এক ফোঁটা জল - প্রথমাংশ
লিখেছেন লিখেছেন রেহনুমা বিনত আনিস ১৪ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:৪৬:১০ সকাল
১/
বাড়ী ফিরে অন্দরমহলে ঢুকতেই আঙ্গিনায় মা চাচীদের জটলা দেখে হেসে মাথা ঝাঁকালো সা’দ। এটা ওদের বাসার সাধারন চিত্র। মা যেখানে, চাচীরাও সেখানে। মায়ের ছায়ায় থাকলে দাদা বৌদের ওপর বেশি হম্বিতম্বি করার সুযোগ পান না। বড় বৌটা ভয়ই পায়না তাঁকে, কিভাবে যেন হেসে কথা বলে সব সহজ করে ফেলে। ছোটগুলো এখনো পদ্ধতিটা সেভাবে রপ্ত করতে পারেনি, তাই অন্তত বড় জায়ের কাছাকাছি থেকে শ্বশুরের মেজাজ থেকে নিরাপদ থাকার চেষ্টা করে। সা’দ খেয়াল করল চাচীদের সবার হাতে দু’টো তিনটা করে কাগজ। সবাই উচ্চস্বরে মন্তব্য করছে এগুলো নিয়ে। সম্মিলিত কন্ঠস্বরের কলতান সা’দ কিছুই বুঝতে পারছেনা, কিন্তু ওরা ঠিকই বুঝে নিচ্ছে নিজেদের মধ্যকার কথাবার্তা। মায়ের গা ঘেঁষে লাজুক লাজুক চেহারা নিয়ে বসে আছে রুহি, মেজচাচার মেয়ে। সা’দকে দেখে মা হন্তদন্ত হয়ে উঠে এলেন। কাছে এসে ছেলেকে আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। ওকে দেখে চাচীরাও এগিয়ে এলেন, ‘কি বাবা, কেমন আছিস? কতদিন পর তোকে দেখছি! চেহারাটা শুকিয়ে কি হয়েছে! দাঁড়া, রুহির মত তোকেও একটা বিয়ে করিয়ে দিতে হবে, তোর দেখাশোনার জন্য তোর সাথেই পাঠিয়ে দেব বৌকে’।
সা’দ অবাক হয়ে বলে, ‘রুহির কবে বিয়ে হোল? কই, আমাকে তো তোমরা কেউ জানাওনি!’
রুহি লজ্জা পেয়ে বড় চাচীর ঘাড়ে মুখ লুকায়।
মা সা’দকে মাথায় আদরের চাঁটি মেরে বলেন, ‘রুহির বিয়ে হলে তুই খবর পেতি না? ওর জন্য অনেকগুলো প্রস্তাব এসেছে। আমরা সবাই বায়োডাটাগুলো নিয়ে বসেছি, কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে পারছিনা। তুই হাতমুখ ধুয়ে খেতে আয়। তারপর এগুলো বাছাই করতে বসব আমরা, তুই থাকবি সহকারী হিসেবে। দেখি কদ্দুর কি যোগ্যতা অর্জন হোল তোর লেখাপড়া করে’।
সা’দ বলে, ‘তাই তো। আমাদের বাড়ীর একটা মেয়ের বিয়ে হয়ে যাবে আর আমি দূরে থাকি দেখে কেউ আমাকে খবর দেবেনা!’ তারপর বায়োডাটার স্তুপ দেখে বলে, ‘এভাবে কি বাছাই করা যায় নাকি? আমি এগুলো সব এক দুই করে সিরিয়াল করে দেব। তারপর তোমরা একেকটা বায়োডাটা নিয়ে আলাপ করবে। আমি হব মডারেটর’।
রুহি খুশি হয়ে বলল, ‘তাহলে তো ভালোই হয় ভাইয়া। তখন আর চাচীদের এভাবে মাছের বাজারে দর কষাকষির মত চেঁচামেচি করতে হবেনা, সবাই শৃংখলাবদ্ধ হয়ে একটা ফলপ্রসূ আলাপ করতে পারবে’।
সেজচাচী রুহির দিকে প্রশ্রয়ের হাসি হেসে বলেন, ‘দুষ্ট মেয়ে কোথাকার! আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করা হচ্ছে!’ তারপর বড় ভাবীকে বলেন, ‘ছেলেটা এলেই ঘরের চেহারা অন্যরকম হয়ে যায়। চল ভাবী, বাবাটাকে কিছু খেতে দেই! অনেক কাজ করতে হবে তারপর’।
২/
অনেক কাজ করা হোলনা অবশ্য। সা’দের ফিরে আসা উপলক্ষ্যে দাদা মিটিং ডাকলেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে। ছেলে বৌ, মেয়ে জামাই, নাতি নাতনী, কাজের লোকজন কেউ বাদ গেলনা সেই সভা থেকে। সবাই একত্রিত হলে দাদা বললেন, ‘আজ আমার বড় গর্বের দিন। আমার বড় ছেলের বড় ছেলে আজ দেশের বিখ্যাত ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করে ফিরল। আমি ঠিক করেছি এই উপলক্ষ্যে সমস্ত আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশীদের খাওয়াব আগামী শুক্রবার’। খুশিতে জ্বলজ্বল করছে দাদার চেহারাটা। ভাইয়ের সাফল্যে নাতনীদের মুখে হাসি, কিন্তু একটু মেঘের ছায়াও যেন, দাদা ওদের নিয়ে কখনো এভাবে উচ্ছ্বসিত হোন না। দাদা বলে চললেন, ‘আরেকটা খুশির খবর আছে। সা’দ ফিরে আসার আগেই আমি কয়েকটা বিদেশী ইউনিভার্সিটির সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। দু’টো ইউনিভার্সিটি ওকে পি এইচ ডি করাতে আগ্রহী। আমি ঠিক করেছি ওকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠাব’।
এই খবরটা সবার কাছেই সারপ্রাইজ। বড় বৌ বলল, ‘আপনি এতকিছু কখন করলেন বাবা?’
দাদা মাথা দুলিয়ে হেসে বললেন, ‘দেখছ বৌমা, তুমি জিজ্ঞেস করছিলে না রাতদিন এত কি লেখালেখি করি? এখন বুঝলে তো!’
হঠাৎ সা’দের ছোটবোন সায়রার ক্ষীণ কন্ঠ শোনা গেল, ‘ভাইয়া কবে যাবে দাদা?’
সায়রা আর রুহি সারাক্ষণ একসাথে থাকে। রুহিকে সহ্য করতে পারেন না দাদা। তাই সায়রার ওপরেও ঈষৎ বিরক্ত তিনি। চোখমুখ গম্ভীর করে বললেন, ‘বড়দের কথার মাঝে কথা বল কেন? সা’দ এক সপ্তাহ পর যাবে’।
এইমাত্র বকা খাবার কথা ভুলে সায়রা বলে ফেলল, ‘ভাইয়া তো বাড়ী ফিরল পাঁচ বছর পর! গতবার ছুটিতে এসেছিল তাও তিন মাস আগে। এক সপ্তাহ থেকেই চলে যাবে?! অস্ট্রেলিয়া থেকে তো আর তিন মাস পর পরও আসতে পারবেনা!’
ওর কথায় সবাই দাদার শাসনের কথা ভুলে শোরগোল শুরু করে দিল। অন্যায়, মহা অন্যায় হচ্ছে এটা। কতদিন পর ছেলেটা বাড়ী ফিরল আর এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই আবার নির্বাসন! সা’দ বোনের অশ্রুপ্লাবিত চেহারার দিকে তাকাতে গিয়ে লক্ষ্য করল রুহি সবার অলক্ষ্যে সভা ছেড়ে চলে যাচ্ছে, ওর চোখের কোণে এক ফোঁটা জল।
(চলবে ইনশা আল্লাহ)
বিষয়: বিবিধ
১৭৩০ বার পঠিত, ৪০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
রেডিমেড মন্তব্যই করুন তবে একটু নতুন কিছু।
আপু আপনার লেখা বরাবরই ভালো লাগে...
তবে গল্পটা কিন্তু ঠিক রসায়ন নিয়ে নয়!
ভাইবোনের সম্পর্কের ওপর তো প্রাইস ট্যাগ লাগানো যায়না, কিন্তু খাওয়াদাওয়া এর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। দেখেন ভাল লাগে কি'নাঃ
চলুক । সাথে আছি ।
আপনার গল্পের পরের পর্ব কই? :
মন্তব্য করতে লগইন করুন