শুধু নারীর পর্দায় সমাজ শুদ্ধ হতে পারেনা
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ নূর উদ্দীন ১৮ জুন, ২০১৪, ১০:০৫:১০ সকাল
আমি তখন মিরপুর ১০নং ও আমার এক সহকর্মী মিরপুর ১৩নং থেকে গাজীপুর কোনাবাড়িতে যমুনা গ্রুপের একটি প্রতিষ্টানে কাজ করতাম । বনানী কাকলী থেকে ময়মনসিংহ বা টাংগাইলের বিভিন্ন সার্ভিসে আমাদের যাতায়াত ছিল । আমাদের একি বাসে বনানী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তায় নেকাব পরিহিত একজন মেয়ের নিয়মিত যাতায়াত ছিল । নেকাবের ফাকে ধবধবে ফর্সা স্ক্রিনের উপর হালকা মেকাপ নিয়ে কপালে একটি টিপ লাগাতেন ঐ মেয়ে । আমার সেই কলিগের ঐ সুন্দর চোখ দেখেই ভাল লেগে যায় । মাঝে কয়দিন দেখা না হলে তার অস্হিরতা কিছুটা বেড়ে যায় । পরে যেদিন দেখা সেদিনই মেয়েটির সাথে কথা বলে । ধরনটা ঠিক এরকম ' কেমন আছেন, আমিতো কদিন ধরে আপনাকে খুজছি'। মেয়েটিরো ঠিক একিরকম জবাব, 'আমিওতো'। তারপর একদিন দুজনে টংগীতে দেখা করে । মেয়েটিকে রেস্ট্রুরেন্টে খাবার অফার করে । যাতে চেহারাটা ভালমত দেখতে পারে । মেয়েটির জন্য ফুল ও কয়েকটি বই উপহার নিয়ে যায় । মেয়েটিও কিছু একটি নিয়ে আসে । কিছু কুৎসিত কাজের মাধ্যমে সেটাই তাদের শেষ দেখা । যদিও মেয়েটি নেকাব উঠানোর আগেই তাকে বলে দিয়েছিল আপনি আমাকে যত সুন্দর মনে করেছেন, আমি আসলে অতটা না । ঘটনার পর সেই কলিগ একদিন আমাকে সব খুলে বলে ।
কেউ নেকাব পরলে তা অবশ্যই সম্মানের চোখে দেখি । কিন্তু বাস্তব ঘটনাটি বলার পিছনে আমার একটিই উদ্দেশ্য - আমাদের হুজুররা যুক্তি দিয়ে মেয়েদের চেহারা ঢেকে রাখা ফরজ বানিয়ে ফেলেন । একজন বিখ্যাত সমালোচক ও গীবতকারী মাদানীর ওয়াজেও একি হাল, ' মেয়েদের মূল আকর্ষন ও সৌন্দর্য যেহেতু চেহারায় তাই চেহারা ঢেকে রাখা ফরজ' । কিন্তু আমি দেখি চেহারা ঢেকে ফেললেও চোখ যদি সংযত না রাখা যায় তাহলে বিপর্যয় অনিবার্য । গত লেখায় যেটি বলতে চেয়েছিলাম । নর-নারী উভয়কেই চোখের পর্দা করতে হবে । যেমনটি মহান আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন ' মুমিন পরুষ এবং নারীদের জন্য যাতে তারা পর নারী ও নর থেকে দৃষ্টিকে নত রাখে ।দৃষ্টি সংযত না রাখলে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই বিপদের কারন, যেমন উপরে বর্নিত বাস্তব ঘটনাটি । কিন্তু হুজুররা যতটা নারীদেরকে আফগানী স্টাইলে ঢেকে রাখতে চান, নিজেদেরচোখের হেফাজতের ওয়াজ ততটা করেননা !!!
সর্বোপরি মহান আল্লাহর ভয়তো মনে থাকতেই হবে । যেমনটি গত লিখায়ও ছিল, কাবাঘর তাওয়াফ করার সময় নারীদের চেহারা খুলে রাখতে হয় ।( যা আমাদের হুজুররা যুক্তি দিয়ে ফরজ বানিয়ে ফেলেন ।) পাশাপাশি তাওয়াফ করলেও আল্লাহভীতির কারনে মনে খারাপ চিন্তা ভর করেনা ।
বিষয়: বিবিধ
১২৫৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু এসব না করলে গল্প-কবিতা-উপন্যাস- নাটক-সিনেমা সৃষ্টি হবে না । বিভিন্ন পোশাক ও প্রসাধন সামগ্রীর মার্কেট ধ্বসে যাবে । ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলো বিশাল সব লস করে এক সময়ে বন্ধ হয়ে যাবে ।
সর্বপোরি দেশের ইকোনমি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে ।
নেকাবের মাধ্যমে চেহারা ঢাকা যায় কিন্তু মন ঢাকা যায় না । এমনকি নারী দৃষ্টি অবনত রাখলে-ও মন-কে ঢেকে রাখা সম্ভব নয় ; তবে আকর্ষণ বা কৌতুহল হ্রাস করা সম্ভব ।
কন্ঠস্বরের-ও পর্দা আছে বহুল পরিমাণে। তার কোনো উল্লেখ দেখলাম না লেখায় ! একজন পুরুষের দিকে না তাকিয়ে-ও শুধুমাত্র তার আকর্ষণীয় কথা শুনে-ও তার প্রতি দুর্বলতা জন্মাতে পারে ! তেমনিভাবে নারীর ক্ষেত্রে পুরুষের ।
সালাফী শায়খ মাদানী তাঁর ওয়াহাবী আক্বিদার কারণে আমার কাছে পছন্দের নয় । তবে তিনি গীবতকারী নন । তিনি কারো সমালোচনা করার আগে সমালোচনার শরয়ী সীমারেখা ও শর্তাবলী সম্বন্ধে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন । গীবতের নিরঙ্কুশ সংজ্ঞায় কেউ পার পাবে কিনা আমার সন্দেহ । তিনি-ও রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ । তার কন্ঠস্বর মাঝে-মধ্যে ঝাঁঝালো মনে হতে-ই পারে । আল্লাহ তাঁকে বিচার করবেন তাঁর নিয়ত অনুসারে ।
মাওলানা সাঈদী সমালোচনার উর্দ্ধে কোনো ব্যক্তি নন । ব্যক্তি-পূজা ভক্তের মনে অন্ধ বিশ্বাস ও আনুগত্য সৃষ্টি করে । মাওলানা সাঈদীর ওয়াজের কন্ঠস্বর বাংলাদেশে অতুলনীয় ।
মাদানী মেয়েদের চেহারা ঢাকা নিয়ে যে ধরণের যুক্তি দেন, সাঈদীর ওয়াজে-ও ঐ এক-ই কথা শুনেছি ।
“কাবাঘর তাওয়াফ করার সময় নারীদের চেহারা খুলে রাখতে হয় ।” - এটি সালাফী শায়খ-দের দলীল অনুসারে ভুল কথা । মাথার উপর থেকে এমন একটি উড়না ঝুলিয়ে দেয়া যায় যা চেহারাকে স্পর্শ করে না ; করলে-ও অসুবিধা নাই । (দেখুনঃ হাজীদের সম্বল, আস-সুলাই ইসলামী দা'ওয়া সেন্টার, রিয়াদ, পৃষ্ঠা নং ৪৩-৪৫)
ব্যক্তিগতভাবে আমি সৌদী উলামাদের মতামত বা ফাতোয়া বেশীর ভাগ সময়ে-ই অনুসরণ করি না ; কারণ তারা কুর'আন-হাদীসের আক্ষরিক অর্থের প্রতি নজর দিয়ে সঠিক মতামত বা ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয় । উপরের ক্ষেত্রে-ও এক-ই কথা প্রযোজ্য । তবে এস্থানে আমি এসব নিয়ে আলোচনায় প্রবৃত্ত হবো না ।
আমি বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছি এক অনিন্দ্যসুন্দরী বাংলাদেশী হাজ্বীর কথা যিনি ভীড়ের মধ্যে তাওয়াফ করা কালে তার এক ঘাড়ের উপর হাত রেখে এক যুবক বেশ কিছু সময় তাওয়াফ করেছে ! উনার স্বামীর হঠাৎ করে ব্যাপারটি নজরে আসলে লোকটি কেটে পড়ে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন