প্রবাসে প্রথম ঈদ স্মৃতি
লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত হুসাইন নবীনগর ০৬ জুলাই, ২০১৬, ০৯:০৩:২১ রাত
সেই ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে নাম লেখিয়েছি প্রবাসের খাতায়। একে একে কেটে গেল মূল্যবান আটটি বছর। স্বজনহীন প্রবাসের এই আট বছরে তিনটি ঈদ করেছি স্বজনদের সাথে দেশে। বাকি সবগুলো ঈদ এই প্রবাসে। দেশের মতো এখানেও আকাশে ঈদের চাঁদ উঠে, ঈদগাহে ঈদের জামাত হয়। নামাজ শেষে বন্ধুদের সাথে কোলাকুলি করি। কিন্তু দেশের সেই প্রশান্তি অনুভব হয় না। ঈদের চাঁদ দেখার জন্য আকাশের চাঁদ খুঁজে ফিরি না। এখানে মসজিদের মাইকে কেউ ঘোষণা করেন না ঈদ মোবারক, আগামীকাল পবিত্র ঈদুল ফিতর। আমাদের ঈদগাহে আগামীকাল সকাল…ঘটিকায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
এখানে ঈদ কার্ডের মাধ্যমে কেউ দাওয়াত দেয় না।নামাজ শেষে রং বেরংয়ের আইটেমের খাবার সাজিয়ে কেউ অপেক্ষা করে না আমাদের জন্য। দল বেঁধে কেউ আসে না ঈদের সালামি নিতে। এখানে ক্যালেন্ডারের লেখা দেখে ঘড়ির টাইমে যেতে হয় ঈদগাহে। নামাজ শেষে সবুজ অরণ্যে ঘুরে ফিরে আনন্দ করা হয় না। সুযোগ থাকলেও ইচ্ছে থাকে না। আবার ইচ্ছে থাকলে সুযোগ হয় না। আমি আমরা আনন্দ করলে যে দেশে থাকা ভাই-বোন ছেলে-মেয়েদের আইফোন কেনার টাকা হবে না! ঈদের মার্কেটই বা করবে কিভাবে?
সময়ের নিয়মে ঈদ আসে ঈদ যায়, প্রবাসীরা প্রবাসীই থেকে যায়। তারপরও প্রবাসের ঈদস্মৃতির অ্যালবামে জমা থাকে কিছু কথা। সে রকম কিছু কথা আমারও আছে। শুনবেন আপনি? আমি আবার কষ্টের কথাগুলো কষ্টের রং মেখে লিখতে পারি না। আকর্ষণীয় বেতন আর আরামের চাকরির লোভ সামলাতে না পেরে শিক্ষকতার মহান পেশা ছেড়ে প্রবাসী হয়েছিলাম। এখানে এসে দেখতে পেলাম অনেক পরিশ্রমের কাজ। অনেক চেষ্টা তদবিরের পর অল্প কদিনেই আল্লাহ পাক মসজিদে ইমামতির ব্যবস্থা করলেন। বেতন কোম্পানি থেকে যা পাবো তাই। বাড়তি হিসেবে পাবো বছরে রমজান শেষে একটি বোনাস যা তখনকার হিসেবে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। অফারটা মন্দ না, আমিও রাজি হয়ে গেলাম। সবকিছুই চলছে হিসেবে মতো।
শুরু হলো রমজান মাস। আর কদিন পরই আমার বোনাস পাওয়ার কথা। ইতোমধ্যে আমার আরও দুটি কাজ মিলেছে বেতনভিত্তিক একটি দোকান পরিচালনা করি এবং মাদরাসার ২৮জন ছাত্রকে দিনে দুই ঘণ্টা কোরআন শরিফ পড়াই। ২৭ রমজানে তারাবিতে আমার কোরআন খতম শেষ হবে বাংলাদেশি একজন মুসল্লী এসে আমার খুব প্রশংসা করে হাতে এক কেজি মিষ্টির দাম দিয়ে বললেন, আমিও সাথে কিছু দিয়ে যেন সবার জন্য মিষ্টি কিনে আনি। হায়রে মুসল্লি, সারা মাস কষ্ট করলাম আমি, খুশি হলেন তিনি, আর মিষ্টি খাওয়াবো আমি। কী আর করা সেদিন মিষ্টি লেগেছিল ১০ কেজি। মাস শেষ বোনাসের সময় হলো। দায়িত্বরত অফিসারের কাছে গেলাম (উল্লেখ্য, মসজিদটি একটি সরকারি ফ্যাক্টরির অধীনে) তিনি আরও উল্টো কথা শুনিয়ে দিলেন। দোকানের চাকরি, মাদরাসার ছাত্র পড়ানো আর কত চাই আমার? আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আচ্ছা আমাকেতো বলা হয়েছে ঈদ বোনাস দিবেন এবং এইটা কারো ব্যাক্তিগত ফান্ড থেকে নয়, সরকারি ফান্ড থেকে দেয়া হবে। বোনাসটা আমার প্রতি কোনো করুণা করে নয়, অতীতে যারা ছিলেন তারাও পেয়েছেন। আমার বেলায় এই বৈষম্য কেন?
থলের বিড়াল বেড়িয়ে এলো। আমারই কিছু স্ব-দেশী ভাই উপরস্থ অফিসারকে বুঝিয়েছেন। আমি অনেক টাকা ইনকাম করি, এই বোনাস দেয়ার প্রয়োজন নেই। শেষ পর্যন্ত ঈদ বোনাসটা পেলাম না। ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হলো। এরপর সেখানে আরো দু-বছর ছিলাম। এখন আছি প্রিয় নবীজির (সা.) শহর মদিনায়। প্রতি বছর ঈদ আসে ঈদ যায়। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের সেই ঈদস্মৃতি আমাকে এখনো কাঁদায়।
বিষয়: বিবিধ
১৯৩০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পড়ে অনেক কষ্ট লাগলো।
তবুও ঈদ মোবারক।
মন্তব্য করতে লগইন করুন