পুত্রের ইসলাম শিক্ষা
লিখেছেন লিখেছেন রেহনুমা বিনত আনিস ০৮ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:০৮:০৯ সকাল
আমার সাত বছর বয়সী পুত্র শয়নে স্বপনে জাগরনে ডাইনোসর, সরোপড, থেরোপড, ট্রায়াসিক, জুরাসিক, ক্রিটেশাস, প্লাইস্টোসিন, ইওসিন, ওলিগাসিন, ডেভোনিয়ান ইত্যাদি নিয়ে ভাবে এবং কথা বলে। ভাবলাম বিজ্ঞ পুত্রের আগ্রহ এবার এসবের সৃষ্টিকর্তার দিকে আকর্ষন করা দরকার।
এই লক্ষ্যে গতকাল ওকে নিয়ে বসলাম। উদ্দেশ্য এই বিষয়ে কিঞ্চিত আলোচনা হবে। বললাম, ‘ বাবা, এই যে এতরকম, এত্ত বড় বড় ডাইনোসর যিনি সৃষ্টি এবং ধ্বংস করেছেন, তাঁকে কি তুমি চেন?’
সদাব্যাস্ত পুত্র বলল, ‘আম্মু, আমি জানি এদের আল্লাহ সৃষ্টি এবং ধ্বংস করেছেন’।
আমি বললাম, ‘আচ্ছা, তাহলে আমাকে তাঁর সম্পর্কে কিছু বল’।
সে নির্বিকারভাবে আমাকে সুরা ইখলাস পাঠ করে শোনালো এবং অর্থ বুঝিয়ে বলল, ‘ইনিই আল্লাহ’।
এককথায় জবাব। আর কি জিজ্ঞেস করব?
প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আচ্ছা বল তো, পৃথিবীর প্রথম মানুষ কে?’
পুত্র বলল, ‘আদম (আ), তিনি পৃথিবীর প্রথম মানুষ এবং প্রথম নবী’।
বললাম, ‘চল, তোমাকে তাঁর দুই ছেলে হাবিল এবং কাবিলের গল্প বলি’।
গল্পের এক পর্যায়ে যখন কাবিলকে শয়তান প্ররোচিত করছে ভাইকে হত্যা করতে, তখন পুত্র কথার মধ্যখানে আরবীতে বানান করতে শুরু করল, বানান শেষে বলল, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ, মানে আমি মহান আল্লাহর কাছে শয়তানের প্ররোচনা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। কাবিল এই দু’আটা পড়লেই তো পারত! তাহলে শয়তান আর ওকে ডিস্টার্ব করতে পারতনা’। বিশিষ্ট পন্ডিত পুত্রকে আর কি বলব? বানান মোটামুটি হলেও দু’আটা সে সঠিক বলেছে।
কিছুক্ষণ পর হাবিলকে হত্যা করে যখন কাবিল তাঁর দেহ গোপন করার চেষ্টা করছে তখন পুত্র বলে, ‘আম্মু, কাবিল এত বোকা কেন? আল্লাহ তো ঠিকই সব দেখেন। এর পর আর গোপন করার চেষ্টা করে লাভ আছে? শুধু শুধু কিয়ামত পর্যন্ত সকল খুনীদের গুনাহ ওর ঘাড়ে চাপবে, তাহলে এই অন্যায়টা করে ওর কি লাভ হোল?’ মাশাল্লাহ, বুঝলাম পুত্র গল্পের মূল শিক্ষাটা ধরতে পেরেছে।
কিছুক্ষণ পর ওকে কারুনের গল্প বললাম। গল্পের শেষ পর্যায়ে যখন বললাম, কারুনের সমস্ত ধনসম্পদ মাটি গ্রাস করে নিলো, তখন পুত্র বলল, ‘আম্মু, তখনো কি শাবল আবিষ্কার হয়নি?’ হায় আল্লাহ! আজকালকার বাচ্চাকাচ্চাগুলো অতি চালাক। এগুলোকে ইসলাম শিখাব কি, এরা আমাদের প্রশ্নবানে জর্জরিত করে! বাধ্য হয়ে ওকে ভূমিবিন্যাসের কোন স্তর পর্যন্ত মানুষ প্রবেশ করতে পারে, কোন স্তরগুলো মানুষের আওতার বাইরে তা বুঝিয়ে অতঃপর বুঝাতে হোল কেন কারুনের ধন উদ্ধার করা সম্ভব ছিলোনা।
অতঃপর পুত্র আবার জ্ঞানান্বেষনে রওয়ানা দিলো। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। আজকালকার অতি জ্ঞানী বাচ্চাগুলো এমন এমন সব পন্ডিতমার্কা বক্তব্য ছাড়ে যে হাসি চেপে রাখা কঠিন, আবার এমন সব প্রশ্ন করে যা আমরা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারতাম না। তবে ওদের এই অনুসন্ধিৎসা আমার ভাল লাগে। ওরা ইসলামকে আমাদের পূর্ববর্তীদের মত অন্ধভাবে কিংবা না বুঝে একটি সামাজিক আচার হিসেবে নেয়না, বরং ওদের কাছে ইসলামের মূল ধারণাগুলো স্পষ্ট এবং সে অনুযায়ী আচরন করাই জীবনের লক্ষ্য। আমাদের সবার ইসলামকে এভাবেই স্পষ্ট করে বোঝার চেষ্টা করা উচিত।
বিষয়: বিবিধ
১৫৮৯ বার পঠিত, ৫৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ আপনার পুত্রকে সঠিক পথের সন্ধান দিন।
জাজাকাল্লাহু খাইরান
আমন্ত্রণ রইল আমার বাগান বাড়ি...।
আপনার ছেলের জন্য অনেক অনেক দোয়া। আল্লাহ যেন তাকে মুসলিম মিল্লাতের নেতা বানিয়ে দেন।
সুন্দর দু'আর জন্য ধন্যবাদ ভাই, সময় পেলে একত্রিত করার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন