ্রেষ্ঠত্ব এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। আমার ব্যাক্তিগতভাবে এমন ব্যাক্তির সাথে পরিচয় হয়েছে যিনি শুধু সালামের অর্থ শুনে ইসলাম গ্রহন করেন। এক দুর্যোগপূর্ণ প্রভাতে তাঁর যার সাথেই দেখা হচ্ছিল সেই বলছিলো, ‘গুড মর্নিং’ কিংবা ‘হাই’, আর তিনি মনে মনে গজগজ করছিলেন, ‘ইটস নট আ গুডমর্নিং অ্যান্ড আই অ্যাম নট ফিলিং হাই, রাদার আই অ্যাম অ্যাট দ্য লোয়েস্ট পয়েন্ট অফ মাই লাইফ’! এমন সময় তাঁর প্রতিবেশী প্রতিদিনের মত সেই দুর্বোধ্য সম্ভাষনে তাঁকে অভিবাদন জানায়। তিনি তেড়ে গিয়ে বলেন, ‘কি বলছ ইংরেজীতে বল, কিছুই বুঝিনা, ছাই!’ প্রতিবেশী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললেন, ‘আমি তো কেবল বললাম, তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক!’ তিনি অভিভূত হয়ে পড়লেন, ‘আহ! শান্তি! এই তো আমার চাই! যে ধর্মের অভিবাদন এতটা প্রশান্তিদায়ক সে ধর্ম আদতে না জানি কতখানি শান্তিময়!’ ব্যাস, চলে এলেন ইসলামের পথে!
তবে সালামের একটা ভয়ানক দিকও আছে। আল্লাহর দৃষ্টিতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রানীদের একজন সেই ব্যাক্তি যার অনিষ্টের ভয়ে মানুষ তাকে সালাম দেয়। এই ভয়ে এমনি সময় সালামের প্রতিযোগিতা করলেও দায়িত্বশীল পদে থাকলে নিশ্চিত করতাম দারোয়ান, পিয়ন থেকে কেউ যেন আমার আগে সালাম দিতে না পারে। স্বাভাবিক অবস্থায় নিজের তল্পি নিজেই বহন করতাম কিন্তু দায়িত্বশীল পদে গেলে অসুস্থ অবস্থাতেও কারো সাহায্য নিতে পারতাম না। এমনকি একদিন ছোটভাই শাওন রাস্তার মধ্যখানে ব্যাগ নিয়ে টানাটানি দিলে ওকে নিরস্ত করার জন্য বললাম, ‘এবার কিন্তু লোকজন তোমাকে ছিনতাইকারী মনে করবে!’
বৃটিশরা তাদের দু’শ বছরের শাসনকালে আমাদের মাঝে সালাম এবং তল্পিবহন সংক্রান্ত হীনমন্যতা প্রোথিত করে দিয়ে গিয়েছে। এজন্য আমাদের পদস্থ কর্মকর্তারা লোকজন দেখলে মুখে কুলুপ এঁটে সালামের আশায় ভিক্ষার ঝুলি বিছিয়ে বসে থাকেন, সুস্থ সমর্থ দেহ নিয়েও অপরকে দিয়ে নিজের ব্যাগ বহন করিয়ে একপ্রকার আত্মপ্রসাদ লাভ করে থাকেন। অথচ এগুলো সবই অজ্ঞতাপ্রসূত অহমিকা। সালামের প্রকৃত উদ্দেশ্যের সাথে এর কোন মিল নেই! দুঃখের ব্যাপার হোল বৃটিশরা যদিও গত অর্ধশতাব্দিতে শেষপর্যন্ত সভ্যতার নাগাল পেয়েছে, পরস্পরকে নাম ধরে ডাকতে শিখেছে, নিজের কাজ নিজে করতে শিখেছে, নিজের বোঝা নিজে বহন করতে শিখেছে, আমরা এখনো কুনোব্যাঙের মত গর্তের ভেতর বসে আত্মতুষ্টি নিয়ে সেই পুরোনো সুরে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ঘ্যাং করতেই আছি। তবে আমাদের এই অজ্ঞতা বিশ্বের সামনে তুলে ধরা কি খুব জরুরী? শিক্ষিত লোকজনের এই অবস্থা হলে জাতি হিসেবে আমাদের ভবিষ্যত কোনদিকে ধাবমান? এবার মনে হয় আমাদের ভেবে দেখা দরকার।
বিষয়: বিবিধ
৪৯৭৭ বার পঠিত, ৮৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুব খুব ইন্সপায়ারিং এবং প্রচন্ড শক্তিশালী পোস্ট এটি আমাদের ধর্মের সম্ভাষন সংক্রান্ত, যা ইতোপূর্বে কখনো পড়েছি বলে মনে হয় না। আর বিশেষ করে একজন বৃটিশের ইসলাম গ্রহনের যে ঘটনাটি কোট করেছেন, তা তো একেবারেই মার্ভেলাস।
জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
আপনাদের তো সকাল মনে হয়
এই লেখাটির জন্য ছোটভাই লাল্বৃত্ত দায়ী, সে এখন নিজে লেখেনা, আমাদের মত গাধাঘোড়াদের দিয়ে লেখায়
এই লেখাটাও সালাম বিষয়ে একবার ঘুরে আসার অনুরোধ থাকলো!
এই লেখাটাও সালাম বিষয়ে একবার ঘুরে আসার অনুরোধ থাকলো!
পরিপুর্ণ জীবন ব্যবস্হা ইসলাম সব বিষয়েই নিজের স্বতন্ত্রতা বজায় রেখেছে অনুপম বৈশিষ্ট্যের আলোকে।
অভিভাধনের জন্যে প্রার্থনাময় 'সালাম'এর বিধান দিয়েছে।ভ্রাত্তিত্ব বন্ধনে কার্যকর সালামের বহুল প্রচলন সমাজে নিশ্চিত হলে এর সুন্দর প্রভাব পাওয়া যাবে।
অসাধারণ প্রয়োজনীয় পোস্টের জন্যে অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহ আপনাকে।
অনেক ধন্যবাদ
অনেক ভালো লাগলো আপনার এই লেখাটি।
আমাদের মহানবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর শিক্ষা ছিল সবার আগে সালাম দেয়া। এতে নেকিও বেশী পাওয়া যায়। আমিও আমার জুনিয়রদেরকে আগেই সালাম দেই। তবে আমাদের মন-মানসিকতা এমন হয়েছে যে, সিনিয়রেরা সালাম দিলে এরা কেমন যেন কুন্ঠিত বোধ করে। অনেকেই উত্তর না দিয়ে উল্টো 'আসসালামু আলাইকুম' বলে।
আর একটি জিনিস দেখেছি, অনেকে সিনিয়রকে সালাম দিলে শুধু মাথা নাড়ান, এটিও ঠিক নয়। আবার অনেকে শুধু অশুদ্ধভাবে বলে, সালাআলাইকুম' এতে মূল অর্থের বিকৃতি যে ঘটে সেদিকে কারো খেয়াল নেই।
শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য নিরন্তর।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
সালামের ব্যাপারে ভুল ধারণাগুলো দূর করা দরকার, নইলে শান্তি পাওয়ার লক্ষ্য অর্জন হবেনা :
দু'আর জন্য ধন্যবাদ
আবার অনেকে শুধু অশুদ্ধভাবে বলে, 'সালামালাইকুম'
ভাল লাগলো।
জ্বী ভাই
ধন্যবাদ
শুধুমাত্র সালামের গুঢ় অর্থে অনুপ্রাণিত হয়ে কেউ ইসলাম গ্রহণ করেছে জেনে বেশ ভালো লাগলো।
স্কুল, কলেজ বা ভার্সিটি জীবনে অনেক শিক্ষক/ শিক্ষিকাকে দেখেছি সালামের জবাবে মাথা ঝাঁকি দিতে। এ থেকে কি যে শিক্ষা পাওয়া যায় তা কখনো বুঝিনি।
এখনতো আবার সালাম আদান প্রদানের নতুন রাজনৈতিক রূপও চলে এসেছে।
চমৎকার শিক্ষণীয় পোস্ট। ধন্যবাদ।
তবে আপনার দেখায় ভুল আছে, আমি বিডিটুডে নয়, যে ভাইয়েরা নারীদের প্রতি বিষোদ্গার করতে করতে নিজের মাকে আশ্রিতা বা নিজের স্ত্রীকে পতিতার সাথে তুলনা করতে শুরু করেছিলেন তাদের প্রতি হতাশায় ব্লগ ছেড়েছিলাম।
কেন ফিরে এলাম এ নিয়ে এত গবেষনার কি আছে? জিজ্ঞেস করলেই তো হয়!
শুধু কমেন্ট করতে ইচ্ছে করে? কিছু লিখে আমাদের উপহার দিতে ইচ্ছে করেনা?
আপনারে বড় বলে, বড় সেই নয়
লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়। :
হুমম...এই সালামের আসল ব্যাপারটা সমাজে বেশি বেশি করে প্রচার করতে হবে। আপনাকে ধন্যবাদ বিষয়টি সুন্দর ভাবে উপস্থাপনের জন্য।
শুধুমাত্র সালাম প্রথার কারণে মুসলমান হয়েছে এমন কয়েকজন কে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি।
আমাদের মানসিকতা গোলামী নির্ভর তাই অন্যের সংস্কৃতি নিয়ে আমরা বড়াই করি। মুসলমানদের চেয়ে সেরা সংস্কৃতি পৃথিবীর কোন জাতির কাছে নাই। আপনার সুন্দর পোষ্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
আর সেই সালাম নিয়ে বাংলাদেশে গ্রেফতার হতে হয় জেনে কেবল মনকষ্ট ছাড়া কী পাই???
আলা মানিত্তাবায়াল হুদা
সালাম দেয়ার চর্চাটা আমরা ব্লগে স্থায়ী করে নিতে পারি-
এটাই হোক প্রতিবাদের আপাতঃ হাতিয়ার
*
শিক্ষক শিক্ষিকাদের ব্যাপারে একটু সাফাই দেই (এককালে এই শ্রেনীভুক্ত ছিলাম তো )
আমি শিক্ষক না হয়েও এ কষ্টটা বুঝি-
কিন্তু মনকে সওয়াব ও পুরস্কারের লোভের কথা স্মরণ করাই, তখন আর কষ্ট মনে হয়না
ভয়ের সালাম নয়-
আসলেই ভক্তি ও ভালোবাসার সালাম-
চোখ ভিজে যায়-
এ নেয়ামতের শোকর আদায় হচ্ছে কি??
নিজেকে অপরাধী মনে হয়!
এজন্যই তো গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে থাকত তবু জবাব দিতাম এবং কুশলাদি জানতে চাইতাম। কিন্তু যারা পারেন না তাদের দোষ দিতে পারিনা ;
এতদিন পর এই পোস্ট কেমন করিয়া চোখে পড়িল? পরামর্শ দেন কি করিব
'... পোস্ট ধরে মার টান,
স্টিকি হোক খানখান... '
স্টিকি পোস্টে অভিনন্দন আপু!
নতুন লিখা চাই আরো আপু
ভিক্ষার ঝুলির একটা উদাহরণ আমার জীবন থেকে বলি, কারো নাম বলবনা৷ আমি ডিসপাচ পিওন, আমার টেবিলটা, এ্যাসিসটেন্ট এ্যাডমিনিষ্ট্রটিভ অফিসারের ঠিক দরজার সামনে একটা চিপার মধ্যে৷ ইমেলতো নয়ই বরং ফ্যাক্সও তত সহজ লভ্য হয়েে ওঠেনি, ডাকের চিঠিই ভরসা, তাই ডিসপাচ সারাদিনই ব্যস্ত৷ সকালে প্রথম দেখায় সালাম বিিনিময় হেয়েছে৷ মাঝেও দু একবার হয়, আবার চোখের বাইরেদিয়ে স্যার চলেগেলে হয়না৷ একদিন স্যার বললেন, 'তুমি কেমন লোক'? বললাম,কিছু কি ভুল হয়েছে স্যার! বললেন,'তুমি সালাম টালাম দাওনা'৷ এর পর সতর্ক থাকতাম, উনি যতবার সামনে পড়তেন সালাম দিতাম৷
এভাবে মনের ক্ষুদরতা প্রকাশ করতে কি তারা লজ্জা পান না?
আলহামদুলিল্লাহ আপনি কেমন আছেন আপা?
আমার আব্বু আমাদেরকে সবসময় আমরা দেয়ার আগেই সালাম দিয়ে দেয়, আর ছোট থেকেই দেখেছি ঘরে ঢুকতেই বড় করে সালাম দেয়।
স্টিকি পোস্টে অভিনন্দন!
ধন্যবাদ
লেখাটি ফরমায়েশি। স্টিকি হওয়ায় ভয় পাচ্ছি।
আপনার অনেকগুলো লেখা পড়েছি কিন্তু মন্তব্য করার সময় পাচ্ছিনা
আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
দুঃখ হয় মুসলিম প্রধান দেশ হয়েও অামরা এখনো সালাম পাওয়াটাকে সম্মান অার দেওয়াটাকে অসম্মান মনে করি। ধন্যবাদ অাপনাকে।
ভাবছি সবার জন্য শান্তি কামনা করবো, মানে আসসালামুআলাইকুম বলবো, কিন্তু আবার ভয়ও পাচ্ছি যদি শান্তি কামনা করার কারনে জেলে যেতে হয়, যেমন বুয়েটের মেধাবী ছাত্র তানজিল ভাই ছোটদের জন্য শান্তি কামনা করতে গিয়ে আজ জেলখানায় বন্ধী।
খুব ভালো লাগলো পড়ে!
শেষ প্যারাগ্রাফটা বেশি সুন্দর!
ভাল আছ?
তোমার লেখা পড়ি, কিন্তু মন্তব্য করা হয়না। লেখাগুলো বিবাহেচ্ছুদের জন্য, আমার তো বিয়ে হয়ে বাচ্চাদের বিয়ে দেয়ার বয়স হয়ে গেল! ;
আপনার দুয়াতে আমাকে স্মরণ রেখেন আপু!
ঠিক বলেছেন!
চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু আমাদের মেধা কম, যোগ্যতা কম, তাই হয়ত খুব বেশি পরিবর্তন চোখে পড়ছেনা
আপনার কাছেও লেখা আশা করছি।
যাক, একজন শেষ পর্যন্ত স্বীকার করলেন লেখাটা রস্কষহীন
যাজ্জাকাল্লাহ খাইর >-
কেউ সালামকে নানা রঙে সাজিয়েছে। যেমন-স্লামালিকুম, আ-স্লামালিকুম, আস্সামালাইকুম ইত্যাদি।
কেউ সালামের জবাবে শুধু মাথা হেঁট করে, অনেকে তাও করে না। অথচ সালাম দেয়া সুন্নাত, নেয়া ওয়াজিব।
কেউ আবার খাবার সময় সালাম না দেয়াকে ফরদ্বতুল্য করে নিয়েছে। বলে- 'খেতে বসেছেন তো, তাই আর সালাম দিলামন না'। অথচ তারও কম শব্দ ব্যয় করে 'আসসালামু আলাইকুম' বলা যেত। এমনকি যাকে বলা হয়, তিনিও কিছু একটা জবাব দিয়ে থাকেন, যা অন্তত 'ওয়ালাইকুম'-এর চেয়ে বড়ই হবে।
অনেক আগে 'সালাম' বিষয়ে লিখেছিলাম।
ঠিক বলেছেন!
আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ তবে আপনার লেখাটি শেয়ার করলে আমরা সবাই উপকৃত হতে পারতাম
মন্তব্য করতে লগইন করুন