স্হায়ী সদস্যদের ভেটো ক্ষমতা, আদালতে গনতন্ত্র চর্চা ও কাদের মোল্লার প্রানদন্ডাদেশ !
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ নূর উদ্দীন ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৭:১১:৩৯ সকাল
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের যে ৫টি স্হায়ী সদস্য দেশ রয়েছে কোন একটি বিষয়ে (কোন দেশের উপর অবরোধ, হামলা বা সাহায্য যেটি হোক) ৫টি দেশের যে কোন একটি যদি বিরোধিতা করে যাকে 'ভেটো' দেয়া হিসেবে আমরা বুঝি তাহলে সে বিষয়ে সব সদস্য দেশ এক সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি বিবেচনায় কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়না । অর্থাৎ সংখ্যাগরিস্টের মতামত বা পক্ষে অবস্হান গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে যদি না সবাই ঐক্যমতে পৌছাতে না পারে । এখানে গনতন্ত্র পুরোপুরি অকার্যকর ।
বাংলাদেশের উচ্চ-আদালত আবদুল কাদের মোল্লা নামক একজন মানুষকে প্রানদন্ডের আদেশ দিয়েছেন । ৫জন বিচারকের প্যানেলের ৪জন প্রানদন্ডের পক্ষে ও ১জন বিপক্ষে মত দিয়েছেন । এখানে ভেটো ক্ষমতা নয়, গনতন্ত্র চর্চা করা হয়েছে । অনেকটা নির্বাচনে ভোটাভুটির মত । যার পক্ষে লোক বেশী সেই জিতবে।
- এ বিচারে একজন মানুষকে আইনের মাধ্যমে হত্যা করা হবে, অর্থাৎ জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়া হবে । মানুষটি অপরাধী হলে অবশ্যই তার যথোপযুক্ত সাজা হওয়া উচিত । সেটা প্রানদন্ড হোক আর যাবজ্জীবন কারাদন্ড হোক । কিন্তু ৫ম বিচারক যে বিবেচনায় তাকে সাজার বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন এখানে তা মূল্যহীন ? অথবা যদি কাদের মোল্লা এ অপরাধগুলোর সাথে জড়িত ছিলনা এমনটি হয় ।
- হযরত আয়েশা রাঃ এর উপর জেনার অপবাদ আরোপিত হয়েছিল । মহান আল্লাহ ওহি নাজিল করে তার সচ্চরিত্রতার সুসংবাদ দিয়েছিলেন একি সাথে যারা এ অপকর্মে লিপ্ত ছিল ও হবে এবং যারা জেনায় লিপ্ত হবে সবার জন্য শাস্তির বিধান দিয়েছেন ।
- এখনতো আর আল্লাহর কাছ থেকে ওহি এসে কোন নারীকে নিরপরাধ ঘোষনা করবেনা । তাই কাউকে অপরাধী হিসেবে সাজা দিতে হলে অবশ্যই নিয়ম মাফিক পথে এগুতে হবে ।
- কোন চারজন লম্পট 'চাক্ষুস স্বাক্ষী' হিসেবে যদি বারবনিতা টাইপের কাউকে দিয়ে ৫ম কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষনের মিথ্যা অভিযোগ আনে তাহলে কি সে লোকটির উপর জেনার শাস্তি /হদ জারি হবে ?
কিছু বিষয়ে সত্যিকারেই গনতন্ত্র খাটেনা । যেমন, তিনবন্ধু ভ্রমনে বের হয়ে দুইজনের মতে নেতা নির্বাচন করা গেলেও দুইজনের মতের ভিত্তিতে চুরি করা বৈধ হয়ে যায়না । এমনকি তিনজন মত দিলেও তা বৈধ হবেনা ।
কাজীর বিচার ও ইনসাফ কায়েম
আমরা একটি উপসংহারে আসতে পারি । ন্যায় বিচার বা ইনসাফ কায়েমের জন্য ভেটো ক্ষমতা বা গনতন্ত্রচর্চা কোনটাই কার্যকরী নয় । মূলত যারা বিচার কার্যের সাথে জড়িত থাকবে তদন্ত কর্মকর্তাসহ বিচারকদেরকে ১০০% নিরপেক্ষ ও সৎ থাকতে হবে । কারোপ্রতি যদি এতটুকুও দূর্বলতা বা ক্ষোভ থাকে তাহলে সেখানে ন্যায়বিচার সম্ভব নয় । বিচারকরা যদি আগে থেকে ধরেই নেন আবদুল কাদের মোল্লা অপরাধী হয়ে থাকবেন যেহেতু তিনি ঐ দলের সাথে যুক্ত যারা স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল তাহলে ন্যায় বিচার হবার আশাকরা অমূলক । বিচারকের আসনে বসে আবেগ তাড়িত হয়ে গেলে তিনি তৎক্ষনাত বিচারকের যোগ্যতা হারাবেন স্বাভাবিক নিয়মে।
মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লার সাঃ যখন বিচার করেছিলেন ইনসাফের ভিত্তিতেই করেছিলেন, মুসলমান না মুশরিক তা বিবেচনায় আনেননি । ফলে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর বিচারের রায় মুসলমানের বিপক্ষে যাবার ইতিহাস রয়েছে । সুতরাং ন্যায় বিচারের জন্য যোগ্যতার সাথে সাথে বিচারকদের মহান আল্লাহ ও পরকালের উপর বিশ্বাসটাও অনেক জরুরী ।
বিচারকদের একটি বিষয় মনে রাখতে হয়, অপরাধী কাউকে শাস্তি দেয়াটাও যেমন ইনসাফ । তেমনি, সন্ধেহ বা আবেগের বশবর্তী হয়ে নিরপরাধ কাউকে সাজা দেয়াটাও অন্যায় আর তা যদি মৃত্যুদন্ড হয় তাহলে তার কোন প্রতিকার নেই।
বিষয়: বিবিধ
১৫৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন