সৈয়দ কুতুবের ফাঁসির দুজন সাক্ষী ও বর্তমানের কিছু কথা

লিখেছেন লিখেছেন হাসনাইন হাসান ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০২:০১:৪৯ রাত

আলেম, প্রচারকারী এবং সংস্কারসাধনকারী যারা আল্লাহর পথে তাঁর (আল্লাহর) প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্যের কারণে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে, মানুষের মধ্যে তাদের মর্যাদা অনেক উঁচু।

এইসব প্রচারকারী ও চিন্তাবিদদের মধ্যে সৈয়দ কুতুব একজন, যার ফাঁসি গভীরভাবে দাগ কেটেছিল ঐসকল মানুষের মনে যারা তাঁকে জানত এবং তাঁর দৃঢ় বিশ্বাসকে (আল্লাহ প্রতি) অনুভব করত। ঐসব মর্মাহতদের মধ্যে ছিল দুজন পুলিশের লোক যারা নিজের চোখে তাঁর ফাঁসি দেখেছিল (১৯৬৬ সালে)।

তাদের মধ্যে একজন নিমেড়বাক্ত ঘটনার বর্ণনাকারীঃ

এমন অনেক ঘটনা ছিল যা আমরা আগে চিন্তা করিনি এবং যা আমাদের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছিল, প্রতি রাতে দলে দলে বৃদ্ধ, যুবক এবং মহিলাদের সামরিক জেলখানাতে ঢোকানো হচ্ছিল। আমাদের বলা হয়েছিল যে এরা ইহুদীদের সহযোগীতাকারী রাষ্ট্রদ্রোহী এবং তাদের গোপনীয়তা বের করা আবশ্যক। আর এর একমাত্র উপায় ছিল চরম নির্যাতন। বিভিনড়ব ধরনের লাঠি ও চাবুক দিয়ে তাদের দেহের সৌন্দর্য পরিবর্তন করে দেয়াই ছিল যথেষ্ট। আমরা এ কাজ করে যেতাম এই দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে যে, আমরা একটা পবিত্র দায়িত্ব পালন করছি। যাহোক আমরা শীঘ্রই নিজেদের অবর্ণনীয় জিনিসের মুখোমুখি পেলাম। আমরা দেখলাম যে, ঐসব বিশ্বাসঘাতকেরা নিয়মনিষ্ঠার সাথে রাতে তাদের ইবাদত করছিল। এমনকি নির্যাতন চলাকালীন সময়েও তাদের জিহ্বা আল্লাহর নাম নিচ্ছিল।

এমনকি তাদের মধ্যে কেউ কেউ চাবুকাঘাতে অথবা বন্য কুকুরের আμমণে মারা গেল, কিন্তু তারা হাসছিল এবং অনবরত আল−াহ্র নাম নিচ্ছিল। স্বভাবতঃ আমাদেরকে যা বলা হয়েছিল সে ব্যাপারে আমরা সন্দিহান হয়ে পড়লাম,কারণ এটা অবিশ্বাস্য ছিল যে এমন ধর্মপ্রাণ বিশ্বাসীরা আল্লাহর শত্রু“দের সহযোগী হয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করছিল।

আমরা, আমি এবং আমার ভাই, গোপনীয়তার সাথে সম্মত হলাম যে আমরা যতদূর সম্ভব এদের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকব এবং যতটুকু পারি তাদের সবরকম সহযোগীতা করব। আল্লাহর অশেষ করুণায় সেই জেলে আমাদের বেশি দিন থাকা হলো না। আমাদের উপর অর্পিত শেষ দায়িত্ব ছিল এক জেলে পাহারা দেয়া যেখানে এদেরই একজন কারাবন্দী ছিল। আমাদের কাছে তাকে বর্ণনা করা হয়েছিল- তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিপদজনক এবং পরিকল্পনাকারী নেতা হিসেবে। তাঁর নাম ছিল সৈয়দ কুতুব।

লোকটি অতি মাত্রায় শারীরিক নির্যাতনের কারণে এতটাই যন্ত্রণাপ্রাপ্ত ছিল যে তিনি আর তাঁর পায়ের উপর দাঁড়াতে সক্ষম ছিল না। তাঁর মামলার জন্য তাকে সামরিক আদালতে বহন করে নেয়া হত। একরাতে তাঁর ফাঁসির আদেশ এল। তারা তাঁর কাছে একজন ইমামকে আনল আল্লাহকে স্মরণ করানোর উদ্দেশ্যে (ফাঁসির আগে)।

পরের দিন খুব সকালে, আমরা, আমার ভাই এবং আমি, তাঁর বাহু ধরে তাঁকে বন্ধ গাড়িটিতে তুলে নিলাম, যেখানে আরও কিছু কারাবন্দীকেও নেয়া হয়েছিল। কিছুক্ষণ পরে গাড়িটি ফাঁসির মঞ্চের দিকে রওয়ানা হল। আমাদের পেছনে কিছু সামরিক গাড়িতে বন্দীদের পাহারা দেয়ার জন্য সশস্ত্র সৈনিক ছিল।

অল্প সময়ের মধ্যে এক একজন সশস্ত্র সৈনিক যার যার নির্দেশিত অবস্থানে দাঁড়াল। কর্মকর্তারা সেখানে প্রত্যেক কয়েদীর জন্য একটি করে ফাঁসির মঞ্চ স্থাপন করা সহ সবকিছু প্রস্তুত করে রেখেছিল। সেখানে তাঁর গলায় একটা দড়ি বাধা হয়েছিল এবং একজন জল্লাদ অপরাধীর নিচের তক্তা সরিয়ে দেয়ার আদেশের অপেক্ষায় দাঁড়ানো ছিল। ফাঁসির সময়ে একটা কালো পতাকা উত্তোলনের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল একজন সৈনিক।

সবচেয়ে বিস্ময়কর ছিল সেই কথাগুলো যা মৃত্যুপথযাত্রী মানুষগুলোর মুখ দিয়ে উচ্চারিত হচ্ছিল, তারা তাদের ভাইদের প্রতি জানড়বাতে মিলিত হবার সুসংবাদ দিচ্ছিল, মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবীদের সাথে। এই কথাগুলো শেষ হচ্ছিল মর্মস্পর্শী কানড়বার সাথেঃ “আল্লাহ মহান, সকল প্রশংসা তাঁর।”

এই ভয়ংকর মুর্হূতগুলোতে, আমরা শুনলাম একটি গাড়ি আসছে। পাহারারত গেটটি খুলে দেয়া হল এবং একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও সেখানে আগমন করল যে উচ্চস্বরে জল্লাদকে ফাঁসি থামানোর নির্দেশ দিল। সে সৈয়দের দিকে অগ্রসর হলো, তার (সৈয়দ) গলা থেকে দড়ি এবং চোখ থেকে বাঁধন সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিল। তারপর সে তার (সৈয়দ) প্রতি কাঁপা কাঁপা গলায় বললেনঃ “আমার ভাই, সৈয়দ, আমি আপনাকে ধৈর্য্যশীল এবং ক্ষমাশীল রাষ্ট্রপতির (তৎকালীন

মিশরের রাষ্ট্রপতি) পক্ষ থেকে জীবন উপহার দিচ্ছি। একটি কথা যা আপনাকে স্বাক্ষর করতে হবে, যা আপনাকে এবং আপনার ভাইদের ক্ষমা করবে।”

সে (কর্মকর্তা) উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে একটা নোটবই খুলে ধরলো এবং বললো : “লিখুন, আমার ভাই, শুধুমাত্র এই কথাটি (আমি ভূল ছিলাম এবং আমি অপরাধ স্বীকার করছি)”। সৈয়দ ভালোভাবে তাকালেন, একটা অবর্ণনীয় হাসি তাঁর চেহারায় ফুটে উঠলো। তিনি সেই কর্মকর্তাকে এক আশ্চর্য ঠান্ডা স্বরে বললেনঃ “অসম্ভব! আমি এই সাময়িক জীবনের সাথে সেই জীবনকে বদলাবো না যা কখনও শেষ হবে না!” কর্মকর্তাটি দুঃখের সাথে বললোঃ “কিন্তু এর মানে হলো মৃত্যু, সৈয়দ!”

সৈয়দ প্রশ্নউত্তরে বললেনঃ “আল্লাহর পথে মৃত্যুকে স্বাগতম............ আল্লাহ মহান!”

এটা বিশ্বাসের দৃঢ়তাকেই প্রকাশ করে। সেই কথোপকথনকে দীর্ঘতর করা ছিল অসম্ভব। অফিসার জল্লাদের প্রতি ফাঁসির কাজ সম্পাদন করার ইঙ্গিঁত করলেন।

শীঘ্রই সৈয়দ এবং তাঁর ভাইদের দেহগুলো স্পন্দিত হলো, তাদের প্রত্যেকের জিহ্বা সেই মুহূর্তে সেই কথা উচ্চারণ করেছিল, আমরা কখনও ভূলতে পারিনি এবং যার আঘাত আমরা আর কখনও অনুভব করিনি যা সেই মুহূর্তে করেছিলাম, “আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর রাসূল।”

এইভাবে আমরা ধার্মিক এবং আল্লাহ ভীরু হলাম। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন আমরা তাঁর প্রতি সর্বদা বিশ্বাসী থাকতে পারি। আমিন।

দৃষ্টি আকর্ষণঃ পাঠক বৃন্দ আপনাদের কাছে মহান সত্য ঘটনাটি তুলে ধরার একটাই কারন আর তা হচ্ছে, একটু ভেবে দেখুন আজ আমাদের বাংলাদেশে কি হতে যাচ্ছে একটু ভেবে দেখুন নিরপরাধ কিছু মানুষ কে সাজান ফাঁশির কাঠগড়ায় নেওয়া হয়েছে মিথ্যা অপরাধকে দৃশ্যমান করে। পাশাপাশি এখন আমাদের নতুন প্রজন্মকে একটা সম্পূর্ণ নিষ্ঠুর শ্লোগানের মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে যার কুফল আমরা খুব শিগ্রই দেখতে পারব। অথচ এদের অপরাধ কি তা কেউ প্রমান করতে পারেনি। যা হচ্ছে তা সুধুই সাজান কিছু গল্প আর উপন্যাস বললে ভুল হবেনা (আল্লাহ আমাদের সবাই কে সাহায্য করুন আমিন)।

এদের একটাই অপরাধ যে তারা ইসলামের কথা বলে তারা সত্য কথা বলে তারা এক আল্লাহর শক্তিকে বিশ্বাস করে। যে কথাগুলো নিয়ে অতীতের এতিহাস থেকে শুরু করে বর্তমানে আজ পর্যন্ত যারাই এসেছে তাদের সবাই কে এমন অনেক ওজুহাতের ফাঁদে জরানো হয়েছে। আশা করি পাঠক বন্ধুরা চিন্তা করবেন!!

আজ আমাদের চার পাশে মিথ্যের রঙ ছড়িয়ে সত্যকে সন্দেহ যুক্ত বানানো হচ্ছে।

বিষয়: বিবিধ

২২৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File