ওয়ান উম্মাহ কনফারেন্স ক্যাল্গেরী ২০১৪ : দ্য ডিভাইন ম্যানুয়াল
লিখেছেন লিখেছেন রেহনুমা বিনত আনিস ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১১:৪৩:৫০ রাত
একটু আগে দিনব্যাপী ‘ওয়ান উম্মাহ কনফারেন্স ক্যাল্গেরী, ২০১৪’ থেকে ফিরলাম। সাধারনত এটি বার্ষিক ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়। গতবছর ক্যাল্গেরীতে বন্যার কারণে কনফারেন্স ক্যান্সেল হওয়ায় এবার কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হোল দু’বছর পর। তাই লোকজনের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল সচরাচরের চেয়েও বেশি। ডেডলাইনের এক সপ্তাহ আগেই সব অনলাইন টিকেট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। গেটে দশ ডলার বেশি দিয়ে কিনতে হলেও ঐ টিকেটও আজ সকালে প্রথম ধাক্কায় বিক্রি হয়ে গিয়েছে। ১৮০০ সিট সম্বৃদ্ধ ক্যাল্গেরীর বিখ্যাত ‘জ্যাক সিঙ্গার কনসার্ট হলে’ অনুষ্ঠিত এই কনফারেন্সে পুরুষদের বসার আয়োজন ছিল নীচতলায় এবং মহিলাদের ওপরতলায়, গ্যালারীতে। সম্পূর্ন অনুষ্ঠানটিকে নির্বিঘ্ন এবং সফল করার পেছনে কাজ করেছে শাতাধিক স্বেচ্ছাসেবী যাদের প্রায় সবাই ছাত্রছাত্রী, মেয়েরা ওপরতলায় এবং ছেলেরা নীচতলায়। মহিলারা যেন মনোযোগ দিয়ে সব বক্তব্য শুনতে পারেন সেজন্য ছিল বাচ্চা রাখার ব্যাবস্থা। মহিলা বক্তাদের জন্য ওপরতলা থেকেই বক্তব্য উপস্থাপন করার ব্যাবস্থা। অ্যামেরিকা এবং ক্যানাডায় যতগুলো আলোচনা অনুষ্ঠানে যাবার সুযোগ হয়েছে সবগুলোতেই দেখেছি ইসলামে নারীর প্রতি সম্মানকে হাইলাইট করা হয়। ইসলামের এই বিষয়টি তুলে ধরার কারণেই হয়ত এসব দেশে মহিলাদের মাঝে ইসলাম গ্রহনের প্রবণতা পুরুষদের দ্বিগুন। যেমন আজ প্রচুর নও মুসলিম এবং ইসলাম সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক অমুসলিমের উপস্থিতি ছিল মহিলাদের মাঝে।
এবারের বক্তা ছিলেন ছয়জন- শেখ ইয়াসির কাজী, ইয়াসমিন মুজাহিদ, শেখ আব্দুল্লাহ ইদ্রিস, শেখ মুফতাহ মুহাম্মাদ আল সুলতানী, শেখ হাসিন শাইবানী, শেখ নাভিদ আজিজ। শেষোক্ত দু’জন আমার অফিসের পাশের মসজিদে, যেখানে আমি নিয়মিত জুমা পড়ি, খুতবাহ দিয়ে থাকেন। শেখ আব্দুল্লাহ ইদ্রিসের বক্তব্য গতবার ‘পাওয়ার অফ ইউনিটি’ কনফারেন্সে শুনেছি। বাকী তিনজন আমার কাছে নতুন, প্রথম দু’জনের নাম শুনেছি কিন্তু সামনাসামনি দেখা হয়নি যেহেতু তাঁরা অ্যামেরিকান। অপরজনের বাস বাড়ীর কাছেই এডমন্টনে, কিন্তু জানতাম না এত গুনী একজন এত কাছে থাকেন।
এবারের কনফারেন্সের থিম ‘দ্যা ডিভাইন ম্যানুয়াল’ যার মোটামুটি বাংলা হতে পারে ‘ঐশী নির্দেশনা গ্রন্থ’। সুতরাং কুর’আনের বিভিন্ন আঙ্গিক নিয়েই বক্তারা আলোচনা করেন।
উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন শেখ মুফতাহ মুহাম্মাদ আল সুলতানী। তিনি একজন স্বনামধন্য ডাক্তার (ক্যান্সার স্পেশালিস্ট) এবং বিখ্যাত কুর’আন পাঠক। তিনি মূলত আল কুর’আনের ভাষাতত্ত্ব, এর পাঠপ্রণালী, কুর’আন সংরক্ষণের ইতিহাস এবং কুর’আনের লৈখিক সঙ্কলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করেন। কুর’আনের দশ প্রকার পাঠ তিনি সূরা ফাতিহা থেকে সূরা নাস পর্যন্ত রেকর্ড করেছেন যার অংশবিশেষ ইউটিউবেও পাওয়া যায়। তাঁর আলোচনাটি ছিল সম্বৃদ্ধ এবং তথ্যবহুল। কিন্তু এটি বুঝার মত প্রাথমিক জ্ঞান আমাদের মত মূর্খ দর্শকদের না থাকায় আলোচনাটি জমে ওঠেনি তেমন। তবে জানার আরেকটি দিগন্ত উন্মোচন করায় তাঁর আলোচনাটি ভূমিকা রাখে।
পরবর্তী আলোচনা ছিল বোন ইয়াসমিন মুজাহিদের। তিনি মনোবিজ্ঞান এবং সাংবাদিকতায় মাস্টার্স করে ‘হাফিংটন পোস্ট’এর জন্য কাজ করেন। এর পাশাপাশি লেখালেখি করেন এবং বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তাঁর বক্তব্যের বিষয় ছিল ‘কুর’আনের মাধ্যমে অন্তরের চিকিৎসা’। তিনি কিছুদিন আগে ‘রিক্লেমিং ইওর হার্ট’ (অন্তরের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা) নামে একটি বই প্রকাশ করেন। মূলত এই বিষয়টি নিয়েই তিনি সংক্ষেপে বক্তব্য রাখেন। তাঁর বক্তৃতার স্টাইল প্রানবন্ত এবং গতিশীল। ফলে বিশেষ করে পুরুষ দর্শকরা তাঁকে দেখতে না পেলেও তাঁর বক্তব্য পরিপূর্ণভাবে বুঝতে সক্ষম হন। তিনি কুর’আনের কিছু দৃষ্টান্ত টেনে, যেমন মূসা (আ) এবং ইব্রাহীম (আ)এর বিপদাপন্ন অবস্থায় আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতার উদাহরণ দিয়ে, তুলে ধরেন যেকোন প্রকার বিপদে নির্লিপ্ত থাকার জন্য আল্লাহর প্রতি নির্ভরতাই মূল শক্তি।
এরপর আসেন শেখ ইয়াসির কাজী, অনেকের কাছে এই অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষন। তিনি একজন কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ার, আল মাগরিব ইন্সটিটিউটে শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা দিয়ে থাকেন। তিনি সূরা কাহফে মূসা এবং খিজর (আ) এর ঘটনা এবং এর মাধ্যমে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তাঁর উপস্থাপনা ছিল নিঃসন্দেহে চমৎকার। তবে এই বিষয়টি আগেই বিস্তারিত জানা থাকায় মনে হচ্ছিল তাঁকে অন্য কোন বিষয়ে বলতে দিলে ভাল হত।
এরপর মঞ্চে আসেন নও মুসলিম ক্রিস এবং ওপতলায় এরিন। তাঁরা নও মুসলিমদের ইসলাম গ্রহণ এবং অতঃপর উপযুক্ত তথ্য এবং সাহায্যের অভাবে পুণরায় ইসলাম ত্যাগের ধারা বন্ধ করার লক্ষ্যে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন যেখানে নও মুসলিমরা কাংখিত তথ্যাদি এবং অন্যান্য সকলপ্রকার সহযোগিতা পাবেন। তাঁরা নও মুসলিম এবং অমুসলিমদের আহ্বান করেন ইসলামকে বুঝার জন্য সাহায্য গ্রহন করতে এবং মুসলিমদের আহ্বান করেন তাদের ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে। লাঞ্চ ব্রেক হতে না হতেই হাফিজ সাহেব এদের দাওয়াত দেন আমাদের বাসায় একবেলা খেতে। কিন্তু এঁরা ঝাল খেতে পারেননা, খাওয়াব কি তাই ভাবছি।
এরপর একজন হতবিহ্বল অমুসলিম এবং একজন মুসলিমের মাঝে কাল্পনিক সংলাপসূচক কবিতা উপস্থাপন করে নও মুসলিম ফ্রেডি এবং তার বন্ধু হুসাম। কবিতা এবং উপস্থাপনা দু’টোই বিশেষ করে অল্পবয়সী দর্শকদের তুমুলভাবে আন্দোলিত করে।
পরবর্তীতে মঞ্চে আসেন ডক্টর আব্দুল্লাহ ইদ্রিস। তিনি বিগত ৩৫ বছর যাবত টরোন্টোতে ইসলামের প্রচার, প্রসার এবং সংরক্ষনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। ক্যানাডার প্রথম ইসলামিক স্কুল তাঁর উদ্যোগে গড়ে ওঠে। তাঁর বক্তব্যের বিষয় ছিল, ‘তাঁর চরিত্রই ছিল কুরআন’। এই প্রসঙ্গে তিনি একটি চমৎকার বইয়ের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন যার নাম ‘ইনিই রাসূলুল্লাহ (সা)’। ছত্রিশজন স্বনামধন্য লেখকের যৌথ প্রচেষ্টায় বইটি আত্মপ্রকাশ করে। একেকজনের নাম শুনেই তো আমাদের চক্ষু চড়কগাছ! সময়াভাবে তিনি রাসূল (সা)এর মাত্র কয়েকটি গুনাবলী তুলে ধরেন। ছয়শ পৃষ্ঠার বই কি এক ঘন্টায় আলোচনা করা যায়?
এর পরই যুহরের নামাজের বিরতি দেয়া হয়। এই বিল্ডিংয়ের নীচতলায় মসজিদ রয়েছে। পুরুষরা মসজিদে যান এবং মেয়েদের জন্য দ্বিতীয় তলায় নামাজের ব্যাবস্থা করা হয়। নামাজের পর দু’ঘন্টার বিরতি। আমরা বাইরে থেকে খাবার কিনতে গিয়ে দেখি লং উইকেন্ড উপলক্ষ্যে প্রায় দোকান বন্ধ, সব হালাল দোকান বন্ধ, খোলা কেবল ম্যাকডনাল্ডস এবং টিম হর্টন্স। টিম হর্টন্স থেকে ক’খানা ডোনাট এবং কফি দিয়েই ক্ষুধা নিবৃত করতে হোল। পথে দেখা হোল দানিয়ার সাথে। এই ক্যানাডিয়ান মেয়েটির সাথে আমার প্রথম দেখা হয় পাঁচ বছর আগে। আমি রাদিয়ার স্কুলের মিউজিয়াম ভ্রমনে ভলান্টিয়ার হিসেবে গেছিলাম। দানিয়া ওর বাচ্চাদের হোম স্কুলিং করাত, তার অংশ হিসেবে সে ওদের পাঁচজনকে মিউজিয়ামে নিয়ে এসেছিল। অসম্ভব স্মার্ট এই মেয়েটি উচ্চশিক্ষিতা, উত্তম শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে সে একাই পাঁচ পাঁচটি বাচ্চাকে বাসায় পড়ায়, একটি প্র্যামে একটি কোলে এমন পাঁচটি বাচ্চাকে গাড়ীতে সীটবেল্ট বেঁধে মাইনাস চল্লিশ তাপমাত্রায় মিউজিয়ামে চলে আসে। ওর সাথে অনেক কথা হয়েছিল। গতবছর সিরিয়ায় শিশুহত্যার বিরুদ্ধে ডাউনটাউনে প্রতিবাদে অংশগ্রহন করার সময় আবার দেখা হয়। এবার কনফারেন্সে। মজার বিষয়, সবসময় সেই আমাকে খুঁজে বের করে। আমি কখনোই পারিনা কারণ আমি আজ অবধি ওর চেহারা দেখিনি। এবার দেখলাম ওর মেয়েরাও নেকাব পরা শুরু করেছে। খেয়েদেয়ে আসরের নামাজ পড়ে নিলাম। কিছুক্ষণ পর আবার অনুষ্ঠান শুরু হোল।
অধিবেশনের শুরুতে মুসলিম কাউন্সিল অফ ক্যানাডার প্রেসিডেন্ট বক্তব্য রাখেন। এম সি সি’র ভবিষ্যত পরিকল্পনাগুলোর ওপর কিঞ্চিত আলোকপাত করেন তিনি, বিশেষ করে সত্ত্বর প্রতিষ্ঠিতব্য আল নূর মসজিদের কাজ কতটুকু অগ্রসর হোল তা নিয়ে।
এরপর মঞ্চে ফিরে আসেন ডক্টর আব্দুল্লাহ ইদ্রিস, ‘কুরআনে ঐক্য’সূচক বক্তব্য নিয়ে। অসাধারন বক্তব্যে তিনি বলেন আমাদের আল্লাহ্ প্রতিবার সম্বোধন করেছেন ‘ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানু’ (তোমরা যারা বিশ্বাস এনেছ) বলে। এখানেও তিনি মুসলিম, মুমিন কোন বিভেদ করেননি। আমাদের আল্লাহ্ এক, আমাদের আদিপিতা আদিমাতা এক, আমাদের কিতাব এক, আমাদের নবী এক তারপরেও আমরা উম্মত হিসেবে একত্রিত হতে পারবনা কেন? জামাতে নামাজ পড়া, জুমা, হাজ্জ্ব এগুলোর মাধ্যমে ঐক্যের ব্যাপারটিকেই তো গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আমাদের মূল সমস্যা আমরা কেবল ভাবি অন্যের আমাদের জন্য কি করা উচিত, ভাবিনা আমি অন্যের জন্য কি করতে পারলাম। তিনি উপদেশ দেন আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হলে আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলকে সবার ওপর প্রাধান্য দিতে হবে যেমনটা কুর’আনে বলা হয়েছে। তিনি তিনটি কাজের পরামর্শ দিয়ে বক্তব্য সমাপ্ত করেন- কুর’আনকে আঁকড়ে ধরা, পারস্পরিক সম্পর্কে ধৈর্য্যের পরিচয় দেয়া এবং কুর’আন এবং সুন্নাহকে মানদন্ড হিসেবে গ্রহণ করা।
এরপর শেখ নাভিদ আজিজ জানান ‘ঐশী নির্দেশনা গ্রন্থকে কিভাবে বুঝতে হবে’। প্রথমেই তিনি কুর’আনের সেই ভয়ানক আয়াতটি তুলে ধরেন যেখানে আল্লাহ্ বলেছেন, কিয়ামতের দিন রাসূল (সা) তাঁর উম্মতের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে নালিশ করবেন, ‘এরা এই কুর’আনকে পরিত্যাগ করেছিল’। তিনি পরিত্যাগের কারণ ও শ্রেনীবিভাগ তুলে ধরেন। অতঃপর তিনি কুর’আনের প্রতি প্রত্যাবর্তনের কয়েকটি সহজ উপায় তুলে ধরেন- নিয়মিত কুর’আন পড়া, এর অর্থ পড়া, আরবী শেখা সম্ভব না হলে অন্তত কুর’আনে ব্যাবহৃত শব্দগুলো শেখা যার সংখ্যা খবই কম। এরপর তিনি কুর’আন পড়ার উপকারীতা জানিয়ে বক্তব্য সমাপ্ত করেন।
এরপর ‘প্রাচুর্য এবং অভাব’ বিষয়ক আলোচনা নিয়ে আসেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং আমাদের মসজিদের ইমাম শেখ হাসিন শাইবানী। তিনি প্রমাণ উপস্থাপন করে দেখান যে প্রাচুর্য বা অভাব কোনটিই মানুষের স্বীয় প্রচেষ্টার ওপর নির্ভর করেনা বরং আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তিনি জানান প্রাচুর্যের মূল উপাদান হোল বেশি বেশি করে তাওবা করা, শুকরিয়া করা এবং দান করা। অনেক ক্ষেত্রে প্রাচুর্য পরীক্ষাও বটে, আল্লাহ্ যাকে ভালবাসেন তাকে এই পরীক্ষা থেকে বাঁচিয়ে দেন যদিও সে প্রাচুর্যের আকাঙ্খা রাখে। আর যাকে তিনি পরীক্ষায় ফেলতে চান তাকে প্রাচুর্যে নিমজ্জিত করে দেন।
এরপর ফিরে আসেন বোন ইয়াসমিন মুজাহিদ। তিনি আসিয়া (আ), মারিয়াম (আ) এবং মূসা (আ)এর মায়ের উদাহরণ দিয়ে একজন মুসলিমার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, তাঁর বিশ্বাসের দৃঢ়তা এবং তাঁর খুশির প্রতি আল্লাহর সদাসজাগ দৃষ্টি- এই বিষয়গুলোর প্রতি আলোকপাত করেন।
এরপর আরেক বোন হিরাত তাঁর স্বরচিত কবিতা পড়ে শোনান। সুবহানাল্লাহ! প্রতিটি শব্দ যেন ছিল জীবন্ত ঈমান! আর কি অদ্ভুত কবিতার উদাহরনগুলো! যেমন, ‘আল কুর’আন যদি উঠে দাঁড়িয়ে হেঁটে চলে বেড়াতে পারত তবে সে হত রাসূল (সা)’!
অনুষ্ঠানের শেষ বক্তব্য ছিল ‘কুর’আনের আলৌকিকতা’, বক্তা শেখ ইয়াসির কাজী। এই বক্তব্যটি আসলেই ছিল দিনের সেরা বক্তব্য। এমনকি বাচ্চারা সিটের প্রান্তে বসে প্রবল মনোযোগ দিয়ে শুনেছে এই বক্তব্যের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এবং তারপরও আক্ষেপ করেছে, ‘যদি আরেকটু বলত!’ তিনি দেখান কিভাবে প্রতিটি জাতির কাছে এমন আলৌকিক নিদর্শনই পাঠানো হয়েছে যা নিয়ে তারা অহংকার করত। যেমন ফির’আউনের সভায় যাদুকররা যাদুবিদ্যায় সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জন করেছিল, তাই মূসা (আ)এর লাঠি দেখেই তারা সাথে সাথে ঈমান এনেছিল যেহেতু তারা জানত এটি যাদু হতেই পারেনা। সালেহ (আ)এর জাতি পাহাড় খুদে বাড়ী বানাত যা আজও বর্তমান অথচ কেউ জানেনা এই কাজ তারা কিভাবে করেছে, তাই আল্লাহ্ পাহাড় থেকে জীবন্ত উটনী সৃষ্টি করে তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। রোমানরা চিকিৎসাবিদ্যায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিল, তাই ঈসা (আ)কে পাঠানো হয় চিকিৎসার যোগ্যতা দিয়ে যা আজ অবধি কেউ করে দেখাতে পারেনি। রাসূল (সা)এর যুগে আরবরা ভাষা ও সাহিত্যের সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থান করছিল যা আজ অবধি কোন ভাষায় কেউ অতিক্রম করে পারেনি। তাই আল্লাহ্ কুর’আন নাজিল করলেন এমন ভাষায় যা শুনেই ওদের কবিরা স্বীকার করতে বাধ্য হত, ‘এটি কিছুতেই মানুষের তৈরী হতে পারেনা, মুহাম্মাদ (সা)এর মত অশিক্ষিত ব্যাক্তির তো কোনভাবেই নয়’। একইভাবে এর বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ করলেও দেখা যায় প্রতিটি বিষয়ে এখানে যে আলোচনা রয়েছে তার কোথাও কোন ভুলত্রুটি নেই ঠিক যেমন আল্লাহ্ কুর’আনেই বলেছেন এই কিতাব মানুষের তৈরী হলে এতে অবশ্যই ত্রুটি থাকত যেহেতু মানুষ ত্রুটির উর্ধ্বে নয়। এবং সবশেষে তিনি বলেন এই কুরআন আজ প্রায় সাড়ে চৌদ্দশ বছর যাবত অক্ষত অবস্থায় বিদ্যমান, হাজার হাজার মানুষের হৃদয়ে অঙ্কিত, জীবনের প্রতিটি স্তরে ব্যাবহৃত এবং মানুষকে পথ দেখানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছে কোন সম্পূরক আলৌকিকতা ছাড়াই- এটাই তো একটা আলৌকিক ব্যাপার!
রাতটা শেষ হয়ে গেল। বেরোবার সময় অনেক বন্ধুবান্ধবের পাশাপাশি নও মুসলিম সেন্টারে আবার কথা বললাম। শেখ ইয়াসির কাজীর সাথে দেখা হোল। ফিরে এসে ভাবছি কুর’আনকে যথাশীঘ্র আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা আমাদের জীবনের জন্যই অত্যন্ত জরুরী।
বিষয়: বিবিধ
১৮২৪ বার পঠিত, ৪৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
(ঐ হারিকেনটা এই কমেন্ট না দেখলেই হয়) আপু চান্স মিস করতে চাইনি। কারন জানি নিচের জন এবং আরো দুই তিনজন আছেন তারা না আবার দখল করে।
আপু তবে আসিতেছি ভালো করে পড়ে। কারন আপনার অনেক লিখা আমি একাধিকবার পড়ি।
ধন্যবাদ আপনাকে , শেয়ার করার জন্য।
এই সম্মেলনের প্রসিডিংস কি ইন্টারনেট এ পাওয়া যাবে? আপনার লিখা পড়েই বক্তৃতাগুলি শুনতে ইচ্ছা করছে। সম্ভব হলে কয়েকটি বক্তৃতার বিষয় আলোচনা করে পোষ্টি দেবেন।
দানিয়ার কথা জেনে খুবি ভালো লাগলো! আমাদর প্রচেষ্টাকেও আল্লাহ কবুল করুন! আমীন!
কুর’আনকে আঁকড়ে ধরা, পারস্পরিক সম্পর্কে ধৈর্য্যের পরিচয় দেয়া এবং কুর’আন এবং সুন্নাহকে মানদন্ড হিসেবে গ্রহণ করা।
সুন্দর মসেজটি আমরাও যেনো কাজে লাগাতে পারি!
‘যদি আরেকটু বলত!’ আমার মনে হচ্ছে আপু আপনি আরেকটু লিখতেন!
আল্লাহ আমাদের ঐক্যবদ্ধ জাতী এবং কোরআন ওয়ালাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে দিন! আমীন!
এতো গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয় শেয়ারকরার জন্য শুকরিয়া!
দু’আ কোর যেন এই অনুষ্ঠানের শিক্ষাটাকে কাজে লাগাতে পারি আপু
২০০৮ সালের জানুয়ারীতে ঢাকায় (বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ) ইসলামী আইন ও বিচার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সেমিনার হয়েছিল । আমি অবশ্য সে সেমিনারে উপস্থিত হতে পারিনি ।
ইয়াসির কাজী, ইয়াসির ফাজাগা, বিলাল ফিলিপসদের ভাগ্য ভাল, তারা পাশ্চাত্যে তাদের দ্বীনি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন । এই উপমহাদেশ তাদের কর্মস্থল হলে, 'দাড়ি ছোট কেন', এরকম ফালতু প্রশ্ন করে তদের বিব্রত করা হত, জাকির নায়েককে যেমন বিব্রত করা হচ্ছে ।
মূলতঃ ইসলামের সুষমা ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি তখনি হয় - যখন এটাকে টেস্টে ফেলা হয়। বাংলাদেশের মুসলিমরা মাত্র বছর পাচেক আগে টেস্টিং এ পড়েছে - নিঃসন্দেহে সাইনিং হবার সময় ও শীঘ্রই এসে যাবে।
আর লেখিকাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন জীবন্ত মিনিটস উপস্থাপনের জন্য।
ঠিকই বলেছেন,আমরা গুরুত্বহীন জিনিসকে গুরুত্ব দেই বেশী। শ্রদ্ধেয়/শ্রদ্ধেয়া বক্তারা আমাদের দেশে গেলে তাদের বক্তব্যের উপরে আলোকপাত করার চেয়ে দাঁড়ির দৈর্ঘ্য, শ্রদ্ধেয়ার নিকাব, গায়রে মাহরামের সামনে তাঁর কথা বলা উচিত হবে কিনা ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব পেত বেশী। এজন্যই আজ আমাদের এত অধঃপতন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
সাদাচোখে ভাই ঠিক বলেছেন, প্রাচুর্য এবং আরামদায়ক জীবন মানুষকে আল্লাহর স্মরন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। প্রতিকুল পরিবেশে সত্য এবং মিথ্যার পার্থক্য করা সহজতর। তাই এখানে ইসলাম দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে এবং মুসলিম দেশগুলোতে মুসলিমরা মার খাচ্ছে।
তারাচাঁদ ভাই আপনি লিখেন কিনা জানিনা, তবে আপনার সুচিন্তিত মন্তব্যগুলো পড়লে সবসময়ই মনে হয় আপনার নিয়মিত লেখা উচিত - বৃত্তের বাইরের আপুটাকে বৃত্তের ভেতরে টেনে নিতে চাই এই চমৎকার মন্তব্যের জন্য
জাজাকাল্লাহ আমাদেরকে ফ্রিতে কনফারেন্সে যোগদান করার সুযোগ করিয়ে দেবার জন্য।
জাজাকাল্লাহ
অসাধারণ!!
কুর’আনকে যথাশীঘ্র আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা আমাদের জীবনের জন্যই অত্যন্ত জরুরী।
তীব্রভাবে একমত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সে তাওফিক দান করুন।
এই রকম আরো লেখা পাবো আশা রাখি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন