লেখাটি পড়ুন। মদীনা যিয়ারতে যেতে চাইলে আপনার জন্য সহায়ক হবে
লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত হুসাইন নবীনগর ১৫ জুলাই, ২০১৬, ১১:১৪:০৩ সকাল
দিন লিপি।
(এক)
শেষ হল রহমত বরকত নাজাতের মাস রমজান। আজ ফজরের আজান দিয়ে মসজিদে জামাতের অপেক্ষায় আছি রমজান মাসের মত বেশী নামাজি নেই। ফজরের নামাজ পড়ে বাসায় এসে কিছুক্ষন বিশ্রাম করলাম । সারা রাত গেল নির্ঘুম চেষ্টা করলাম একটু ঘুমাতে। চোখে ঘুম আসছেনা। জুম্মা নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে চলে গেলাম মসজিদে নববীতে। লাখো মানুষের সাথে আরামদায়ক পরিবেশে জুমামার নামাজ আদায় করলাম। জমজমের পানী পান করলাম।
(দুই)
কাতার থেকে পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য আসছেন মাওলানা মাহফুজুর রহমান ভাই। মুহতারাম লাবীব আব্দুল্লাহ ভাই আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন তার কথা।জুম্মা নামাজ পড়ে বাংলাদেশী মার্কেটের ঢাকা হোটেলে দুপুরের খাবার খেলাম মেহমানকে নিয়ে।তার পর বেড়িয়ে পড়লাম মদীনার ঐতিহ্যবাহী কিছু স্থান পরিদর্শনের জন্য।
প্রথমেই গেলাম কুবা মসজিদে।আসুন কুবা মসজিদ সম্পর্কে কিছু জেনে নেই।
মসজিদে কুবা
ঐতিহাসিক কুবা মসজিদে
মহানবী (সা.)-এর স্মৃতিধন্য মদীনার কুবা মসজিদ (قباء مسجد ) এটি পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন মসজিদ, যার ভিত্তি স্থাপন করেন স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে মদীনা হিজরতের পর ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে।মদীনায় এসে তিনি সর্বপ্রথম এ মসজিদে ১৪দিন অবস্থান করেন।মসজিদের পরিবেশ অত্যন্ত শান্ত, স্নিগ্ধ ও মনোরম।কুবা মসজিদ কমপ্লেক্সে রয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, আধুনিক অযুখানা, মার্কেট, পার্কিং প্যালেস, ক্যাফে ও পাঠাগার। মহিলাদের নামাযের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যবস্থা।৬মিনার বিশিষ্ট কুবা মসজিদের পরিসর বেশ প্রশস্ত ও খোলামেলা। ১৯৮৬ সালে মিশরীয় স্থপতি আবদুল ওয়াহেদ আল ওয়াকীর তত্ত্বাবধানে নতুনভাবে সংস্কারের সময় মদীনার স্থাপত্য ঐতিহ্যকে অক্ষুন্ন রাখা হয়।মসজিদে কৃষ্ণ, লোহিত ও শ্বেত বর্ণের পাথরের ব্যবহার চোখে পড়ে।
হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী কুবা মসজিদে দু’রাকাআত নামায আদায় করলে এক ওমরাহ-এর সওয়াব পাওয়া যায়।ইমাম আহমদ ইবন হান্বল, আন নাসাঈ, ইবন মাজাহ ও হাকেম নিশাপূরীর বর্ণনা মতে মহানবী (সা.) প্রতি শনিবার কুবা মসজিদে যেতেন কখনো উট বা ঘোড়ায় আরোহণ করে অথবা পদব্রজে এবং দু’রাকাআত নামায আদায় করতেন।
কুবা মসজিদের প্রসঙ্গ রয়েছে পবিত্র কুরআনের সূরা তাওবা-এর ১০৮ নম্বর আয়াতে। হাদীসেও কুবা মসজিদের প্রসঙ্গ বিদ্যমান। সহীহ আল বুখারীর ১৯ জায়গায়, সহীহ মুসলিমের ১৩ জায়গায়, সুনানু আবি দাউদের ২ জায়গায় এবং মুয়াত্তা মালিকের ৬ জায়গায় কুবা মসজিদের প্রসঙ্গ উল্লিখিত হয়েছে। আমরা এই মসজিদে দু-রাকাত নামাজ আদায়ের সৌভাগ্য অর্জন করি।
000
(তিন)
মসজিদে কিবলাতাইন
তারপর আমরা মসজিদে কিবলাতাইন পরিদর্শন করি।
মসজিদ আল কিবলাতাইন (দুই কিবলার মসজিদ) সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত একটি মসজিদ। ঐতিহাসিক দিক থেকে এই মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নামাজ পড়ার সময় মুহাম্মদ (সা এর কাছে কিবলা পরিবর্তণের নির্দেশের ওহি আসে। এরপর তার সাথে জামাতে নামাজে দাঁড়ানো মুসল্লিরাও জেরোজালেম থেকে মক্কার দিকে ফিরে যায়। এ ঘটনা থেকে এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। পূর্বে এই মসজিদে দুইটি মিহরাব ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে মসজিদের পুন:নির্মাণের সময় জেরুজালেমমুখী মিহরাব সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এটি পৃথিবীর প্রাচীন মসজিদগুলোর অন্যতম।ঐতিহ্যবাহী আরবীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এ ঐতিহাসিক মসজিদের মুসল্লি ধারণক্ষমতা দুই হাজার। মসজিদটির আয়তন তিন হাজার ৯২০ স্কয়ারমিটার। গম্বুজসংখ্যা দুটি, ব্যাস আট মিটার ও সাত মিটার। উচ্চতা ১৭ মিটার। মিনারসংখ্যা দুটি। ইসলামের স্বর্ণালি ইতিহাসে ‘মসজিদে কিবলাতাইনের ভ্রমণে আসলে আপনার মন জুড়াবে ইনশা আল্লাহ।
(চার)
মসজিদে কিবলাতাইন পরিদর্শন করে আমরা চলে আসি ঐতিহাসিক উহুদ প্রান্তরে।
উহুদ যুদ্ধে শহীদদের কবর যিয়ারতের সৌভাগ্য লাভ করি। উহুদ পাহাড়কে ঘিরে গড়ে উঠেছে বাণিজ্য ও আবাসিক এলাকা। উহুদের যুদ্ধে শাহাদাতবরনকারী সাহাবীদের কবরের পাশে একটি সাইনবোর্ডে সরকারীভাবে যুদ্ধের মানচিত্র আঁকা রয়েছে।যুদ্ধের বিবরণ, সৈন্য সংখ্যা, শত্রুশিবির, মুসলমানদের অবস্থান, গমনাগমনের পথ নির্দেশিত রয়েছে। মাঠের এক পাশে নির্মানাধীন রয়েছে নবীজির(সাঃ) প্রিয় চাচা বীর আমীর হামজা(রাযিঃ)মসজিদ।
৬২৫খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মার্চ উহুদ পর্বতমালার পাদদেশে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।এটি ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় সশস্ত্র যুদ্ধ।মুসলমানদের পক্ষে হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও মক্কার কুরায়শদের পক্ষে আবু সুফিয়ান স্ব স্ব দলের নেতৃত্ব দেন। ৩ হাজার শত্রু বাহিনীর সাথে মাত্র ৭ শত মুসলিম পদাতিক সৈন্য সমর ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হন। বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে ৭০জন সাহাবী শাহাদত লাভ করেন। এ যুদ্ধে মুসলমানগণ সাময়িক বিপর্যয়ের শিকার হলেও মক্কার কুরায়শগণ পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং মদীনা দখলের সাহস করেনি। পবিত্র কুরআন, হাদীস ও সীরাত গ্রন্থে উহুদ যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। উহুদের মাঠ শাহাদাতবরনকারী সাহাবীদের কবর পরিদর্শন করে আমরা চলে আসি মসজিদে নববীতে।
52
উহুদের মাঠ,পাহাড় আর যুদ্ধে শাহাদাতবরন কারী সাহাবীদের কবর।এখানে রয়েছে নবীজির চাচা সাইয়্যেদেনা হামজা (রাযিঃ) এর কবর।
ওহুদ প্রান্তর
(পাঁচ)
গতকালের নির্ঘুম সারা রাত। দিনের ভ্রমন শেষে মেহমানকে বিদায় জানিয়ে বাসায় এসে মাগরিবের নামাজ আদায় করলাম।
বিষয়: বিবিধ
২৩৪২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যেখানে দাড়িয়ে ওহুদ পাহাড় ও হামযা (রাঃ) কবরের এর ছবি তুলেছেন সেই পাহাড়টির নাম জাবালে রোমা ।
ওহুদের যুদ্ধের সময় এই পাহাড়ে দাড়িয়ে গিরিপথ পাহারা দেবার জন্য নবীজী বলেছিলেন সাহাবীদের । কিন্তু নবীজীর নির্দেশ পালনে গাফিলতির জন্য পরাজিত হয়ে ফিরে যাওয়া কাফিররা পিছন দিক থেকে আক্রমন করে । হামযা (রাঃ) এতে শহীদ হন এবং হুজুর (সাঃ) এর সামনের পাটির একটি দাঁত মোবারক শহীদ হয়।
সময় পেলে আমার এফবিতে আসবেন
মন্তব্য করতে লগইন করুন