কোফতা বানানো
লিখেছেন লিখেছেন রেহনুমা বিনত আনিস ২১ মার্চ, ২০১৪, ০১:৩৩:৫৪ রাত
কোফতা বানাচ্ছিলাম। এক কড়াই চুলায় বসিয়ে, আরেক কড়াই তৈরী করছিলাম। শেষের দিকে এসে যা হয় আর কি, শেষ কোফতাটার স্বাস্থ্য ভাল হোলনা। পিচ্চি কোফতাটাকে অন্য স্বাস্থ্যবান কোফতাগুলোর পাশে বড় বেমানান দেখাচ্ছিল। কি করা যায়? চোখের রাডার ঘুরিয়ে দেখে নিলাম কোনগুলো অতিরিক্ত মেদযুক্ত। তারপর তাদের প্রত্যেকটা থেকে কিছু কিছু নিয়ে পিচ্চি কোফতাটায় জোড়া দিতে লাগলাম। একসময় দেখা গেল সবগুলো সমান সাইজ হয়ে গিয়েছে। পিচ্চি কোফতাটাকে এখন মোটেই দৃষ্টিকটুভাবে শীর্ণ দেখাচ্ছেনা, আবার বড়গুলোকেও অতিরিক্ত বড় দেখাচ্ছেনা। একটা সুন্দর সুদৃশ্য সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দৃশ্যটা দেখে নিজের কারিশমায় নিজেই অভিভূত হয়ে গেলাম, খুশিতে নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে দেই পারলে!
এমন সময় মাথায় এলো, ‘হায়রে বোকা মানুষ, আমাদের প্রভু তো আমাদের এই সহজ কাজটিই করতে বলেছেন! ধনীদের দান সাদাকা যাকাত দিতে বলেছেন কেবল এই ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য, যেন কেউ অভাবগ্রস্ত না থাকে আবার কেউ টাকার পাহাড় নিয়ে বসে ধনসম্পদকেই জীবনের ধ্যান জ্ঞান সাধনা ভেবে না বসে। এতে কারোরই ক্ষতি নেই, সবার লাভ আছে। অথচ এই সহজ কাজটিই কেউ করতে চায়না’। কেন বলছি? গতকালই পড়ছিলাম পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের সমান সম্পদ পুঞ্জীভূত রয়েছে মাত্র ৮৫ জন ধনকুবেরের হাতে। একটা মানুষের এক জীবনে কত লাগে? সামনে যতই মজার মজার খাবার এনে সাজিয়ে দিন না কেন একজন দরিদ্র যতটুকু খেতে পারবে একজন ধনীর পেটেও তো ঠিক ততটুকুরই জায়গা হয়, কেউ তো পেটের বাইরে খেতে পারেনা। একইভাবে জীবনের অন্য প্রয়োজনগুলোও যতটা না প্রকৃত প্রয়োজন তার চেয়েও বেশি কাল্পনিক। প্রকৃত এবং কাল্পনিক প্রয়োজনগুলোর মাঝে পার্থক্য করতে পারা সুখী হবার অন্যতম চাবিকাঠি।
আবার মানুষের সব প্রয়োজন পূরণ হয়ে গেলেও মানুষের জীবনের প্রতি কোন আকর্ষন থাকেনা। একটা রেসকিউ সিরিজ দেখতাম, তেমন বিখ্যাত কোন অনুষ্ঠান নয়, কিন্তু আমার ভাল লাগত। কিছু নিবেদিতপ্রান রেসকিউ কর্মী অসম্ভব সব পরিস্থিতিতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও বিপদগ্রস্ত মানুষদের রক্ষা করার চেষ্টা করত। তারই একটি দেখে বুঝলাম কেন সুখী মানুষরাও আত্মহত্যা করে। এক লোক বার বার আত্মহত্যা করার চেষ্টা চালায়, তার প্রচেষ্টা ব্যাহত করতে গিয়ে রেসকিউ টিমের কর্মীরা আরো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সময় দিতে পারেনা। শেষমেশ তার কার্যকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে রেসকিউ টিমের একজন সদস্যকে সার্বক্ষণিকভাবে তার সাথে থাকার দায়িত্ব দিয়ে দেয়া হোল। সেই কর্মীও বিরক্ত। তার বন্ধুরা মানুষকে জ্বলন্ত আগুন থেকে রক্ষা করছে, সাগরের উত্তাল ঢেউ থেকে তুলে আনছে, তীব্র ঝড় জলোচ্ছ্বাসের মাঝে মানুষকে সাহায্য করতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে- আর সে কিনা এক ধনীর সাথে ঘুরে ঘুরে সময় কাটাচ্ছে যাকে শিশুদের মত দেখে রাখতে হয়, যে সুযোগ পেলেই আত্মহত্যার পাঁয়তারা করে। একদিন সে চরম বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেসই করে ফেলল, ‘কি ব্যাপার? কি নেই তোমার? বাড়ী, গাড়ী, পরিবার, পরিজন, বন্ধু বান্ধব, অর্থ সম্পদ, কি নেই? কেন তুমি আত্মহত্যা করতে চাও?’
ধনী লোকটি বলল, ‘সেটাই তো সমস্যা?’
রেসকিউ কর্মী হতবাক হয়ে বলল, ‘মানে?’
‘যাদের এসব নেই, বা এর কিছু কিছু নেই, তাদের জীবনের একটা লক্ষ্য থাকে, একটা উদ্দেশ্য থাকে। সেটাই তাদের প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত তাড়না দেয়, প্রেরণা দেয়। আমি কি করি বল তো? প্রতিদিন ভোরে বিছানায় চোখ খুলেই ভাবি, ‘আজ আমি কি করব?’ কিন্তু করার মত কিছুই খুঁজে পাইনা। কারণ পুরো পৃথিবী আমার হাতের মুঠোয়। এমন কিছু নেই যা আমি চাইলে পেতে পারিনা, এমন কিছু নেই যা আমার আস্বাদন করা হয়নি, এমন কিছু নেই যা আমার করার সাধ অবশিষ্ট রয়েছে। তখন মনে হয় আবার চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ি, কারণ আমার জীবনের আর কোন লক্ষ্য উদ্দেশ্য নেই’।
রেসকিউ কর্মীটি যেন কথাগুলো বুঝেও বুঝে উঠতে পারলনা। সে এক বোতল পানি কিনতে রেলিং দেয়া সাগরপাড়ের পাশে ফেরীওয়ালার কাছে গেল। পেছন ফিরতেই দেখে লোকটি রেলিং টপকে শক্ত এবং ধারালো পাথুরে সৈকতের ওপর আছড়ে পড়ে আত্মহত্যা করে ফেলেছে।
তাহলে এত সম্পদ দিয়ে কি হবে যা অর্জন করতে গিয়ে আমরা জীবনে যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তার প্রতি সময় দিতে পারিনা? স্ত্রীর ভালোবাসা কি অর্থ দিয়ে পাওয়া যায়? এক সমীক্ষায় প্রকাশ ৮৫% নারী চান দরিদ্র হলেও সময় দিতে সক্ষম স্বামী। আবার অতিরিক্ত সম্পদেও সুখ হয়না, তখন ব্যাক্তি সুখের চেয়ে সম্পদকে প্রাধান্য দিতে শুরু করে। সুতরাং, উভয় দিক থেকে এই ধনলিপ্সার শেষফল হতাশা এবং অপূর্ণতা। বরং যা কিছু আমাদের সবার মিলে আছে তা সবার মাঝে ভাগাভাগি করে নিলে, সবাই সবার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে সবার প্রয়োজনই পূরণ হওয়া সম্ভব, যৌক্তিক প্রয়োজন- আর অযৌক্তিক প্রয়োজন, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়ে কোফতা হওয়ার আগে কোন কিছু দিয়ে মিটবেনা!
বিষয়: বিবিধ
১৯৪৬ বার পঠিত, ৭৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি ফার্ষ্ট তাই এক কড়াই কোফতা আমার জন্য রাখবেন।
কোফতার দাওয়াত রইল, খুব একটা খারাপ হয়না আশা করি
তোমাকেও পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আপু
গুরুত্বপূর্ন বিষয় তুলে এনেছেন আপু এ জন্য অন্নেক শুকরিয়া।
আমার পক্ষ হয়ে সবাইকে জবাব দেয়ার দায়িত্ব স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নেয়ার জন্য স্লেভ ভাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
আমার কম্পু নিয়ে অনেক সমস্যায় আছি। আজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে এলাম। এটা আমার ছেলের কম্পু, এর অবস্থা আরো খারাপ
অষ্টম কিংবা শ্রেণীতে আমাদের একটি গল্প ছিল। হ্যাপী দ্যা ম্যান। পরীক্ষায় আসতো, হো ইজ দ্যা হ্যাপী ম্যান।
উত্তর- হি ইজ দ্যা হ্যাপী ম্যান হো ইজ সেটিস্পাইড উইথ হোয়াট হি হ্যাজ।
স্বার্থপর মানুষদের এ পৃথিবীতে এটি ছাড়া উপায় নেই। কারণ, সোনার নবী ও নেই সোনার মদীনার সে রাজত্ব ও নেই। তাই ডা-আলু ভত্তা কিংবা পোড়া মরিচের পান্তাভাবেই সুখ খোজা ছাড়া উপায় নেই।
ধন্যবাদ্
ধন্যবাদ্
কোফতা বানাতে বানাতে কতো সুুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন!!
ও হ্যঁ! কোপ্তাটা নিজে একবার ট্টই দেব।
এটি একটি গতানুগতিক কথার মতই। বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে হয়তো এই ৮৫ জন মানুষের অধীনে পচাঁশি লক্ষ্য মানুষের জীবিকা নির্ভরশীল।
এই প্রথম মিষ্টি বানিয়ে ছিলাম।
আমার কম্পু নিয়ে অনেক সমস্যায় আছি। আজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে এলাম। এটা আমার ছেলের কম্পু, এর অবস্থা আরো খারাপ
একবারও বলেনি। কারন আমরা আপনার আশে পাশে থাকি। হূম, চমৎকার লেখা। হৃদ্বয় ছুঁয়ে যায়
এবং পরকালকে মনে করিয়ে দেয়।
অতি সাধারন লেখাটি পড়ে ভাল লাগায় আমি কৃতজ্ঞ
আল্লাহ আপনার হাতকে দ্বীনের খেদমতের জন্য ক্ববুল করে নিন, আমিন।
পড়ার এবং উপস্থিতি জানান দেয়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ
https://www.facebook.com/bdcbf/posts/616798328407233
আসলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় সব সমস্যার সমাধানই ইসলামে দেয়া আছে। আমরা সেটা জেনে ও মেনে চলতে পারিনা সেটা আমাদের ব্যর্থতা। সুন্দর লেখাটির জন্য জাযাকিল্লাহ আপু।
মন্তব্য করতে লগইন করুন