আমার প্রিয় বই
লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত হুসাইন নবীনগর ২০ মে, ২০১৫, ০৬:৫৫:০২ সন্ধ্যা
শব্দ মিলানো যখন শিখেছি , তখন থেকেই বইয়ের সাথে আমার মিত্রতা ।
বই ছাড়া সময় কাটতোনা আমার ।বই ছিল আমার নিত্য সঙী ।
বই পড়তে পড়তে বুকের মধ্যে বই রেখে ঘুমিয়ে যাওয়াটা ছিল আমার অভ্যাস ।
বই পড়ার মত এই ভাল কাজটিও করতে হতো লুকিয়ে লুকিয়ে , উস্তাদের নজরে পড়লে এই বই আর ফেরত পাওয়া যেতনা ।
বই.পত্রিকা,ম্যাগাজিন পড়া এগুলো ছিল আমাদের জন্য অলিখিত নিষিদ্ধ ।
তখনকার উস্তাদের যুক্তি ছিল পাঠ্যপুস্তকের বাহিরে অন্য বই পড়লে সমস্যা হয় , পাঠ্যপুস্তকে নাকি মন বসেনা , যদিও আমার কাছে তা মনে হয়নী ।
আছরের নামাজের পর সবাই যখন খেলার মাঠে , আমি তখন বই হাতে মাঠের এক কোনায় , অথবা আমাদের তিতাস নদীর পাড়ে কখনোবা আমাদের মসজিদের ছাদে ।
গল্প,উপন্যাস,ছড়া-কবিতা,ধর্মীয় বই সবই ছিল আমার পাঠ্য তালিকায় ।
কাছে কিংবা দুরের যে কোন সফরে হাতে দু-তিনটি বই আমার চাই চাই ।
বই পড়ার শুরুটা হয়েছিল আমার ইসলামী ম্যাগাজিন দিয়ে
বেশ কটি মাসিক ইসলামী ম্যাগাজিনের নিয়মিত পাঠক ছিলাম ।
একবার এক বড় ভাইয়ের পড়ার টেবিলে বেশ কিছু উপন্যাস দেখে দুটি বই হাতে নিলাম তার প্রায় শতের উপরে শুধু উপন্যাস ছিল একে একে সবগুলোই পড়ে শেষ করলাম ।
আসলেই এই সব উপন্যাসের মধ্যে প্রেমের রস-কস ছাড়া কিছুই নাই , আমার কাছে তাই মনে হলো ।
একবার উপন্যাস নিয়ে পড়লাম বিপাকে , কোথাও যাবো হাতে বেশ কটি বই নিয়ে রওয়ানা দিলাম সাথে ছিল দুটি উপন্যাস ।
এক বড় ভাই বইগুলো দেখতে চাইলো সরল মনে এগিয়ে দিলাম দেখার জন্য ।
বড় ভাই বইগুলো হাতে নিয়ে উপন্যাসগুলো দেখিয়ে বললেন এগুলো কি পড়ার মত কোন বই হল ?
তাও তুমি মাদরাসার ছাত্র ।
ভয় আর লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে ভাইকে জানাইলাম আর পড়বোনা ।
আসলেই তাই উপন্যাসগুলো বেশীর ভা্গই হল প্রেম কাহিনীতে ভরপুর ।
সেই থেকে আমার পাঠ্য তালিকা থেকে উপন্যাস বাদ দিলাম ।
কোন মানবীয় প্রেমে তখন পড়িনী কিন্তু বইয়ের প্রেমে ঠিকই পড়েছিলাম ।
বই আমার প্রিয়তম , বই আমার অবসরের সাথী , বই আমার কথা বলার সঙী ।
বই আমার এগিয়ে যাওয়ার প্রেরনা ।
একবার আমাদের মাদরাসার মাহফিল ( বি-বাড়ীয়ার নবীনগর )
দু-জন মেহমান আসলেন ওয়াজ শুনার জন্য সম্ভবত নরসিংদী থেকে ।
তারাও মাদরাসার ছাত্র দু-জনের হাতে ছিল দুটি বই একটির নাম কেয়ামত কবে ? অন্যটি হল মাসিক ম্যাগাজিন ।
ইতোপুর্বে বই দুটি আমি দেখি নাই ।
কেয়ামত কবে বইটির নাম আর সুন্দর প্রচ্ছদ দেখে আমার লোভ লাগলো ।
বর্ষা কালের মাহফিল মুষুলধারে বৃষ্টি হচ্ছে মাঠের পরিবর্তে মসজিদে চলছে মাহফিল ।
মেহমানদ্বয়ের থাকা খাওয়ার ব্যাবস্থা করলাম আমি , এক ফাকে অনুমতি নিয়ে বইয়ের নাম লেখকও প্রকাশনীর নাম লিখে রাখলাম সংগ্রহ করবো বলে ।
সকাল বেলায় মেহমানদ্বয়কে আর খুজে পেলামনা ।
ফ্লোরে বিছিয়ে দেয়া বিছানার উপর দুটি বই আর সাথে একটি চিরকুট লিখে গেল ।
আপনার মেহমানদারির খেদমত আর বই পড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে বইগুলো রেখে গেলাম , ভাল থাকুন ।
এভারেষ্ট জয়ের চেয়েও বেশী আনন্দ পেয়েছিলাম সেদিন ।
সে মেহমানদ্বয়ের পরিচয় আর খুজে পেলামনা ।
যেখানেই থাকুন যেভাবেই থাকুন আল্লাহ তাদেরকে ভাল রাখুন ।
বই পড়ুন , আলোকিত জীবন গড়ুন ।
বই হোক আমাদের নিত্য সঙী ।
বিষয়: বিবিধ
১৮২৪ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে পরিবার বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কখনও বাধা পাইনি বরং গৃহশিক্ষক বই দিয়েছেন পড়ার জন্য! তিনি এই ব্লগ এরই সন্মানিত ব্লগার নজরুল ইসলাম টিপু।
উপন্যাস সবই খারাপ নয়। পড়ে দেখুন নসিম হিজাজি,শফিউদ্দিন সরদার।
নসিম হিজাজি , শফিউদ্দিন সরদার এই লেখদ্বয়ের উপন্যাসের সাথে তখন পরিচিত ছিলামনা ।
অনেক ধন্যবাদ।
ধন্য হলাম আমি ।
ধন্যবাদ ভাইজান
ভাই একই অভ্যাস তো আমার ও ছিল !
লিখাটা ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন